somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢংগের মানুষ [নাটক]

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[নাটকটি সম্পূর্ন বরিশালের ভাষায় রচিত]
[চরিত্র সমূহ- রাজু,বাবু,করিম,ময়না,জুলি,হাতেম আলী,মিনারা বেগম,বুলেট খান,সুমন,জালাল,কালু,বদর,মোমেন,রশিদ,সোনাই,কালাম,করিম,ছোট ছেলে,ফকির,১ম লোক,২য় লোক,বৃদ্ধ লোক,যুবক,চেয়ারম্যান,পরিচালক,আম্পায়ার,স্কুলের কিছু ছাত্র,ছাত্রী ও গ্রামবাসী]

নিজামপুর গ্রাম । এই গ্রামের মানুষ সবসময় ঢং সং এ মেতে থাকে । তাদেরকে দেখলে মনে হবে ঢং সং ছাড়া মনে হয় তাদের অন্য কোনো কাজ নেই । এই নিজামপুর গ্রামের মানুষের ডং সং চলে অবিরত ।
১ম দৃশ্য
[গ্রামের পথ দিয়ে বাবু ও করিম যাচ্ছে । বাবু আন্ডার মেট্রিক । অর্থাৎ সে মেট্রিক ফেল । বাবু নিজেকে খুব জ্ঞানী,চালাক ও পন্ডিত মনে করে । বাবুর হাতে বেসলাইট,কানে দুল,চোখে সানগ্লাস সহ বিভিন্য ধরনের ফ্যশন তার]
করিমঃ- কি খবর ভদ্দর লোক এই বেইন্নাহালে হাইজ্জা গুইজ্জা পাং পোং মাইররা কই যাও?
বাবুঃ- সুজানগর বাজারে যাইতে আচি করিম ভাই । বেইন্নাহলে আই মিন সকালবেলা চাটা না খাইতে পারলে শরিলে জোশ আহেনা ।(খুব স্টাইল দেখাইয়া)
করিমঃ- তুমিতো চা খাবাই । ভাই এট্টা বিদাশ থাহে । আর হেই ভাইর টাহা ভাংগো আর ফুডানি মারো,যাও তোমার আবার দেরি অইয়া যাইতে আচে ।
বাবুঃ- ওডা কোনো ব্যাপার না । এট্টা কতা কি জানেন জালাল ভাইর খাটি গরুর দুধের চা খাইতে জম্মের মজা । হ্যার চা খাইতে যে কি মজা,না খাইতে পারলে হুস পাইনা । যাই করিম ভাই অন্য সোমায় কতা কমু আনে,বোজ্জেন ।
করিমঃ- ঠিকাছে যাও তুমি গরম চা খাও,কিন্তু দেইক্কো গরম চায় আবার তোমার মুখ না পুইররা যায় ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র- বাবু ও করিম]
২য় দৃশ্য
[দিনে পথ দিয়ে রাজু সাইকেলে যাচ্ছে ও জুলি হেটে যাচ্ছে]
রাজুঃ- ওহ জুলি নাহি? তায় তুমি এই দুহাইররাহালে কই যাচ্ছো?
জুলিঃ- রাজু ভাই মুই কলেজে যাইতে আচি ।
রাজুঃ- তয় তুমি দিহি এক্কালে কচ্ছপের মোতো আস্তে আস্তে হাইড্ডা যাইতে আচো । এই রোহম আস্তে আস্তে হাইড্ডা গ্যলে কি কলেজের সোমায় পাবা,লেট অইয়া যাবেনা?
জুলিঃ- মোরে আমহে কচ্ছপ কইলেন ক্য রাজু ভাই?
রাজুঃ- তুমিতো হাডো কচ্ছপের মোতো । তরতরি যাও নায় লেট অইয়া যাবে । বোঝনা লেট হরলে দেরি অইয়া যাবে ।
জুলিঃ- লেট অয় অউক,হ্যতে আমহের কি?
রাজুঃ- ওরে মোর আল্লা এ তুমি কও কি? মুই তোমারে এট্টু আলাদা চোহে দেহিনা । তুমিতো মোগো এলাকারই মাইয়া ।
জুলিঃ- আমহের মোরে কিচু কওয়া লাগবেনা । মোর কি পরির নাহান ড্যনা লাগান আচে যে মুই উইররা উইররা কলেজে যামু?
রাজুঃ- বোঝেনা বোকদাডায় । মুই কি তোমারে হেই কতা কইচি । কইছিলাম কি মোরতো সাইকালের পিছানের সিট এক্কালে খালি । তয় তুমি যদি ঐ খালি সিটটা পুরন হরতা হেলে মুই তোমারে কারেন্টের গতিতে স্কুলে থুক্কু কলেজে নিয়া যাইতাম ।
জুলিঃ- ঠিকাচে তয মোরে লইয়া লন ।(জুলি রাজুর সাইকেলে উঠলো)
[উভয়ের প্রস্থান]
[চারত্র- রাজু ও জুলি]
৩য় দৃশ্য
[জালালের চায়ের দোকানে বাবুর আগমন]
বাবুঃ- ও জালাল ভাই মোরে ব্রেকফাষ্ট টা দ্যও । মোর জম্মের খিদা লাগচে ।
জালালঃ- ব্রেক ফাস এইডা আবার কি? মোর দোহানে মুই এ সোমস্ত অখাইদ্য রাহিনা । চা বিষ্কুটের কতা কও হেইডা মুই দেতে পারমু ।
বাবুঃ- এ ব্রেকফাষ্টরে অখাইদ্য কয় । ব্রেকফাষ্ট চেনো । বাপের জম্মে তুমি ব্রেকফাষ্টের নাম হোনো নায়?
জালালঃ- মোর বাফের জম্মে এ নাম হোনা লাগবেনা ব্যডা । চা বিষ্কুট খাইতে হারো । এ বেইন্নাহালে আবার লইয়া আইচে এট্টা ব্রেক ফাস ।
বাবুঃ- বুজ্জি চা বিষ্কুটই দ্যও এইডাই অইচে ব্রেকফাষ্ট । হোনো জালাল ভাই,ব্রেক অর্থ অইচে ভাঙ্গা আর ফাষ্ট মানি আগে । হ্যার মানি দারায় আগে ভাঙ্গা । কি?আগে ভাঙ্গা ।(বাবু চা বিস্কুট খাচ্ছে আর কথা বলতেছে)
[বাবুর প্রস্থান]
[চরিত্র- বাবু ও জালাল]
৪র্থ দৃশ্য
[দিনে কালু,বদর ও মোমেন পুকুরে গোসল করতেছে]
কালুঃ- এউক্কা বিষায় খেয়াল হরছো বদর?
বদরঃ- হেডা আবার কি বিষায়?
কালুঃ- রাজুরে দ্যকচো গ্রামের ব্যবাক মাইয়াগো লগে এল্লাহই টাঙ্কি মারতে আচে । অর সাইকালের পিচানে মাইয়াগো বওয়াইয়া পরিবেশটাই দূষিত হইররা হালাইতে আচে । ও মাইয়াগো লগে কি সুন্দার টাঙ্কি মারে । আর মোরা এট্টা মাইয়ার লাগে ও কতা কওয়ার সুযুগ পাইনা ।
মোমেনঃ- দ্যকতে অবেনা পোলাডা কার ।
কালুঃ- তুই চুপ কর । বোঝলাম অর বাপ হাতেম আলী চাচা এই গ্রামের মুরাব্বি । হ্যার টাহা পয়সা জাগা জমির অভাব নাই হেই বুইল্লা হ্যার পোলার হাত খুন মাপ অইয়া যাবে । হক্কল মাইয়াগো লইয়া ঘোরবে । মোরা কি এট্টা মাইয়ার লাগে ও কতা কওয়ার চান্স পামুনা?
[ময়নার আগমন]
কালুঃ- ও মযনা । এউক্কা বিসায তুমি কেয়ার হরচো আইজ বেইন্নাহলে মোগো বাড়ির দক্ষিন পাশের ঐ জাম গাচটায় খালি কুটুম পাখি ডাহাডাহি হরচে । আর মুই বুজ্জি যে মোগো বাড়ি কুটুম আইবে,আর তুমি চইল্লা আইলা ।
ময়নাঃ- তোমার খালি গলার মোদ্দে খাউজ্জায় না । এক্কালে মাইয়াগো দ্যকলে গার উপর পইররা কতা কওয়া শুরু হইররা দ্যাও ।(এই বলে ময়না চলে গেলো)
বদরঃ- দ্যকচো মাইয়ার ত্যজ কতো?
মোমেনঃ- ত্যাজ এক্কালে ভাইঙ্গা দিমুআনে ।
কালুঃ- এ মোর লাগে আবার ত্যাজ দ্যহায় ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- কালু,বদর,মোমেন ও ময়না]
৫ম দৃশ্য
[রশিদ নামে এক ব্যক্তি আরাবিয়ান পেষাক পরে গ্রামের পথ দিয়ে যাবে,তার সাথে দেখা হবে বাবুর]
বাবুঃ- আসসালামু আলাইকুম হুজুর ।
রশিদঃ- ওয়ালাইকুম আস সালাম ওয়া রহমাতুল্লা ওয়া বরাকাতুল্লাহ ।
বাবুঃ- হজুর এই গায়ে আমহে কার বাড়ি যাবেন,আমহেরে তো চেনতে হারলাম না?
রশিদঃ- কিরে বাবু তুই মোরে চেনতে পারলিনা মুই অইচি যাইয়া রশিদ,আই মিন লাভ রশিদ । মোরে আগে মানসে রইসসা কইয়া ভোলাইতে ।
বাবুঃ- ওরে মোগো রশিদ ভাই দিহি । ভাই তুমি না সৌদি গেল্লাহ তায় কবে আইচো?
রশিদঃ- এইতো মুই আইজগো আইচি । তায় তুই কি ল্যহাপড়া হরো? তোর ভাই বদরুল কোতায়?
বাবুঃ- ভাইজানেতো জাপান গ্যচে ।
রশিদঃ- ওহ তোর ভাই জাপানে যাইয়া কি চাপান খায়?
বাবুঃ- হ্যাতো খায়ই ।
রশিদঃ- ভালো ভালো পোলাউগ্গায় যদেষ্ট ভালো আছেলে ।
বাবুঃ- ক্য মুই বুঝি ভালো না?
রশিদঃ- নারে ছোডো ভাই তুইতো জম্মের ভালো । হোন মুই এহন জম্মের ক্লান্ত ফিল করতে আচি,মুই এহন বাড়ি যাই,পরে তোর লাগে কতা কমু আনে ।
বাবুঃ- ঠিকাচে যাইন যাইয়া রেস ন্যান । এট্টু সাবধানে যাইয়েন পতে কিন্তু পাগলা কুত্তা আচে । পাগলা কুত্তায় আবার আমহেরে গুতা দেতে পারে ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র- বাবু ও রশিদ]
৬ষ্ঠ দৃশ্য
[রাজু ঘরের ভিতরে আয়নার সামনে এসে চুল আচড়াচ্ছে,তখন তার বাবা আসলো]
হাতেম আলীঃ- হারাডা দিন গায় গাতরে বাহাত লাগাইয়া ঘুইররা বেড়ায় । ক্য এট্টু কোলায় যাইয়া আইল্লা গুলার খোজ খবর নেলে কি অয়? মুই এই বয়সে কি আর হক্কল সামলাইতে পারি? এমনিই আচি কতো উদবাগের উপার ।
রাজুঃ- ওরে রশিয়া বন্দুরে তুই মোর দির খাইলিরে ।(রাজু গানটা একটু বলবে আর চুল আচড়াবে)
[রাজুর মা মিনারা বেগমের আগমন]
মিনারা বেগমঃ- পোলাডা হারাদিন পর কলেজ খাইডডা আইচে আর আমহে ব্যবাক কতা শুরু হইররা দেলেন?(পানি হাতে মিনারা বেগম)
হাতেম আলীঃ- পেলাডারে লাই দিয়া এক্কালে মাতায় উডাইচো । কিচ্চু হরেনা । পরে বোজবা যে কতো গোমে কতো চাউল । পোলাডায় এক্কালে আল্লাদে ব্যাড়া বাইয়া গ্যচে ।
মিনারা বেগমঃ- মোর পোলাডা অইচে সোনার টুকরা । ন্যও বাবা এই পানি খাও ।
[করিমের প্রবেশ]
করিমঃ- ও চাচা,ও হাতেম আলী চাচা বাড়ি আচেন?
হাতেম আলীঃ- কেডারে কেডা? এ কি অইচে?
করিমঃ- চাচা ঢংগের মেলা তো সামনে চইললা আইতে আচে । এবার আমহে এট্টা কোচ আনতে চাইলহেন ।
হাতেম আলীঃ- এ তুই কি কও কোচ আইন্না মুই কি হরমু? কোচ দিয়াতো মাছ কোফায । এহন মুই কি এই বুড়া বয়সে মাছ কোপাইতে নামহু?
করিমঃ- চাচা হেই কোচ না এডারে কয অইচে যাইয়া কোচার,যে কোচার মোগো হাসি হিয়াবে । আর আমহেতো এই কোচার আনতে চাইলহেন । আর মুই হেই কতা আমহেরে মোনে হইররা দেতে আইচি ।
হাতেম আলীঃ- ওহ হয় হয় মুই বুইজ্জি এবার ।
করিমঃ- ভালো ।শালুকপচা গ্রামের কতা হোনলাম অরা এবার বরিশাইলদা কোচার আনবে ।
হাতেম আলীঃ- পেরতেক বচ্ছর ঢংগের মেলায় হাসাহাসির পতিযোগিতায় মোরা ঠইগগা যাই । তোরা কেউ হাসতে পারোনা । এবার আর হ্যা অবেনা । এবার শালুকপচা গ্রাম আলারা যদি বরিশাইলদা কোচার লইয়া আয়,মোরা হেলে ঢাহা দিয়া কোচার আনমু আনে । এবার মোরা জিতমুই জিতমু । তুই সবাইরে যাইয়া ক মোরা ঢাহাইদদা কোচার আনতে আচি ।
করিমঃ- ঠিকাচে চাচা মুই এহন হক্কলরে যাইয়া কইতে আচি । সালাম চাচা ।
মিনারাঃ- এবার হেলে মোগো নিজামপুর গ্রাম জেতপে?
হাতেম আলীঃ- জেততে মোগো অবেই ।(রাজু কান পেতে সব কথা শুনতেছে)
[চরিত্র- রাজু,হাতেম আলী,মিনারা বেগম ও করিম]
৭ম দৃশ্য
[জুলি ও ময়না কিত কিত খেলতে আচে উঠানে । এর মধ্যে রশিদের প্রবেশ]
জুলিঃ- কুতকুত,কুতকুত,কুতকুত ।
ময়নাঃ- ঐ তোর চারা দাগে পরচে ।
[রশিদের প্রবেশ]
জুলিঃ- আমহে কেডা?
রশিদঃ- মোরে তোমরা চেনবা না । মুই অইচি যাইয়া রশিদ । সবাই মোরে লাভ রশিদ কইয়া ভোলায় । মোর হৃদয় ভরা লাভ তো হেইয়ার জিন্নে । তায় তোমাগো নামডা কি মুই জানতে হারি?
ময়নাঃ- মোগো নাম হুইন্না আমহের কাম কি?
জুলিঃ- গরমের মোদ্ধে আমহে এডা কি পইররা আচেন? কোতাইদদা এই সোমস্ত যে ঢংগের মানু আয় বুঝিনা ।
রশিদঃ- ফাইন কইচো তো তুমি । তোমরা দ্যকতে ওতো ফাইন,সোবাহান আল্লা । এক্কালে তোমাগো চেহারা ডালিমের রসের মোতো ।
মযনাঃ- এ আমহে রশিদ চাচা না,আমহে তো মোর বাপজানরে ভাই কইয়া ভোলাইন । তা আমহে মোগো লাগে ইয়ারকি মারতে আচেন?
রশিদঃ- না মাইনি তোমরা ফুলের মোতো তো । আর ফুল তো সবাইর হাতেই শোভা পায়,নাকি কও?
জুলিঃ- আমহে বেশি কতা না কইয়া এহন যাইন । ওদিক দিয়া হাতেম চাচার পোলা রাজু ভাই আইতে আচে । আমহেরে প্যদাবে আনে । আমহের লাভ রশিদ এক্কালে ছুইডডা যাবে আনে ।
রশিদঃ- কি কও মুই যাইতে আচি ।(এই কথা বলে রশিদ ভয়তে দৌড় দিয়ে চলে গেল)
ময়নাঃ- এ জুলি তুই কার কতা কও,কেউরে ইতো দেহিনা । কই রাজু ভাই আইতে আচে?
জুলিঃ- বোঝোনা এতো মুই এমনি কইচি । ওনার ঢং ঢাং মোর একদম ভালো লাগেনা । আয় মোরা আবার খেলা শুরু হরি ।
[খেলা চলতেচে,রশিদের প্রস্থান]
[চরিত্র- জুলি,ময়না ও রশিদ]
৮ম দৃশ্য
[দিনে পুকুরপাড়ে কালাম ও সোনাইয়ের মদ্ধে কথোপকথন]
কালামঃ- ম্যালার দিন তো প্রায় চইললা আইচে । হাতেম চাচারে বিষয়ডা কওয়া লাগে,তুই কি কও?
সোনাইঃ- ঠিক কতা কইচো আসলেই ম্যালার তো আর বেশি দিন বাহি নাই । হোনলাম শালুকপচা গ্রামের অরা বরিশাইলদা কোচার আনবে ।
[কানে হেড ফোন লাগিয়ে বাবুর আগমন]
বাবুঃ- কি খবর কালাম আর সোনাই মিয়া এহানে বইয়া তোরা কি হরো?
কালামঃ-কেডা বাবু,আয় এইহানে বয় । ঢংগের ম্যালার কতা কইতে ছেলাম । দ্যশের যে অবস্তা হ্যাতে এবার ম্যলা ট্যলা অয় কিনা আল্লায় জানে ।
বাবুঃ- ক্যা ডংগের ম্যলা অবেনা ক্য? আর দ্যশের অবস্তাতো ভালো । হোন মোরা এবার ঢংগের ম্যলায় জিতমুই । কি কও সোনাই?
সোনাইঃ- হয় আল্লায় দেলে এবার মোরা জিত্তাই ছারমু ।
বাবুঃ- হোনো মোগো এই নিজামপুর গ্রামডা শান্ত আচে । পতিবচর মোরা এই ঢংগের ম্যলার জিন্নে এক বচ্চর অপেক্ষা হরি । মোগো হাতেম আলী চাচায় এই ঢংগের ম্যলার আয়োজন হরচে । হক্কলরে এই ঢংগের ম্যলায় এক সাতে হে হাসায় । এ যেনো এক হাসির ম্যলা বোজ্জো? তোমরা আইজ রাইতে চাচার বাড়ি যাইও,হেইহানে বইয়া কতা অবে মুই এহন যাই ।
কালামঃ- কই যাও?
বাবুঃ- ওই এট্টু ঢং হইররা আই ।
কালামঃ- হয় তোমারতো আবার ঢংগের মানুষ আছে ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- কালাম,সোনাই ও বাবু]
৯ম দৃশ্য
[রাজু সাইকেলে করে গ্রামের পথ দিয়ে যাচ্ছে,সামনে আসছে কিছু স্কুলের ছাত্র ছাত্রী]
রাজুঃ- এ তোমরা খারাও । তোমরা কেডা কেডা মোর সাইকালে ওড়তে চাও হাত জাগাও ।(সাইকেল থামিয়ে রাজু এই কথা বলতেছে)
ছাত্র,ছাত্রীঃ- মুই ওড়তে চাই,মুই ওড়তে চাই । মোরা সবাই ওড়তে চাই ।(সব ছাত্র ছাত্রীরা হাত জাগিয়ে বলতেছে)
রাজুঃ- হোনো মুই তোমাগো এউককা প্রশ্ন করমু,যে উত্তার দেতে পারবে হ্যারে লইয়া মুই হারা গ্রাম দুইবার চক্কর দিমু । রাজি আচো তোমরা?
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ- হয় মোরা রাজি । আমহে প্রশ্ন করেন ।
রাজুঃ- প্রশ্নডা অইচে যাইয়া একুশে ফেব্রুয়ারী বাংলা কতো তারিক ছেলে?
ছাত্র-ছত্রিীঃ- মোরা কেউ পারিনা ।
রাজুঃ- হেলে তোমাগো কেউরেই সাইকালে উডামুনা ।(এই কথা বলে রাজু সাইকেল চালিয়ে চলে গেল)
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- রাজু ও স্কুলের ছাত্র ছাত্রী]
১০ম দৃশ্য
[রাতে হাতেম আলীর উঠানে হাতেম আলী,বাবু,করিম,রাজু ও গ্রামের কিছু লোক বৈঠকে বসছে]
গ্রামের এক লোকঃ- করিম হেলে তুমি এহন কতাডা কও ।
করিমঃ- চাচা ম্যলার দিন তো চইল্লা আইচে প্রায় । গ্রামের হক্কল লোক কইতে আচে এবার যদি আমহে একজন ভালো কোচার আইন্না দ্যান হেলে মোরা জেততে পারমু ।
বাবুঃ- হয় চাচা ঠিক কতা,একজন কোচার আনাই লাগে ।
গ্রামবাসীঃ- হয় হয় অরা ঠিক কইচে ।
হাতেম আলীঃ- হুনচি ক্রিকেট ফুটবলে কোচার থাহে কিন্তু এই হাসাইন্নার জিন্নে যে কোচার লাগবে এ্য মুই মোর বাপের জম্মে ও হুনি নাই । যাউক তোমরা ব্যবাকে কইচো যহন তায় মুই ঢাহাইদদা কোচার আনমু ।
বাবুঃ- চাচা বোঝেন না এহন ডিজিটাল যুগ । সবকিচুতেই কোচার লাগে । কোচার আনলে বোজ্জেন মোগো কেউ হারাইতে হারবে না ।
গ্রামবাসীঃ- হয় হয় ঠিক কতা ।
হাতেম আলীঃ- আচ্চা তোমরা যাও মুই ঢাহাইদদা কোচার আনার ব্যয় ব্যবস্তা হরতে আচি ।
রাজুঃ- হয আব্বা কোচার আনলে ভালো অয় । কি রোহম হাসে,কতো সোমায় হাইসসা থাকতে অয় কোচার হ্যা ভালো বোঝবে আনে ।
হাতেম আলীঃ- ঠিকাচে মুই তোমাগো অনুরোদে কোচার আনার ব্যবস্তা হরমু । এহন সবাই যাও ।
[বাবু ছাড়া সবার প্রস্থান]
হাতেম আলীঃ- কিরে বাবু তুই খারাইয়া আচো তুই কিচু কবি?
বাবুঃ- না মুই কইলহাম কি চাচা কাইল মুই ঢাহা শহর যামু । হ্যাহানে মোর পরিচিত লোক আচে । আমহে যদি অনুমতি দ্যান হেলে মুই খোজ খবর লইয়া ভালো একজন কোচার লইয়া আইতে পারমু ।
হাতেম আলীঃ- ঠিকাচে অসুবিধা কি যা হেলে তুই কাইলগো ঢাহাইদদা কোচার লইয়া আয় ।
বাবুঃ- ঠিকাচে চাচা হেলে মুই এহন যাই ।
[বাবুর প্রস্থান]
[চরিত্র-হাতেম আলী,বাবু,করিম,রাজু ও গ্রামের কিছু লোক]
১১ তম দৃশ্য
[দিনে সোনাই ও কালামের মদ্ধে কথোপকথন]
সোনাইঃ- কালাম ম্যলার সোমায়তো চইল্লা আইতে আচে কিন্তু আতে তো কোনো টাহা নাই ।
কালামঃ- হয় মোর ওতো তোর মোতো এক অবস্তা । মোর হাতে ও কোনো টাহা নাই ।
সোনাইঃ- হোন কালাম মোনে মোনে এট্টা প্লান কইররা রাকচি ।
কালামঃ- কি আবার প্লান হরলি তুই?
সোনাইঃ- হোন অই মসজিদের যে পুহুর আচেনা ঐ পুহুরে জম্মের মোতো মাচ আচে । হারাদিন খালি মাচে ঘাউয়ায় । আর ঐ মাচ মোরা দুইজোনে মিইললা চুরি হরমু বোজ্জো ।
কালামঃ- ব্যাডা ঠিক কইচো । ঠিকাচে ঐ মাচই চুরি হরমু । তোর মাতায় আল্লায় দেলে ভালো বুদ্দি আচে । কিন্তু মোরা যদি ধরা পরি?
সোনাইঃ- আরে না তোর মাতা খারাপ অইচে ধরা পরমু ক্যা,মোরাতো রাইতে চুরি হরমু । ল এহন বাড়ি যাই ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র- সোনাই ও কালাম]
১২ তম দৃশ্য
[রাজু ও কালাম একটি বল নিয়ে খেলতেছে]
রাজুঃ- এ তুই আস্তে ছট দে বল কিন্তু ফাইডডা যাবে ।
কালামঃ- ঠিকাচে আস্তেই ছট দেতে আচি । সামনে কিন্তু খাজুর গাছ আচে । খাজুর গাছের কাডায় পরলে বল কিন্তু লিক অইয়া যাবে ।
[ময়না ও জুলির আগমন]
জুলিঃ- এ আমহেরা মোগো খেলার মাডে খেলেন ক্যা?
রাজুঃ- ক্যা এই মাঠটা কি তোমাগো?
ময়নাঃ- ইস আবার প্রশ্ন হরে,এ মাঠ মোগো না তায় কাগো?
কালামঃ- মাডে কি তোমাগো নাম ল্যাহা আচে যে এডা তোমাগো মাড?
জুলিঃ- বেশি কতা কয় । নাম ল্যহা থাহা লাগবে কির জিন্নে,আমহেগো গায় কি আমহেগো নাম ল্যহা আচে?
রাজুঃ- কি সুন্দার খ্যালতে আচি আর আইচে দুই ঢহনি ঢং হরতে ।
জুলিঃ- দ্যাহেন বেশি কতা কবেন না আমহেরা এহন মোগো মাঠ দিয়া যান,নায় কিন্তু মুই কেয়ামত বানাইয়া হালামু ।
কালামঃ- এ রাজু এ মাইয়া মানুষ অইচে ভেজাল,মোরা অগো লাগে পারমুনা মোরা এহন ল ।
রাজুঃ- হয ল,তুই ঠিক কইচো,অরা আসলেই ভেজাল ।
জুলিঃ- কি মজা আয় ময়না মোরা কুতকুত খেলি ।
[রাজু ও কালামের প্রস্থান]
[চরিত্র- রাজু,কালাম,জুলি ও ময়না]
১৩ তম দৃশ্য
[দিনের বেলা রশিদ হাতে একটা বোতল নিয়া যাচ্ছে পথ দিয়ে,অপর দিক থেকে কালাম আর সোনাই আসছে]
কালামঃ- এ দ্যাখচো সোনাই ঐ রইসসা বোতলে কি জানি মাল লইয়া যাইতে আচে ।
সোনাইঃ- হয় মোনে হয় আরছি টারছি অবে । হালায় বিদাইশদা আইচে মোগো কিচু খাওয়ায় নায় । হোন মুই অরে ধরমু আর তুই অর হাত দিয়া বোতল নিয়া খাবি ।
কালামঃ- ঠিকাচে ল যাই হালারে ধরি ।
রশিদঃ- কি তুই মোরে ধরছো ক্যা সোনাই? ছাড় মোরে ছাড় ।(কালাম রশিদের হাত থেকে বোতলটি নিয়ে গেল)
সোনাইঃ- এ কালাম তুই খা মুই অরে ধরচি । মোর লাইগগা কিন্তু থুইস ।(কালাম ডকডক করে বোতলটি মুখে নিয়ে খাইতেছে)
রশিদঃ- এ তোরা কি খাও আয়,এডা দিহি মোর পেরসাব । মোর টাইফের অইচে তো হেইরজিন্নে মুই পেরসাব লইয়া পরিক্ষা করার জিন্নে হাসপাতালে যাইতে আচি ।
কালামঃ- অক থু থু থু ।(বমি করে দিল)
সোনাইঃ- এ কি কইলি তুই এডা পেরসাব? এ কালাম হালারে ধর ।(রশিদকে দুজনে মিলে ধাবর দিল)
[রশিদ দৌড়াতে দৌড়াতে চলে গেল]
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- কালাম,সোনাই ও রশিদ]
১৪ তম দৃশ্য
[দুপুরে হাতেম আলীর পুকুরে করিম জাল দিয়ে মাছ ধরতেছে,হাতেম আলী পুকুর পাড়ে দাড়ানো]
হাতেম আলীঃ- কিরে করিম মাছ পাইতে আচো?
করিমঃ- না চাচা পাইনাই । বড় এট্টা মাচ পরচেলে বোজ্জেন হ্যা আবার ছুইডডা গ্যাচে ।
হাতেম আলীঃ- ভালো হইররা জাল খেওয়া পাবি আনে ।
করিমঃ- চাচা বড় এট্টা মাচ জালে পরচে । দেহি ডুব দিয়া ধরি ।(করিম পানিতে ডুব দিল)
হাতেম আলীঃ- এ তুই দিহি এট্টা ভাউয়া ব্যঙ ধরচো হারামজাদা ।
করিমঃ- কি কন,হয় আসলেইতো এডা এট্টা ভাউয়া ব্যাঙ ।
হাতেম আলীঃ- হোন তুই মাচ পাবিনা । পানি ঘোলা অইয়া গ্যাচে । বিয়ালে পুহুরে চুন দিস ।
করিমঃ- ঠিকাচে চাচা ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র- হাতেম আলী ও করিম]
১৫ তম দৃশ্য
[বাবু ঢাকা থেকে ভ্যানে গ্রামের পথ দিয়ে কোচার বুলেট খানকে নিয়ে আসছে]
বুলেট খান(কোচার)- ঐ মিয়া আর কতো দূর,আমার মাঝা টাঝা তো একদম ব্যতা অইয়া গেছে ।
বাবুঃ- কোচার ভাই আমহে তো আইডডা আইতে আচেন না,আমহে তো ভ্যানে । আর রাস্তা ওতো ভালো এ্যতে ঝাহি ঝুহি লাগার তো কতা না ।
কোচারঃ- ওই মিয়া এতো বেশি কতা কও ক্যা? সোজা কতা কইতে পারোনা? সোজা কতা কইলেইতো অয় যে আর কতো দুর ।
বাবুঃ- না কোচার ভাই বেশি দুর না । এই রাস্তা পারাইলেই মোগো গ্রাম ।
কোচারঃ- এ কতা তো কচ্ছ তিন ঘোন্টা ধইররা,কিন্তু রাস্তা তো ফুরাইতেছে না । মিয়া তুমি এট্টু বেশি কতা কও ।
বাবুঃ- কোচার ভাই মোরা গ্রামের মানুষ তো হেইর জিন্নে এট্টু বেশি কতা কই ।
[চরিত্র- বাবু ও বুলেট খান]
১৬ তম দৃশ্য
[রান্না ঘরে রাজুর মা তরকারি কাটতেছে,তখন রাজুর আগমন]
রাজুঃ- মা,মা আব্বা কোতায়?
মিনারা বেগমঃ- ক্য তোর বাফেরে দিয়া কি অবে?
রাজুঃ- মা মোর কিছু টাহা লাগবে সাইকাল হারাইতে অবে ।
মিনারা বেগমঃ- দুইদিন পরপর তোর সাইকাল হারাইতে অয়,না?
রাজুঃ- মা মুই এট্টা কতা কমু?
মিনারা বেগমঃ- কি কতা কবি আবার,ক তরতরি ক ।
রাজুঃ- না মা,মানে ঐ পাড়ার জুলি মাইয়াডা খুব ভালো,খুব সুন্দার কতা কয় । তোমার মোতো ভালো ।
মিনারা বেগমঃ- কিরে বাজান তুই কি অরে পছন্দ হরো?
রাজুঃ- কিযে কওনা মা,মাইয়াডা জম্মের ভালো,কি সুন্দার টিয়া পখির মোতো কতা কয় । মোর না অরে খুব ভালো লাগে মা ।(একটু লাজুক হয়ে বলবে)
মিনারা বেগমঃ- আইচ্ছা মুই তোর বাপরে কমু আনে ।
[রাজু তখন খুঁশি হয়ে ওর মাকে একটা চুমা দিল]
মিনারা বেগমঃ- থাউক আর তোর ঢং হরতে অবেনা । এহন যা ।
[চরিত্র- রাজু ও মিনারা বেগম]
১৭ তম দৃশ্য
[বাবু কোচার বুলেট খানকে নিয়ে ভ্যানে করে হাতেম আলীর বাড়ির সামনে নামল]
বাবুঃ- কোচার ভাই নামেন মোরা আইয়া পরচি । এ ভ্যান আলা ভাই এই টাহা ন্যান ।(কোচার ভ্যান থেকে নামলো)
[ভ্যান চালকের প্রস্থান ও রশিদের আগমন]
রশিদঃ- এ বাবু এ আবার কেডা,চেনলাম নাতো?
বাবুঃ- পরিচয় হরাইয়া দি ইনি অইলেন মোগো কোচার মানে আই মিন শিক্ষক । উনি মোগো হাসা শিখাবেন ।
রশিদঃ- কি কও মিয়া হাসার জিন্নে আবার কোচার লাগে নাহি?
বাবুঃ- এহন কতা কওয়ার সোমায় নাই । কোচার ভাইরে রেষ্টে পাডাইতে অবে । উনি কাইল বেইন্নাহালে মোগো হাসা হিয়াবে । কোচার ভাই লন ।
[বাবু ও কোচারের প্রস্থান]
রশিদঃ- এহ হাসার জিন্নে আবার কোচার ভাড়া হইররা লইয়া আইচে । খাইয়া বইয়া কোনো কাম নাই । কাশার জিন্নে আবার কবে কোচার ভাড়া হইররা লইয়া আয় আল্লায় জানে ।
[রশিদের প্রস্থান]
[চরিত্র- বাবু,বুলেট খান,ভ্যান চালক ও রশিদ]
১৮ তম দৃশ্য
[সোনাই ও কালাম একটা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে,দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে বদর]
সোনাইঃ- কিরে বদর তুই যেরোহম দৌরাইয়া হাপাইতে হাপাইতে আইচো হ্যাতে মোনে অইতে আচে বদরের যুদ্দ শুরু অইয়া গ্যাচে ।
বদরঃ- খবর একখান লইয়া আইচি ভাই ।
সোনাইঃ- কিসের খবর?
বদরঃ- বাবুতো কোচার লইয়া আইচে ঢাহাইদদা ।
কালামঃ- কি কও তুই? হেলে শ্যাষ পর্যন্ত হাতেম আলী চাচা কোচার লইয়াই আইচে?
সোনাইঃ- ওরে আল্লা মোর কিন্তু এহন কোচার ভাইরে দ্যখতে ইচ্চা হরতে আচে ।
কালামঃ- হয় মোর ও কোচার ভাইরে দ্যখতে ইচ্চা হরতে আচে,ল মোরা বইয়া না থাইক্কা তিনজোনে কোচার ভাইরে দ্যখতে যাই । কি কও বদর?
বদরঃ- হয় মোরা যাই হেলে ।
[তিন জনার প্রস্থান]
[চরিত্র- সোনাই,কালাম ও বদর]
১৯ তম দৃশ্য
[বাবু কোচার বুলেট খানকে নিয়ে হাতেম আলীর বাড়িতে প্রবেশ করল]
বাবুঃ- চাচা ও হাতেম আলী চাচা দ্যহেন কারে লইয়া আইচি?
[মিনারা বেগমের আগমন]
মিনারা বেগমঃ- তোর চাচায় তো নামায পড়তে আচে বাবু । উনি কেডা?
বাবুঃ- ও চাচি আমহেরে তো কইতে একদম ভুইল্লা গেচি । উনি মোগো কোচার,উনি মোগো হাসি হিয়াবে । ওনার নাম বুলেট খান । এবার ঢংগের মেলায় এই বুলেট খানই মোগো বুলেটের মোতো হাসি হিয়াবে ।
মিনারা বেগমঃ- ওরে আল্লারে কি কও । ওনারে নিয়া ঘরে ঐ চেয়ারে বইতে দে ।
[কোচার বুলেট খান চেয়ারে বসলো,পা দুটো নাড়াতে আছে]
[চরিত্র- বাবু,বুলেট খান ও মিনারা বেগম]
২০ তম দৃশ্য
[ময়না ছোট একটি ছেলেকে নিয়ে হাত ধরে গ্রামের কাচা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে]
কালুঃ- কি ব্যপার ময়না হাইজ্জা গুইজ্জা এই পুচকি পোলাডারে লইয়া কই যাও?
ময়নাঃ- ক্যা তুমি জানো না হাতেম আলী চাচার বাড়ি কোচার আইচে,মুই হেই কোচার দ্যকতে যাই ।
কালুঃ- গ্রামে এতো ছাওয়াল পাওয়াল থাহার পরে আবার এট্টা বিদাশী ব্যডারে দ্যহার জিন্নে তোমার এতো ভাব?
ময়নাঃ- মানে কি?
কালুঃ- না কইতে চাইলহাম কি আমরাতো আর চোহে পরিনা ।
ময়নাঃ- তোমারে আবার দ্যহার কি আচে?সরো এহন ।
কালুঃ- ময়না তুমি খালি মোর উপারডা দ্যাখলা,ভিতরডা একবার ও দ্যখলানা । অচেনা এট্টা মানুষরে দ্যহার জিন্নে তুমি ছোডাছুডি হরতে আচো,আর মোরে চাইর আনার ও দাম দ্যাও না ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- কালু,ময়না ও ছোট একটি ছেলে]
২১ তম দৃশ্য
[হাতেম আলীর বাড়ির উঠানে কোচার একটা চেয়োরে বসা,বাবু পাশে দাড়ানো,হাতেম আলী ঘরের ভিতর থেকে আসছে । কোচারকে দেখতে গ্রামের অনেক মানুষ ভিড় করছে]
হাতেম আলীঃ- বাবু এই ছাওয়ালের বাড়ি কোম্মে?
কোচারঃ- চাচা মিয়া আমার কাছে আসেন আমি কই ।
হাতেম আলীঃ- আচ্ছা কও তুমি,মুই হুনি ।
কোচারঃ- চাচা মিয়া বুলেট আমার নাম । আমার বাড়ি অইচে বরিশালে থাহি ঢাকায় । আমি যে বংশের ছাওয়াল হে বংশের সবাই মার প্যাট দিয়া পইররাই হাইসসা দেয়,কেউ জীবনে কান্দে না ।
হাতেম আলীঃ- বাবু ওনারে ঘরের মোদ্ধে লইয়া যা আর তোর চাচিরে ওনারে নাস্তা দেতে ক । কি কও বুলেট খান?
কোচারঃ- চাচা শোনেন আমার খাওয়ার এট্টা লিষ্ট আচে ।
হাতেম আলীঃ- ঠিকাচে কও তোমার লিশ ।
কোচারঃ- সকালে আমার ২০ টা ডিম লাগে আর ৩৩ টা পরাটা আর এক জগ দুধ আর দুই ঝুড়ি কলা অইলে সকালডা অইয়া যায় । আর দুপুর বেলা দুইটা আস্তা মুরগী আর কেজি তিনেক গরু বা খসির মাংস দিতে পারেন আর তিন কেজি চাউলের ভাত । আর রাত্রে দুই কেজি ওজনের বড় রুই মাছ ,তিন চার কেজি মাংস,১০ টা ডিম আর তিন কেজি চাউলের ভাত আর ১২ খান রুটি ও ৪ টা জেলি ।
হাতেম আলীঃ- বুজ্জি তোমার আর কিচু কওয়া লাগবেনা ।
কোচারঃ- হোনেন চাচা মোগো এলাকার চাইল,ধাবরায় মুরহা রান্দে ডাইল,আবার হেই রোহম হইরেন না ।
হাতেম আলীঃ- কি কও তুমি মিয়া । এ বাবু ওনারে নিয়া রুমে বওয়া । যাও ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- হাতেম আলী,বাবু,বুলেট খান ও গ্রামের কিছু লোক]
২২ তম দৃশ্য
[রাত্রে বাগানে বদর,সোনাই ও কালাম তাস খেলতেছে]
বদরঃ- ধুর তিন জোনে কি আর টাস খেলা যায় ।
কালামঃ- কি হরবি আরাকজন পাবি কই?
সোনাইঃ- ঐ দ্যখ রশিদ আইতে আচে,লাভ রশিদ । ওনারে মোগো লাগে বওয়াইতে অবে ।
[রশিদের আগমন]
কালামঃ- ভাই আমাগো লাগে বয়েন,আমাগো জোরা মিলান । বোঝেন তো তিন জনেতো আর টাস খেলা যায়না ।
রশিদঃ- হোন তোরা,মুই লোকটা খারাপ হইতে পারি কিন্তু মোর এই সুন্নাতি পাঞ্জাবী খারাপ না । এই পোষাক লইয়া মুই তোগো লগে টাস খেলমুনা ।
সোনাইঃ- রশিদ ভাই হেদিন ভুল অইয়া গ্যচে মাপ কইররা দিয়েন ।
রশিদঃ- আরে কি কও,আমি কিচু মোনে হরি নাই । তোরা অইচো মোর এলাকার ছোডো ভাই ব্রাদার । তোগো উপার রাগ হরা যায়? মুই এহন যাই ।
[রশিদের প্রস্থান]
কালামঃ- এ ল,যে যে হ্যার বাড়ি যা আইজ আর টাস খেলমুনা ।
সোনাইঃ- হয় আইজ খেলমুনা । ল,এ বদর ল ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- বদর,সোনাই,কালাম ও রশিদ]
২৩ তম দৃশ্য
[জুলি ও রাজু পথ দিয়ে কথা বলতে বলতে হেটে যাচ্ছে । রাজু সাইকেলটা হাতে নিয়ে হেটে যাচ্ছে]
জুলিঃ- এবার ঢংগের ম্যলায় মুই হামেদ আলী ভাইডির গরম গরম জেলাফি খামু ।
রাজুঃ- তুমি শুধু জেলাপি খাবা আর কিচু খাবানা?
জুলিঃ- না কিন্তু মুই চুরি কিনমু,ফিতা কিনমু,নক মালিশ,লিবস্টীক কিনমু । কি মজা কি মজা ।
রাজুঃ- মুই যদি তোমারে এট্টা পুতুল দি তুমি নেবানা জুলি?
জুলিঃ- কি কও নিমুনা ক্যা মুই তোমারে এট্টু আলাদা চোহে দেহি । তোমারতা না নিয়া কি মুই পারমু?
রাজুঃ- তাইলে তুমি কাইলগো বাগানে আইয়ো তোমারে মুই পুতুল দিমু আনে ।
জুলিঃ- না বাগানে আওয়া লাগবেনা । মুই তোমাগো বাড়ি যামু আনে ।
রাজুঃ- ক্যা মোগো বাড়ি যাইয়া কি হরবা?
জুলিঃ- আরে মুই তোমাগো কোচাররে দ্যখতে যামু ।
রাজুঃ- ওহ ঠিকাচে যাইও,যদিও কোচার ভাইর লগে মোর এহন পর্যন্ত কতা অয় নায় । আচ্চা জুলি এহন তুমি যাও মুই ও যাইতে আচি ।
জুলিঃ- ঠিকাচে মুই যাই ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র- জুলি ও রাজু]
২৪ তম দৃশ্য
[করিম হাতেম আলীর পুকুর থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরতেছে । হাতেম আলী দাড়িয়ে আছে ।]
হাতেম আলীঃ- করিম মোর য্য মোনে অয় মাচে তোর কতা হোনে না ।
করিমঃ- চাচা মাচ কি মানুষ নাহি যে মাচে মোর কতা হোনবে? চাচা মুই কিন্তু ম্যলার দিন খালি সব জাগায ঘুরমু ।
হাতেম আলীঃ- এহ ম্যলার দিন মানুষ থাকপে বেশি আর ওনার ঐদিন ছুডি লাগবে,হারাদিন ঘোরবে এক্কালে ঢংগে বাচেনা ।
করিমঃ- চাচা মোরে কিন্তু কোচার ভাইরে দিয়া হাসি হিয়াবেন ।
হাতেম আলীঃ- আচ্চা দেকমু আনে । তুই এহন কাম হর ব্যডা আর কতা কোম ক ।
[চরিত্র- করিম ও হাতেম আলী]
২৫ তম দৃশ্য
[রাতে কোচার তার রুমে বসা,তখন রাজু তার রুমে প্রবেশ করল]
রাজুঃ- আস সালামু আলাইকুম ভাই ।
কোচারঃ- ওযালাই কুম আস সালাম । তুমি কেডা?
রাজুঃ- ভাই মুই এই বাড়িরই পোলা ।
কোচারঃ- তোমার চেহারা ফাডাফাডি তুমি কি হাসতে পারবা?
রাজুঃ- হয় কোচার ভাই মুই হাসতে চাই,মুই হাসতে পারমু ।
কোচারঃ- হয় হাসা ভালো । হাসলে মন ভালো থাকে,রোগ বালাই দূর হয় ইত্যাদী ।
রাজুঃ- হয় কোচার ভাই ঠিক কইচেন ।
কোচারঃ- ছোট ভাই শেনো আমার জন্য একটা পান আনবা বাবা,রতন,হাকিমপুরি,শোভা,জাফরানি,সুরভী এই জর্দ্দা দিয়া ।
রাজুঃ- ঠিকাচে ভাই আনমু আনে ।
[রাজুর প্রস্থান]
[চরিত্র- রাজু ও কোচার বুলেট খান]
২৬ তম দৃশ্য
[রাত্রে কালু ময়নার রুমের জানালায় টোকা মারল]
ময়নাঃ- কি তুমি এই হানে?(টোকার শব্দ শুনে ময়না জানালা খুলে এই কথা বলল)
কালুঃ- তোমারে দ্যাহার জিন্নে মোর জানডা খুব ছটফড করতে আচে ময়না । আর হেইয়ার জিন্নে দৌড় দিয়া তোমার ধারে চইললা আইলাম ।
ময়নাঃ- তোমার মোন এট্টা বায়না ধরবে আর তুমি মোর ধারে চইললা আবা রাইত বিরাইতে ।
কালুঃ- তায় মুই কি হরমু কও ময়না? তোমার কথা মোনে পরলে মোর মোনডা আনচান হরে,তোমারে মোর দ্যখতে ইচ্চা হরে হেইর জিন্নে চইললা আইলাম ।
ময়নাঃ- মোর কতা খালি তোমার মোনে পরে,না? তুমি মোর লাইগগা কি লইয়া আইচো? এট্টা নেল মালিশ লইয়া আইলে মুই মোর হাতে দেতাম আর তোমার কতা মোনে হরতাম ।
কালুঃ- আচ্চা ময়না হেলে মুই কাইল তোমার জিন্নে নেল মালিশ লইয়া আমু আনে ।
ময়নাঃ- ঠিকাচে জান তাইলে তুমি এহন যাও । কাইলগো নেল মালিশ লইয়া আইয়ো ।(এই কথা বলে ময়না ঠাস করে ওর জানালা বন্ধ করে দিল)
[কালুর প্রস্থান]
[চরিত্র- কালু ও ময়না]
২৭ তম দৃশ্য
[কোচার বুলেট খান সকলকে নিয়ে তার কাজ শুরু করে দিছে]
বাবুঃ- কোচার ভাই মোগো হাসি হিয়ান ।
কোচারঃ- হিয়ামু হিয়ামু সব হিয়ামু । এহন তোরা সবাই ল গ্রামে এট্টু ঘোরতে যামু ।
সোনাইঃ- ঠিকাচে সবাই লইন কোচার ভাইর লগে ।
[রাস্তায় ঘুরতে বের হলো]
বুলেট খানঃ- আমি যেহেতু এই গ্রামের কোচার সে হিসাবে আমার উচিত এই গ্রামের সবাইর সাথে পরিচয় হওয়া ।
কালামঃ- ঠিক কইছেন কোচার ভাই ।
কোচারঃ- বাহ বাহ এই নিজামপুর গ্রামতো খুবই সুন্দার ।
বদরঃ- জে কোচার ভাই ঠিক কইচেন আসলেই মোগো এই নিজামপুর গ্রাম খুব সুন্দার ।
কোচারঃ- ও চাচা আমি এই গ্রামের কোচার ।
চাচাঃ- ও ভালা খবর বাপ ।
কোচারঃ- এ চলো আমরা ঐ সাইডে যাই ।
[চরিত্র- বুলেট খান,বাবু,বদর,সোনাই ও এক চাচা]
২৮ তম দৃশ্য
[এক লোক মাইকিং করতেছে]
মাইকিং ম্যানঃ- সুখবর,সূখবর আমাদের নিজামপুর গ্রামে ঢাকা থেকে বিশ্ব বরেন্য কোচার বুলেট খান এসেছেন । তিনি ঢংগের মেলায় আমাদের হাসি,ঢং টং ইত্যাদী শিখাবেন । এবার আমরা ঢংগের মেলায় জয়লাভ করবো । সুখবর,সুখবর………………….
বাবুঃ- কোচার ভাই হোনতে আচেন আমহেরে লইয়া মাইকে কইতে আচে কি?
কোচারঃ- হ্যা আমিতো বিশ্ব বরেন্যই কোচার । হাসির কোচারের উপারে যদি নোবেল দেতে তাইলে আমি এতদিন নোবেল পুরুষ্কার পেয়ে যেতাম ।
বদরঃ- হয় কোচার ভাই আমহে এডা ঠিক কইচেন ।
কোচারঃ- আচ্চা গ্রামতো সব দেখলাম । এখন বাড়িতে যাই সবাই ।
সোনাইঃ- হয় কোচার ভাই লইন যাই বাড়ি যাই ।
[সকলে পথ দিয়ে যাচ্ছে]
[চরিত্র- বুলেট খান,বাবু,বদর,সোনাই ও মাইকিং ম্যান]
২৯ তম দৃশ্য
প্রথম লোকঃ- আমহে কি ভাই কোচার বুলেট খান?
বুলেট খানঃ- হ্যা আমি কোচার বুলেট খান,চাবাই খালি পান ।
প্রথম লোকঃ- ওরে আল্লারে ভাই আমহে এট্টু খারাইন আমহের লগে এট্টু সেলফি তুলমু ।
বুলেট খানঃ- ঠিকাছে তোলো সেলফি ।(সেলফি তুলল)
২য় লোকঃ- ভাই আমহের কতা অনেক হুনচি । মুইও আমহের লগে এট্টু সেলফি তুলমু ।
বুলেট খানঃ- কিসের সেলফি তুলতে আইছো । একটু হাসতে হবে তুমিতো হাসতেই পারোনা ।
২য় লোকঃ- ভাই আমি এই হাসি ।(লোকটি মুখ ভেংচাইয়া হেসে দিল)
বুলেট খানঃ- ওরকম না । এইরকম হাসো ।(বুলেট খান খুব একশন করে হাসিয়ে দেখাইলো)
২য় লোকঃ- ঠিকাছে ভাই এবার হাসছি । এবারতো মুই আমহের লগে সেলফি তুলমু ।(সেলফি তুলল)
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- বুলেট খান,প্রথম লোক,২য় লোক ও সাথে বাবু,বদর,সোনাই]
৩০ তম দৃশ্য
[এক ক্ষুদার্থ ফকিরের বাজারের একটি দোকানে আগমন]
ফকিরঃ- ও বাজান মুই হারাদিন কিচু খাই নাই,মোরে এট্টা দুত চা আর এট্টা পাম রুডি দ্যাও ।
দোকানদারঃ- এ ফহির অইয়া আবার দুত চা খাইতে চায় ।
ফকিরঃ- বাপজান মুই ফহির অইতে পারি কিন্তু মুইতো মানুষ ।
দোকানদারঃ- কুত্তার প্যাডে কি ঘী সয় ।(এই কথা বলে দোকানদার ফকিরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল)
[রাজু এসে ফকিরকে হাত ধরে মাটি থেকে উঠাইল এবং সে ফকিরকে পেট ভরে খাওয়াইল]
রাজুঃ- চাচা আমহের প্যাট ভরচে তো?
ফকিরঃ- হয় বাবাজি ভরচে ।
রাজুঃ- সামনে মোগো বাড়ি ঢংগের মেলা আচে,আমহে হেইয়ানে যাইয়েন সবকিছু প্যাট ভইররা খাইতে হারবেন ।
ফকিরঃ- ঠিকাচে বাবাজি ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র- ফকির,দোকানদার ও রাজু]
৩১ তম দৃশ্য
[কোচার ও বাবু,ময়নাদের পথের দিকে যাচ্চে]
ময়নাঃ- ওরে আল্লা কোচার ভাই আমহে আমাগো বাড়ির দিকে আইতে আচেন । আমার তো বিশ্বাসই হইতে আচেনা ।
বাবুঃ- এতে অবিশ্বাসের কি আচে ময়না?
কোচারঃ- মযনা তুমি অনেক সুন্দর । তোমার কথা বার্তা ও খুব সুন্দর ।
ময়নাঃ- ও আল্লা কোচার ভাই আমহে কন কি,মুই সত্যি সুন্দার?
কোচারঃ- আমি মিথ্যা বলবো কেনো বলো?
বাবুঃ- প্রথম দিন দ্যখচে তো তোমারে এই জিন্নে তোমারে সুন্দার কইতে আচে । এরপর আর সুন্দার কবে না ।(ময়নার কানে কানে বলল)
ময়নাঃ- এ আমারে দেইখখা তোর হিংসা অইতে আচে না । আমারে কেউ ভালো কইলে তোর ভাললাগেনা,না?
কোচারঃ- আচ্ছা আবার পরে কথা হবে । এখন যাই ।
ময়নাঃ- কি কন কোচার ভাই এহনই যাবেন । মোগো বাড়ি আইয়া কয়ডা চাউল ভাজা খাইয়া যান ।
কোচারঃ- অন্য এক সময় আসবো । তুমি সুন্দর তাই আমি চেয়ে থাকি,সে কি মোর কোনো অপরাধ । এ চল বাবু ।
বাবুঃ- হয় লইন কোচার ভাই ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- কোচার বুলেট খান,বাবু ও ময়না]
৩২ তম দৃশ্য
[কোচার ঘরের ভিতরে বসে লাঞ্চ করতেছে]
মিনারা বেগমঃ- বাবা এই তোমার তিন কেজি চাউলের ভাত,মাংস সবকিছু আছে ।
হাতেম আলীঃ- হয় বাবা ইচ্চা মোতো খাও ।
কোচারঃ- মাংসটা খুব টেষ্ট হইচে ।(কোচার ইচ্ছা মতো খাইতেছে)
হাতেম আলীঃ- বাবা মোরা ঢংগের ম্যালায় হাসির পতিযোগিতায় জেততে পারমু আনে?
কোচারঃ- চাচা এই বুলেট খান বিশ্ব বরেন্য কোচ । বুলেট খান জীবনে ও হারে নায় ।
হাতেম আলীঃ- হ্যরপর ও বাপ ভয় লাগতে আচে ।
কোচারঃ- ভয়ের কি আচে চাচা । কইলাম তো আমার বংশের সবাই মার পেট থেকে পইররাই হাইসসা দেয় ।
হাতেম আলীঃ- মাশাল্লাহ বাবা । জেততে পারলে মুই দুই রাকাত মানতি নামায পরমু ।
কোচারঃ- চিন্তা কইরেন না জেতপেন ২০০ পারসেন্ট । আমি হাসাইয়া ছাড়মু এই গ্রামকে । শালুকপচা গ্রামকে আমরা একেবারে পঁচা পঁচা বানাইয়া ফেলবো ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- মিনারা বেগম,হাতেম আলী ও কোচার বুলেট খান]
৩৩ তম দৃশ্য
[রাত্রে সোনাই,বদর ও কালাম মসজিদের পুকুরে মাছ চুরি করতেছে]
সোনাইঃ- এ মাছ গুলা ব্যাগে ভর কালাম ।
বদরঃ- এবার মাচ আরো বেশি ওরচে জালে ।
কালামঃ- দে দে মাছগুলা এদিক দে ব্যাগে ভরি ।
[রশিদের আগমন]
রশিদঃ- এ তোরা মসজিদের পুহুরের মাছ ধরো ক্য?
সোনাইঃ- রশিদ ভাই কতা কইও না । তোমারে ভাগ দিমু আনে ।
রশিদঃ- না মোর ভাগ লাগবেনা । মুই হাতেম আলী চাচারে সব কইয়া দিমু ।
কালামঃ- এ বদর আর সোনাই হালারে ধর এট্টা বানান দিয়া দি ।
বদরঃ- হয় ধর ।
রশিদঃ- খবরদার মোর গায় হাত দিবি না ।
[এরপর তিনজনে মিলে রশিদকে ইচ্ছা মতো মারলো আর মাছ চুরি করে নিয়া গেল]
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- সোনাই,বদর,কালাম ও রশিদ]
৩৪ তম দৃশ্য
[সকালবেলা কোচার সবাইকে নিয়া হাসি শেখানোর জন্য উঠানে বসলো]
কোচারঃ- আর মাত্র দুইডা দিন পর ঢংগের মেলার হাসি প্রতিযোগিতা হবে । তাই তোমাদের সকলের হাসতে হবে । এই বাবু তুমি হাসো তো ।
বাবুঃ- জে হাসতে আচি ।(ফক্কাত দাত বের করে)
কোচারঃ- না এ হাসি হয় নাই । এ সোনাই তুমি হাসোতো ।
সোনাইঃ- এইতো মুই হাসতে আচি ।(হিহি)
কোচারঃ- না এ হাসি ও হয় নায় । এ বদর তুমি হাসোতো ।
বদরঃ- কোচার ভাই মুইতো অলটাইম হাসি । হো হো হো ।
কোচারঃ- না কারো হাসি হয় নাই । শোনো সবাই হাসির অনেক প্রকারভেদ আছে । যেমন এইটা অট্র হাসি,এইটা মিষ্ট হাসি,এইটা শয়তানি হাসি,এইটা পাগলা হাসি আর এইটা লাভ হাসি ।(কোচার এক একটা হাসি নিজে হেসে সবাইকে দেখাইল)
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- বাবু সোনাই,বদর ও কোচার বুলেট খান]
৩৫ তম দৃশ্য
[দেকানে ঢংগের মেলার হাসি নিযে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে]
বুড়ো লোকঃ- এবার বোজো কি মোগো নিজামপুর গ্রাম ঢংগের ম্যলায় জেততে পারবে?
দোকানদারঃ- ঢাহা দিয়া বিশ্ব বরেন্য কোচ আনচে জিইততা গেলেও যাইতে পারে ।
যুবকঃ- কাম অবেনা যত বড় কোচ আনুক না ক্যা ।
বুড়ো লোকঃ- দেহি জেতে না ঠগে । শালুক পচারা ওতো কোচ আনচে বোলে?
দোকানদারঃ- হয় হ্যগো বরিশাইললা কোচ ।
[এদিকে ময়না ও জুলি আলোচনা করতে আছে]
ময়নাঃ- হে হে জুলি এবার মোরা জিতমু কি মজা ।
জুলিঃ- হয় আল্লায় দেলে জিতমুই জিতমু ।
ময়নাঃ- মোরা জেততে পারলে মুই কোচার ভাইরে বিয়া হরমু ।
জুলিঃ- ভালো,আর মুই বিয়া হরমু রাজুরে । নিজামপুর গ্রাম জেতপে জেতপে ।
[এখান থেকে ওরা কল্পনায় গানের ভূবনে হারিয়ে যাবে]
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- দোকানদার জালাল,যুবক,বুড়ো লোক,ময়না ও জুলি]
৩৬ তম দৃশ্য
[রাত্রে হাতেম আলী ও তার স্ত্রী মিনারা বেগম শুয়ে শুয়ে কথা বলতেছে]
মিনারা বেগমঃ- কি আমহে ঘুমান না ক্যা?
হাতেম আলীঃ- ঘুম আবে কি রোহম রাজুর মা । পশশু অইচে ঢংগের মেলার পতিযোগিতা । মুই তো হেই চিন্তায় আচি ।
মিনারা বেগমঃ- চিন্তা হরা লাগবে না । মোগো কতো বড় কোচ আচে না ।
হাতেম আলীঃ- আরে রাজুর মা হ্যারপর ওতো চিন্তা আচে কি অয় না,না অয় ।
মিনারা বেগমঃ- আমহে ঢং না দেহাইয়া ঘুমান এহন ।
হাতেম আলীঃ- বেইন্নাহালে আবার চেয়ারমানের ধারে যাওয়া লাগবে । হে অনুষ্টানে চিপ গেস থাকপে ।
মিনারা বেগমঃ- যাইয়েন,হ্যা বেইন্নাহালে যাইয়েন ।
[চরিত্র-হাতেম আলী ও তার স্ত্রী মিনারা বেগম ]
৩৭ তম দৃশ্য
[চেয়ারম্যানের বাড়িতে হাতেম আলীর আগমন]
হাতেম আলীঃ- চেয়ারমান সাব পশশু মোগো গেরামে ঢংগের মেলা অনুষ্টানে আমহের থাকতে অবে চিপ গেস ।
চেয়ারম্যানঃ- মুইতো এমনিই ব্যস্ত । যাউক হ্যারপর ও থাকমু আনে ।
হাতেম আলীঃ- ঠিকাচে যাবেন কোলো ।
চেয়ারম্যানঃ- আইচ্ছা যামু আনে ।
হাতেম আলীঃ- মুই তয় এহন উডি ।
চেয়ারম্যানঃ- ঠিকাছে হাতেম সাব ।
[হাতেম আলীর প্রস্থান]
[চরিত্র- হাতেম আলী ও চেয়ারম্যান]
৩৮ তম দৃশ্য
[সোনাই,বাবু,বদর এরা অনুষ্ঠানের স্থানে মঞ্চ তৈরি করতেছে]
সোনাইঃ- এ ভালো হইররা ঠিক কর বোঝনা চেয়ারমান আবে ।
বদরঃ- হয ঠিক কইচো । চেয়ারমানের এট্টা মানিজ্জাত আচেনা ।
বাবুঃ- জেততে না পারলেতো মানিজ্জাত মোগো সব যাবে আনে ।
সোনাইঃ- হোন মোরা জিতমু,চিন্তা হরিস না তোরা ।
বদরঃ- বেশি কতা না কইযা কাম হর ব্যডা ।
সোনাইঃ- অইয়া গ্যাচে সব হাজাইন্না,আরতা কাইলগো হাজামু আনে । এহন মোরা ল ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- সোনাই,বাবু ও বদর]
৩৯ তম দৃশ্য
[আজ চলে আসছে ঢংগের মেলার প্রতিযোগিতার দিন]
হাতেম আলীঃ- শালুকপচা গেরামের পরিচালক ভাই আমহেরা কি রেডি?
পরিচালকঃ- হয় ভাই মোরা রেডি আচি ।
হাতেম আলীঃ- ভালো । মোরা ও রেডি । এহন চেয়ারমান সাব অইলে ঢংগের ম্যালা শুরূ হইররা দেতে পারি ।
পরিচালকঃ- তায় এট্টু বার চাইন । চেয়ারমান না আইলে তো আর খেলা মজবে না ।
হাতেম আলীঃ- হয় বার চামু । ওই তো চেয়ারমান সাব আইয়া গেছে ।
[চেয়ারম্যান স্টেজে বসলো,দুই দল প্রস্তুত । হাজার হাজার দর্শক]
চেয়ারম্যানঃ- এ আপনারা ঢংগের মেলার হাসির খেলা শুরু করেন ।
হাতেম আলীঃ- এইতো এহনই শুরূ অবে চেয়ামান সাব ।
[চরিত্র- হাতেম আলী,পরিচালক ও চেয়ারম্যান]
৪০ তম ও শেষ দৃশ্য
[নিজামপুর ও শালুকপচা গ্রামের ৫ জন করে খেলোয়াড় রেডি]
আম্পায়ারঃ- বাঁশি দেওয়া মাত্র আমহেরা দুই দল হাসা শুরু হরবেন ।
[আম্পায়ার বাঁশি দিল কিন্তু কোনো দল হাসতে পারতেছে না]
অচেনা এক লোকঃ- আমি খুব হাসতে পারি ।
চেয়ারম্যানঃ- তাহলে তুমি হাসো ।
[অচেনা লোকটি খুব সুন্দরভাবে বিভিন্ন আইটেমে হাসি দিল । দর্শক খুব তালি দিচ্ছে ।]
চেয়ারম্যানঃ- যেহেতু দুই দলের কোনো দল হাসতে পারে নায় সেহেতু এই লোকটি ই আজ জয়লাভ করছে । এ তোমার নাম কি?
অচেনা লোকঃ- মোর নাম সুমন । মোর বাড়ি স্যার এই নিজামপুর গ্রামেই ।
চেয়ারম্যানঃ- ওহ আচ্ছা । সুমন যখন নিজামপুর গ্রামেরই বাসিন্দা তাইলে আজকের ঢংগের মেলায় নিজামপুর গ্রামই জিতছে ।(চেয়ারম্যান সুমনের হাতে পুরুষ্কার তুলে দিল)
[পুরো নিজামপুর গ্রামের মানুষ চিৎকার দিয়ে আনন্দে মেতে উঠলো । তারা সুমনকে মাথায় নিয়ে ঘোরাঘুরি শুরু করলো । অবশেষে ঢংগের মানুষেদের ঢং সং এখান থেকেই শেষ হলো । ঢংগের মানুষে জিতে গেলো নিজামপুর গ্রাম]
[চরিত্র- এখানে প্রায় সব চরিত্রই থাকবে,তবে অচেনা লোক সুমন আকর্ষন]
[সমাপ্ত]



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×