প্লিজ, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে খেলা শুরু করেছেন দয়া করে সেটা বন্ধ করুন। আপনি জামায়াত-শিবির, যুদ্ধাপরাধীদের মাথায় তুলে নৃত্য করেন, তাদের আদর-যতেœ লালন করেন, ইচ্ছেমত পোষেন কারো কোন আপত্তি নেই। কিন্তু দয়া করে মিথ্যাচার করবেন না। এর ফল কিন্তু মোটেই ভাল হয় না। মনে রাখবেন. ইতিহাস থেকে শিা না নিলে ইতিহাস কিন্তু কাউকে মা করে না। এটাই হচ্ছে ইতিহাসের নির্মম সত্য। মতায় যাওয়া জন্য যা খুশী তা বলে বেড়াবেন না। মুখে যা আসে তাই বলবেন না। এর পরিমান কিন্তু খুবই ভয়াবহ। আপনি যাদের হয়ে এতো কথা বলছেন, মিথ্যাচার করছেন, মতায় যাবার জন্য যাদেরকে আপনি মাথার উপর তুলে রেখেছেন, তারাই কিন্তু আপনার জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। সেই দিন বেশি দূরে নয়। এখন হয়তো রঙ্গিন চশমায় সব কিছু দেখছেন রঙ্গিন, বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন।
আপনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আপনার কাছ থেকে দেশের জনগণ আরো পরিণত ও দায়িত্বশীল আচরণ এবং বক্তব্য আশা করে। ক্রোধ, ােভ, লোভ-লালসা এসবের উর্ধ্বে থেকে আপনি জনগণের জন্য কথা বলবেন, দেশের মানুষের সুখ-দুঃখের কথা বলবেন। কিন্তু আপনি সিঙ্গাপুর থেকে তড়িগড়ি করে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনের নামে যে বিবৃতিটি তোতা পাখির মত পাঠ করে গেলেন, সেখানে সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের জবাব দেননি। ওই বিবৃতিতে আপনি বললেন, দেশে গণহত্যা(!) চলছে। কিন্তু গণহত্যার সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা কোনটাই দিলেন না। একবারও বললেন না, মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮ ফেব্র“য়ারি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায়ের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবিরের তান্ডবের কথা। ধর্মের নাম বিক্রি করে যারা দিনে পর দিন ভন্ডামি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেশের মূল্যাবন স্থাপনা পুড়িয়ে দিয়েছিল, আগুন দিয়েছিল থানা এবং পুলিশ ফাঁড়িতে, সরকারি বিভিন্ন দফতরে হামলা চালিয়ে লুটপাট, ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছে, বিদ্যুৎ স্টেশন পুড়িয়ে দিয়েছে, দেশের সম্পদ সম্পদ নষ্ট করেছে সেসব বিষয়ে আপনার ওই তোতা পাখি মার্কা বিবৃতিতে একবারও উচ্চারণ করলেন না। পুলিশকে যেভাবে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সে বিষয়ে একবারও টু শব্দ করেননি। দুঃখ বা নিন্দা প্রকাশ তো দূরের কথা। বাঁশখালি, নোয়াখালীর রাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিষয়েও আপনি কোন কথা বললেন না। আপনার এমন বিবৃতিতে দেশের প্রতিটি নাগরিকই হতাশ হয়েছে। অবশ্য কারো কারো মতে, আপনি যে খেলায় মেতে উঠেছেন, তাতে এসব ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ কিংবা নিন্দা জানানোর কথা আপনি বলতে পারেন না এটাই স্বাভাবিক। আর আপনার এই বিবৃতির পর জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী চক্র আরো বেপরোয়া হয়ে তান্ডব চালালো।
বেগম খালেদা জিয়া এরপর আপনি সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেটা দেয়ার েেত্রও আপনি ছিলেন দারুণ কৌশলী। আপনি সব ঘটনার জন্য সরাসরি মতাসীন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিকদের দায়ি করেছেন। তারপরও আপনার মুখ দিয়ে একবারও বের হয়নি জামায়াত-শিবিরের নাম!
যাকগে, এসব বিষয়ে এখন কিছু বলার জন্য আমার এই লেখা নয়। আমার লেখার বিষয়বস্তু হচ্ছে আজ বুধবার (১৩ মার্চ/১৩)আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে সে বিষয়ে।
বেগম জিয়া আপনার প্রতি সম্মান রেখে বলছি, গণজাগরণ মঞ্চ আপনার বা আপনার দল বিএনপি’র প্রতিপ নয়। গণজাগরণ মঞ্চ ধর্মের প্রতিপ নয়। গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিপ শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধী ঘাতক-দালাল রাজাকার, আলবদর, আল শামস জামায়াত-শিবির। গণজাগরণ মঞ্চ শুধুমাত্র তাদের প্রতিপ। যারা একাত্তরে এদের শ্রেষ্ট সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। যারা এদেশের সাধারণ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা এবং হত্যার কাজে পাকিস্তানী হানাদারদের সহযোগিতা করেছিল। গণজাগরণ মঞ্চ শুধু তাদের প্রতিপ যারা এখনো আপনার এবং আপনার দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে বলে বেড়ায় আমাদের ইতিহাসের মহাকাব্যিক ঘটনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল গন্ডগোল, গৃহযুদ্ধ। মানবতাবিরোধী এসব অপরাধীদের ফাঁসির দাবি নিয়েই আজ গণজাগরণ মঞ্চ দেশের মানুষের কাছে হাজির হয়েছে। মনে রাখবেন এই গণজাগরণ মঞ্চ একদিনে তৈরি হয়নি। এটি তৈরি হয়েছে দীর্ঘ ৪২ বছরের ােভ-বঞ্চনা আর বিচার না পাওয়ার বেদনা থেকে।
অথচ আপনি আজ দুই বছর আপনার সংগঠন বিএনপি’র নয়াপল্টনের কার্যালয়ে গিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য রাখলেন তা সত্যিই হাস্যকর। আপনার বক্তব্যে আমরা হতাশ হইনি, দেশের ১৬ কোটি জনগণও হতাশ হয়নি। মানুষ বিশ্বাস করে আপনার মুখ থেকে এর চেয়ে ভালো আর কিছু আশা করা যায় না। আপনি বললেন, “সরকার নাস্তিকদের পাহারা দিয়ে, খাওয়া-দাওয়া দিয়ে লালন করছে।’ মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে এটি করা হচ্ছে।”
আপনার মুখ থেকে নতুন প্রজš§ এটা আশা করেনি। গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, বিনীত অনুরোধ সেটি প্রত্যাহার করেন। আপনি গণজাগরণ মঞ্চ দেখে এতোটাই ভয় পেয়েছেন যে, আপনার মতায় যাওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। এ জন্য আপনি যা খুশি তা বলে যাচ্ছেন। জামায়াত-শিবিরকে কোলে নিয়ে আজান দিয়ে মাঠে নেমেছেন। একাত্তরে এই জামায়াত-শিবিরই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করেছিল। প্রচার চালিয়েছিল এই বলে, যে যারা বাংলাদেশ চায় তারা হিন্দু, তারা ইসলামের শত্র“, ধর্মের শত্র“। পাকিস্তানের অখন্ডতা রা করতে, ইসলাম রা করতে হলে এদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) প্রতিহত করতে হবে। আজ সেই একই খেলায় তারা মেতে উঠেছে। গত কয়েকদিনে তারা ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে সফল হয়নি। আজ আপনি একজন দায়িত্বশীল নেতা হয়ে গণজাগরণ মঞ্চকে নাস্কিক বললেন, তাতে আপনিই ধর্মকে ব্যবহার করলেন আমাদের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। আপনি আরেকদফা আমাদের ধর্মপ্রাণ সহজ-সরল মানুষকে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়ার কাজটি করলেন। গণজাগরণ মঞ্চ স্বাধীনতা এবং ইসলামকে মুখোমুখি করেনি। বরং আপনিই আজ আরেকবার প্রমান করলেন স্বাধীনতা ও ইসলামকে আপনি মুখোমুখি করছেন। মনে রাখবেন, গণজাগরণ মঞ্চ এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির বাইরে অন্য কোন দাবি করেনি।
আমরা বুঝি, আপনি ভোটের রাজনীতির হিসাব-নিকাষ করছেন। গণজাগরণ মঞ্চ যেভাবে জামায়াত-শিবির এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে তাতে দেশের মানুষ জামায়াত-শিবিরের প্রতি শুধু ঘৃণাই ছুড়ছে। আর এতে করে আপনার মতায় যাবার হিসাবটি জটিল হয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই আপনার যত ভয়।
আরেকটা কথা। আপনি বলেছেন, ‘এসব মঞ্চ-ফঞ্চ বানানো বন্ধ করুন। জনগণের মঞ্চ তৈরি হলে রা পাবেন না।’
মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী একটা মনে রাখবেন, শাহবাগে যে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়েছে সেটি টাকা দিয়ে করা হয়নি। এটা জোর দিয়ে বলতে পারি এ কারণেই যে, এখানে যারা যায় তারা দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করে। বিশ্বাস করে, এই দেশ একদিন অসাম্প্রদায়িক একটি রাষ্ট হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হবে।
আপনি চাইলেও কোটি কোটি টাকা খরচ করে এমন গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করতে পারবেন না। তাই আপনি সরকারের প্রতি হুমকি দেন ভাল কথা, কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে দয়া করে মিথ্যাচার করবেন না- প্লিজ...প্লিজ...প্লিজ...।