somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় ভারতীয় সিনেমা পরিহার করা যৌক্তিক নয় কি....???

১৩ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের বাজারের বিরাট অংশ ভারতের দখলে। বাকি ছিল চলচ্চিত্র শিল্প। এবার এ শিল্প ধ্বংসের নাকাড়া বাজিয়ে দিচ্ছে ভারত। এতে সহায়তা করছে সরকার। ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। ভারতের চাপে সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে সূত্র জানায়। এজন্য গত বছর নতুন নীতিমালায় চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে মর্মে এসআরও জারি করে সরকার। বাণিজ্য ও তথ্য মন্ত্রণালয় সিনেমা আমদানির নতুন পরিকল্পনা করছে। এতে দেশের চলচ্চিত্র ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিল্পীরা। তাদের মতে, নীতিমালা না থাকা, সরকারি অনুদানের অভাব, নিচুমানের সিনেমা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে এমনিতে চলচ্চিত্র সঙ্কটের চূড়ান্ত সীমায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চলচ্চিত্রকার বলেন, ‘চলচ্চিত্র ধ্বংস করতে সার্কের চলচ্চিত্র প্রদর্শনের নামে ভারতীয় ছবি আমদানির চেষ্টা করছে সরকার। সার্কভুক্ত দেশ পাকিস্তান, ভুটান এখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করে না। এদেশে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপালের ছবির চাহিদা নেই। এটা চলচ্চিত্রসহ দেশীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি, স্বকীয়তা ধ্বংসের পাঁয়তারা।’ তার প্রশ্ন, ‘সেন্সর নীতিমালা, চলচ্চিত্র নীতিমালা তৈরি করতে সরকার ব্যর্থ। এর সমাধানের বদলে ভারতীয় ছবি আমদানি করার এ সর্বনাশা সিদ্ধান্ত কার স্ব্বার্থে নেয়া হচ্ছে এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।’
ভারতীয় রাজনীতিক, কলামিস্ট শশী থারুর মতে, ‘কামান, বন্দুকের বদলে টিভি চ্যানেল, সিনেমা স্টুডিও দিয়ে ভারত বিশ্বজয়ে নেমেছে।’ ভারতীয় শিল্প বণিক-শিল্প মহাসংঘ, গ্লোবাল কনসালট্যান্ট’র যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি প্রকাশিত এক হিসাবে বলা হয়, ‘ভারতীয় চলচ্চিত্র ১১ শতাংশ হারে রাজস্ব সংগ্রহ করে ২০১০ সালে আয় ২ হাজার ৪২৫ কোটি ডলারে পৌঁছে। এ আয় আরও বাড়াতে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।’ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, ভারত সরকারের এ উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকার সহায়তা করছে।
তথ্য মতে, গত বছরের মাঝামাঝি ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানি, প্রদর্শনের অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গোপনে আবেদন করে ঢাকার সিনেমা হল মালিকদের সংগঠন মেট্রোপলিটন এক্সিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশন। সরকারের সমর্থন পেতে ভারতীয় মন্ত্রীকে দিয়ে তদবির করানো হয় বলে তখন অভিযোগ ওঠে। সরকার বাধ্য হয়ে আমদানি নীতিমালা পরিবর্তন করে নতুন নীতিমালায় চলচ্চিত্র আমদানি করার এসআরও জারি করে। এর বিরুদ্ধে দেশের শিল্পী, কলাকুশলীরা আন্দোলন করেন। এক পর্যায়ে সরকার এসআরও পরিবর্তন করে আমদানির বিধান বাতিল করে। এসআরও জারি, এটি বাতিল করার মধ্যবর্তী সময়ে প্রেক্ষাগৃহের কয়েক মালিক এলসি করে ভারতীয় তিনটি সিনেমা (সংগ্রাম, বদলা, জোর) আনেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেন্সর বোর্ড থেকে অনাপত্তি না পাওয়ায় ওই তিন ছবি দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। আদালত এসআরও বাতিলের আগে আনা চলচ্চিত্র তিনটির ব্যাপারে অনাপত্তি দিতে নির্দেশ দেন গত ২৭ মার্চ।।
রায় বাস্তবায়ন, না আপিল করা হবে—জানতে চাইলে সেন্সর বোর্ডের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’ এ প্রসঙ্গে নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য জানা যায়নি। তথ্যসচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন জানান, ‘এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। মতামত পাওয়ার পর তথ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’
সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয় রায় বাস্তবায়নের পক্ষে। অন্যদিকে সেন্সর র্বোড সূত্র জানায়, সিনেমা আমদানির বিধান বাতিল করার বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা উচ্চ আদালতে আরও একটি রিট করেন।
জানা যায়, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় থেকে ভারতীয় ছবি আমদানি, প্রদর্শন এদেশে বন্ধ করা হয়। ১৯৭২ সালে আবার আমদানির দাবি উঠলেও ওই সময় সরকার তা করেনি। এরপর বিভিন্ন সরকারের সময় দাবি উঠলেও কোনো সরকার আমদানির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, মহাজোট সরকার ভারতীয় ছবি আমদানির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
অন্যদিকে বলিউড সিনেমার আগ্রাসন এরই মধ্যে দেশের সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিচ্ছে। দেশের অলিগলির সিডি দোকান ভারতীয় সিনেমা, গানের সিডি-ভিসিডি, ডিভিডিতে সয়লাব। হিন্দির ভিড়ে অনেক দোকানে বাংলা গান, সিনেমার সিডি, ভিসিডির ঠাঁই হচ্ছে না। বলিউডে ছবি মুক্তি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশে সিডি আকারে চলে আসে। তরুণ প্রজন্ম সেসব সিডি কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছে। এসবে উত্সাহ দিচ্ছে দেশের মিডিয়া। বেসরকারি রেডিও চ্যানেলগুলো হিন্দি গানের অনুষ্ঠান প্রচার করছে। চারটি এফএম রেডিওতে ঘণ্টায় ৪ থেকে ৫টি হিন্দি গান প্রচার হচ্ছে। প্রথমসারির দৈনিক পত্রিকাগুলোর বিনোদন পাতাজুড়ে থাকে ভারতীয় অভিনেতা, অভিনেত্রীদের খবর। অথচ এদেশের অভিনেতাদের নিয়ে ভারতীয় পত্রিকায় তেমন খবর থাকে না। মুঠোফোন কোম্পানিগুলো ফোনের রিং টোনে দিচ্ছে হিন্দি গান। এক্ষেত্রেও নেই কোনো নীতিমালা।
দেশীয় চলচ্চিত্র ব্যবসায় মন্দার কারণে সিনেমা হল ভেঙে নির্মাণ হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন, বিপণি বিতান।


বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির জরিপে দেখা যায়, সারাদেশে এখন ৭৪০টি সিনেমা হল আছে। নব্বইয়ের দশকে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২০০-এর বেশি। বন্ধ হওয়ার পথে আছে আরও প্রায় ৪০০টি। এর মধ্যে ১১৫টি হল ঈদ-পূজা ও বিভিন্ন মৌসুমে দুই-এক শিফট চলে। চলচ্চিত্রের মন্দা ব্যবসায় হাতগুটিয়ে বসে আছে প্রযোজক প্রতিষ্ঠানগুলো। হলে দর্শক ধারাবাহিকভাবে কমছে। নিম্নমানের সিনেমা, অশ্লীলতার অভিযোগে উচ্চ, মধ্যবিত্ত রুচিশীল দর্শক হলবিমুখ বেশ আগে থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনঘনিষ্ঠ, বাস্তবধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ না হওয়ায় বাংলা চলচ্চিত্র পিছিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রে রাজনীতিক, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশ, সমাজপতিদের নিয়ে বাস্তবধর্মী সিনেমা নির্মাণ হলেও বাংলাদেশে এমন ছবি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাচ্ছে না। অনেক সময় বিভিন্ন অভিযোগে ছবি প্রদর্শনে বাধা দেয়ার ঘটনাও ঘটে।

Click This Link
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×