somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সারমেয় সংলাপ

০৮ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা দীর্ঘ স্থবির রাত শেষে স্ফুলিঙ্গের মত জেগে উঠতে থাকা আধ-ঘুমন্ত কাকেদের একদা একদল শ্বেত ভাল্লুক পুড়িয়ে দিয়েছিল সূর্যরশ্মির জ্বলন্ত আয়নায় ঝলসে। পোড়া কাকেদের গন্ধে বিলীন হলো মৃত শহর। আত্মম্ভরী আয়না তার ছায়া গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো উদ্ধত গ্রীবা উঁচিয়ে।
আয়নায় প্রতিফলিত হলো সূর্য,
হলো চাঁদ,
হলো বৃষ্টি,
হলো কুয়াশা,
শুধু প্যারানয়িক মেঘেদের প্রতিফলন হলো না।
প্রিয়তম ঈশ্বর,তুমি কি জানতে - পোড়া কাকেদের শহর অন্ধকারে ডুবে যাবার পূর্বে কয়েকটা জোনাক পোকা আলোক বিকিরণ করেছিল সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল বেগে? অতঃপর তারা হাউইয়ের মত পাক খেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল তোমার গোলকধাঁধাঁ আকাশমহলে। টানা ছাউনির মত তোমার আকাশ আমাদের মাথার উপর চাঁদোয়া হয়ে হা করে ঝুলে রইলো বিব্রত ভঙ্গিতে। তাতে জোনাকের ছায়া দৃশ্যমান হলো না। চাঁদোয়ার নিচে একদল বাণিজ্যিক কুকুর কর্কশ স্বরে চেঁচিয়ে যেতে লাগলো একটানা। তার সম্মোহনে সারি বেঁধে একে একে এসে জড়ো হলো আরো কয়েক লক্ষ কুকুর ও কুক্কুরী। সমস্বরে তাদের সিসিফাস সঙ্গীত প্রতিধ্বনিত হলো লোকালয় থেকে বনভূমি,
বনভূমি থেকে নদী,
নদীর পরে সমুদ্র,
সমুদ্র অতিক্রম করে উপত্যকা,
উপত্যকা পেরিয়ে মালভূমি
অবশেষে আকাশের চূড়ায়!
আজকাল আকাশের দলছুট উদাসীন মেঘেদের ভাঁজে ভাঁজেও কান পাতলে অনায়াসেই শোনা যায় তাদের ক্লান্তিহীন অবিরাম সিসিফাস সুর।
আমরা মোহগ্রস্থ বংশীবাদকের দল মদির সঙ্গীতে ডুবে থাকি। চোখ ফেরানোর অবকাশে শ্রবণেন্দ্রিয় অতিক্রম করে জংধরা পরভৃৎ আয়নায় তীক্ষ্ণ আঘাত হানে আরো একদল নেশাগ্রস্থ কুকুরের শীত্কারের তারস্বর আর্তনাদ। তারা বয়ে নেয়,বয়ে যায় চির অনুশীলিত পাপের ছায়াধ্বনি। কেউ কেউ তা শুনেও না শোনার ভান করে থাকে ; যদিও আমরা সকলেই জানি - পৃথিবীর উঠোন থেকে ক্যাকটাসের আগায় অদৃশ্য টানসুতো ধরে ঝুলে থাকা ছায়ারোদগুলো মুছে গেলেও, কখনো বিলীন হবে না তার অনুভূতিজড় উন্মত্ত জৈবিকাচরণ। রাত্রি তার সমস্ত শীতলতা নিয়ে আমাদের আঙ্গুলের হাড়ের ভেতর সন্তর্পনে আশ্রয় নিলে আমরা অখন্ড মনযোগে কাগজের ফুল চাষাবাদে প্রবৃত্ত হই। অবশেষে সকালের উষ্ণ রোদও তার বরফ জমাট ক্যানভাসে লুকোচুরি খেলতে খেলতে একসময় হয়ে পড়ে স্থির শীতল।
ভাষাবিহীন সাদা কাগজের মত টুকরো টুকরো হয়ে ছিঁড়ে যায় আয়না। ফ্যাসিবাদী অন্ধকারে চক্রব্যূহের মত আটকা পড়ে গেলে কড়ে আঙ্গুলের আগায় জমতে থাকে কিছু উচ্ছিষ্ট খাদ্যাবশেষের আবর্জনা। হাতের তালুতে সযত্নে এঁকে রাখা মেঘ কঙ্কাল জাদুঘরে সাজিয়ে রেখে এসে স্বতঃপ্রবৃত্ত মুখোশ আঁটা জীবনের হিসেব মেলাতে ব্যস্ত হয় দিন। সময়ের শরীর থেকে স্মৃতিধুলোর মত ঝরে ঝরে পড়ে রোদের পরাবাস্তব পোট্রেইট, ঢেউয়ের দীর্ঘশ্বাস আর কুচি কুচি বর্ণহীন রংধনুলিপি। সময়ের ফসিল ঘড়ির পেন্ডুলামের ভেতর স্থিরচিত্র হয়ে আটকে পড়ার পর অবিরত তার শুন্য দেয়ালে ঘাই মেরে মেরে রক্তপাত ঘটানোর চেষ্টায় অমোঘ ক্লান্তি নেমে আসে দুচোখে। যদিও শব্দদানবেরা ক্লান্ত হয়না তখনো।
লক্ষ কোটি উন্মত্ত কুক্কুরদলের টানা আর্তনাদে শ্রবণেন্দ্রিয় অবশ হয়ে এলে আমি চুপিসারে বাতি নিভিয়ে অন্ধকারের শরীরের ভেতর ঢুকে পড়ি। সারা শহরের নিয়ন বাতিগুলো তখনো একযোগে জ্বলতে থাকে লাল,নীল,বেগুনী অথবা হলুদ বর্ণের কৃত্রিম আলো নিয়ে।
ঝলমলে শহরের সকল গুপ্ত অন্ধকার আলোর জলোচ্ছ্বাসের নীচে নিঃশব্দে ধুয়ে মুছে চাপা পড়ে যায়।
সারমেয় সংলাপগুলো হয়ে যায় একেকটি পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী।
অন্ধকারের শরীরও একটা সময় প্রবল আক্রোশে তীব্র শ্লেষে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘোরে ডুবে যেতে যেতে অবশেষে জানি - ভোর হলে ওই কুক্কুরদলের সমবেত প্যারেডে ছন্দ মেলাবো আমিও।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১০ ভোর ৫:২২
৮০টি মন্তব্য ৮০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×