somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লান্তিজনিত

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় অন্যজন,

এই ভীড়ের শহরে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি কটা করে গুমখুন হচ্ছে তার হিসেব রাখবার আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি, বলো তো? যেখানে ভোরের মুখ দেখে পথে বেরিয়ে পড়া মাত্রই একশো একটা চারচাকার তীব্র হর্ন আর জেগে ওঠা যন্ত্রশহরের সম্মিলিত হুঙ্কারের নীচে চাপা পড়ে অবলীলায় খুন হয়ে যাচ্ছে তোমার আমার সমস্ত স্বপ্ন; দৃষ্টির চারপাশে ভেঙ্গে পড়ছে আমাদের যাবতীয় মানবিক বোধেরা- বৈশাখের ঝড়ে খড়কুটোর ঘরের মত, ওখানে কজন জীবিত মানুষ তার আনরেজিস্টার্ড মৃত্যুর পর নিজস্ব লাশ হাতে নিয়ে খুব স্বাভাবিক নিঃস্পৃহায় বাড়ি ফিরছে দিনশেষে- তার হিসেব কষা বিলাসিতা। তবু আমরা মৃত্যু নিয়ে বিলাসী। অথবা স্পষ্ট করে বলতে গেলে, মৃত্যুই আমাদের একমাত্র বিলাস এখানে। চাতকের মত একটি করে রোমহর্ষক মৃত্যুর খবরের প্রতীক্ষায় আমাদের দিনের শুরু হয় এখন। অতঃপর প্রতিটি শবের শিয়রে লোক দেখানো শোকের আড়ালে খুব অবধারিতভাবে আমাদের অসুস্থ উল্লাসের উৎসব জমে ওঠে। উৎসবের খাতায় জমা হয় স্মরণ ও প্রতিবাদ-সভা, জমা হয় শয়নকক্ষে,চায়ের টেবিলে তুমুল ঝড়, জমা হয় অন্তর্জালিক হালখাতায় শত শত ভাষণ বিবৃতি,ক্ষোভের স্ফুরণ ও সাময়িক হতাশার নিবৃত্তি। উৎসবের শেষ দৃশ্যে ভাষণ-শ্রান্ত রণক্লান্ত তুমি ও আমি পরম আত্মতৃপ্তিতে নরম বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতে দিতে যখন রীতিমত সঙ্গমসুখ অনুভব করতে থাকি- ঠিক তখন অন্য কোন শয়নকক্ষে আমাদের পরবর্তী দিনে উৎসবের খোরাক হিসেবে যোগ হয় আরও কয়েকটি নতুন মৃত্যুদৃশ্য। এইভাবে আমাদের পৌনঃপুনিক উৎসবযাপন চলতে থাকে...রাত্রির খামে আঁধারের চিঠি জমতে থাকে...স্বপ্নের লাশ অথবা জীবনের আশ সূর্যের আলোয় ঘামের নিচে গলতে থাকে......গলতে থাকে... তারপর একদিন বাষ্প হয়ে আকাশে উড়ে গেলে- আচমকা আমাদের মনে পড়ে যায় আমরাও মানুষ ছিলাম কখনো। এই সময়গুলিতে তুমি কি জানো, আমার নিজেকে ঠিক ওই পতিতার মত মনে হয় যাকে টিপে-মেপে-শুঁকে নিয়ে নাক কুঁচকে বিছানা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে এমনকি একটা আরশোলাও? তাই তো আমি তৃষ্ণা মেটাতে- প্রতিনিয়ত নিজের সাথেই স্বমেহন করে যাই।

মৃত্যুই সবচাইতে স্বাভাবিক,আকাঙ্ক্ষিত আর সহজলভ্য উৎসব এখানে আজ। তবু সে আর উত্তেজনা জাগাতে পারে না আমার শরীরে আজকাল। খুব ক্লান্ত লাগে, খুব একঘেয়ে বোধ হয়- ইদানিং। হয়ত আমরা সবাই শীঘ্রই অপেক্ষাকৃত রোমাঞ্চকর কোন নতুন উৎসবের সন্ধানে নামবো। আজ উৎসবে শামিল হয়েছি, আগামীকাল খোরাক হব। হয়ত শীঘ্রই আমরা সবাই ঠিক ঠিক নরখাদকে পরিণত হব আর প্রাত্যহিক নরভোজ উৎসবে ওয়াইনের বদলে মনুষ্যরক্তের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে একে অপরকে বলবো -চিয়ার্স! এইসব ভাবনার কোনটাই আমাকে রোমাঞ্চিত করে না আর। তাই নিজস্ব শয়নকক্ষে অযথাই ঘুম তাড়াতে তাড়াতে আমি আগুনের কথা ভাবি, ফাল্গুনের কথা ভাবি।

বসন্ত এলেই আগুন জ্বেলে দেবে- বলেছিল কৃষ্ণচূড়া।

আমি দুইশত একাশি মাস ধরে শুধু আগুনের প্রতীক্ষায় স্থির বসে আছি হিমায়িত দৃষ্টি আর এক সহস্র রাত্রির ঘুম হাতের মুঠোয় নিয়ে।

কৃষ্ণচূড়ারা কথা রাখেনি। কথা রাখেনি পূর্বপুরুষের সোনার সিন্দুক আর সূর্যশপথলিপিরাও। তার সবটুকু আগুন চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে দশমাথা সরীসৃপের দল।

আমার সমস্ত কথাগুলো তাই শীতের বাক্সে বন্দী করে চিরস্থায়ীভাবে তালা এঁটে দেব বলে ভেবে নিয়েছি। বসন্ত ফিরে এলেও আমি আর ওদের মুখ দেখব না কোনদিন।

তুমি শুধু আমার চোখের পাপড়ি থেকে জমাট বাঁধা হিমগুলো খুলে নিও।

আমি শ্রান্তি ভুলে যাবতীয় গ্লানির স্মৃতি মুছে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ব চিরদিনের মত।

কেননা এখন জেনে গেছি, শয়নকক্ষই আমার আত্মমৈথুনের সবচাইতে নিরাপদ ও সর্বোচ্চ অনিরাপদ স্থান।
৪১টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×