somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচেনা দিগন্ত (পর্ব-২)

১৮ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নরম শব্দে দরজা খুলতেই শীতল বাতাস এসে লাগল ড. নায়লার মুখে। ধীর পায়ে নায়লা ভেতরে প্রবেশ করল। কর্পোরেট অফিসের মতো ঝকঝকে সজ্জা, কিন্তু জানালাহীন কাঠামো সবকিছুকে একটু রহস্যময় করে তুলেছে। দেয়ালে আধুনিক শিল্পকর্ম, তবে তার চেয়েও বেশি নিখুঁত শৃঙ্খলা। এখানে শব্দ কম হয়, মানুষ বেশি কাজ করে।

ড. অনিতা তার পাশে এসে হাঁটতে হাঁটতে বলল, "কেমন লাগছে? মনে হচ্ছে তুমি আসলে অন্য কোনো মিশনে যাচ্ছো।"

নায়লা হালকা হাসল, কিন্তু তার চোখে চিন্তার রেখা স্পষ্ট। "উত্তেজনা আর ভয় দুটোই কাজ করছে। জানি আমরা কী করতে চলেছি, কিন্তু আসলে কী অপেক্ষা করছে, সেটা তো কেউ জানে না।"

অনিতা হাসল, "তুমি বরাবরই এমন, জানো? ভয় পেলে সেটা বোঝা যায় না। কিন্তু ঠিক সময়ে তুমি সব করে ফেলবে, আমরা জানি।"

নায়লা মৃদু মাথা নেড়ে বলল, "হয়তো... কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, একদম অনিশ্চিত একটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।"

তারা দু'জন হাঁটতে হাঁটতে মেডিকেল রুমে পৌঁছাল। ভেতরে ড. হেলেন কিছু কাগজপত্র দেখছিল। নায়লাকে দেখেই হাসলেন, "আহ, আমাদের ভবিষ্যৎ ইতিহাস রচনাকারী এসে গেছে!"

নায়লা হেসে বলল, "আমি ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছি নাকি ব্লাক হোলে ঝাঁপ দিচ্ছি, সেটা কিন্তু নিশ্চিত না।"

হেলেন হেসে বলল, "একই কথা! তুমি যা করছো, সেটার আগে কেউ সাহস করেনি।"

ব্লাড প্রেসার চেক করতে করতে হেলেন বলল, "সব ঠিক আছে। তবে তোমার মিশন স্যুট পরে নিতে হবে এখনই। এটা শুধু একটা স্যুট না, এটা তোমার বেঁচে থাকার গ্যারান্টি।"

কালো রঙের অত্যাধুনিক স্যুট হাতে নিয়ে নায়লা খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। শরীরের সাথে নিখুঁতভাবে মিশে যাবে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে পরিবেশের কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে।

মিশন কন্ট্রোল রুমের ভেতরে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা ছিল। বড় ডিসপ্লেগুলোতে বিভিন্ন ডাটা ভেসে আসছিল। প্রতিটি মানুষ নিখুঁত মনোযোগে কাজ করছিল, যেন সময় থেমে আছে।

রুমের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন ড. রয়। কঠিন চেহারা, সংক্ষিপ্ত বাক্যে কথা বলা অভ্যাস। চোখে সেই দৃঢ়তা, যা অভিজ্ঞতা আর শত ব্যর্থতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নায়লা আর অনিতাকে দেখে খানিক বিরক্ত স্বরে বললেন, "তোমরা দেরি করেছো। সব ঠিক আছে তো?"

অনিতা একটু হাসল, "একটু সেলফি নিতে গিয়েছিলাম।"

রয় কোনো প্রতিক্রিয়া দিলেন না, শুধু কড়া চোখে তাকালেন। তারপর সরাসরি নায়লার দিকে তাকিয়ে বললেন, "প্রস্তুত তো?"

নায়লা কিছুটা সময় নিল, এক গভীর শ্বাস নিল। তারপর বলল, "সব চেক করা হয়েছে। সিস্টেম ঠিক আছে। কিন্তু জানি না... এরপর কী হবে।"

রয় ঠান্ডা গলায় বললেন, "তুমি জানো, এই মিশনের কোনো ব্যাকআপ নেই। তুমি যদি ব্যর্থ হও, এই দরজা হয়ত চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

নায়লা দৃঢ় গলায় বলল, "আমি প্রস্তুত।"

যানটির সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নায়লা। এর চকচকে ধাতব আবরণ, সূক্ষ্ম ডিজাইন, আর অভ্যন্তরীণ জটিলতা—সব কিছুই এক অনন্য যাত্রার ইঙ্গিত দিচ্ছিল।

বিশাল একটি হলঘর, যার কেন্দ্রে স্থিরভাবে রাখা যানটি। এর চারপাশে বিশাল স্পর্শকাতর রোবটিক আর্ম, যা যানটির শেষ মুহূর্তের পরীক্ষায় ব্যস্ত। ছাদে অগণিত আলো জ্বলছে, যা যানটির প্রতিটি ইঞ্চি নিখুঁতভাবে আলোকিত করছে। পরিবেশটি প্রযুক্তিগত দক্ষতার এক জীবন্ত নিদর্শন। এখানে কাজ করা প্রকৌশলীরা সবাই শেষ মুহূর্তের পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত। লম্বা স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালের ওপারে কমান্ড রুম থেকে সবকিছু নজরদারি করা হচ্ছে।

"ড. নায়লা!" একটি বন্ধুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। নায়লা ঘুরে তাকিয়ে দেখল, সাদা এপ্রন পরা ড. নিয়াজ, একটু ভারী গড়নের মানুষ, মুখে হালকা ঘাম, কিছুটা নার্ভাস, তবে বন্ধুসুলভ হাসি।

"এতো বড় একটা যাত্রা, আমার বলা উচিত কিছু কথা," তিনি একটু নার্ভাস ভাবে বললেন। "শুনো, আমরা কিছু নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা যোগ করেছি... মানে, তুমি যদি কোনোভাবে ঝাঁকুনি অনুভব করো, বা একটু বিভ্রান্ত লাগে, তাহলে ভয় পেও না। ইনারশিয়া ড্যাম্পিং সিস্টেম এখন আরও স্মার্ট হয়েছে, তাই তোমার শরীরে একদম চাপ পড়বে না।"

নায়লা চোখ ছোট করে তাকাল, "এটা নতুন শুনছি!"

নিয়াজ মাথা চুলকে বলল, "হ্যাঁ... মানে, একটু আগে আপগ্রেড করা হয়েছে। আর শোনো, ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে তোমার স্যুট এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিফেন্স মোডে চলে যাবে। মানে, যদি কিছু অস্বাভাবিক হয়, তো স্যুট নিজে থেকেই তোমার শরীরকে শক থেকে বাঁচাবে।"

নায়লা গভীর শ্বাস নিল। "ভালো শুনতে লাগছে। আশা করি, এগুলোর দরকার হবে না।"

ভেতরে ঢুকে নায়লা সিটে বসল, সিটবেল্ট লাগাল। সামনে টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে, হলোগ্রাফিক ইন্টারফেস।

"এলিজা, সিস্টেম চেক," নায়লা বলল।

একটা নরম, স্নিগ্ধ কণ্ঠ ভেসে এল, "সবকিছু প্রস্তুত, ড. নায়লা।"

রেডি লাইটগুলো জ্বলে উঠল।

"কোয়ান্টাম হারভেস্টার" রেডি
"গ্র্যাভিটন ড্রাইভ" রেডি
"কোয়ান্টাম নেভিগেশন সিস্টেম" রেডি
"গ্র্যাভিটি শিল্ড" রেডি
"ইনারশিয়া ড্যাম্পিং" রেডি

বাইরে থেকে রয়-এর কণ্ঠ ভেসে এল, "নায়লা, তুমি প্রস্তুত তো?"

এক মুহূর্ত থেমে নায়লা চোখ বন্ধ করল, এক গভীর শ্বাস নিল, তারপর বলল—

"হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত।"
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×