ঘড়িতে তখন রাত দুইটা।
ইয়াহিয়া ঘুমোতে পারছে না। ঘুম আসে না, কারণ প্রতিদিনের মত আজও "ব্ল্যাকআউট" হয়েছে। মোমবাতির আলোটা নিভে গেছে ঘণ্টাখানেক আগে। বাতাস নেই। ছাদ থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আসছে। গরমে ইয়াহিয়ার পিঠ ঘেমে চপচপে। সে মায়ের গা ঘেঁষে শুয়ে আছে।
“মা?”
“হুঁ?”
“আমাদের বাড়িটা যদি বোমায় উড়ে যায়, তাহলে আমরা কোথায় থাকব?”
মা কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর বললেন,
“উড়লে তো সব শেষ। তখন আর কোথাও থাকার দরকার হবে না।”
“মানে?”
“মানে আমরা সবাই আল্লাহর কাছে চলে যাব। ওখানে বোমা পড়ে না।”
“আল্লাহর বাসায় কি ফ্যান আছে?”
মা হেসে ফেললেন, খুব হালকা করে। তারপর চোখ মুছলেন।
বাবা এই তিনদিন বাড়ি নেই। বলেছিলেন, রেড ক্রিসেন্টের হয়ে কাজ করছেন। ইয়াহিয়া জানে না রেড ক্রিসেন্ট কী জিনিস, তবে যতবার বাবা ওদের কথা বলেন, মায়ের চোখে অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা নামে।
সকালের দিকে হঠাৎ একটা তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠল পুরো বাড়ি। ছাদের পাথর গড়িয়ে পড়ল, জানালার কাঁচ চূর্ণবিচূর্ণ। পাশের বাড়ির এক কোণ উড়ে গেছে—ধোঁয়া উঠছে।
মা চিৎকার করে উঠলেন,
“ইয়াহিয়া! নিচে চল! নিচে চল!”
তারা দৌড়ে নামলেন বেসমেন্টে। বেসমেন্টে আগে কখনও এত লোক ছিল না। সবাই কেমন অচেনা চেহারা নিয়ে বসে আছে। বাচ্চারা কাঁদছে, বড়রা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে—কিন্তু কেউ কারও চোখে চোখ রাখতে পারছে না।
একজন বৃদ্ধ বললেন,
“এই যুদ্ধটা কাদের বিরুদ্ধে?”
কেউ উত্তর দিল না।
বৃদ্ধ আবার বললেন,
“বাইরের দেশের লোকজন বলে এটা ন্যায়ের যুদ্ধ। আমার নাতিটা বলল, ‘দাদা, আমেরিকার লোকজন আমাদের ‘টার্গেট’ বানায় কেন?’ আমি বললাম, কারণ আমাদের পতনের সময় এসে গেছে।”
ইয়াহিয়া বৃদ্ধের পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিল। সে জিজ্ঞেস করল,
“পতন মানে কী?”
বৃদ্ধ বললেন,
“পতন মানে যা দাঁড়িয়ে থাকে, তাকে ফেলে দেওয়া।”
সেদিন রাতে ইয়াহিয়া আর ঘুমোতে পারল না। সে একটা খাতা বের করল। পাতার উপর বড় করে লিখল—
“এখানে আমরা থাকতাম। আমাদের ঘর ছিল।”
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



