এবার নিরাপত্তা আতঙ্কে ভুগছেন নোয়াখালীর সেই সেলিনা। এসিডদগ্ধ বোনের মামলার সাক্ষী হওয়ায় তাকেও এসিড দিয়ে ঝলসে দেয় সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকেই রাজধানীর এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। টানা এক মাস চিকিৎসা শেষে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দেবেন। তাই হাসপাতাল ছাড়ার সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আতঙ্কে পেয়ে বসেছে সেলিনাকে। এবার তার প্রশ্ন- কোথায় যাবো। কার কাছে আশ্রয় নেবো। কে আমাদের নিরাপত্তা দেবে। কারণ, এরই মধ্যে এসিড নিক্ষেপকারীরা তাদের পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। মুত্যুভয়ে আতঙ্কিত হয়ে মা ও বোন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজেদের বাড়ি ছেড়ে। আজ এ বাড়ি কাল ও বাড়ি করেই দিন কাটছে তাদের। এ নিয়ে মামলা হলেও পুলিশ আজও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঘটনার দিন অভিযুক্ত বিহারী শরীফকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখন সে ছাড়া পেয়েছে বলে জানান সেলিনা। এরপর থেকেই তাদের পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় সেলিনা বলেন, এতদিন ঘুমাতে পারিনি এসিডে ঝলসে যাওয়া ক্ষতের যন্ত্রণায়। এবার ঘুম হারাম হচ্ছে নিরাপত্তার আতঙ্কে। প্রাণ বাঁচাতে এসিডদগ্ধ ছোট বোনকে নিয়ে মা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এবার হয়তো তাদের সঙ্গে আমাকেও পালিয়ে বেড়াতে হবে। তবে কতদিন এভাবে পালিয়ে বেড়াতে পারবো জানি না। তিনি বলেন, ওরা সত্যিই খুব ভয়ঙ্কর। মামলা তুলে না নিলে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলবে। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো আমরা কিছুটা ভরসা পেতাম। সাহস পেতাম। এখন আমরা তিনজনই নারী। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেলিনা বলেন, আমরা বাঁচতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেলে তার কাছে নিরাপত্তা চাইবো। হয়তো তিনি আমাদের এ পরিস্থিতির কথা বুঝবেন। গত ১লা মে রাতে কয়েক দুর্বৃত্ত ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় এসিড দিয়ে ঝলসে দেয় সেলিনার মুখমণ্ডল ও শরীরের বেশকিছু অংশ। তার অপরাধ- দু’বছর আগে ছোট বোনের ওপর এসিড নিক্ষেপকারীদের বিচার চাওয়া। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়া। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, একই গ্রামের সুনাম, শরীফ, রাজু ও বিহারী শরীফ, শাহজাহান, ইয়াসিন আরাফাত সজীব, গিয়াস উদ্দিন রাজু, মাহমুদ ও পারভেজ ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা জামিনে মুক্তি পেয়েই এ ঘটনা ঘটায়। এদিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সেলিনার শরীরের ১৫ ভাগ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্রী সেলিনা বলেন, টানা দু’বছর ছোট বোনের ওপর এসিড নিক্ষেপের বিচার চেয়ে আসছি। বোনের অসহ্য যন্ত্রণা দেখেছি দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। আর এখন সেই যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে আমাকে। ২০১০ সালের ১৫ই জুন সেলিনার ছোট বোন মাদরাসা ছাত্রী ফারহানা আক্তারকে দুর্বৃত্তরা এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়। সেলিনা বলেন- এসিড মেরে তারা শুধু আমার জীবন নষ্ট করেনি, আমাদের পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে পরিবারে সুখ ফিরিয়ে আনবো। দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্ত করতে। বিধবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে। এখন আর কিছুই সম্ভব নয়। সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।
১৮ দলের নেতানেত্রীদের জামিন হয়না। আর কত সেন্সিটিব মামলায় জামিন পেল সন্ত্রাসীরাস
সূত্র
মানবজমিন: ৩০ মে ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১২ বিকাল ৫:৪২