somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারের জিরো টলারেন্সের ‘জিরো’ এখনো যথেষ্ট মজবুত নয়…

০৩ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সম্প্রতি আমেরিকার প্রথমসারির মাগ্যাজিন সিও ওয়ার্ল্ড-এ ‘দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে আসে, তবে কেমন আছে এদেশের সাধারণ মানুষ? উত্তরটা নির্ভর করছে, চারপাশটাকে আপনি বাইনোকুলার বা দূরবীনে দেখবেন... নাকি বাইফোকাল লেন্সে দেখবেন...। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আছে। দলটির ১৯১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সেরে অঙ্গীকার। সরকারে এসে আওয়ামীলীগ একে একে মাদক, জুয়া, ধর্ষণের মতো বিষয়ে আলাদা আলাদা করে জিরো টলারেন্স ঘোষণাও করে। কিন্তু গত ছয়মাসে আপনি যদি নিত্যপন্যের বাজারমূল্য দেখেন লক্ষ্য করবেন তা ক্রমশ চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। পন্যমূল্য নাভিশ্বাস তুলে দিলেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। প্রতিনিয়ত এক অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা ঘুরেফিরে টিভি টকশো কিংবা গণমাধ্যমে উঠে আসছে। টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা দলটি তবে কেন সিন্ডিকেট খুঁজে পাচ্ছেন না? সত্যি বলতে, আজকাল কালো বাজারিরা কিনে নিয়েছে সমস্ত আলোর বাজার। সরকারের জিরো টলারেন্স এর ঘোষণা ভাবছে জিরো এখনো যথেষ্ট মজবুত নয়। দূর্নীতি নিয়ে ভাবা হচ্ছে কেবল দিনের বেলায় কিংবা টক শো'র টেবিলে, ব্যবসায়ীদের (রাজনীতিক) রাত তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসার টেবিলের টালি খাতায় লাভক্ষতির হিসেবে বহাল তবিয়তেই থাকছে। পৃথিবীতে টাকা এমন এক জড় পদার্থ, যার হাত বদল হয়, কিন্তু চরিত্র বদল হয় না। টাকা অর্থমূল্য ধারন করে কিনা জানি না, তবে ক্ষমতা ধারন করে বলেই ‘টাকা, টাকা-ই’। তাই হয়তো প্রায়শ দেখি, সার্থক মানুষদের আরো চাই-মুখ!

আজকাল গণমাধ্যম আমাদের সাময়িক উত্তেজনা দিলেও নষ্ট করছে চিরস্থায়ী শান্তি। গণমাধ্যমে প্রচারিত কিংবা প্রকাশিত সংবাদে সিন্ডিকেট হয়ে উঠেছে সবকিছুর উর্ধ্বে। যেমন আপাত দৃষ্টিতে সত্য সব কিছুর উর্ধ্বে। তবু সত্য কথাটির রয়েছে নানা অর্থ। Truth এরও আছে নানা অর্থ। Fact ও Truth এক নয়। Absulate truth, whole truth, relative truth, parshial truth ইত্যাদি কথা চালু আছে। বাংলায় আছে পরম সত্য, আংশিক সত্য, আপেক্ষিক সত্য, পূর্ণ সত্য ইত্যাদি কথা। সবকিছু ছাপিয়ে alternative truth বা বিকল্প সত্যের দখলে আজ পৃথিবী। বাটলার থিওরী অনুযায়ী, মানসিকতা তৈরিতে সিংহভাগ ভূমিকা রাখে আমাদের সমাজ, আশপাশের প্রচলিত নিয়ম-নীতি। চারপাশটা ভরে যাচ্ছে পেশাদার প্রতারকে। তাই ব্যবস্থা বদলে গেলেই যে অবস্থা বদলাবে, এমনটা নয়। কেননা জুতা পায়ে পিচ্ছিল পথও নিরাপদ নয়। আমরা বোধহয় রাগ করতেও ভুলে যাচ্ছি, কেননা রাগ হচ্ছে দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুভূতি। প্রথমে পর্যায়ের ভয় কিংবা হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারছি না যে। দুঃখ বাঙালিকে দৃঢ় করে না, বরং দ্রবীভূত করে।

ফরাসি সমালোচক ও সাংবাদিক আলফোনেস কার ব্যক্তিচরিত্রের তিনটি রূপের কথা বলেছেন। প্রথমত : সত্যিকারার্থে ব্যক্তির একটা চরিত্র আছে। দ্বিতীয়ত : ব্যক্তির নিজের কাছে নিজের একটা চরিত্র আছে। তৃতীয়ত : ওই ব্যক্তির একটা চরিত্র আছে অন্য সবার কাছে। তেমনি রাষ্ট্রেরও রয়েছে নানা রুপ। রাষ্ট্র কী এমন প্রশ্ন করা হলে, উত্তরদাতাদের উত্তর একরকম হবে না। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান সবার উত্তর হবে আলাদা। কারণ রাষ্ট্র নিয়ে সবার অভিজ্ঞতা সমান নয়। অনেকের কাছে রাষ্ট্র সন্ত্রাসী-নির্যাতনকারী-প্রতারক-নিপীড়ক। আবার ক্ষমতাসীনদের কাছে সেই একই রাষ্ট্র ভাসছে উন্নয়নের জোয়ারে। বরাবরই ক্ষমতাশীনরা রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থে, রাষ্ট্র থেকে নিচ্ছে হাজারো রকম সুবিধা। যদিও জনগনকে সবসময়ই বোঝানো হয় যে, তাদের কল্যাণেই রাষ্ট্র। ক্ষমতাসীনদের উন্নয়নের তালিকা দেখে চোখ কপালে উঠলেও, গণমাধ্যমের কল্যণে চোখ আস্তে ধীরে ফিরে যায় নিজের জায়গায়। এদেশের মানুষের প্রতিবাদও নেই প্রশ্নও নেই। এদেশে কে আছে প্রশ্ন করার মতো, যে জবাবদিহিতা থাকবে। সবাই বিশ্বাস করেন, আগে টিকে থাকতে হবে তার পরে প্রতিবাদ করতে হবে।

আমাদের মধ্যে বিভেদ আছে, বৈচিত্র্য নেই। আমরা বলি ভাল অথবা মন্দ, কিন্তু অন্যরকম বলি না কখনো। কেননা মতভেদ হলেই আমাদের মনোভেদ হয়ে যায়। মত প্রকাশের অধিকার যেমন থাকা দরকার, মত পরিবর্তনের অধিকারও থাকা দরকার। 'বুমেরাং ইফেক্ট' বলে একটা টার্ম আছে। খুব সহজ করে বললে বুমেরাং মানে দাঁড়ায় আত্মঘাতী। ধরুন আপনি কোনো বিষয়ে কোন ব্যক্তির মতামত কিংবা মনোভাবকে প্রভাবিত করতে চান। সেক্ষেত্রে আপনি যদি বেশি বেশি ভাল বলেন কিংবা প্রশংসা করতে থাকেন তখন ব্যক্তিটির সেই বিষয়ের প্রতি চূড়ান্ত বিতষ্ণা জন্ম নিতে পারে। আগের যেটুকু আন্তরিকতা ছিলো তাও চিরদিনের মতো ধুয়ে মুঝে সাফ হয়ে যায়। আপনি প্রভাবিত করার বদলে যেটা করলেন সেটা ব্যর্থ হল। আমরা দ্বিমত আছে এমন ব্যাপারে কথা বলতে গেলেই অন্যদের উপর নিজের ধারনা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করি। কোন বিষয়ে নিজে থেকে বেশি বেশি ভাল ভাল তথ্য দিয়ে ব্যক্তির মনোভাবকে নিজের পক্ষের মতের দিতে অনুগামী করতে চায়। ক্ষেত্র বিশেষ ফল পাওয়া গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে কাঙ্খিত ফলাফলের সম্পর্ক ঋণাত্বক হতে পারে।

সময় আমাদেরকে মেকি সম্মান আর খাঁটি দারিদ্র উপহার দিয়েছে। বিকল্প সস্তা বের করে নেয়া জাতি আমরা। আধুনিক সভ্যতা না পৌঁছাতে পারলেও, আধুনিক অসভ্যতা রাস্তা বের করে ঠিকই পৌঁছে গেছে সর্বত্র। বিষের ভাল দিক হলো বেদনাকে বিনাশ করে, কিন্তু জীবনটাকেও তো নাশ করে। কেবলি মনে হয় ‘আধার দেখেছি, রয়েছে আরো বড় অন্ধকার’। ক্ষমতাবান সুখি মানুষরা বর্ষপূর্তি করে সময়ের হিসাব রাখে। সাধারণ অসুখিরা বরং বেঁচে থাকাকে প্রতিনিয়ত অভিসম্পাত করে। অসুখি জীবনে দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে মানুষ একসময় অভ্যস্ত হয়ে যায়। যদিও নির্বাক হবার সময় এখনো আসে নাই। তবুও খাবার গ্রহণ ছাড়া মুখ খুলতে মানুষ একসময় ভুলে যাবে। এমন প্রতিকূল সময়ে প্রতিবাদ করা বৃথা, ন্যায়বিচার আশা করা বোকামি। আগামীতে ভালো থাকার সম্ভাব্যতা থেকে হতাশার ইশারা দেখা যাচ্ছে। অস্বস্তি ক্রমান্বয়ে বিপর্যায়ের দিকে যাচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষ এখন আর সমৃদ্ধি চা্যনা, সম্মান আর নিরাপত্তা চায়।

কেমন আছেন এদেশের সাধারণ মানুষ? উত্তরটা হলো, সরকার রেখেছে যেমন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:১৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×