‘জানতাম আপনি জেগে আছেন…
- কী করছিলেন?
- রবার্ট ব্রাউনিং পড়ছিলাম
- কোন কবিতাটা?
- “দ্যা’ ইনস এ্যালবাম”
- সে তো এক মাইল দীর্ঘ কবিতা!
- জীবনের চেয়ে দীর্ঘ তো নয় ’
অযত্ন, মায়া, নির্লিপ্ততা, না হয় মুছে ফেলার অলসতায় দিনদিন দুই একটা পরিচিত বিন্দু নিজের মতো করে থেকে যায়। এদের উপস্থিতির কোন বিশেষত্ব নেই তিথীর কাছে। সীমিত প্রবেশাধিকার নিয়ে বিন্দুগুলো নিজেরাই হয়তো বৃত্তের মাঝে আটকা পড়ে থাকে। নির্লিপ্ত তিথীর কাছে বৃত্ত ভাঙ্গার অনুভূতি অপরিচিত নয়। বৃত্তের সংকীর্নতায় আটকে থাকার গতানুগতিক ইচ্ছাটা বেশ কিছুদিন যাবত আর চাইলেও মন থেকে জাগছে না তার। জাগলে হয়তো ভালোই হতো। যদিও দুই বিন্দুর কাছে আসায় রেখা হয়ে থাকার সময়টা আসলেই অন্যরকম। তবু স্বাধীনতার স্বাদ অতুলনীয়। তাই যতদিন সম্ভব, কেবল নিজের জন্য হলেও তা ধরে রাখা উচিৎ।
হুট করে হারিয়ে গেলে মানুষকে যতটা সহজে ভোলা যায়, ধীরে সুস্থে দূরে সরে যাওয়া মানুষটাকে তত সহজে ভোলা যায় না। তাই তো মৃত্যুর চেয়েও ছেড়ে যাওয়া মানুষ মানুষকে বেশিদিন পোড়ায়। তারপর? নিজস্ব অভিধানে ‘অভিমান’ বলে নতুন একটা শব্দ যুক্ত হয়। বেদনাকে যত্ন করে জমিয়ে রাখার নাম অভিমান। যা অনেকটাই নিরব আপোষে ভেসে বেড়ানোর মত। অভিমান চোখে দেখা যায় না। ঠিক যেমন শব দেখা যায়, মৃত্যু দেখা যায় না। অভিমান আসলে মৃত্যু। তবুও অভিমান শব্দের রোমান্টিসিজম মানুষকে নিয়ত নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে।
অভিমানের অন্তর্গত অনুভুতিগুলো ভালোবাসায় মতন সুক্ষ্ণ যন্ত্রণার। অন্যান্য নেশার মতন অভিমানও প্রশ্রয় পেলে বাড়তে শুরু করে। বাতাসে কর্পূরের মতো উবে যাওয়া প্রেম নিজের কোনো দায় স্বীকার করে না। সব দায় স্মৃতির কাধে তুলে দিয়ে অভিমানের আভরণ পরে নেয়। স্মৃতি নামক একটা ব্যক্তিগত নরক আছে তিথীর। কোনো এক দোলনচাঁপার মৌসুমে স্তিমিত প্রেম মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই টেনে দিয়েছিল ইতি…। প্রেমের কিস্তি মাতে হয়ে গিয়েছিল অপরিচিত!
ঘরের আয়নাতে তি্থী এবং অ-তিথী, দু’জন দুজনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। তরল অন্ধকারে তিথীর কপালের ভাজটা নিখোঁজ, সময় যেটা পরিয়েছে তাকে। অ-তিথী নিঃশব্দে হাসে। সুন্দর নিরস্ত করা হাসি। তিথীর মনের উপর অভিজ্ঞতা চেপে আছে ভারি সীসার মতন। কতগুলি ভাঁজ অভিমানের? দিন শেষে সম্পর্কের সুতোটিও কখনো কখনো বেশ পলকা। অভিযোগ নেই, কৈফিয়তও নেই। আছে একটা নিদারুন নিরবতা। যাকে গল্প উপন্যাস যা অভিমান বলে আখ্যায়িত করা। কখনো কখনো মানুষ অভিমান যাপন করতে শিখে যায়। তারপর? খুব ভালো বাসতে জানা মানুষগুলো একদিন চাইলেও আর ভালোবাসাতে পারে না। মানুষের সীমাবদ্ধতার সূত্র মানুষের জানা নেই।
অভিমানের মত জগতের অপ্রয়োজনীয় বস্তুগুলোই শোভাবর্ধন করে আসছে। জীবনের দীর্ঘ নিঃসঙ্গ পথ অভিমানীদের পায়ে হেঁটেই যেতে হয়। অভিমান নিয়ে বেঁচে থাকাটা অতটা সুখের নয়। কথোপনরত দু’জনেরই কেউই খারাপ মানুষ নন। শুধু তাদের দেখা হয়েছে খারাপ সময়ে। ভালো সময়ে তাদের দেখা হলো না কেন? ‘দু’হাতে পাগলের মত ‘কেন’গুলোকে সরিয়ে আগালেই ঈশ্বর স্বয়ং সামনে এসে দাঁড়ান কি কখনো? নাকি তাঁর কেবল নীরব থাকার দায়?’
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:২৯