somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়ান্ডার এজ…

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাচ্চাদেরকে যখন good touch- bad touch শেখানে হচ্ছে ঠিক তখন কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী’রা গণমাধ্যমে বারংবার সংবাদ শিরোনাম হচ্ছেন বিকৃত যৌন আচরণ এবং মাদক গ্রহনের সংবাদে শিরোনামে। দিহানের বিকৃত যৌনাচারে ভিক্টিম নিহত আনুশকা এবং মাদক গ্রহণ/ নিয়মিত ডিজে পার্টিতে অংশ নেয়া নিহত মাধুরি, আরাফাত, আটককৃত রায়হান ,তাফসীর ও নেহার নাম সবার এখন সবার জানা। উল্লেখিত এই ৭জনের বয়সই ১৭ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। সদ্য টিন এজ পেরোনো ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গণমাধ্যমে উঠে আসছে বেশ হতাশাজনক তথ্য।

১৭ থেকে ২১বছর বয়সটা একটা ওয়ান্ডার এজ। এই বয়সটাকে ঠিক বুঝতে পারা যায় না। ধরা যায় না কী এর গতিপ্রকৃতি। এই বয়সের ধর্মই হল কিছু বুঝতে না দেওয়া। নিজেদেরকে এমন একটা আচরণের মধ্যে রাখা যাতে অন্যরা তাদেরকে বুঝতে না পারে। ওপরে ওপরে হয়তো অনেক কিছু তারা মেনে নেয়, তবে ভেতরে ভেতরে সাপের মতো ফুসতে থাকে। নানান ভাবে নানান কায়দায় উর্ধ্বে তুলে রাখে নিজেদেরকে। এদের সাম্প্রতিক সহিংস আচরণ প্রতিনিয়ত রূপ বদলে আরও নতুনরূপের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে যে বিষয়টা শক্তিশালী হয়ে উঠছে তা হলো আশংকা।

৭জানুয়ারী ২০২১, বৃহস্পতিবার ফারদিন ইফতেখার দিহান (বয়স ১৮) দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে স্কুলছাত্রীকে মোবাইল ফোনে ডেকে তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর ৬৩/৪, লেক সার্কাস ডলফিন গলি, পান্থপথ, কলাবাগানের ফাঁকা বাসায় ১৭ বছরের মেয়েটিকে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন করে। নির্যাতনের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণে মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়ে। দিহান মেয়েটিকে নিয়ে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যায়। সেখানে ভিকটিমের মৃত্যু হয়। গণমাধ্যম প্রতিবেদনে বিকৃত যৌনাচারের কথা উঠে এসেছে। কৃত্রিম জননেন্দ্রিয় ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী ডা. সোহেল জানান, মাস্টারমাইন্ডের ওই শিক্ষার্থীর যৌনাঙ্গ ও পায়ু পথ— দুই দিক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

৩১ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর থানায় ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বাবা ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। গত ২৮ জানুয়ারি ২০২১ বিকেল ৪টায় মর্তুজা রায়হান ওই তরুণীকে নিয়ে মিরপুর থেকে আসামি আরাফাতের বাসায় যান। আরাফাতের বাসায় স্কুটার রেখে আরাফাত, ওই তরুণী ও রায়হান একসঙ্গে উবারে করে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যান। সেখানে আগে থেকেই আরেক আসামি নেহা এবং একজন সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আসামিরা ওই তরুণীকে জোর করে ‘অধিক মাত্রায়’ মদপান করান। মদ্যপানের একপর্যায়ে ভুক্তভোগী তরুণী অসুস্থ বোধ করলে রায়হান তাকে মোহাম্মদপুরে তার এক বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নুহাতের বাসায় নিয়ে যান। ধর্ষণের পর রাতে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে বমি করলে রায়হান তার আরেক বন্ধু অসিম খানকে ফোন দেন। সেই বন্ধু পরদিন এসে তরুণীকে প্রথমে ইবনে সিনা ও পরে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুইদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর রোববার তরুণী মারা যায়। এ ঘটনায় গত ৩১ জানুয়ারি চারজনকে আসামি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ওই তরুণীর বাবা। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগের মামলায় তার দুই বন্ধুকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন, মর্তুজা রায়হান চৌধুরী (২১) ও নুহাত আলম তাফসীর (২১)।

স্যাডিস্ট বা ধর্ষকামী দিহান তার সম্পর্ক বেছে নিয়েছে নিখুঁত স্বতঃস্ফুর্ততায়। যেমনটা বলা হয়, স্যাডিস্টদের বেশিরভাগ ভিক্টিম হলো তারা যারা অনোন্যপায় বা স্বেচ্ছায় তাদের কাছে গিয়ে হাজির হয়। তাদের লালসা তৈরি হয় সেইসব মানুষদের প্রতি যাদেরকে তারা প্রায়শ দেখে। নিয়মিত ডিজে পার্টিতে অংশ নেয়া মাদকাসক্ত আরাফাত, মাধুরি, রায়হান, তাফসীর এবং নেহা একে অন্যের বন্ধু। তথাকথিত এই বন্ধুরা রাতের আধারে একে অন্যের ঘনিষ্টজন হয়ে যান। এই অস্থির সময়ে বন্ধুত্ব নামক সম্পর্কটা একটা টাইম বোমায় রূপ নিয়েছে। বন্ধু! ক্রমশ হয়ে যাচ্ছে যৌন নিপীড়ক এবং হত্যাকারী।

আমার স্নাতক কোর্সের শিক্ষার্থী’রা বেশিরভাগই মুভি দেখে না। দেখে নেটফ্লিক্সের সিরিজ। গুটিকয়েক যারা মুভি দেখে তারাও ইংলিশ থৃলার দেখে। তো ক্লাসের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য কিংবা ক্লাসের শুরুতে ‘আইস ব্রেকিং’ সেশনের জন্য রকমারী থেকে বেশ কিছু থৃলার নিয়েছি। স্টিগ লারসনের ‘দ্যা গার্ল উইথ দ্যা ড্রাগন ট্যাটু’ শেষ করলাম। এই দ্যা গার্ল হলেন লিসবেথ সালান্ডার, বয়স ২৬। একজন প্রাইভেট গোয়েন্দা, দক্ষ হ্যাকার। লিসবেথ নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিলস বুরম্যানের সঙ্গে যৌনকর্ম করতে বাধ্য হয়। এডভোকেট নিলস বুরম্যান বয়স ৫০। ডিভোর্সি। সন্তান নেই। তিনি গ্রিনপিস এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য। বুরম্যান লিসবেথের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার প্রোটেকশন গার্ডিয়ান। একজন ভয়াবহ মর্ষকামী লোক। সহজ করে বললে, বিশুদ্ধ মানসিক বিকারগস্ত বা সোশিওপ্যাথ। বুরমান লিসবেথকে ব্যাংক চেকে সাইন নেয়ার জন্য নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে এনে বিকৃত যৌন আচরণ করে। বুরম্যান ডিলডো নামের কৃত্রিম জননেন্দ্রিয় আর রাবারের মুখোশ ব্যবহার করেছিল। সাথে হাত বাধার জন্য হ্যান্ডকাফ এবং চাবুক। এক পর্যায়ে এনাল প্লাগটা পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেয়।

কারোনায় বেশখানিকটা অবসর জুটে যাওয়ায় নেটফ্লিক্সে বেছে বুছে কয়েকটা সিরিজও দেখলাম। সিরিজগুলো প্যাটার্ন্ড। ঘুরেফিরে মূল বিষয় ৩টি। এক- যৌনসংসর্গ। দুই- প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা। এবং তিন- হত্যা। হিউম্যান বডি একটা অবজেক্ট। মুড আসলে ক্যাজুয়াল সেক্স। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বিকৃত যৌনাচার কিংবা পাশবিক নির্যাচন। আর হত্যা ব্যাপারটা হলো ক্ষমতার স্বাদগ্রহন। প্রতিপক্ষকে নাশ করে লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে যে। বিচ্ছিন্নতা, আধুনিক নিঃসঙ্গতা, মোহ, ভুল পন্থার ব্যবহার বিরামহীনভাবে উঠে আসছে পর্দায়। একটা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে তার থেকে অপেক্ষাকৃত আরেকটা যন্ত্রণা আমদানি করবার দরকার হয়ে পড়ছে। সুকৌশলে সিস্টেমেটিক পাশবিকতাকে দেখনো হচ্ছে ডিটেইলসে। সিরিজগুলো দেখে বুঝলাম, আত্মকেন্দ্রিকতা, আদর্শহীনতা, অস্থিরতা, অতৃপ্তির মতো ‘অসহ্য জটিলতা’ সমূহ প্রযুক্তি ছাড়া এত দ্রুত আর কোথাও ছড়াতে পারে না।

এই প্রজন্মের সামনে কোনো নীতি নেই, নাই কোনো দিকনির্দেশনা। নেই কোনো নৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক। সবনীতির মূল নীতি যে নৈতিকতা, সে কথা সতর্কতার সাথে এড়িয়ে যাওয়া হয়। সমন্বয়হীনতা, লোভ, নীতিহীনতা শক্তিশালী ভাইরাসের রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। জীবাণুর চেয়েও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের অপরাধ প্রবনতা। জিঘাংসায় ভরা উঠেছে মানুষের মন। অবিশ্বাস এত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে যে কোথায় এর সীমারেখা টানা হবে বাস্তবতা তা বুঝতে পারছে না।‘ওয়ান্ডার এজ’ এর সাম্প্রতিক বেপরোয়া জীবনপদ্ধতির ব্যাপারটা হয়ে উঠেছে একটি সামাজিক গ্রেনেডের মতো, যা কেউ স্পর্শ করতে চাইছে থেকে এরা অর্জন করছে কেবলই শূন্যতা। আমরা এতটাই সংকীর্ণ যে গানিতিক হিসাবের বেড়াজালের বাইরে আর কিছু ভাবতে পারছি না। প্রতিটি বিপর্যয়কে আমরা হিসাবে করছি সংখ্যা দিয়ে, কতটা -কতবার।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভোর ৪:৪৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×