সময়ের স্রোত যেদিকে নিয়ে চলেছে তার উল্টো দিকে কোথায় যেন বাঁধা পড়ে আছে আমার হৃদয়। নিজের গভীরে গুটিয়ে থাকা আমি প্রায়শই অনুভব করি, নিজের সাথে একটা বিভাজন তৈরি হয়েছে আমার। জেনেছি জীবনে একবার হলেও মানুষকে দুঃখের স্বাদ পেতে হয়। সেই দুঃখটা মানুষ কিভাবে যাপন করে সেটাই মুখ্য। দুঃখটা কার কাছ থেকে; কিভাবে পেয়েছিল সেটা মুখ্য নয়।
পরিস্থিতি যখন কোনো কিছু কেড়ে নেয়, এমন কিছু যা কোনোভাবেই প্রতিস্থাপন করা যায়না; তখন আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। মানিয়ে নেয়ার জন্য নিজের সাথে লড়তে থাকি প্রতিদিন। তারপর একসময় বেঁচে থাকার জন্য বাস্তবতাকে মেনে নিতে শিখে যাই। সহ্য করতে শিখি ক্ষতস্থানের ব্যথা। নিজের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা কিছু, তার থেকে হঠাৎ বঞ্চিত হওয়ার অনুভূতি অনেকটা মৃত্যুকে মেনে নিতে শেখার মতো।
কিছু আঘাতের দাগ কোথাও থাকে না। সারাক্ষণ নিজের চাপা অনুভূতিগুলোর সাথে সময় কাটানোর চেয়ে ক্লান্তিকর জীবনযাপন আর কিছু হতে পারেনা। অপ্রাপ্তির সক্রিয় বেদনাবোধের কাছে মানুষ জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলে। ভালোবাসার যথাযথ অনুভূতি তাকে আর আবেগি করেনা। মানুষ যদি সত্যিই মুক্তি চায়, তার জন্য হয় তাকে ছেড়ে দিতে হয়, অথবা চলে যেতে দিয়ে হয়। নতুবা সমস্ত জীবন একটা মস্ত শূন্যতার অংশ হয়ে বেঁচে থাকতে হয়।
'আপাত সফল কিন্তু প্রেমে ব্যর্থ একজন অধ্যাপক প্রায়শই স্বপ্নে পরাবাস্তব জগতে চলে যান। সেখানে ঘড়ি আছে কিন্তু কাঁটা নাই। মানুষের অবয়ব আছে কিন্তু শরীর নেই। ভিনদেশি একটি চলচ্চিত্রে দেখা এই দৃশ্যটা আমাকে ভীষণরকম বিষন্ন করে। প্রপঞ্চক আবেগের জন্ম নয়, একজনের অনুভূতির সাথে আরেকজন কিভাবে প্রতারণা করে সেই চিত্রায়ণ আমাকে ব্যথিত করে। এরকম কিছু দুঃস্বপ্নকে এড়িয়ে যেতে নিজের সাথে সমঝোতার সংকল্প করি।
চিন্তার জালে হারিয়ে ছুরিটা আমার নিজের দিকেই ফিরে আসে। অতঃপর নারী হিসেবে আমার বেদনাবোধ ও ক্ষমা। এবং পুরুষের অবস্থান থেকে শুভ'র অপরাধবোধ ও উপায়হীন অবস্থা নিয়ে ভাবতে বসে; জানালার বাইরে একটা দীর্ঘ জীবন তাকিয়ে থাকি...
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৬:০২