'মেয়েদের অত রূপ ভালো নয় গোলাপ' জন্মাবার পর থেকেই কথাটা বারংবার শুনতে হয়েছে শাকেরা আরজু ওরফে গোলাপ আপাকে। শাকেরা আরজু নামটা লেখা হয়েছিল স্কুল-কলেজের খাতায়, আর লেখা হয়েছিল বিয়ের কাবিননামায়। গোলাপ আপার সৌন্দর্যের সুখ্যাতি ছিল। সুন্দরের কারণেই তাকে ছোটবেলা থেকে সবাই গোলাপ বলে ডাকত। কলেজ পড়ুয়া গোলাপ আপার ধুমধামে বিয়ে হয় সমাজের এক ভদ্রস্থ পরিবারে। অনেক আয়োজন হয়েছিল বিয়েতে। মাস ছয়েক যেতে না যেতেই গোলাপ আপার কাছে পরিষ্কার হয়, কোন যোগ্যতা ছাড়াই জামান সাহেব তার বর নির্বাচিত হয়েছেন।
মাতাল বর নিয়ে ঘর করা যায়, কলহপ্রিয় বরের সাথে কোনমতে মানিয়ে গুছিয়ে চলে যায় কিন্তু যে বর কাছেও টানে না দূরেও ঠেলে না, তার সাথে ঘর করবে কিভাবে! জামান সাহেব ছিলেন অন্যানুরাগী। আপা তার মাকে জানালেন। সব ঠিক হয়ে যাবে এই আশায় খালাম্মা কেটে কেটে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠালেন। ঘরকন্যা করে কেটে যায় দুটো বছর। জামান সাহেব তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকাকে বিয়ে করেছেন জেনে গোলাপ আপা স্থায়ীভাবে চলে এলেন। আইনত বিবাহ বিচ্ছেদ হলো। নিরুত্তাপ নৈর্ব্যক্তিক গোলাপ আপা বুঝেছেন, যে ঘরের দেয়াল ভেঙে যায় সে ঘরের উপর দোতলা করার চেষ্টা কোন কাজেই আসে না এর চেয়ে উত্তম ওই ঘরটা ভেঙে ফেলা।
ঈশ্বর গোলাপ আপাকে শক্তি দিল এমন বিষয় মেনে নিতে যা তিনি বদলাতে পারবেন না। জাপানে কিন্টসুকি বলে একটা শিল্প আছে। যে শিল্পে ভেঙে যাওয়া কাঁচের পাত্রের টুকরোগুলোকে সোনার পাত দিয়ে জুড়ে দেয়া হয়। এই শিল্পে প্রথমে ভাঙ্গা টুকরোগুলো গুছিয়ে এক জায়গায় করা হয় অতঃপর সোনা ধাতু এবং সিমেন্ট দিয়ে টুকরোগুলোকে জুড়ে নিয়ে একটা নিরাপদ স্থানে কিছুদিন সংরক্ষিত রাখা হয় যেন জোড়ানো টুকরোগুলো মজবুত এবং পুনরায় ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠে। গোলাপ আপা নিজেকে জুড়ে নিলেন।
বিষাদ মানুষকে সুন্দর করে দেয়, গোলাপ আপাতত দেখলাম! বিয়ে তাকে এক অদ্ভুত নিরব বেদনা উপহার দিয়েছে। যা তার পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়, আর ক্ষমা করার তো প্রশ্নই ওঠে না। কিছু আঘাতের চেয়ে মর্যাদাহানি মানুষকে বেশি কষ্ট দেয়। তখন মানুষ তার খাঁটি ভালোবাসা আর আবেগশূন্য স্থানকে পুরোন করে অপরিণত প্রচেষ্টায়।
যদিও ব্যথা বেড়ে ওঠার অংশ এবং ক্ষতকে ক্ষত বলে মেনে নেয়াই একে সারানোর পূর্বশর্ত। এবং জীবনের নির্মম বাস্তবতা হলো, সময় একাকিত্বকে সারিয়ে নয় বরং বাড়িয়ে দেয়। পার্থক্যটা মাত্রগত! অনেক সময় আমরা যা দেখি তার পেছনে রয়েছে, আরেকটা গোপন জগত। ঝড়ের মুখে যা কিছু হারিয়ে যায় তা ভুলে যাওয়ার বিকল্প নেই। দীর্ঘ বছর বাদে আমাদের গোপনীয়তা রাখার সিন্দুক 'গোলাপ আপা'র আজকে বিয়ে ...
বি.দ্র. এই লেখা পড়ে জামান সাহেবকে নেতিবাচক ভাবার অবকাশ নাই। তিনিও ভালো মানুষ। পরিবারের মতামতে বিয়ে হয়েছিল। দুজন মানুষের সুখের চেয়েও আমাদের সমাজে পরিবারের মান-সম্মানকে বড় করে দেখা হয়।
গোলাপ আপার পরিবারও অনুরূপ।
গোলাপ আপা আশা করি বাকি জীবনটা ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৫৬