somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লাসমেটের সাথে প্রেম, একধরনের পাতানো ম্যাচ

১২ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রতিবছর ৬৬জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেন। এই বিভাগে বরাবরই নারী শিক্ষার্থী সংখ্যা কম। আমাদের ব্যাচে ছিলো ১১জন। যা হোক প্রথম বর্ষে আমাদের ক্লাস শুরু হয় মার্চের ১৮তারিখ। আমি ক্লাস শুরুর খবর জানতাম না, এবং ক্লাস শুরু করি ৩১মার্চ থেকে। প্রথমদিন করিডোরে ৫/৬জন ক্লাসমেট আমার সাথে পরিচিত হয়। সবাই কমনলি একটা বাক্য বলে 'ও তুমি নন্দিনী...'। প্রথম মাস দেড়েক আমাকে মিরপুর থেকে চৈতালি বাসে ইউনিভার্সিটিতে যেতাম। ক্লাসমেট কারোর সাথেই আমার বন্ধুত্ব হয়নি। তখন বন্ধুত্বের চেয়েও বাসের শিডিউল আমার প্রাওয়োরিটি লিস্টে উপরে। বাসের শিডিউল নিয়ে আমার দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। কারণ আমি বাস মিস করতাম। ঢাকার বাইরে থেকে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষে কম ঝক্কি পোহাতে হয় না!

রোকেয়া হলে উঠি মে মাসের ১২তারিখ। এক্সটেনশন ৮৬ নম্বর রুমে। দুইটা ব্যগ নিয়ে একটাতে আমার বইপত্র অন্যটাতে ব্যবহার্য। শুরু হলো আমি সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। হলে উঠতে না উঠতেই গ্রীষ্মকালীন ছুটি! পুরো এক মাস। জুলাই মাসে সত্যিকারের ক্লাস- এসাইনমেন্ট- পরীক্ষা শুরু। সেই সাথে শুরু ক্লাসমেটদের ভাব-চক্কর। ১১জন মেয়ের মধ্যে দুইজন প্রথম বর্ষেই ক্লাসমেট এর সাথে প্রেম শুরু হয় (যদিও সেই প্রেম শেষ পর্যন্ত খুব খারাপ ভাবে শেষ হয়)। তো ক্লাসমেট ছেলেদের একমাত্র দিবাচিন্তা তখন প্রেম (এটা নিশ্চিত ভাবে বলছি কারণ এই বিষয়ে বাজি ধরতে আমি রাজি আছি)।

মেয়েদের আলাদা একটা ক্ষমতা থাকে, কেউ তার বিষয়ে ভাবতে শুরু করলে তারা বুঝতে পারে। আবার এটা বিপরীতও হতে পারে, ছেলেরা ভাবে- ভংগীতে- ইংগিতে বোঝাতে পারদর্শী। তাতে ধরি মাছ না ছুঁই পানি হলো আরকি। তো এমন ইংগিতপূর্ণ কথা বলায় প্রথমজনের সাথে কথা বন্ধ করে দিলাম। দ্বিতীয় জনের দিকে খুব আহত চোখে তাকিয়ে ছিলাম। সম্ভবত সেটা আহত দৃষ্টি ছিলো না, সেটা ছিলো রাগ- ঘৃণা-হতাশার সম্মিলন। তৃতীয়জনের বিষয়টা ছিলো মজার। তার নাম হাসান। হল গেইটে এসে আমাকে কল পাঠিয়েছিলো রুমে। স্পষ্ট মনে আছে আমার রুমমেট রিডিংরুমে এসে কল পৌঁছে দিয়েছিলেন। গেইটে গেলাম কী বিষয়। হাসান আমার দিকে একটা ভাজকরা কাগজ এগিয়ে দিলো। এটা কী? (জানতে চাইলাম)। হাসান বললো পরীক্ষার রুটিন। তুমি ডিপার্টমেন্টে যাওনি তাই নোটিশ বোর্ড থেকে নিজের জন্য লিখে নিয়েছি আর তোমাকে এককপি দিতে আসলাম। আমি নির্বিকার মুখে বললাম গতকাল বিকেলে হল অফিসের নোটিশ বোর্ডে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষার রুটিন টাংগিয়ে দিয়েছে, আমি সেখান থেকে নিজের জন্য লিখে নিয়েছি। এবং কাগজটা ধরলাম না। তারপর আমরা ডাসে গিয়ে লাচ্ছি খেলাম, খানিকক্ষণ গল্পগুজব করলাম। হাসান এরপর থেকে অপ্রয়োজনে প্যাচাল পাড়ার চেষ্টা করেনি (ভালো ছেলে বলে কথা)।

পরীক্ষা শেষে কয়েকদিনের বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হলো। সবাই পূর্নদ্যোমে ক্লাস-ঝগড়া-গ্রুপ ডিসকাশন শুরু করি। একদিন ক্লাস শুরু স্যার তখনও আসেননি, আমি ডায়াসে দাঁড়িয়ে বললাম; আমি কিছু বলতে চাই। সবার এটেনশন নিশিত করে দিলাম এক ঐতিহাসিক ঘোষণা 'এই ক্লাসের সব ছেলে আমার আপন সৎ ভাই। সবাই ভবিষ্যতে আমাকে আপন বোনের নজরে দেখবা'। ইট ওয়াজ আ ম্যাজিক। পরবর্তী চার বছর (মাস্টার্সসহ) আমাকে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেম বিষয়ক ইস্যুতে পড়তে হয়নি।

তারপর গার্লস গ্যাং নিয়ে আমরা ৫বান্ধবী সুখে শান্তিতে ভার্সিটি লাইফ শেষ করি। মাঝখানে তৃতীয় বর্ষে থাকতে আবেদিন বলে এক জুনিয়র ছেলে বেশ ভুগিয়েছে আমাকে। সে গল্প আরেকদিন হবে।

বি.দ্র 'ওহ তুমি নন্দিনী' এই বাক্যের শানে নযুল হলো, আমার নামটি ৬৬জনের মধ্যে সবার প্রথমে ছিল। ক্লাসে সবাই অপেক্ষা করছিল ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেও কেন আমি জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে পড়তে আসলাম সেটা জানার জন্য...
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৩৬
২৮টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×