এডিটিং কোর্সের ক্লাসে প্রাকটিকাল অংশ বেশি থাকার কারণে ক্লাস টাইমের পরে এডিশনাল সময় নিয়ে প্রাকটিস পেপার কারেকশন করতে হয়। শিক্ষার্থীদের বলা আছে কারো কোনো জরুরি প্রয়োজন থাকলে ক্লাস টাইমের পর চাইলে চলে যেতে পারে। যা হোক, গত সপ্তাহে এই কোর্সের ক্লাস শেষ করে বের হয়ে দেখি ক্লাস রুমের সামনে পুতুল পুতুল চেহারার এক মেয়ে দাঁড়িয়ে। সাধারণত ক্লাস চলাকালীন ক্লাস রুমের দরজা ভেজানো থাকে এবং শিক্ষার্থীদের সেলফোন সাইলেন্ট মুডে থাকে। আমি বের হলাম, আমার পেছন পেছন শিক্ষার্থীরা। তো পুতুল মেয়েটা কবিরের দিকে অগ্নিদৃষ্টি হেনে গট গট করে করিডোর ধরে হেঁটে চলে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় কবির হকচকিয়ে গেল। আমার সামনে কবির না পারছে মেয়েটার পেছন পেছন দৌড়ে যেতে যা পারছে চলে যাওয়ার এই দৃশ্য হজম করতে। বেচারা...
রুমে ফিরে এসে একা একা অনেকক্ষণ হাসলাম। আহা প্রেম-- আহারে প্রেম। যদিও প্রতি সেমেস্টারের শুরুতে আমি শিক্ষার্থীদের বলে দিই, নোটিশ বোর্ডে ক্লাস শিডিউল টাংগানো আছে। ক্লাস রুটিন এন্ড রুলস কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। যে যার নিজ দায়িত্বে প্রয়োজনীয় প্রিয়জনকে পৌঁছে দিয়েন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাই দিলাম শুধু, মানুষ আর বানাতে পারলাম না!
ডিসিপ্লিনারি কমিটির মেম্বার হিসেবে কাজ করার সুবাদে প্রায়শই নানা অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হয়। তো এবারের অভিযোগ বেশ গুরুতর। জুনিয়র এক ছাত্রী, সিনিয়র এক ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। অভিযোগটি হলো সৌরভ প্রকাশ্যে ছাত্রীটিকে থাপ্পড় মেরেছে এবং মেয়েটার সেলফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে ডাকা হলো সৌরভকে। শুনানিতে আমরা চারজন শিক্ষক বসলাম। সেই সাথে অভিযোগকারী ছাত্রী এবং অভিযুক্ত ছাত্র উপস্থিত হলো। তো এই আচরণের কী কারণ সৌরভ? 'ম্যাডাম আমি তো প্রথমে কারো গায়ে হাত তুলিনি। আমাকে যদি জুনিয়র এক মেয়ে সবার সামনে থাপ্পড় দিতে পারে তাহলে আমি কি চুপ করে থাকবো'। আপনি ফারহানার সেলফোন জোর করে নিয়ে নিয়েছেন কেন? 'ম্যাডাম মোবাইলটা আমার, ফারহানার না। (ফারহানার দিকে তাকিয়ে) তখন ভালোবাসতাম তাই মোবাইল কিনে দিয়েছিলাম। এখন বাসিনা তাই নিয়ে নিয়েছি'। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ মনে হয় হাসি চেপে রাখা, এবং সেদিন আমি বিষয়টা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম... আমার মাথায় তখন একটা গানই বাজতেছিল 'এ দুনিয়া - এ দুনিয়া পিতাল দি; এ দুনিয়া পিতাল দি'।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৫৮