
প্রিয় ডিসেম্বর,
'তাদের (তোমার) কথা খুব মনে পড়ছে, একদিন যাদের (যার) সঙ্গ পেয়ে আজ এই নিঃসঙ্গতায় ডুবেছি আমি'। শঙখনীল কারাগার বইয়ের শেষ অনুচ্ছেদের এই লাইনটা কেবল তোমার জন্যই অনুভব করি। জীবনে নিঃসঙ্গ হওয়ার জন্য একটা কাজই যথেষ্ট, কোনো একজনকে গভীরভাবে ভালোবাসা তারপর তাকে হারিয়ে ফেলা।
আমি সম্ভবত এই গ্রহের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিঃসঙ্গ মানুষ। সর্বোচ্চ নিঃসঙ্গ মানুষ হল তুমি। কল্পনা করার চেষ্টা করি দুনিয়ার সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষ হতে কেমন লাগতে পারে। সবচেয়ে নিঃসঙ্গ আর দ্বিতীয় সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষের মধ্যে একটা গভীর প্রণালী রয়েছে। গভীর এবং প্রশস্ত।
কোনো এক ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি তোমার সাথে আমার পরিচয়। সংখ্যার হিসেবে সে অনেককাল আগের কথা। তবু মনে হয় এই তো সেদিন। সেদিন! হ্যাঁ। আমাদের পরিচয়টা সাদা কালো সিনেমার একটা স্মরণীয় দৃশ্যের মত। যোগাযোগ ছিল দুই বছর। খুব বেশি লম্বা সময় নয়, কিন্তু তা ছিল আমাদের জীবনের দুটো প্রকৃত বছর। ছিল! 'ছিল' শব্দটা বলতে এর আগে কখনো এতটা খারাপ লাগনি আমার।
তখন আমাদের বয়স কম, বুদ্ধি আনুপাতিক হারে আরও কম। আমরা 'প্রেম' পড়ে গেলাম। যা ছিল আমাদের কাছে প্রেম, বড়দের কাছে সেটা সম্ভবত 'হোঁচট' খাওয়ার চেয়ে বেশি কিছু বলে মনে হয়নি। মধ্যবিত্ত অভিভাবকদের সবারই নিজস্ব মতামত থাকে, তা যত ভুলই হোক না কেন! আর সেই সিদ্ধান্ত, সামন্তবাদের খাজনা আদায়ের রেশ ধরে সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়াই নিয়ম কিনা।
নাটকীয় দৃশ্যের ঝুঁকি নেয়ার থেকে মেনে নেয়াটাই ছিল শান্তি স্থাপনের একমাত্র পথ। সেদিন থেকে 'আত্ম সমর্পণ' চুক্তিতে আমরা চিরকালের জন্য আবদ্ধ হয়ে গেলাম। এখন বুঝি, সন্তান'রা কেবল উত্তরাধিকার হওয়ার জন্য জন্মায় না, মানুষ হওয়ার জন্যও জন্মায়। স্বীকার করছি কাজটা করতে নিজেদের ইচ্ছাশক্তির সবটুকু ব্যয় করতে হয়েছিল আমাদেরকে।
কম বয়সে বোকার মতো সাহস করে মানুষ। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সব-কিছু! বোকামি করার সেই বয়সটাতে ফিরে যাওয়ার জন্য আজ এই মুহূর্তে জীবনের যে কোনো সঞ্চয় দিয়ে দিতে পারি আমি। কেননা সাহসী মানুষও একদিনে জেনে যায়, জীবনে এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাপার থাকে যা তাৎক্ষনিক চাওয়া-পাওয়ার চেয়েও অনেক অনেক বেশি জরুরি।
কিছু ব্যথা উপশমের জন্য ঔষধের চেয়েও সান্নিধ্য বেশি জরুরি। জীবনের অসংখ্য মুহূর্ত এসেছে এমন যে, ঐ নির্দিষ্ট কথাগুলো তোমাকে বলতে না পেরে প্রায়শই মনে হতো, আমার হৃৎপিন্ডটা বোধহয় এখনই লাফ দিয়ে গলা দিয়ে বের হয়ে যাবে!
শুরু থেকেই আমাদের মধ্যে কোন একটা কিছু ঠিক ছিল না। যেন আমরা ভুলভাবে বোতাম লাগিয়ে ছিলাম। এমন অনেক ভাবনার ভীড়ে ডুবে যাই অমৌলিক অনুভূতির সমুদ্রে। চিন্তার গভীর সমুদ্র পার হওয়া কি কঠিন, কি অসম্ভব!
কতদিন বছর তোমাকে দেখি না। একবার না হয় অনিয়ম হয়েই এসো...
তোমার মতো একজন স্বচ্ছ মনের উষ্ণ হৃদয়ের মানুষের জন্য আমার ভেতরে যে শূন্যতা সেই অনুভূতি প্রকাশে শব্দেরা হয়রান, তাই গদ্যকে পাশে সরিয়ে রেখে কবিতার আশ্রয় নেয়াটাই সমীচীন।
'পৃথিবীর সব গল্প একদিন ফুরাবে যখন,
মানুষ র'বে না আর, র'বে শুধু মানুষের স্বপ্ন তখনঃ
সেই মুখ আর আর আমি র'বো সেই স্বপ্নের ভিতর।'
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




