গত মার্চ মাসে সিটিসেল জুমের একটা অফার ছিলো মডেমের দাম ১,৪৯০ টাকা। সাথে ১,৪৯০ টাকা ক্যাশ ব্যাক। শর্ত ছিলো- প্রতি মাসে জুম আলট্রা’র ন্যুনতম ২শ’ টাকা মূল্যের যে কোনো প্যাকেজ ব্যবহার অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে ১২ মাসে ১২৪ টাকা করে ১,৪৯০ টাকা ক্যাশ ফেরত দেয়া হবে। যেটা ডাটা, ভয়েস অথবা এসএমএস ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ করা যাবে। ভালো কথা, মডেমের দাম বাবদ যে টাকা খরচ হয়েছে, পুরো টাকাটাই এক বছরে ফেরত পাওয়া যাবে।
মডেম কিনলাম। মাস পার হলো, বোনাস (ক্যাশ ব্যাক) আসেনা। আসেনা তো আসেইনা। ১.৫ জিবি প্যাকেজের দাম ৪৬০ টাকা। এর মেয়াদ একমাস হলেও ১.৫ জিবি আমার ১০-১২ দিনে খরচ হয়। অর্থাৎ ১.৫ জিবি করে মাসে দু’বার প্যাকেজ কিনতে হয়। সুতরাং বোনাস পাবার জন্যে ন্যুনতম ব্যবহারের যে শর্ত, সেটাও আমি পূরণ করছি। বোনাসের বিষয়টা মাঝেমধ্যে মাথায় এলেও এইসব কোম্পানীর ক্রমাগত প্রতারণা গা-সওয়া হয়ে গেছে তাই আর খোঁজখবর নেয়া হয়নি।
আজকে আবার বোনাসের বিষয়টা মনে পড়াতে সিটিসেলের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলাম।
ওখান থেকে বলা হলো:
- স্যার, আপনি প্রতিমাসে ১২৪ টাকা করে বোনাস পাচ্ছেন।
- তো, আমি জানিনা কেন?
- স্যার, বোনাস চেক করতে হলে অমুক নাম্বারে ডায়াল করতে হবে।
- বোনাসের টাকা যায় কোথায় তাহলে? আমাকে তো প্রতিবারে ১.৫ জিবির জন্যে ৪৬০ টাকা করেই রিচার্জ করতে হয়।
- ১.৫ জিবি’র মূল প্যাকেজ শেষ হয়ে গেলে আপনার এ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য একটা প্যাকেজ চালু হয়ে যায় যেটাতে প্রতি মেগাবাইটের জন্যে ১ টাকা ০৮ পয়সা করে কাটা হয়।
- তো, এই যে আমাকে বোনাস দেয়া হচ্ছে, এটা এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয়না কেন? আপনারা তো দুনিয়ার যাবতীয় অফার আমি না-চাইলেও এসএমএস করে পাঠিয়ে দেন। বোনাস পাবার মতো এতো ভালো একটা খবর গোপন করে রাখেন কেন? অথবা আমাকেই ডায়াল করে জেনে নিতে হবে কেন? ...
এরকম আরো কিছু কথাবার্তা বলে সবকিছু খোলাসা হলো।
১. বোনাস যে দেয়া হচ্ছে, তা তারা ইচ্ছে করেই গোপন রাখে। যাতে ইউজাররা বোনাসের টাকা কাজে না লাগাতে পারে। নিয়মিত প্যাকেজ শেষ হয়ে গেলে চুপচাপ প্রতি মেগাবাইটের জন্যে ১ টাকা ০৮ পয়সা করে কাটা শুরু করে। একটা বাংলা পত্রিকার শুধু হোম পেইজটা লোড হলেই ৫-৭ মেগাবাইট ডাটা ডাউনলোড হয়, সে হিসেবে ওই একটি পত্রিকার সবক’টি পৃষ্ঠা পড়লে বোনাসের ১২৪ টাকা নীরবেই শেষ হয়ে যায়।
২. নিয়মিত প্যাকেজ শেষে আপনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘অমুক’ প্যাকেজে মাইগ্রেট করা হলো, যার মূল্য ‘এতো’- এ ধরণের কোনো নোটিফিকেশনও দেয়া হয়না। তাই প্রতি মেগাবাইট ১ টাকা ০৮ পয়সা হিসেবে আমি যে অনেক টাকা অপচয় করে ফেলছি সেটাও জানার সুযোগ থাকেনা। আমি তো চাইনি প্রতি মেগাবাইট ১ টাকা ০৮ পয়সা করে ব্যবহার করতে। আপনারা আমাকে জিজ্ঞেস না করেই এত উচ্চ মূল্যের প্যাকেজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু করে দিলেন কেন? এটা প্রতারণা। এভাবে একজন ইউজারের কাছ থেকে মাসে ১২৪ টাকা হাতিয়ে নিতে পারলে কয়েক হাজার অথবা কয়েক লাখ ইউজারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকার অংকটা মোটেও ছোট নয়। তাই এই প্রতারণাটি তারা সচেতনভাবেই করে।
যাকগে, কিছু ব্যতিক্রম বাদে পুরো বাংলাদেশটাই চলছে প্রতারণার ভেতর দিয়ে। বাড়তি আফসোসের কিছু নেই। কথা শেষে কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ বললেন, এই কলটা শেষ হলে আপনার কাছে একটা এসএমএস যাবে। কাস্টমার কেয়ার বিভাগের সার্ভিসে আপনি সন্তুষ্ট হলে দয়া করে ‘ওয়াই’ এবং সন্তুষ্ট না হলে ‘এন’ লিখে রিপ্লাই করবেন। কল শেষ হলো। এসএমএস এলো। আমি ‘ওয়াই’ লিখে রিপ্লাই দিলাম। কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভের মার্জিত আচরন এবং দ্রুত সেবায় আমি সন্তুষ্ট।
কিন্তু তাদের কোম্পানীর এরকম বড় মাপের একটা প্রতারণায় আমি ভীষন অসন্তুষ্ট। কথাটা তাকে আমি ইচ্ছে করেই বলিনি। কল সেন্টারের একজন ফ্রন্টলাইনের কর্মচারিকে ওই কথা বলে কোনো লাভ নেই। এই অসন্তোষের কথা সম্ভবতঃ বাংলাদেশের কোথাও কাউকে বলে কোনো লাভ হবেনা। কারণ একটাই- এটা বাংলাদেশ।
[প্রসঙ্গতঃ এই মডেমটা কেনার পর দু’বার নষ্ট হয়েছে। ওয়ারেন্টির জন্যে পাঠিয়ে একবার সতেরো দিন, আরেকবারে প্রায় দু’মাস পর ফেরত পেয়েছি। ভাগ্যিস বিকল্প আরেকটা মডেম ছিলো]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




