somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুদের মাঝে গড়ে তুলুন পড়ার অভ্যাস

১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল বাবা-মায়েদের তাদের শিশুদের নিয়ে একটি কমন অভিযোগ রয়েছে যে, তাদের শিশুরা পড়তে চায় না! কিন্তু, ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করার জন্য ও কোন বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভের জন্য পড়ারতো কোন বিকল্প নেই।

আসলে না পড়তে চাওয়া বিষয়টি শুধু শিশু নয়, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যেও বিদ্যমান। মন থেকে আন্তরিকভাবে কোন কিছু পড়ার অভ্যাস আমাদের যেন দিনকে দিন কমেই চলেছে! বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক তরুণ-তরুণী খুব আগ্রহের সাথে পড়ছে পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখকদের লেখা গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, কিংবা কবিতা; খুব কম সংখ্যক ছেলে-মেয়েই পড়ছে নামীদামি সব ম্যাগাজিন, জার্নাল, কিংবা রিসার্চধর্মী বই।

তাছাড়া এই কথাটিতো কমবেশি সবারই জানা যে, দি মোর ইউ রিড, দি মোর ইউ লার্ন! অর্থাৎ, যত বেশি তুমি পড়বে, তত বেশি তুমি জানবে! অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ এই পড়ার অভ্যাসটি যদি শৈশব থেকেই সন্তানদের মধ্যে গড়ে তুলে দেয়া যায়, তাহলে প্রথম থেকেই ক্লাসে তাদের রেজাল্ট আশানুরুপ হবার পাশাপাশি তাদের যেমন গড়ে উঠবে নিয়মিতভাবে ভালো ভালো সব লেখা পড়ার অভ্যাস, তেমনি প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকবে তাদের জ্ঞানের পরিধি। আর পড়ার অভ্যাসটি একবার ভালোমতো গড়ে উঠলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সারাজীবনের জন্য ব্যক্তির মধ্যে রয়ে যায়।

এখন তাহলে জেনে নিন, শিশুদের মাঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বাবা-মায়েরা কী করতে পারেন, সেই বিষয়ে সেরা ১০ টি টিপস।

১. সবার আগে নিশ্চিত হোন যে আপনার শিশুর বর্ণমালা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রয়েছে:
আপনার শিশুকে স্কুলে ভর্তি করার আগেই বাসায় খেলতে খেলতে বর্ণমালা সম্পর্কে ধারণা দিন। তাকে অক্ষর শেখান। ইংরেজী অক্ষরগুলি শেখানোর সময় বিশেষ করে ছোট হাতের ও বড় হাতের অক্ষরগুলির পার্থক্য ধীরে ধীরে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিন। তাতে, স্কুলে ভর্তির পর যখন সে দেখবে সে বেশ ভালো পারছে, তখন তার আত্মবিশ্বাসও যেমন বাড়বে, দূর হয়ে যাবে স্কুল ভীতিও। আর পড়ার পূর্বশর্ততো অবশ্যই অক্ষর ও শব্দগুলি ঠিকভাবে পড়তে পারা।

২. প্রতিদিনই শিশুদের সাথে কিছু না কিছু পড়ুন ও পড়ান:
প্রতিদিনই শিশুর সাথে কিছু না কিছু পড়ার চেষ্টা করেন। পড়ার জন্য এমন কোন বিষয় বেছে নিন যা শিশুর সাথে সাথে আপনারও ভালো লাগবে। সেটা হতে পারে অত্যন্ত ছন্দময় মজার কোন সহজ কবিতা, হতে পারে ছোট কোন গল্প বা রূপকথা; কিংবা হতে পারে টিনটিন-এর মতো মজার ও জনপ্রিয় কোন চরিত্রের কার্টুন বই। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যে, একই বই যেন বারবার না পড়ানো হয়ে যায়। একই বই বারবার পড়ালে তাদের কাছে বিষয়টি বোরিং হয়ে যেতে পারে।

৩. নার্সারি লেভেলের ছড়াগুলি শিশুদের সাথে পড়ুন ও পড়ান:
শিশুকে স্কুলে ভর্তির আগে তাকে নার্সারি লেভেলের ছড়াগুলি শিখিয়ে দিন। তাদের কে প্রয়োজনে ছড়াগুলি অভিনয় করে পড়ান; সাথে সাথে তাদেরকেও অভিনয় করে আবৃত্তি করতে বলুন। বইয়ে ছাপা কবিতার শব্দগুলিতে হাত দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে পড়তে বলুন। ধীরে ধীরে তাদের কবিতাটি মুখস্ত করিয়ে দিন। যখন সে নার্সারিতে ভর্তি হবে, তখন সেই হয়তো এগিয়ে থাকবে সবার চেয়ে বেশি; আর পড়ালেখায় তার আগ্রহও বেড়ে যাবে বহুগুন।

৪. শিশুদের জন্য পড়ার পরিবেশ তৈরি করে দিন:
যদি সম্ভব হয়, তাহলে শিশুর জন্য আলাদা একটি পড়ার রুমের ব্যবস্থা করে দিন। তা সম্ভব না হলে শিশু যে রুমে ঘুমায়, সেই রুমের কোনায় একটি রিডিং টেবিল দিয়ে দিন। রিডিং টেবিলে তাক সিস্টেম থাকলে ভালো হয়। টেবিলের গায়ে শিশুর প্রিয় কার্টুন চরিত্রের স্টিকার লাগিয়ে দিন। অনেক সময়ই দেখা যায়, মনের মতো পরিবেশের অভাবেও শিশু পড়তে চায় না। এই রুমে তার খেলনাগুলিও রাখতে পারেন। আর সবচেয়ে ভালো, তারই সুন্দর সুন্দর সেরা সিঙ্গেল ছবিগুলি বড় করে পৃন্ট করে ওই রুমের দেয়ালে লাগিয়ে রাখুন দেয়ালে লাগিয়ে দিন।

৫. প্রতিদিনই শিশুদের জানান (এবং আপনি নিজেও বিশ্বাস করুন) যে, সে একটি স্মার্ট শিশু ও ভাল পড়ুয়া:
কারণে অকারণে শিশুকে উৎসাহ দিন। শিশুর সার্বিক বিকাশে উৎসাহ দেওয়ার বিকল্প কিছু নেই। শিশুকে জানান যে, সে খুব ভালো পড়তে পারে এবং তার পড়ার আগ্রহ অন্যদের চেয়ে বেশি। তুমি যত বেশি পড়বে, অন্যদের চেয়ে তত বেশি জানবে ও তত বেশি এগিয়ে যাবে। তাকে বলুন- তুমি খুব স্মার্ট। আর স্মার্টদের কে অনেক কিছু জানতে হয়; তাই তাদের অনেক কিছু পড়তে হয়।

৬. শিশুকে তার শিক্ষক ও স্কুল সম্পর্কে পজিটিভ কথা বলুন:
অনেক শিশুরই স্কুলভীতি থাকে। তারা অনেক সময় ধরে নেয় যে, স্কুল মানেই কড়া কড়া টিচারের বকুনি আর দুষ্টু ক্লাসমেটদের দুষ্টুমির শিকার হওয়া। এতে করে তাদের মধ্যে শুরুতেই স্কুলের প্রতি অনীহা দেখা দিতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে পড়ালেখার ওপর। তাই শিশুদের স্কুলে দেবার আগে স্কুল ও টিচার সম্পর্কে ভালো কথা বলুন। তাদের জানান, স্কুলে তুমি যেমন ভালো ভালো খেলার সাথী পাবে, তেমনি পাবে তোমার যতœ নেওয়ার জন্য ভালো ভালো টিচার।

৭. পড়ার পাশাপাশি শিশুদের লিখতে উৎসাহ দিন:
পড়ার পাশাপাশি তাদেরকে যে কোন কিছু লিখতে উৎসাহ দিন। তাকে নিজের থেকে ছড়া, মিনি গল্প, কিংবা আজ স্কুলে সে কী কী করলো, তা লিখতে বলুন। এতে করে তার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। তার লেখায় অনেক ভুল থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই, তাকে সবার আগে চমৎকার লেখার জন্য বাহবা দিয়ে অত্যন্ত যতেœর সাথে ভুলগুলি ধীরে ধীরে শুধরে দিন। হতে পারে, আপনার শিশুর মধ্যেই লুকিয়ে আছে বড় কোন লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি, গীতিকার, জার্নালিস্ট, কিংবা কলামিস্টের প্রতিভা!

৮. শিশুর সাথে কথা বলুন, তাকে প্রশ্ন করুন, তার কাছ থেকে প্রশ্ন শুনুন:
শিশুর সাথে তার পছন্দ-অপছন্দ, চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলুন। সে কী কী বিষয়ে পড়তে উৎসাহ বোধ করে, অথবা আপনি তাকে কোন কোন বিষয়গুলি পড়ালে সে আনন্দ পায়, তাকে তাকে প্রশ্ন করে জেনে নিন। তার পছন্দের বিষয়েই আপনি বেশি করে মনোনিবেশ করুন। শিশু যদি পড়ার মধ্যে আনন্দ একবার পেয়ে যায়, তাহলে সেটা হবে আপনার জন্য অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। পাশাপাশি আপনি এও তার কাছে থেকে জেনে নিন যে, কী কী বিষয় পড়তে তার ভালো লাগে না।

৯. মাঝে মাঝে শিশুর সাথে তার স্কুলে গিয়ে তার বিষয়ে টিচারদের সাথে কথা বলুন:
যখন সময় পাবেন, কিংবা শিশুকে স্কুলে দিয়ে বা নিয়ে আসার সময় তার বিষয়ে টিচারদের সাথে কথা বলুন। তার ক্লাস পারফরমেন্সের বিষয়ে আলাপ করুন। কিংবা তার বিষয়ে কোন কথা জানানোর থাকলে তা টিচারদেরকে অবিহিত করুন। এতে করে টিচাররা তার বিষয়ে সঠিক যত্ন নিতে পারবেন। আর আপনার শিশুরও এটা দেখে ভালো লাগবে যে, তার বিষয়ে আপনি কতটা যত্নবান।

১০. তাকে পুরস্কৃত করুন:
সুযোগ পেলেই শিশুকে পুরস্কৃত করুন। নতুন নতুন খেলনার বায়নাতো শিশুদের লেগেই থাকে। আর সেটা তাকে যেহেতু কিনে দিতেই হয়, তাই সে কিছুর বায়না করার আগেই তাকে বলুন- তুমি যদি এই বইটা সুন্দর করে পড়া শেষ করতে পারো তাহলে তোমার জন্য সুন্দর একটি গিফট রয়েছে। নিজ চোখেই না হয় পরখ করে দেখুন যে, এই টিপসটা কতটা কার্যকর! কিংবা একটি বই শেষ করার পরই হঠাৎই তার সামনে এক বাটি আইসক্রিম দিয়েই দেখুন না!

এগুলিই ছিলো বাছাই করা সেরা সব টিপস। লেট ইজ বেটার দ্যান নেভার! তাই, আরো দেরি হয়ে যাবার আগেই শিশুদের পড়ার বিষয়টিতে মনযোগ দিন। আজ হয়তো আপনি তার পড়ায় আগ্রহ আনছেন, কিন্তু এমনও হতে পারে যে, ভবিষ্যতে তারই দারুন কোন লেখা যখন হাজার হাজার পাঠক মুগ্ধ হয়ে পড়বে, তখন সেই লেখাটি পড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নি:সন্দেহে আপনারই থাকবে!

[পুনশ্চ: লেখাটি ১০ আগস্ট ২০০৭ তারিখে শিশুদের পড়ার অভ্যাস করতে হলে শিরোনামে দৈনিক যায়যায়দিন এর ফ্যামিলি অ্যান্ড স্টাইল ম্যাগাজিন ও মাসিক পত্রিকা মনোজগত এর এপ্রিল ২০০৮ সংখ্যায় (পৃষ্ঠা ৫৭) প্রকাশিত,
অবশ্য, মনোজগত লেখাটি ছাপার আগে লেখকের অনুমতি নেবার প্রয়োজন বোধ করেনি]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ ভোর ৬:৪৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×