somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঠিক বাংলা শিখনে দু'টি অজানা কথা

২০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্ণ ধাতুর উপর অনট প্রত্যয়যোগে গঠিত হয় বর্ণন তার থেকে বানান। কোন শব্দের অর্থ যদি হয় প্রাণ তাহলে বানান তার দেহ। শব্দ ও ভাষার প্রতীককে আমরা মেনে নিয়েছি এবং এগুলো সর্বজনগ্রাহ্য ও প্রতেক্যকে সেটা মেনে চলতে হয়। সেজন্য বানান ভুল শব্দ ও অর্থবোধে অসুবিধা ঘটায়। প্রতীকটাও কিছুটা বাধা পায়। ভাবপ্রকাশে জটিলতা সৃষ্টি করে। লেখার ভাষায় বানান ভুলের পিছনে নানাবিধ কারন রয়েছে। এ কারনগুলি উতরিয়ে শিক্ষার্থীদের শুদ্ধ বানান লেখার দক্ষতা অর্জনের অভ্যাস গড়তে হবে।
পরিবেশগত কারণ

হাটে, বাজারে, মাঠে, ময়দানে, পোস্টারে, টিবিতে পত্রিকায় নানা বিজ্ঞাপনে বানান ভুলের অভ্যস্ততা পরিত্যাগ করতে হবে।

ছাপানো বইয়ে বানান ভুলের বিশ্বস্ততার প্রভাব পরিহার করতে হবে।

পরীক্ষিত উত্তরপত্রে শিক্ষকের বানান ভুল অনুসরণ করা যাবে না।

শিক্ষকের উচ্চারণ সব সময় আঞ্চলিকতা মুক্ত হতে হবে।

শিক্ষকের অস্পষ্ট বানানটিতে শিক্ষার্থীরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে সঠিক বানানে অভ্যস্থ হয় না।

মনস্তাত্ত্বিক কারণ
১. শৈশবে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আগ্রহ সহকারে শুদ্ধ বানান লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
২. অত্যন্ত মনোযোগ ও গভীর শ্রদ্ধা নিয়ে বানান শেখায় উৎসাহি হতে হবে।
৩. মানসিক অস্থিরতা/চাঞ্চল্যতার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
৪. বয়ঃ সন্ধিকালীন উচ্ছাস ও সমস্যায় বানান ভুলের সম্ভাবনা দেখা দেয়। আস্তে আস্তে তা কাটিয়ে উঠতে হবে।
৫. বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের বানানে শিক্ষার্থীরা বেসামাল/গোলমাল পড়ে যায়। এতে বানান ভুলের অভ্যাস গড়ে উঠে। তাও পরিতাজ্য।
তাছাড়াও ভাষাতাত্ত্বিক কয়িকটি কারণও রয়েছে।
১। বর্ণমালা জনিত সমস্যা ঃ আমাদের বাংলা বর্ণমালায় নানা জটিলতা আছে সেগুলো হলো-
ক) বাংলা বর্ণমালার সংখ্যাধিক্য ঃ ইংরেজীতে বর্ণের সংখ্যা ২৬টি কিন্তু বাংলায় (১১+৩৯)টি বর্ণ ছাড়াও যুক্তবর্ণও রয়েছে। বর্ণের এই সংখ্যাধিক্য বাংলা বানানে জটিলতা সৃষ্টি করে।
খ) যুক্তাক্ষর সমস্যা ঃ অনেক ক্ষেত্রেই যুক্ত বর্ণগুলো থেকে মুল বর্ণগুলো চিহ্ণিত করা যায় না।শিক্ষার্থীরাও এগুলো আয়ত্বে আনাতে না পেরে বানান ভুল করে যায়।
গ) সমোচ্চারিত বর্ণের সমস্যা ঃ (ঙ,ঞ,ণ,ন,ম,ং,) এদের উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি, র,ড়,ঢ়, এদের উচ্চারণ প্রায় একই,শ,ষ,,স উচ্চারণ অজানা। এসব সমোচ্চারিত বর্ণগুলো বাংলা বানানে বিপর্যয় ঘটায়।
২। ভাষা প্রয়োগ রীতি সম্পর্কিত বানান সমস্যা
ক) মিশ্র ভাষাজনিত জটিলতা ঃ বানান ভুলের অন্তরায়।
খ) সমরূপ শব্দ সমস্যা ঃ উচ্চারণ ও বানানে সাদৃশ্য থাকা একটি শব্দের বহুরকম অর্থ হতে পারে।
গ) উচ্চারণ জনিত সমস্যা ঃ আজকাল বানানে ই-কার ব্যবহৃত হচ্ছে ঈ-কারের পরিবর্তে। এইরূপ ব্যবহারের সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করা হয় নি। এতে শিক্ষার্থীর মনে ধাঁ ধাঁ সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন- 'চীনের' পরিবর্তে চিন লেখা হচ্ছে।
ঘ)সাধু ও চলিত ভাষার প্রয়োগ সমস্যা।
৩। উচ্চারণে সমস্যা ঃ
ক) যুক্তাক্ষর সঠিক উচ্চারণ অসুবিধা ঃ 'সম্মান' হয়ে যায় 'সন্মান' ইত্যাদি।
খ) পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও আঞ্চলিকতা দ্বারা আক্রান্ত বানান ঃ দেশ-দ্যাশ, মধু-মোধু ইত্যাদি।
৪। ভুল শব্দ প্রয়োগ জনিত সমস্যা
ক) কি/কী = তুমি কি খাবে? অথবা তুমি কী খাবে? অাবার যেমন- কি/কী সুন্দর! এখানে কি হল প্রশ্নসুচক অব্যয় আবার কী বিস্ময়সুচক অব্যয়। ব্যবহারে জটিলতা নয় কি?
খ) লক্ষ্য / লক্ষ = যেমন- গাড়ির মূল্য পাঁচ লক্ষ্য মাত্র। বইটির প্রতি লক্ষ্য রেখ। পরিশ্রেমর মাধ্যমে আমাদের লক্ষে পৌঁছতে হবে।
গ) ভারি / ভারী = ভারি অর্থ- অত্যন্ত, খুব, ভীষণ, ভারী অর্থ গুরুভার, দায়িত্বপূর্ণ।
ভারি ঃ ভারি মিষ্টি লিচু। একটু খেয়ে দেখ।
ভারী ঃ এত ভারী জিনিস, আমি বইতে পারব না।
দেখা যাচ্ছে, নানা সমস্যার বেড়াজালে 'নানা ভুল' আচ্ছাদিত তবে আমাদেরকে এ সমস্ত বানান ভুলের তমশাচ্ছান্নতার পর্দা ধাপে ধাপে সরিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রচ্ছন্নতার আলোতে দাঁড় করাতে হবে।
সুপারিশ ঃ
অনেক সমস্যার সমধানের মধ্যে দুটো সমাধানই বানান ভুলের জটিলতাকে দ্রুত হ্রাস করাতে পারে। আমাদের শিক্ষার্থীদের শুদ্ধ বানান শেখানোর সময় অত্যন্ত যত্নশীল ও সচেতন হতে হতে। সেই সাথে আঞ্চলিকতার দোষও পরিহার করতে হবে।
'খ' হাতের লেখা একটি শিল্প
হাতের লেখা অবশ্যই একটি শিল্প। হাতের লেখার মাধ্যমে একজন ব্যাক্তির ও রুচিবোধের প্রতিফলন ঘটে- কল্পনা, চিন্তা ও জ্ঞানের সম্পর্ণতা প্রকাশ পায়। সুন্দর হাতের লেখা ব্যাক্তিমনে অনাবিল আনন্দ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তিতে তাকে শিল্প সৌন্দর্য চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। একমাত্র হাতের লেখার মধ্য দিয়েই আমরা মনের ভাষার নীরব উচ্চারণ লিখিতভাবে স্থায়ী করে রাখতে পারি। ভালো হাতের লেখার কতগুলো বিশেষ দিক রয়েছে। যেমন-
প্রথমত ঃ পরিস্কার ও সুস্পটতা হাতের লেখার একটি বিশেষ গুণ।
দ্বিতীয়তা ঃ লেখার সময় যে অক্ষরগুলি ব্যবহৃত হবে সেগুলি খুব সুন্দর করে লিখতে হবে।
তৃতীয়ত ঃ অক্ষর, শব্দ ও লাইনরে পারস্পরিক দূরত্ব ঠিকমত না হলে হাতের লেখা কখনো ভাল বলে গ্রহণযোগ্য হয় না।
চতুর্থত ঃ লেখার অক্ষরগুলির আকৃতি সমরূপ হবে, মাত্রা ঠিকমত হবে এবং সমান সমান হবে।
পঞ্চমত ঃ বানান ও ভাষাগত ভুলের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল হতে হবে।
ষষ্ঠত ঃ স্পষ্টতা ও নির্ভুলতার মতই দ্রুততাও ভালো হাতের লেখার অনেক বড় গুণ।
সপ্তমত ঃ যতি চিহ্ণে সঠিক ব্যবহার হাতের লেখাকে ত্রুটি ও একঘেয়েমি থেকে রক্ষা করে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, শিল্পগত দৃষ্টিভঙ্গি, স্বকীয় মননশীলতা নিয়েই হাতের লেখার বিচার করতে হবে। কেননা সৃজনশীলতা ও সৌন্দর্য বিকাশই যার মর্মবাণী।



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৫৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×