"রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল," নিরো একজন না হয় বাঁশি বাঁজাচ্ছিল কিন্তু জনগণ কি করছিলো? ইতিহাসের পট পরিবর্তনে এই জনগণের ভূমিকা অতন্দ্র প্রহরীর মত ৷
পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীন সূর্য্য অস্ত যাওয়ার পেছনে আমরা সব দোষ মীর জাফরের ঘাড়ে চাপিয়ে দেই, কিন্তু তখনকার জনগণের অবস্থান কি? জনগণের ভূমিকা নিয়ে ক্লাইভ তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘সেদিন স্থানীয় অধিবাসীরা ইউরোপীয়দের প্রতিরোধ করতে চাইলে লাঠিসোটা আর ঢিল মেরেই ইংরেজদের খতম করে দিতে পারতো ।’
জনগণের সেদিনের নিষ্ক্রিয়তা এবং নীরবতার ফল বাংলাকে দুইশ বছর দিতে হয়েছে ৷ আর এই দুইশ বছরে ইংরেজরা শোষণের পাশাপাশি বাংলার ইতিহাসকে করেছে বিকৃত জনগণের সামনে ঝুলিয়ে ধরেছিলো নিত্য নতুন চেতনার মুলা ৷ যে মুলার নেশায় এক শ্রেণীর লোক ঠিকই অবচেতন হয়েছিলো ৷
বাংলাদেশেও এখন চেতনার ভরা মৌসুম ৷ জাতি যখন রানা প্লাজার লাশের স্তুপ নিয়ে শোকে স্তব্দ, চেতনা ব্যবসায়ীরা তখন কাঁধে নর্তকী নিয়ে সুখে মত্ত ৷ খুন, গুম, ধর্ষণ, ডাকাতিতে সাধারণ মানুষের চোখে যখন ঘুম হারাম, তারা তখন চেতনার ঘুমে মগ্ন থেকে করছে আরাম ৷ এমন কোন বিষয় নেই যে বিষয়ে এরা চেতনার স্বপ্ন দেখে না ৷ যাদেরকে এসব চেতনার ট্যাবলেটে অবচেতন করা যায় নি, তাদের জন্য ক্রিকেটীয় চেতনা রাখা হয়েছে ৷ সে চেতনায় মুছে যাক পিলখানার ৫৭ জন সেনা অফিসারের শহীদ হওয়ার স্মৃতি ৷
ইংরেজদের চেতনার কূটকৌশলকে যে সাধারণ মানুষ খুব একটা নেক নজরে গ্রহণ করেছিলো তা কিন্তু নয় ৷ এইতো কিছুদিন আগেও গ্রাম এলাকায় কূট চরিত্রের লোকদের দিকে মানুষ আঙ্গুল তুলে গালি দিত, "শালা মানুষ না, বৃটিশ ৷" বাংলাদেশে বিশেষ গোষ্ঠীর চেতনা ব্যবসা বৃটিশদেরকেও হার মানিয়েছে, তাইতো ডিজিটাল ভাবে গালিরও পরিবর্তন হয়েছে, "শালা মানুষ না, …… ৷"
গালিতে গন্ডারদের কি কিছু হয়! বৃটিশদের কি কিছু হয়েছে? এদের ও কিছু হবে না ৷ দেশের অতন্দ্র প্রহরী জনগণের সচেতনতায় এদের প্রতিরোধের একমাত্র উপায় ৷ এদের ব্যাপারে আমরা যদি এখনো সচেতন না হই, তাহলে আরেকটি পলাশীর ভাগ্য বরণ করে নেওয়া ছাড়া বাংলাদেশের সামনে আর কোন পথ নেই ৷