শাহবাগের তরুণরা তাদের অদূরদর্শিতা ও দায়িত্বহীন বক্তব্যের কারণে ক্রমেই দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থন হারিয়ে চলেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এদেশের নাগরিক হয়েও তারা এদেশের গণমানুষের চিন্তাচেতনা ও আবেগ-অনুভূতি থেকে অনেক দূরে। তারা কেবল নিজেরাই বিতর্কিত হয়নি, তাদের কার্যকলাপ ও দাবি-দাওয়া ক্ষমতাসীন সরকারকেও ভয়ানক বিপত্তিতে ফেলে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি ছাপিয়ে ধর্মানুভূতির রাজনীতি সামনে চলে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিজীবনে ধর্মপ্রাণ মানুষ। সেটা মোটেই লোক-দেখানো নয়। তার কাছের মানুষরা সে রকমই জানেন। কিন্তু রাজনীতির জটিল সমীকরণে এখন তিনি বিপরীত মেরুতে। তিনি চিহ্নিত হয়েছেন শাহবাগের কথিত ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে।
শাহবাগের কথিত আন্দোলনের প্রতিক্রিয়াতেই গড়ে উঠেছে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’। এই নবগঠিত সংগঠনটি ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেছে সরকারের কাছে। এসব দাবির অধিকাংশই দেশের আলেম সমাজের পুরনো দাবি। দীর্ঘকাল ধরে দেশের আলেম সমাজ ও ইসলামপন্থী দলগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের দাবি নানাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। নতুন দাবির মধ্যে সাম্প্রতিককালে ইসলাম ও রাসূল (সা.) সম্পর্কে ইন্টারনেটে অবমাননাকর লেখালেখি বন্ধ করা ও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি রয়েছে।
এসব দাবি মানার আলটিমেটাম দিয়ে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ আগামী ৬ এপ্রিল শনিবার ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে নানাভাবে যোগাযোগ করার পরও তারা সেই কর্মসূচিতে অটল। মনে করা হচ্ছে, এই ঘোষিত লংমার্চকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে এবং তা দেশের অস্থিতিশীল সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে।
দুই
হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো নিুরূপ :
১. সংবিধানে ‘আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহ্বিরোধী সব আইন বাতিল করতে হবে।
২. আল্লাহ্, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩. কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবীর (সা.) শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তি দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৭. মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘেœ নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
৯. রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজšে§র মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
১১. রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা ছাত্র এবং তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
১২. সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১৩. অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা ছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
তিন
এসব দাবির অনেকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নেয়া সম্ভব। কিছু দাবি নীতিগতভাবে মেনে নেয়া হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করার বিষয় নয়। আমাদের জাতীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সুরক্ষা ও উৎকর্ষসাধনের দিকে লক্ষ্য রেখে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। রাষ্ট্রকে অবশ্যই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও আবেগ অনুভূতিকে মূল্য দিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
১৯৭২-এর সংবিধানে ‘আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ জাতীয় মূলনীতি হিসেবে উল্লেখিত ছিল না। পঞ্চম সংশোধনীতে এ বাক্যটি সংযোজিত হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীতে তা আবার বাদ দেয়া হয়। লক্ষ্য করার বিষয় সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্’ এবং ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ হিসেবে বহাল রাখা হলেও ‘আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এই বাক্যাংশটি ছেঁটে ফেলা হয়েছে।
বাংলাদেশের ৮৯ শতাংশ মানুষ মুসলমান। তাদের সবারই আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। অতএব গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সংবিধানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকাই বাঞ্ছনীয়। তদুপরি ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ঘোষণা দেয়ার পর ‘আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এই বাক্যাংশটি ছেঁটে ফেলার কোন অর্থ হয় না।
অনেকে বলেন, ‘আল্লাহ’র কথা বলা হলে হিন্দু নাগরিকদের কী হবে? এ প্রশ্নটি আশির দশকেও উঠেছিল। বাংলাদেশে মুসলমান প্রায় ৮৯ শতাংশ, হিন্দু প্রায় ১০ শতাংশ, বাদবাকি সবাই মিলে ১ শতাংশের কম।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয়, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও সর্বশক্তিমান ‘স্রষ্টা’র অস্তিত্বে বিশ্বাসী; আল্লাহ্, ঈশ্বর বা গড্ যে নামেই ডাকা হোক। ইহুদিরাও ‘আল্লাহ’্ শব্দটি ব্যবহার করে।
মহাÍা গান্ধী তার প্রার্থনা সংগীতে প্রতিদিন ভোরে গেয়েছেন,
‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম
ঈশ্বর আলা তেরা নাম
সব কো সুমতি দে ভগবান!’
এখানে স্রষ্টাকে ‘ঈশ্বর’ ও ‘আলাহ’ উভয় নামে, অর্থাৎ সমার্থক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
হিন্দুপ্রধান ভারতে স্রষ্টাকে যখন ‘ঈশ্বর’ বা ‘ভগবান’ নামে অভিহিত করা হয়, খ্রিস্টান প্রধান পশ্চিমে যখন ‘গড’্ নামে অভিহিত করা হয়, অন্যরা তা বিনা দ্বিধায় মেনে নিয়ে থাকেন। যে দেশে যা রীতি তা মেনে চলাই বিধেয়। ইউরোপ-আমেরিকায় গেলে হিন্দু ও মুসলমানরা ‘গড’ বলতে আপত্তি করেন না। তেমনি মুসলমানপ্রধান সমাজে সৃষ্টিকর্তা বোঝাতে ‘আল্লাহ্’ শব্দটির ব্যবহার অন্যরা মেনে নিতে পারেন। প্রয়োজনে ‘আল্লাহ্ / সৃষ্টিকর্তা’ লিখলেই বা সমস্যা কোথায়?
যারা কোন ধর্মই মানতে চান না, তেমন ব্যক্তির সংখ্যা এদেশে খুবই নগণ্য। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছাকে মূল্য দিতে হবে।
‘কোরআন ও সুন্নাহ্বিরোধী সব আইন বাতিল’ করার দাবি নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘কোরআন ও সুন্নাহ্বিরোধী’ কোন আইন থাকার কথা নয়। এক্ষেত্রে বাস্তবতা ও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
চার
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কিংবা পরধর্মবিদ্বেষ যেমন গ্রহণীয় নয়, তেমনি ধর্মের বিরুদ্ধে বা ধর্ম পালনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা বা কটূক্তি করার সুযোগও কাউকে দেয়া যায় না। তেমন কার্যকলাপ যদি বৃহত্তর জনসমষ্টিকে সংক্ষুব্ধ করে এবং সমাজজীবনে সংঘাত ও বিশৃংখলার জš§ দেয়, তাহলে তা দেশের প্রচলিত আইনেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিছু ব্লগার সাম্প্রতিককালে ইন্টারনেটে যে ধরনের লেখালেখি করেছে, তাকে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র আড়ালে প্রশ্রয় দেয়া চলে না। এ ধরনের ধর্মবিরোধিতাও ‘ধর্মান্ধতা’র পর্যায়ে পড়ে।
তবে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ-তরুণীরা সবাই ‘নাস্তিক’, এমন ঢালাও মন্তব্য করাও ঠিক নয়। বাংলাদেশে এত ‘নাস্তিক’ থাকলে তো ইসলাম ও মুসলমানের জন্যই ঘোরতর দুঃসংবাদ।
এ বক্তব্যটি এসেছে স্পস্টতই কিছু ব্লগারের কর্মকাণ্ডের কারণে। তারা মহানবীকে (সা.) নিয়ে যে ধরনের নোংরামি করেছে, তাতে মুসলমান মাত্রেই ক্ষুব্ধ হবেন। যারা অতিশয় ধর্মপ্রাণ, তারা কিছুতেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড সহ্য করতে পারেন না এবং ক্রুদ্ধ হয়ে অনাসৃষ্টি কাণ্ড ঘটিয়ে বসতে পারেন। যেমনটি ঘটছে। তা সত্ত্বেও দু’-একজন নোংরা মনের তরুণের কারণে সব ব্লগার বা শাহবাগের তরুণদের সবাইকে ঢালাওভাবে ‘নাস্তিক’ বা ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দেয়া দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়।
এই অপকর্ম ক্ষমার যোগ্য নয়
রাজীব নামের এক ব্লগারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ড কোন অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নয়। কাউকেই নিজের হাতে আইন তুলে নিতে দেয়া যায় না। তবে ব্লগার রাজীব তার ব্লগে যা লিখেছে তা এতই নোংরা যে সেগুলো উদ্ধৃত করাও নষ্টামির পর্যায়ে পড়বে। নবী-রাসূল নয়, কোন সাধারণ মানুষ সম্পর্কেও কেউ এরকম মন্তব্য করলে তাকে দেশের সাধারণ আইনেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নমনীয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
রাজীব ছিল শাহবাগের ‘প্রজš§ চত্বরে’র একজন সক্রিয় কর্মী। তাই প্রথমেই ধারণা করা হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। যেহেতু ‘প্রজš§ চত্বর’ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবি করা হচ্ছে, সেহেতু এরকম মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টা পরিষ্কার হয়েছে। বিশেষ করে রাজীবের হত্যাকারীরা চিহ্নিত হওয়ার পর। হত্যাকারীরা হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছে, রাজীবের ব্লগে তার লেখালেখি পড়ে তারা ক্ষুব্ধ হয় এবং তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এ থেকে স্পষ্ট যে, শাহবাগের আন্দোলনের জন্য রাজীবকে হত্যা করা হয়নি।
রাজীব তার ব্যক্তিগত কৃতকর্মের জন্যই নিজের এই পরিণতি ডেকে এনেছে। কিন্তু একজনের অপকর্মের জন্য শাহবাগের অপরাপর তরুণরা দায়ী হবে কেন? তবে প্রজš§ চত্বরের সংগঠকদের কিছু কার্যকলাপের কারণেই এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। তারা রাজীবকে তাদের আন্দোলনের ‘প্রথম শহীদ’ ঘোষণা দেয় এবং শাহবাগ স্কয়ারকে ‘রাজীব স্কয়ার’ নামকরণ করা, সেখানে রাজীবের ভাস্কর্য স্থাপনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। রাজীবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টগুলোকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দিয়ে তারা তাদের মঞ্চ থেকে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে থাকে এবং পাল্টা লেখালেখি শুরু করে।
এভাবে ভালো করে না বুঝে রাজীবের পক্ষ নেয়া শাহবাগের তরুণদের দিক থেকে মোটেই সঠিক কাজ হয়নি। এর ফলে কেবল তারা নিজেরাই বিপাকে পড়েনি, গোটা দেশই এক ভয়ানক আত্মঘাতী সংঘাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। যার জের বহুদূর ছড়িয়ে পড়ছে।
পাঁচ
হেফাজতে ইসলামের অন্যতম দাবিÑ ‘পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সকল অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।’
এ দাবিটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। বস্তুত কিছু ব্লগার যেভাবে ইসলাম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে ইন্টারনেটে অবিশ্বাস্য রকমের কুৎসিত ও সম্পূর্ণ বানোয়াট লেখালেখি করে এসেছে, তা পশ্চিমের ধর্মান্ধ খ্রিস্টান নব্য ক্রুসেডারদের পরিচালিত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রতিচ্ছবি বলে মনে হয়।
বাংলাদেশে পার্বত্য এলাকায় এবং কথিত ‘অধিবাসী’দের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের কাজে কিছু এনজিও এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত কিছু সংগঠনের তৎপরতা লক্ষণীয়। ইসলামের বিরুদ্ধে নিরন্তর প্রচারণায় লিপ্ত এসব ব্লগারের পেছনে তেমন কোন মহল কাজ করছে কি-না তা জানা দরকার।
বাংলাদেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকুক, কিন্তু ধর্মান্তকরণের সুবিধার জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসিত প্রচারণায় মদদ দেয়ার বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়া যায় না। ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র নামে এমন নোংরা লেখালেখিকে যারা সমর্থন দেবেন এবং এসব ব্লগারের পক্ষ নিয়ে কথা বলবেন, তাদের শিকড় খুঁজে দেখতে হবে।
শেষ কথা
স্পষ্টতই শাহবাগের আন্দোলনের প্রতিক্রিয়াতেই গড়ে উঠেছে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’। এই কথিত ‘গণজাগরণ’ দেশ জুড়ে যে ‘গণবিভাজনে’র সূচনা করেছে, তার জন্য জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হবে। আশা করব, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাই দলীয় বা খণ্ডিত দৃষ্টির ঊর্ধ্বে উঠে এ ‘জাতীয় দুর্যোগে’র মোকাবেলা করবেন। দেশের জনগণের এক অংশ আরেক অংশকে মোকাবেলা করার জন্য ‘লংমার্চ’ করবে, এটা কোন জাতির জন্যই সুসংবাদ হতে পারে না।
যারা ইসলামের হেফাজতের জন্য মাঠে নেমেছেন, তাদেরও দেখতে হবে তাদের আন্দোলন যেন বাংলাদেশের শত্র“দের হাত শক্তিশালী না করে। ইসলামের হেফাজতের পাশাপাশি বাংলাদেশের হেফাজতের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী : রাজনীতিক, ভূ-রাজনীতি ও উন্নয়ন গবেষক।
সুত্র- দৈনিক যুগান্তর।