somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশ কি পারবে?

০৯ ই জুলাই, ২০২৫ ভোর ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০২৫ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি রপ্তানিপণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা পরে কিছুটা কমিয়ে ৩৫% নির্ধারণ করা হয়। এই নতুন শুল্ক ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে এবং তা পূর্বের ১৫–১৬% শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট শুল্কহার ৫০% ছাড়িয়ে যাবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজারে, বিশেষত তৈরি পোশাক খাতে, যা দেশের মোট রপ্তানির ৮০% এবং ৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ৬.২ বিলিয়ন ডলারের ট্রেড সারপ্লাস সংশোধন করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে

তবে ঠিক একই সময়ে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছে গেছে, যেখানে তারা ২০% শুল্কে সুবিধা আদায় করতে পেরেছে। বাংলাদেশ যেখানে ধাক্কা খাচ্ছে, ভিয়েতনাম সেখানে কৌশলে জিতে যাচ্ছে। কীভাবে?

ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তাদের আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়া। ২০২৪ সালেই তারা একটি খসড়া চুক্তির পথে অগ্রসর হয়, যেখানে তারা স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে কৃষি, প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর বিনিময়ে তারা রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য শুল্ক ছাড় নিশ্চিত করে। তারা জানত, কেবল দাবি করলেই শুল্ক কমবে না যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু দিতে হবে। তাই তারা মার্কিন কৃষিপণ্যের জন্য তাদের বাজার খুলে দেয়। গম, সয়াবিন, ভুট্টার মতো পণ্যে আমদানির সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। এটা কোনো সাধারণ সিদ্ধান্ত ছিল না কারণ মার্কিন কৃষিখাত হল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী লবিগুলোর একটি। ভিয়েতনাম তাদের ভাষায় কথা বলেছে, তাই তারা ফলও পেয়েছে।

শুধু তাই নয়, ভিয়েতনাম ব্যবসার বাইরে গিয়েও যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিয়েছে “আমরা দায়িত্বশীল।” তারা শ্রম অধিকার নিয়ে সংস্কার করেছে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) মানদণ্ড মেনে নিয়েছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে কঠোর কিছু নীতি গ্রহণ করেছে। এর সবই যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কানে গেছে। তবে সবচেয়ে কার্যকরী ছিল তাদের কূটনৈতিক পদক্ষেপ। ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। তারা হোয়াইট হাউজে গিয়ে কথা বলে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং প্রতিটি আলোচনায় নিজেদের পার্টনার হিসেবে উপস্থাপন করে। ফলাফল, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ছাড় দিয়েছে।

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠতেই পারে, বাংলাদেশ কি পারবে ভিয়েতনামের পথ অনুসরণ করতে?

অবশ্যই পারে, কিন্তু এর জন্য চাই সময়োপযোগী, সাহসী ও বাস্তববাদী পদক্ষেপ। আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের কূটনীতির দুর্বলতা স্পষ্ট। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিঃসন্দেহে একজন আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, কিন্তু তাঁর অন্তর্বর্তী সরকার এখনো ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি, চীনের সঙ্গে সম্পর্কও স্থবির অবস্থায়। “সবার বন্ধু” হয়ে চললে, শেষ পর্যন্ত কেউ প্রকৃত বন্ধু হয় না। পররাষ্ট্রনীতিতে প্রয়োজন স্পষ্টতা, কে বন্ধু, কে প্রতিপক্ষ, কোথায় সংযোগ, কোথায় দূরত্ব। এই স্পষ্টতা ছাড়া আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

যদি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, কৃষিপণ্য ও প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে অগ্রাধিকার দেয়, শ্রম ও পরিবেশ নীতিতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে এবং আমদানি বাধা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বাস্তব সুবিধা দিতে পারে, তাহলে সাফল্য আসতেই পারে। ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী, তাঁকে কূটনৈতিক বুলি নয়, সোজাসাপ্টা লাভ-ক্ষতির হিসাব দেখাতে হবে। লাভ দেখালে তিনি কথা শুনবেন, সেই সুযোগ এখনো বাংলাদেশ হারায়নি।

এছাড়া Walmart, GAP, VF Corp-এর মতো মার্কিন রিটেইলারদের সঙ্গে যৌথভাবে লবিং করতে হবে। National Retail Federation এবং American Apparel & Footwear Association-এর মতো প্রভাবশালী সংগঠনের সহায়তায় এই লড়াইকে কৌশলগত রূপ দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা যদি দেখেন যে এই শুল্কের কারণে বাংলাদেশে নারীর চাকরি হারাচ্ছে, দারিদ্র্য বাড়ছে, তখন সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও মার্কিন ব্র্যান্ডগুলো সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে।

ভিয়েতনাম দেখিয়েছে, সঠিক কৌশল, সময়োপযোগী কূটনীতি এবং বাস্তববাদী অর্থনৈতিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি উন্নয়নশীল দেশও যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির সঙ্গে সফলভাবে দরকষাকষি করতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি সেই সাহস দেখাবে? সময় কম, কিন্তু সুযোগ এখনো শেষ হয়নি। কৌশল নিতে হবে, সাহসিকতা দেখাতে হবে, এবং কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে কাটিয়ে উঠতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২৫ ভোর ৬:১৩
১২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×