সব সময়ই মনে হয়, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কী হয়? আমাদের কি কোনো রাজনীতি নেই? আমরা কি শুধু অপেক্ষা করি কোনো এক কাল্ট-ফিগার, এক মহান নেতা আসবেন এবং আমাদের বাঁচাবেন? রাজনীতি কেবল নেতাদের নয়, আমাদেরও আছে। আমরা যেভাবে ভাবি, সিদ্ধান্ত নিই, প্রতিবাদ করি, সেটাই আসল রাজনীতি।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান কেবল ছাত্রনেতাদের বা রাজনৈতিক নেতাদের কৃতিত্ব ছিল না এটা ছিল মানুষের জেগে ওঠা। সেই জেগে ওঠা ধারাবাহিকতায় নিয়ে গিয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭৫, ১৯৯১ কিংবা ২০২৪ সালের ঘটনাও দেখিয়ে দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষই ইতিহাস তৈরি করে।
আমরা অনেক সময় ভুলে যাই, রাজনীতি মানে শুধু সংসদ, মন্ত্রিসভা বা দলের ভেতরের কৌশল নয়। রাজনীতি মানে হলো রাস্তায় দাঁড়ানো মানুষ, রাজনীতি মানে হলো কোনো শহীদের মা, রাজনীতি মানে একজন কৃষকের প্রতিদিনের লড়াই। যতই বড় বড় নেতা থাকুক, কিংবা যতই রাষ্ট্রশক্তি দমন করতে চাইুক, জনগণের ভেতর থেকে আসা ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষাই শেষ কথা বলে।
২০২৪ সালের সাধারণ মানুষের গল্পগুলো হারিয়ে গেল। নেতাদের নাম ইতিহাসে থাকে, কিন্তু একজন নেত্রকোনার ছেলের গল্প, যে সেদিন ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল, বা রৌমারীর এক ৭০ বছরের কৃষকের চোখেমুখে যে হতাশা আশা মিশে ছিল, সেসব কি কোথাও লেখা থাকে? তাদের রাজনীতি, তাদের ভাবনা?
সম্প্রতি জেনেছি যে ইতিহাসচর্চায় একটি বিশেষ ধারা আছে, যার নাম Subaltern Studies। এই ধারাটি শুরু করেছিলেন ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহ । তার সম্পাদিত বিখ্যাত বই "Subaltern Studies: Writings on South Asian History and Society" (১৯৮২) এই বিষয়ের মূল ভিত্তি হিসেবে পরিচিত। এখানে আলোচনার কেন্দ্রে থাকে সেই সাধারণ মানুষ, যারা ইতিহাসে প্রায় অদৃশ্য থেকে যায়, কৃষক, শ্রমিক, নারী, প্রান্তিক মানুষ যাদের কণ্ঠস্বর সচরাচর শোনা যায় না।
আমাদের ইতিহাস শুধু মহান নেতাদের নয়, বরং এই সাধারণ মানুষের। তাদের রাজনীতি, তাদের সংগ্রাম, তাদের ছোট ছোট গল্পগুলোই মিলে গড়ে ওঠে আসল ইতিহাস।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



