বলতে পারেন বিশ্বের অনেক দেশেই তো রাজনৈতিক জোট হয়, জোটবদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ এটা সত্যি তবে আমাদের দেশে জোট, মোট, ঐক্য, মোক্য এগুলি জাতির উপকারের জন্য নয়। এগুলি করা হয় কোন দলকে ক্ষমতা থেকে নামাতে, না হয় নিজেরা ক্ষমতায় যেতে।
এবছরের প্রথম দিকে এরশাদ একটা জোট করছে, নাকি করতে চেয়েছে মনে পড়ছে না। সে জোটে দলের সংখ্যা ৫৮টি! নাম দিয়েছিলো সম্মিলিত জাতীয় জোট! এই ৫৮টি দলের মধ্যে শুধু ২টি দলের নিবন্ধন ছিলো মাত্র! এটা কি জোট নাকি জট? এগুলি দিয়ে জাতির কি উপকার আসবে কে জানে। মজার ব্যপার হচ্ছে জাতীয় পার্টি এমনিতেই একটা মহাজোটে আছে সেখানে থেকে আরেকটি বড় মহাজোট সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে এটির কোন ব্যাখ্যা আছে কিনা যদি কেউ জেনে থাকেন আমাদের একটু জানান। বাংলাদেশের আইনে নিবন্ধন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে কি না জানি না। তা ছাড়া অন্তত নির্বাচনের আগে যদি ওই সব অনিবন্ধিত দল নিবন্ধন না পায়, অর্থাৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি না পায়, তাহলে কিভাবে যে তারা জোটে থেকে নির্বাচনে অংশ নেবে, সে উত্তর হয়তো নির্বাচন কমিশনের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব।
বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলের মাঝে নাকি ১২ দলেরই নিবন্ধন নেই! আওমীলীগের ১৪ দলের মধ্যে ৪ দলের নিবন্ধন নেই! এই হিসাব থেকে বুঝা যায় ক্ষমতা যেতে বা নামাতে বড় দল গুলি বেপরোয়া ভাবে জোটবদ্ধ হয়! এই জোট করতে গিয়ে তারা আদর্শের ধার ধারে না, ছোট দল গুলিও তাদের দলীয় আদর্শের বিসর্জন দিয়ে দেয়। জোটবদ্ধ হতে পারলে তাদের দলের নীতি,আদর্শ সব ভুলে নেতৃত্বে থাকা দলের নীতি আদর্শে মিশে একাকার হয়ে যায়। এই জন্যই হয়ত বাংলাদেশে আমরা তৃতীয় কোন ভালো দল দেখতে পাইনা।
৭৫এ শেখ মুজিবকে হত্যা করার পরেই সামরিক শাসকদের রাজনীতি করার ইচ্ছার কারণে কয়েকটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। সেসব দল এখনো আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজনীতি করে যাচ্ছে। জোট গঠনের ইতিহাসের গোড়াপত্তন মূলত তাঁরাই শুরু করেছিলেন। তবে স্বরাশাসকদের পতনের পরেও এখন পর্যন্ত সেই জোটের রাজনীতি ছাড়া কেউ সরকার গঠন করতে পারেনি।
যাইহোক জোট, ঐক্য এগুলি খারাপ কিছু নয় তবে এগুলি করতে গিয়ে দলের নীতির বিরুদ্ধ অন্য দলের সাথে জোট গণতন্ত্রের জন্য শুভ কিছু নয়। নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলা বাংলাদেশ আওমীলীগ আজ প্রায় দশ বছর আছে রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তনকারী ও সামরিক শাসক এরশাদের সাথে! বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আলিঙ্গন অনেক বছরের। এ বন্ধন এতই মজবুত যে বিএনপি জামায়াতকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার কথা ভাবতে পারছে না, যদিও জমায়েত ইসলাম দলটির নিবন্ধন নেই।
যেকোনো রাজনৈতিক জোটে ন্যূনতম নীতি ও আদর্শের মিল থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতির এমনই আশ্চর্য মাজেজা যে ডান-বাম-মধ্য কিংবা মৌলবাদী-উদারপন্থী সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই বলে একটা প্রবাদ আছে, তবে আমাদের রাজনীতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নীতি-আদর্শ বলে কিছু থাকে না! ক্ষমতা যাওয়ার জন্য বা নামানোর জন্য শুয়রের সাথেও সহবাস করতে রাজি হয়ে যায়!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২৯