দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কোন ঘটনাটি আপনাকে বেশি কষ্ট দেয়? ৭৫ এর ১৫ আগস্ট, ৭৪এর দুর্ভিক্ষ, জামাত শিবিরের রাজনীতি ও ক্ষমতার কাছাকাছি থাকাটা, নাকি অন্য কিছু? না, আমাকে খুব বেশি কষ্ট দেয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির সকল সন্তানদের ফ্রিতে শিক্ষা দিতে না পারা! সঠিকভাবে শিক্ষা দিতে পারলে জাতির আজকের অবস্থান ও উপরের ঘটনা গুলো অন্যরকম হতে পারতো। এই ঘটনা গুলোর জন্য কাকে দায়ী করবেন আপনি? প্রথম দায়ভার নিতে হবে শেখ মুজিব ও তাজউদ্দীন আহমেদকে। এর পর জেনারেল জিয়া হয়ে এরশাদ, বেগম জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে। শেখ মুজিব বুঝতেন জাতির কিসে ভালো হবে কিন্তু উনি সে লক্ষ্যে কাজ করার মত দক্ষ ও অভিজ্ঞ ছিলেন না। উনি দেশে এসে একটি মূল্যবান কথা বলেছিলেন, উনি বলেছেন “ কেরানী বানানোর এই শিক্ষা ব্যবস্থা উনি চান না, বাচ্চাদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। উনি নিজেও হয়তো বুঝেননি উনি কত মূল্যবান একটা কথা বলে ফেলেছেন! যাক উনার কথা কথাই থেকে গেছে, কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে কেরানীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ, জাসদ, মাসদ বেরুতে লাগলো, যারা উনাকে সবসময় অকাজে ব্যস্ত রাখতে শুরু করলো।
উনার বিশ্বস্ত তাজউদ্দীন আহমেদ দৃশ্যমান কোনো কাজেই করতে পারেননি। যুদ্ধ শেষে অস্ত্র জমা নেওয়ার সময় একটু দৌড়াদৌড়ি করেছেন, শুধু এটুকু বুঝা গেছে। এরপর উনি অসহায় জাতিকে সাহায্য করার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। শেষমেষ জাতিকে হতাশও করলেন সাথে নিজের জীবনটুকুও রাখতে পারেননি।
মেজর জিয়া ক্ষমতায় জাতির প্রয়োজনে আসেনি। তাই জাতির জন্য কাজ করার দরকার পড়েনি, উনার নিজের জীবনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য উনি যা যা প্রয়োজন করেছেন। জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন, দেশে ক্যাপিটেলিজম চালু করেছেন, ধনীদের আরো ধনী বানিয়েছেন। উনি জাতিকে শিক্ষিত কি করবেন নিজের দুই ছেলেকেই সঠিকভাবে শিক্ষিত করতে পারেননি। যাক উনি যে পথে এসেছেন সে পথে চলে গিয়েছেন। মাঝখানে জাতিকে ক্যাপিটেলিজমের ফাঁদে ফেলে দিয়ে গেছেন।
জেনারেল এরশাদ মেজর জিয়ার কর্মকান্ড খুব কাছ থেকে দেখেছে, জিয়াকে সে অনুসরণ করতো, জিয়া করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি সে করেছে জাতীয় পার্টি। জিয়া নিয়েছে ধানের শীষ সে নিয়েছে ধান চাষ করার লাঙ্গল। শুধু মেজর জিয়া প্রাণ বাঁচানোর জন্য যে ভুল গুলো করেছে সে সেগুলো এড়িয়ে গেছে। আর তাইতো তার মৃত্যু তার গুরুর মতো হয়নি। অবশ্য তার প্রাণ মেজর সাহেবের বউয়ের হাতেও ছিল, দয়ালু হয়ে অথবা সাহসের অভাবে সে প্রাণ নেননি, নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল! এই এরশাদ নয় বছর জাতির মাথার উপর বসে শুধু কাঁঠাল ভেঙেছে, নিজের এলাকার মঙ্গা, ভাতের অভাব পর্যন্ত দূর করতে পারেনি। উত্তরবঙ্গের মানুষকে এমন বেকুব বানিয়ে রেখেছে যে তারা তাকে এখনো বীরপুরুষ ভেবে আনন্দ পায়!
বেগম জিয়া নিজেও তেমন শিক্ষিত মানুষ ছিলেন না তাই হয়তো জাতিকে শিক্ষিত করার ব্যাপারে উনি এতটা সিরিয়াস হননি। উনি হয়তো ভেবেছিলেন আট ক্লাস পাশ করে যদি আমি দেশ চালাইতে পারি বাকিরা পারবে না কেনো! উনি ঠিকই দেশ চালিয়েছেন যার জন্য উনাকে জেল খাটতে হয়েছে, উনার ছেলে দেশে আসতে পারছে না, আরেক ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে মারা গেছে। উনার সাথে ফাতেমা নামের এক কিশোরী, যে প্রাথমিক পাস করে উনার সাথে যুবতী থেকে বৃদ্ধ হওয়ার পথে আছে। তাতেই বুঝা যায় উনি শিক্ষার গুরুত্ব কতখানি বুঝেন! জাতিকে উনি ফাতেমার মতোই ভাবতেন।
এদের পরে শেখ হাসিনা এসে এদের পথেই হেঁটে যাচ্ছেন। উনার বাবা যেসব ভুলের কারণে প্রাণ দিয়েছেন উনি সেটা অনুধাবন করছেন এবং সেসব দুষ্ট পথ অনেকটাই বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু উনি এমন এমন আজব লোকদের উনার মন্ত্রিসভায় স্থান দেন যারা দেশের প্রকৃত সমস্যা বুঝতেই পারেনা। শেখ হাসিনার কাছে বড় সমস্যা ছিল বিএনপি জামাতকে থামানো উনি এতে সফল হয়েছেন। এই সফলতা জাতির জন্য দরকার ছিল কিন্তু উনি এই সফলতার সদ্ব্যবহার করছেন না। দেশের জন্য কাজ করার সকল ক্ষমতা ও শক্তি উনার এখন আছে, যেটা নেই সেটা হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনাকারী ও সৎ লোকের অভাব। দীপু মনি, মুহিত, ক্রিকেট কামাল, ওবায়দুল কাদের, জয়কে দিয়ে উনি হাল চাষ করাতে গিয়ে লাঙল, কোদালে জং ধরিয়ে ফেলেছেন! উনি এই জং ধরা লাঙ্গল, কোদালে সান দেওয়ার মত কাউকে তৈরি হতেও দিচ্ছেন না। জাতিকে শিক্ষিত করার গুরুত্ব উনি কতখানি বুঝেন সেটা দীপু মনির মন্ত্রী হওয়ার পর আরো স্পষ্ট হয়েছে!