আজকে মামুনুলরা হকরা যাদের শক্তিতে বা ভরসায় এত হুংকার ছাড়ে তারা হলো তাদের মাদ্রাসার এতিম ও গরিব বাচ্চারা। যারা পরিবারের বোঝা হয়ে যাওয়াতে শফি হুজুর তাদের জন্য দু'মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করেছিল, সাথে পড়ালেখার নামে এরাবিয়ান কালচার শিক্ষা দিয়েছে। দু'মুঠো খাবারের জন্য এরা তাদের হুজুরদের জন্য জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিচ্ছে! তাদের হুজররা যেটা বলে সেটা চোখ, কান বন্ধ করে সুবহানাল্লাহ, ইনশাআল্লাহ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। এদের অনগ্রসরতার জন্য কে দায়ী? শফি হজুর নাকি মামুনুল হকরা?
না এর জন্য দায়ী এই রাষ্ট্র, রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করছে তারা।
আমি যদি আজ মরে যাই, আমার সন্তান এতিম হওয়ার সাথে সাথে কি আমার সন্তানের সব অধিকার, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে? এই দেশের আলো বাতাস ছাড়া কি তার আর কিছুই পাওনা নেই? সে কি ঘুরেফিরে অনিচ্ছাসত্ত্বেও শফি হুজুরের চালু করা নোঙ্গরখানায় চলে যেতে বাধ্য হবে? যদি তাই হয় তাহলে এই রাষ্ট্রের কাজ কি, দায়িত্ব কি?
আসলে রাষ্ট্রের কাজ অনেক, দায়িত্বও অনেক কিন্তু সেসব পালন করার মত ইচ্ছা ও দক্ষতা কোনোটাই নেই। আজ যদি এসব বাচ্চাদের সঠিক শিক্ষা, সঠিক গাইডলাইন রাষ্টের পক্ষ থেকে দেওয়া হতো তাহলে শফি হজুর, মামুনুল, বাবু নগরীরদের নিয়ে এত টেনশন, হইচই আর অর্থের অপচয় করা লাগতো না। রাষ্টের অদক্ষতা ও দূরদর্শিতার অভাবে জনসংখ্যার এই বিশাল অংশ নিয়ে এত চিন্তিত হতে হচ্ছে। কাজ রেখে অকাজে সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।
শফি হজুরদের চালু করা মাদ্রাসায় যদি জরিপ চালানো হয়, দেখবেন শতকরা আশিটি বাচ্চা সেসব মাদ্রাসায় পড়তে যেতে চায়নি। তাদের জোর করে কিংবা নিরুপায় হয়ে সেখানে আসতে হয়েছে। রাষ্ট্রের অবহেলা ও আন্তরিক চেষ্টার অভাবে কি বিশৃঙ্খল এবং অপ্রয়োজনীয় একটা শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এখান থেকে পাশ করে এরা সম্মানজনক পেশায় যেতে পারছে না। এরা বুঝতেও পারছে না এদের এই অবস্থার জন্য কে দায়ী। নিজেদের ভাগ্যকে দোষ দিয়ে দিয়েই জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দেয় এরা। কয়েকবছর আগে তারা নিরীহ জীবনযাপন করলেও বর্তমানে তাদেরকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যবহার করা শুরু হয়ে গেছে। শক্ত অভিবাবকহীন হওয়াতে এদের ব্যবহার করা আরো সহজ ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।
যাক যা হবার হয়ে গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের উচিত হবে এই অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যবস্থাটিকে যেকোন ভাবেই হোক বিলোপ করা। এদের জন্য আধুনিক ভাবনায় ভেবে একটি কার্যকর উপায় বের করা, যাতে করে তাদের শফি হজুর, মামুনুলদের কথায় উঠতে বসতে না হয়। অভিভাবক না থাকলে কোনো বাচ্ছাকেই যেন এতিম বলে এতিমখানায় যেতে না হয়। রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রই যেনো সবচেয়ে বড় অভিবাবকের ভূমিকায় থাকে। শফি হজুর, মামুনুল হকরা যেন এত বড় দায়িত্ব নিজেদের কাঁদে নিয়ে রাষ্ট্রের বোঝা আর ভারী না করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১২