১ শতাংশ জমির দাম ৫০হাজার টাকা সেই জমি নিয়ে মামলা হামলা করতে করতে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলেছে, এমন উদাহরন আমার আপনার আশেপাশে অনেক পাবেন। আপনার থেকে যদি আপনার প্রতিপক্ষ গায়ের জোরে কিংবা অর্থের দিক থেকে শক্তিশালী হয় তাহলে আপনার হেনস্তা হওয়ার সম্ভবনা অনেক। গত ৭০ বছর ধরে এই ফিলিস্তিন ইসরাইল সমস্যাটি চলমান আছে। আরও কত বছর যে চলবে তা এখনও ধারণা করা যাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যের এই সমস্যাটি আসলে খুব জটিল আকার ধারণ করেছে অথচ এ সমস্যাটি ১৯৪৭ সালেই সমাধান হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। তৎকালীন সময়ে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে সেটা আরব নেতৃবৃন্দ তখন যদি মেনে নিত তাহলেই হতো। মেনে না নিয়ে উল্টো চার দেশ মিলে যুদ্ধ করে ইজরায়েলের কাছে পরাজিত হয়ে সমস্যাটির দীর্ঘমেয়াদি রূপ দান করেছে। ইসরায়েল যুদ্ধে জয়ী হয়ে জাতিসংঘের পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের ৫৬ শতাংশের জায়গায় মোট ৭৭ শতাংশ দখল করে নেয়।
৯৩ সালে যে অসলো চুক্তি হয় সেটা ধরে অনেকেই বলে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আসলে আমার মতে এটা সম্ভব না। অসলো চুক্তিতে গাজায় ফিলিস্তিনের যে স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়েছে সেটাও কার্যকর করা সম্ভব হতো না, কেননা এর আগেই সেখানে ইজরাইল অনেক অবৈধ স্থাপনা বসিয়ে ফেলেছি। আর গত ৭০ বছরে ইসরাইল মোটামুটি বিশ্বের পরাশক্তি দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখন কোন চুক্তি মানা না মানা সম্পূর্ণই তাদের উপর নির্ভর করে। এছাড়া তারা আরব ও আমেরিকায় যে পরিমান নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে তাতে সেসব দেশ থেকে নূন্যতম চাপ পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। উপরন্ত আরব দেশ গুলো তাদেরকে সহযোগিতা করছে শুধুমাত্র হামাসের কারনে। আর আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-ফিলিস্তান নীতিতে নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা বললেও এটা স্পষ্ট ইজরায়েলের স্বার্থ নিশ্চিত হওয়ার পর তারা নিরপেক্ষ থাকে।
সব মিলিয়ে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যাটি নিরসন না হওয়ার সবচেয়ে বড় যে কারণ সেটি হচ্ছে ফিলিস্তানের ভিতর দুটি দলের হামাস ও ফাতেহের কোন্দল। হামাস সন্ত্রাসবাদী দল ও ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে না, এই অভিযোগে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দলটির সঙ্গে সব সম্পর্ক বর্জন করে। যত দিন না হামাস-ফাতাহ কোন্দল মিটছে, ফিলিস্তিন প্রশ্নে শান্তি চুক্তি বলতে গেলে একপ্রকার অসম্ভব। ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা থাকায় হামাসের ওপর আক্রমণ করেও ইসরায়েল পার পেয়ে যায়, এমনকি নিজেদের নৈতিকভাবে সঠিক দাবি করতে পারে। কিন্তু এটা সত্য যে হামাসের উপর আক্রমণ করতে গিয়ে ইজরাইল নিরীহ ফিলিস্তানিদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করে।
যাইহোক বর্তমান যে পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে এ পরিস্থিতি থেকে ইজরাইল কখনোই ফিলিস্তানের সাথে সমঝোতায় যেতে ইচ্ছুক হবে না। তাছাড়া রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ইজরায়েল শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় তারা এই সমস্যাটিকে জিইয়ে রেখে আরব ও আমেরিকাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করবে। কেননা হামাসকে আরব ও আমেরিকানরা নিজেদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। কোন কোন সময় হামাসের উস্কানিতে ইজরাইল আক্রমণ করে আবার ইজরাইলের উস্কানিতে হামাস আক্রমণ করে। মূলত এসব যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাতে গাজার মাটি নিরীহ ফিলিস্তিনীদের রক্তেই রঞ্জিত হয়। আর এটা অনুমেয় এই রক্ত গঙ্গা আরো বহুদিন বয়ে যাবে গাজার মাটিতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২১ রাত ১১:০৫