ঘুষ দিয়েও ছেলেকে চাকরি দিতে না পারায় বাবা আত্মহত্যা করেছে। বাবার সেই ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জ জেলায়, আমাদের রাষ্ট্রপতির এলাকায়। আজকের এই খবরটি যদি আমাদের রাষ্ট্রপতি দেখে থাকেন উনার রাতে ঘুম হওয়ার কথা না। উনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সেখান থেকে পাশ করা একটা ছেলের চাকুরীর জন্য তার বাবা ঘুষ দিয়েছে।খবর এতটুকুই যথেষ্ট উনার ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য, আত্মহত্যাটা বোনাস খবর!
দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কারা বের হচ্ছে, কেমন দক্ষতা নিয়ে বের হচ্ছে, বের হয়ে কাদের কাছে যাচ্ছে চাকুরী খুঁজতে, চাকুরী পেতে কেমন সময় লাগছে তাদের? এসব প্রশ্ন তো নীতিনির্ধারকদের মাথায় প্রতিনিয়ত থাকার কথা, এসবের উত্তর পাওয়া কঠিন কিছু নয়। উত্তর থাকলে এসবের সমাধানও বের করে ফেলার কথা! না, এমন কিছুই হচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা পাশ করার পর তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে দুই চারটে রসিকতা করে কথা বলে চ্যান্সলরের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। উনার হাতে যে পরিমান ক্ষমতা ও কাজ আছে উনি ঠিকভাবে করলে উনি চোখের সামনে কাজ ছাড়া কিছুই দেখতেন না। অথচ উনি নাকি রাষ্ট্রপতি ভবনে হাঁফিয়ে উঠছেন সারাদিন অলস সময় পার করে!
সরকারি ও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী পেতে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়, সমস্যা হচ্ছে এই টাকাটাও অনেকে সঠিক লোকের হাতে দিতে পারেনা। ভুল মিডিয়ার মাধ্যমে দিতে গিয়ে অনেকেই সর্বশান্ত হয়ে যায়। চাকুরীতো দূরের কথা সে ঘুষের টাকাটাও ফেরত পায়না আর। কিশোরগঞ্জেও সে লোকের এমন অবস্থা হয়েছে। সে নিজেও সরকারি চাকুরিজীবী ছিলো উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে।
তার বসের কাছে সে দশ লাখ টাকা দেয় ছেলেকে ব্যাংকে চাকুরী পাইয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার বস চাকুরী দেওয়ার আগেই অবসরে চলে যায়, আর সে টাকাও ফেরত দেয়নি তাকে। অনেক দেনদরবার করেও বসের কাছ থেকে সে টাকা গুলো উদ্ধার করতে পারেনি সে। পরে রাগে ক্ষোভে সে আত্মহত্যা করে বসে, আত্মহত্যার আগে সে সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছে তার বসের কুকীর্তির কথা। যার জন্য তার সাবেক বস এখন পলাতক আছে।
এতগুলো কথা বলার দরকার আসলে ছিলোনা এই সামান্য ঘটনার জন্য। বলার কারন হচ্ছে একটা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের পেট থেকে পাশ করা ছেলের জন্য তার বাবা দশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকুরী খুঁজছেন এই জন্য বলা!
দেশে সঠিক শিক্ষা থাকলে, দক্ষতা তৈরি করা গেলে, সঠিক অর্থনীতি থাকলে, অর্থনীতির রুলস গুলো ভায়োলেট না হলে এই ছেলেকেই চাকুরীদাতা খুঁজে বের করতো। শেষ কথাটা একটু তেতো হবে, এই ছেলেটি যদি দশ লাখ টাকা দিয়ে চাকুরীটি পেয়েও যেতো তখন সে অন্য আরেকটি ছেলের চাকুরী না পাওয়ার যন্ত্রণাটা বুঝতে চাইতো না। সে যে যন্ত্রণার মাঝ দিয়ে গিয়েছে সেই যন্ত্রণাটা অন্যদের বেলায় লাঘবের জন্য চেষ্টাটুকুও করতো না। এটাই সত্য এবং তেতো সত্য। এর জন্যেই আমাদের দেশে চাকুরীকে সোনার হরিণ বলে আরো দীর্ঘদিন ডাকা হবে!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৫৩