এদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর সেই স্বাধীনতার পর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন উপায়ে আক্রমণ হয়েছে। সম্ভবত আর কয়েক বছর পর নিতাই রায়, অপু উকিল, গয়েশ্বর বাবু ছাড়া আর তেমন হিন্দু খুঁজে পাওয়া যাবে না। হিন্দুরাও এ দেশকে নিজেদের দেশ বলে ভাবতে দ্বিধাবোধ করবে। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব সংবিধানে ভুরাজনৈতিক ও পশ্চিমাদের নেকদৃষ্টি পাওয়ার জন্য সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি জুড়ে দেয়। মূলত সেকুলারিজম মানে ধর্মনিরপেক্ষতা না করে সেকুলারিজম অর্থ সার্বজনীন বলাটাই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু অশিক্ষিত বাঙালি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষিত বাঙালিরাও এই সেকুলারিজমকে ধর্মহীনতা ভাবতে থাকে।
যদি সেকুলারিজম এর কথা বলতে হয়, তাহলে বলা যায় আমাদের ধর্মগ্রন্থ ও নবী মুহাম্মদ হল সবচেয়ে বড় সেক্যুলার। কেননা আল্লাহ সরাসরি কোরআনেই বলে দিয়েছেন এই ধর্মগ্রন্থটি সার্বজনীন অর্থ্যাৎ সবার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
যাক এত কিছুর পরেও আমাদের হিন্দু সংখ্যালঘুরা কোনোমতে দিন কাটাচ্ছিল এই দেশে। শেষমেশ সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য হুসাইন মু: এরশাদ আমাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলে ঘোষণা দেয়! এতে হিন্দু জনগোষ্ঠী আরো বিপাকে পড়ে যায়। তাদের উপর আরো বেশি অত্যাচার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বাড়তে থাকে। মুহাম্মদ এরশাদ এই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার পর এটাকে আর কেউ সরানোর মত সাহস দেখায়নি। তাই বলা যায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করাটা যতটা না ইসলামের জন্য তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
আসলে রাষ্ট্রের ধর্ম থাকলে এটা কারো জন্য কোন ভালো ফলাফল নিয়ে আসে না। এটা শুধুমাত্র একটু মনের আত্মতুষ্টি দেয়। যেমন বার্সেলোনা রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে আপনি যেই ক্লাবের সমর্থন করেন সেই দল জিতলে কিছুটা আত্মতুষ্টি পান তেমনি রাষ্ট্রধর্ম থাকলে শুধু মনের মধ্যে আপনার সামান্য আত্মতুষ্টি আসে। নাগরিকদের জন্য এটা বাড়তি কি সুবিধা দেয় কেউ জানলে বলবেন।
এতকিছু বলার কারন হচ্ছে, রাষ্ট্রধর্মের মত একটা অপ্রয়োজনীয় জিনিস রাষ্ট্রের ভিতর বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে। এই অপ্রয়োজনীয় জিনিসের সমর্থকের সংখ্যা অনেক, কি কারনে তারা রাষ্ট্রধর্ম সমর্থন করে বলা মুশকিল। আমেরিকা, ভারতের মতো দেশে কোনো রাষ্ট্র ধর্ম নেই কেননা তারা সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে চায়, সবার জন্য সার্বজনীন হতে চায়। যেখানে আমাদের ধর্মের নবী সবার জন্য সার্বজনীন একই ভাবে ধর্মগ্রন্থও, সেখানে আমরা রাষ্ট্রের একটা ধর্ম দিয়ে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে ফেলছি। বর্তমান এই সময় এসে রাষ্ট্রধর্মের আসলে তেমন দরকার নেই; এতে ধর্মের কিংবা ধার্মিকদের কোন উপকার হয় না, উপকার হয় ভন্ড রাজনীতিবিদদের।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২৩ সকাল ৯:৪৭