
এ লোকটিকে আমি আগে চিনতাম না। জেনারেল আজিজের একটি ডকুমেন্টারি পাবলিশ করেছিল আল জাজিরা টেলিভিশন, তখন এই লোকটির নাম শুনতে পাই। এর চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলার স্টাইলটা আমর কাছে একেবারে বিরক্তিকর লাগে। ঐসময় দেখেছি ওর প্রদত্ত তথ্য বেশিরভাগই টুইস্ট করা এবং ঘুরিয়ে পেচিয়ে নিজেকে বেশ বড় মাপের অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিক হিসেবে দাবি করা! ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন মইনুদ্দিন সরকারের সময়ে নির্যাতিত হয়ে নাকি সুইডেন চলে যায় এবং সেখানে গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিষাদাগার করতেই থাকে। ওর কথা শুনলেই মনে হচ্ছে ওর সব রাগ ক্ষোভ রাষ্ট্র বাংলাদেশের উপরে!
গত কয়েকদিন ধরে এই লোকটি ইউরোপিয়ান সদস্যভুক্ত দেশগুলির মানবাধিকার সংগঠনগুলির সাথে অনেকগুলি বৈঠক করে। তার এই বৈঠকের উদ্দেশ্যেই ছিল বাংলাদেশের উপর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলি থেকে অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। সে দুঃখ প্রকাশ করে বারবার বলার চেষ্টা করছে, যেখানে আমেরিকা বাংলাদেশের উপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেন আমেরিকার মিত্র দেশ হয়েও বাংলাদেশের উপর আরো সামরিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে না! তার কথা বলার ধরন দেখে আমি খুব অবাক হচ্ছিলাম। আমার কাছে মনে হয়নি এই লোকটি কখনো বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, এদেশের আলো বাতাসে বেড়ে উঠেছে! নিজ মাতৃভূমি সম্পর্কে কেউ এভাবে কথা বলতে পারে তা আমার ধারণাতীত ছিল! তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এমনকি উন্নত রাষ্ট্রেও মানবাধিকার যে লঙ্ঘিত হয় না তা নয়। সব দেশেই কমবেশি মানবাধিকার সমস্যা থাকে কিন্তু সেটার রেশ ধরে নিজ মাতৃভূমির ক্ষতি সাধন করার চেষ্টাটা খুবই লজ্জাজনক বিষয়।
অনেকেই তার চেষ্টাকে বিভিন্নভাবে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করবেন। হয়তো বলতে চাইবেন বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করা যায়। অথচ তাসনিম খলিল যা করতে চাচ্ছে তাতে যদি সে সফল হয় সেটা কখনোই ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ হবে না! তার জন্য পুরো দেশ ও জাতিকে চরমভাবে মূল্য দিতে হবে। সে বা তার মত যারা প্রবাসে আছে তারা আয়েশী জীবনযাপন করবে ঐসব স্যাংশন নিষেধাজ্ঞায় তাদের কিছুই যায় আসবে না, যা ভোগার সাধারণ জনগণই ভুগবে!
তবে কিছুটা আশার বিষয় হচ্ছে সে যে বৈঠক করেছে সেখানে সে দুটি বিষয় বেশি হাইলাইট করেছে, একটি হলো সে নিজেই ভুক্তভোগী হয়ে বাংলাদেশ থেকে সুইডেন চলে এসেছে এবং দ্বিতীয় বিষয়টি হলো হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে ৬১ জন মানুষের মৃত্যুর কথা। যেখানে সে দাবী করছে ৫ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এই ৬১ জন মানুষ নিহত হয়েছে। প্রথম বিষয়টিতে বলা হয়েছে সে যে সময়ের কথা বলেছে সেই সময় বর্তমান সরকার ছিল না, তত্ত্বাবধায়ক ও সেনা সমর্থিত সরকার ছিল। যার জন্য তার সেসময়ের বিষয়টি বর্তমান সরকারের বিপক্ষে ধর্তব্যে নিতে চায় না।
আর দ্বিতীয় বিষয়টি থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল হেফাজতের সমাবেশে নিহত সে ৬১ জনের তালিকা আছে কিনা? সে কোনো তালিকা দিতে পারেনি এমনকি সুনির্দিষ্টভাবে একজন মৃত বা নিখোঁজ ব্যক্তির নামও উল্লেখ করতে পারেনি!
সুইডেনে তাসনিম খলিল, আমেরিকায় সাংবাদিক ইলিয়াস, ফ্রান্সে পিনাকি ভট্টাচার্য এবং লন্ডনে আরও একজন আছে এই মুহুর্তে তার নাম মনে পড়ছে না। এরা দেশ সম্পর্কে এমন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক খবর পরিবেশন করে যা সত্যি নেক্কারজনক! সরকারের সমালোচনা করা যায়, দল আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা যায় এবং তারা সেটা করেও তাতে আমার কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র বা এর ধরনের স্টেটমেন্ট দেওয়া দেশদ্রোহিতার শামিল। দেশদ্রোহিতা শুধু আইনি কাঠামোয় হয়না, নৈতিকতার মানদণ্ডেও অনেক দেশদ্রোহিতা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


