গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনা প্রবাহ গুলো ছিল এরকম, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশ, ভিপি নূরের ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার একজনের সাথে দেখা করা, বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক বিবৃতি, আইএমএফ এর ঋণ ছাড়ের ঘোষণা এবং সর্বশেষ ডেভিড লুয়ের বাংলাদেশ সফর। এই সব কিছুই আওয়ামীলীগ সরকারের পক্ষে গেছে। কোনোটা থেকেই বিএনপি কিংবা বিরোধী কেউ সমালোচনার রসদ কিংবা এনার্জি কিছুই খুঁজে পায়নি। একটা প্রবাদ আছে, বলা হয় “যখন সবকিছুই ঠিকভাবে চলে তখন বুঝতে হবে কোন কিছুতে বড় ধরনের সমস্যা আছে।” তবে এখনো আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতা হারানো বা বিপদে পড়ার কোন বড় ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে না। নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সরকার প্রধানও খুব রিলেক্সে আছে মনে হচ্ছে। বাকিটা ভিতরের খবর, তারা ভালো বলতে পারবে।
একটা গণতান্ত্রিক দেশের সরকারের ক্ষমতা হারানোর প্রধান পথ হচ্ছে নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার রদবদল হয়। গত দুই সেশনে আওয়ামীলীগ যেরকম নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে সেটা সঠিক গণতান্ত্রিক নির্বাচন নয়। এইবার ঐ ধরনের নির্বাচন করা আওয়ামীলীগের জন্য সহজ কাজ হবে না। সঠিকভাবে নির্বাচন করলে এই সরকারের ক্ষমতা হারানোর সম্ভাবনা আছে। কারণ কি, এই সরকার কি স্বাধীনতা পরবর্তী অন্য সরকার গুলির চেয়ে খারাপ ভাবে দেশ চালিয়েছে? না, এই কারণ নয় বরং স্বাধীনতা পরবর্তী অন্য যেকোনো সরকারের চেয়ে এই সরকার ভালোভাবে দেশ চালিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে মানুষের সাইকোলজি। মানুষ অন্য আরেকজন মানুষকে দীর্ঘদিন সর্বময় ক্ষমতায় আসীন দেখতে চায় না। একই মুখ তাকে বারবার শাসন করুক সেটা সে মানসিকভাবে মেনে নিতে পারে না। এই সাইকোলজির কারণেই পৃথিবীতে অনেক ভালো রাজার কিংবা একনায়তন্ত্র সরকারের পতন হয়েছে।
গত ৪২ বছর ধরে শেখ হাসিনা বাঙালির একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সভানেত্রী! ২০ বছর ও টানা ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আছেন। এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে রসিকতা। এসব মানুষের সাইকোলজিতে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে। মানুষ পরিবর্তনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার উচিত হবে আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী পদে নতুন মুখ আসবে এমন ঘোষণা দেওয়া এবং সেটি শুধু বলার জন্যই বলা নয়, করে দেখানো হবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া। নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বাঙ্গালীদের এই দলটিকে আরো সু-সংঘটিত করার কাজে মনোযোগ দিবেন। যতদিন বেঁচে থাকবে এই দলের জন্যই কাজ করে যাবেন।
তবে সমস্যা হচ্ছে, গত ১৫ বছর শেখ হাসিনা নিজেকে বড় করে দেখাতে গিয়ে দলের বাকি নেতাদের বনসাই বানিয়ে রেখেছেন। যার জন্য হয়তো এখন উনি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দক্ষ কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না! আর পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই জন্যই শেখ কন্যা যখন থাকবে না তখন তার বদনামের পরিমাণ বেশি করে দেখা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:২৭