আপনাকে একটি নতুন জামা পড়তে হলে সর্বপ্রথম কি করতে হবে? সর্বপ্রথম আপনাকে গায়ের পুরোনো জামাটা খুলতে হবে। আমরা আমাদের পুরনো ধ্যান-ধারণা বেশিরভাগ সময় আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই। সেটা সঠিক না হলেও সেটা ছাড়তে চাই না। আমি অবশ্য এখন যে বিষয়গুলি বলবো সেগুলি নতুন নয়, সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগের পুরোনো কথা। তবে কথাগুলো আপনার কাছে নতুনের মত লাগবে।
আমরা সবাই জান্নাতে যেতে চাই অথবা জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাই। জান্নাতে যেতে হলে আল্লাহ সর্বপ্রথম যে দুটি শর্ত আরোপ করেছেন সে দুটি হল বিশ্বাস ও সৎকর্ম। একইভাবে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে বিশ্বাস ও সৎ কর্ম দিয়েই বাঁচতে হবে। কিন্তু আপনি দেখবেন কোরআনে জান্নাতে যেতে কিংবা জাহান্নাম থেকে নিশ্চিত ভাবে বাঁচতে হলে আল্লাহ যেসব সৎকর্মের ক্লিয়ার বর্ণনা করেছেন তার সাথে আমাদের জান্নাতে যাওয়া বা জাহান্নাম থেকে বাঁচার প্রক্রিয়ার সাথে তেমন একটা মিল নেই।
সূরা হুমাজাহ নিশ্চয়ই পড়েছেন, নামজেই পড়েন বা ইমামকে নামাজে পড়তে শুনেন। কি আছে ৯ আয়াতের সুরাটিতে? ৫নং আয়াত থেকে বলি,
ওয়ামাআদরা-কা মাল হুতামাহ। (আপনি কি জানেন, হুতামাহ কি?) আল্লাহই আবার নবীকে বলে দিচ্ছেন হুতামাহ কি!
না-রুল্লা-হিল মূকাদাহ (এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি)
আল্লাতী তাত্তালি‘উ আলাল আফইদাহ।(যা হৃদয় পর্যন্ত পৌছবে)
ইন্নাহা-‘আলাইহিম মু’সাদাহ (এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে)
ফী ‘আমাদিম মুমাদ্দাদাহ (লম্বা লম্বা খুঁটিতে)
এখন আল্লাহ এই কঠোর হুঁশিয়ারি গুলি কাদের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন সেটা এই সূরার প্রথম আয়াত পড়লেই বুঝা যায়। শুধু প্রথম আয়াত না, সুরাটির নাম হুমাজাহ যার অর্থ হল পরনিন্দাকারী, ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী, যে অন্যকে কথার মাধ্যমে কষ্ট দেয়, গীবত চর্চা করে, এদেরকেই বলা হয় হুমাজাহ্!
ওয়াইলুলিলকুল্লি হুমাজাতিল লুমাঝাহ। (প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য রয়েছে কঠিনতম শাস্তি)
দেখুন এখানে আল্লাহ প্রত্যেকের কথা বলেছেন, ধনী গরিব, আওয়ামীলীগ বিএনপি, ওসি ডিসি, ব্যবসায়ী চাকরিজীবী, আস্তিক নাস্তিক কাউকে আলাদা করে বলেননি। যেইই এই ধরনের কাজে লিপ্ত হবে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অথচ এই অন্যায়টি, পাপটি আমরা চা, কফি খাওয়ার মত মনেকরে প্রতিনিয়তই করতে থাকি! এটাকে ধর্মের বিধি নিষেধ হিসেবেই মনে করিনা। আমাদের পরিচিত পাপ, মদ-জুয়া, শূকরের মাংস এমনকি জেনা ব্যভিচারের জন্যেও এইরকম কঠিন হুঁশিয়ারি নেই!
ছোট্ট এই সূরাটির বাংলা কিংবা ইংরেজি অনুবাদ পড়লে আপনার বুঝার জন্য কোন মুফাসসির কিংবা মুহাদ্দিসের কাছে যাওয়ার দরকার পড়বে না। আল্লাহই আপনাকে খুব ক্লিয়ারলি বুঝিয়ে দিয়েছেন পরনিন্দা চর্চা করা, গীবত করা, মানুষের মনে কষ্ট দেওয়া, কাউকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা এগুলো জঘন্যতম অপরাধ এবং যার জন্য নিশ্চিত হুতামাহয় নিক্ষিপ্ত হবে! ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জারে আমরা নির্বিকার ভাবে এই জঘন্যতম অপরাধটি করে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার তৌফিক দান করুক।
হূমাজাহ সূরাটির অনুবাদ নেট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:০০