আমেরিকা হল পৃথিবীর শক্তিশালী অর্থনীতি দেশের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। তারা অর্থনীতিতে শক্তিশালী হওয়ার আগে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে। একটি দেশ রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী না হলে কখনোই অন্য আরেকটি দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক শক্তি দিয়ে বর্তমান বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্যই রাশিয়া, চীন, ভারত যতই অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হোক রাজনৈতিকভাবে যদি তারা শক্তিশালী না হয়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনীতি কোনটাই তারা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
যতই বলা হোক আমেরিকার পতন হচ্ছে, বিশ্ব রাজনীতিতে দুর্বল হচ্ছে বস্তুত এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা যে প্রতাপের সহিত বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে গেছে সেটার প্রভাব কমতে শুরু করেছে। কমতে শুরু করেছে এর মানে এই নয় যে, কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকবে! শেষমেশ তারা কোন একটা পলিসি তৈরি করবে যাতে তারা সার্ভাইভ করবে এবং বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে তাদের প্রভাব বজায় থাকবে।
যাই হোক ভূমিকায় যা বললাম মূল আলোচনা সেটা নয়। আলোচনা হচ্ছে গত বেশ কয়েক দিন থেকেই আমাদের রাজনীতিতে আমেরিকানদের পদচারণা অনেক বেশি। তারা আমাদের আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ সরব। যেমনটি হয় যারা ক্ষমতায় থাকে তারা এ ধরনের কথাবার্তা ও আচরণ পছন্দ করেনা, শেখ হাসিনাও সেটা করার কথা নয়। যার জন্য শেখ হাসিনাও আমেরিকাকে নিয়ে বেশ বড় ধরনের অভিযোগ ও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। আমেরিকান ফরেন পলিসি মেকাররা এগুলিতে খুবই অভ্যস্ত এবং যার জন্য এসব তৃতীয় বিশ্বের সরকার থেকে এসব বক্তব্যকে সিরিয়াসলি বিবেচনা করে না।
তারপরেও সরকার প্রধান থেকে যেভাবে বলা হয়েছে আমেরিকা ছাড়া কি আমরা চলতে পারব না? এটা বাস্তবিক অর্থে কতটুকু সঠিক? সহজ উত্তর হচ্ছে এটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। আমেরিকার কথা আসলে প্রথমেই আসবে তাদের সাথে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আর সেটা হচ্ছে RMG প্রোডাক্ট। আমাদের RMG প্রোডাক্টের একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় ক্রেতা আমেরিকা, যারা ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদের থেকে কিনে থাকে। এই ডলার রেমিটেন্স হিসেবে আমাদের রিজার্ভে যোগ হয়। আমার আগের একটি পোস্টে আমি বলেছিলাম আমাদের পোশাক রপ্তানিতে আমরা শুধু এতে আমাদের সস্তা শ্রমমূল্য যোগ করি। আর বাকি এক্সেসরিজ গুলি বাইরে থেকে আমদানি করে নিয়ে আসি। এজন্য ৫ বিলিয়ন ডলার দেশে আনার জন্য আমরা ৪ বিলিয়ন ডলার আবার চীন, তাইওয়ান, হংকং, জার্মানিতে ব্যয় করি! যোগ বিয়োগ করলে ১ বিলিয়ন ডলারের মত টিকে। তবে টাকার অংক বাইরে রাখলে এই খাতে বিশাল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। তারপরেও আমেরিকা চাইলেও এককথায় এদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্য কেনা বন্ধ করতে পারবেনা। জিএসপি সুবিধা বাতিল হওয়ার পর অনেক বায়ার তাদের অর্ডার ভারত, পাকিস্তান এবং কেউ কেউ মায়ানমার পর্যন্ত প্লেস করেছিল। কিন্তু পন্যের কোয়ালিটি ও নির্ধারিত সময় ডেলিভারি দিতে না পারার কারণে তারা আবার পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে এসেছে।
যাইহোক প্রধানমন্ত্রী যখন সাহস করে আমেরিকার বিপক্ষে এত বড় স্টেটমেন্ট দিয়েই ফেলেছে, এখন তার উচিত সে অনুযায়ী দেশের অর্থনীতি গড়ে তোলা। আমেরিকা নির্ভরতা কমিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করা। দেশে ব্যাবসার পরিবেশ সৃষ্টি করা। উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপনে আমলাদের সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে কাজ করা। সচিবালয়ে সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়ীদের প্রবেশ করার পথ সহজ করা। অন্যথায় এসব কথার কথা বলে কোনো লাভ নেই।