গড়ে বেশিরভাগ বাঙালির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অনীহা থাকে। কিংবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলও সেটি দায় সারাভাবে করে। এটা ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপও দেখা যায়। নিজের আশেপাশের মানুষের দিকে একটু খেয়াল করলে এমন উদাহরণ অহরহ দেখতে পাওয়া যায়।
বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতার উদাহরণ হল শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা! যে মানুষটি বাঙালির মুক্তির জন্য নিজের জীবনের অধিকাংশ সময়ে জেলে কাটিয়েছে, সে মানুষটিকে হত্যা করে জাতি হিসেবে সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতার উদাহরণ তৈরি করেছি আমরা। এরপর সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতার উদাহরণ হচ্ছে জেনারেল জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া! বিএনপি-জামাত এখনো প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে জেনারেল জিয়াকে শেখ মুজিবের সাথে প্যারালেলি দাঁড় করাতে কিংবা তার চেয়েও বড় করে দেখাতে! যাইহোক এগুলি পুরনো ইতিহাসের কথা, বর্তমান সময়ের একটি অকৃতজ্ঞতার উদাহরণ দিচ্ছি।
অল্প কয়েকদিন আগে WHO'র অনুরোধে স্বাস্থ্য সেবায় আঞ্চলিক সহযোগিতা শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ। উক্ত অনুষ্ঠানে আমাদের স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে তাদের বক্তব্য গুলি শুনছিলাম। আমেরিকার প্রতিনিধি সহ আরো ১৩ টি দেশের প্রতিনিধি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। প্রথমে আমাদের স্বাস্থ্য সচিব বক্তব্য দিল এরপরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং সর্বশেষ আমাদের প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেয়। তিনজন বক্তাই আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সরকার কি কি উন্নতি করেছে তার কথা বলে যাচ্ছিল। এরপর করোনার সময় সরকার কিভাবে মানুষকে বাঁচিয়েছে তার কথা বলছিল। সরকারের দূরদর্শিতার কারণে করোনার টিকা কিভাবে এদেশে খুব সহজে এসেছে তার বর্ণনা দিচ্ছিল। আমি শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলাম এই তিনজন বক্তা আমেরিকা বাংলাদেশকে যে বিপুল পরিমাণ বিনামূল্যে করোনার টিকা দিয়েছিল তার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দেয় কিনা। কিন্তু তাদের একজনেও সামান্য একটি শব্দ উচ্চারণ করেনি এটা নিয়ে!
এছাড়াও সাধারণ মানুষ, গরিব জনগণ যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা সঠিকভাবে পায় তার জন্য কী কী দরকার সে সম্পর্কে একটি কথাও বলেনি! খাদ্যে ভেজাল সমস্যাটি বাকি দেশগুলো কিভাবে মোকাবেলা করছে কিংবা কিভাবে মোকাবেলা করা দরকার এই বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করার দরকার ছিল।
আসলে এই ধরনের সভা, সেমিনার গুলি থেকে বাংলাদেশ খুব বেশি কিছু শিখতে পারেনা। এখানে এরা যায় নিজেদের ঢোল নিজেরা কত জোরে পিটাতে পারবে তার জন্য। বাকিদের সামনে এমন ভাবে কথা বলবে যেন বাকিরা মনে করে এদেশ মনে হয় কতদূর এগিয়ে গিয়েছে! আসলে এরা বুঝতে পারেনা বাকিরা ঠিকই বুঝতে পারে খালি কলসি বাজে বেশি! বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সভা, সেমিনারে এই খালি কলসি নামক বাদ্যযন্ত্রটি বাজানোর জন্যই গিয়ে থাকে। কাজের কাজ খুব বেশিকিছু হয়না!