প্রশ্নফাঁস আমাদের দেশের একটি বিশাল এবং ভয়াবহ সমস্যা। এই প্রশ্নফাঁস কখন থেকে শুরু হয় সেটা অবশ্য আমি বলতে পারছিনা। তবে ২০০০ সাল থেকে শুরু করে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই সময়টুকুতে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা সবচেয়ে বেশি সামনে আসে। এই সময়ের মধ্যে আবার ২০১৫ সালে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি মহামারি আকারে প্রকাশ পায়। এই প্রশ্নফাঁসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাসহ বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল ও বিসিএস এর প্রশ্নফাঁস হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়মিত ফাঁস হচ্ছে!
গত দুইদিন আগে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাশের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন অপরাধীকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমি খুব অবাক হয়েছি এই গ্রেফতারকৃত বেশিরভাগ অপরাধী ডাক্তার ও শিক্ষক! অথচ পৃথিবীতে শিক্ষক এবং ডাক্তারদের নৈতিকতা সবচেয়ে প্রবল থাকার কথা।
আমি কলেজে পড়ার সময় আমার এক বন্ধুর বাবা ভুল চিকিৎসায় মারা যায়। উনাকে দীর্ঘদিন ডাক্তার টিবিও রোগের ওষুধ দিচ্ছিলেন অথচ ঢাকায় আনার পর বলা হল উনার এ ধরনের কোন রোগই ছিলনা! আমি দেখেছি তখন তাদের চোখের অসহায় চাউনি, কিভাবে একটি পরিবারের মাথার উপর থেকে ছাদ সরে যায়!
গত পরশু আমার এলাকার এক বড় ভাইয়ের মৃত্যু হয় খুবই সজ্জন মানুষ ছিলেন, আর্থিকভাবে সচ্ছলও ছিলেন। উনার গলায় প্রচন্ড ব্যথা হতো, ডাক্তার উনাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে ওষুধগুলি দিয়েছেন দুইদিন খাওয়ার পর উনি সুস্থ হয়ে যান। এরপরের দিন আবার অসুস্থ হলে একই হাসপাতালে যাওয়ার পরে বলল তারা এই রোগী রাখতে পারবেনা, অবস্থা ভালোনা। পরবর্তীতে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বলা হয় ভুল ওষুধ খাওয়ার ফলে, উনার পাকস্থলী ৭০% ডেমেজ হয়ে গেছে! তারা একদিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর গত পরশু উনি মারা যান। এরকম ভুরিভুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে খুঁজলে।
আমার কথা হচ্ছে প্রশ্নফাঁস জেনারেশনের ছেলে মেয়েরা কি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে গেছে! ২০১৫ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার যে প্রশ্নফাঁস হয়েছিল সেটাকে মজা করে অনেকেই বলতে শুনেছি, আপনি যখন কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন তখন যদি জানতে পারেন ওই ডাক্তার ২০১৫ সালে মেডিকেলে চান্স পেয়েছিল তখন অবশ্যই সে ডাক্তারকে এড়িয়ে যাবেন!
একটি জাতির মেরুদন্ড সোজা রাখে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং শিক্ষকরা। এখন যাদের বেশিভাগ নিজেরাই মেরুদণ্ডহীন তারা কিভাবে পুরো জাতির মেরুদন্ড সোজা রাখবে! আমার একটি পরামর্শ হচ্ছে, প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত যে ডাক্তার ও শিক্ষকরা ধরা পড়েছে তাদের কাছ থেকে ডাটা নিয়ে প্রশ্ন হাতে পেয়ে যারা ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করেছে তাদের খোঁজ নেওয়া। তারা হয়তো সবার নাম পরিচয় বলতে পারবেন না, তবে কিছু সংখ্যকের নাম ঠিকানাতো বলতে পারবে। সেসব ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।
আমাদের দেশের ভর্তি পরীক্ষা গুলো মোটামুটি মানসম্পন্ন পরীক্ষাই হয় শুধুমাত্র প্রশ্ন ফাঁসের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। তাই এখন থেকে পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও তাদের উপর নজর রাখা উচিত। কেননা তারা যখন ক্লাস করবে, ব্যবহারিক ক্লাসে অংশ নেবে এবং সর্বশেষ ইন্টার্নি করতে যাবে তখনও তাদের অদক্ষতা চোখে পড়বে। তাদের ক্লাস টিচার বুঝতে পারার কথা, তারা সঠিকভাবে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করেনি। যতদিন না প্রশ্নফাঁস পুরোপুরি বন্ধ না হচ্ছে, ততদিন এই সবকিছু বিবেচনা করেই তাদেরকে ডাক্তারি সেবা দেওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া উচিত বলে মনে করি।