নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত দুই মাস যেভাবে দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে, এক দফা আন্দোলন হয়েছে, দেশের ভিতর থেকে, দেশের বাহির থেকে অনেক ধরনের মতামত, নির্দেশ, পদক্ষেপ এসেছে, তাতে বর্তমান সরকারকে বেশ চাপে ফেলানো হয়েছে মনে হচ্ছে! সরকার দলীয় নেতাদের কথাবার্তায় নমনীয় সুর দেখা গেছে, যা থেকে অনেকেই আন্দাজ করেছে সরকার চাপে পড়েছে! এদেশে নির্বাচন এলেই সরকার দলে যে থাকে সে চাপে পড়ে। তবে বর্তমান শেখ হাসিনা তেমন কোন চাপে নেই। উপর দিয়ে তারা বেশ টেনশনে আছে মনে হলেও বস্তুত আমার কাছে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা যে ধরনের চাপ সামাল দিয়েছেন সে তুলনায় এসব চাপ কিছুই না।
শেখ হাসিনা চাপে পড়েছেন পদ্মা সেতু করতে গিয়ে, কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিতে গিয়ে, সাঈদী হুজুরকে যাবজ্জীবন সাজা দিতে গিয়ে! আমেরিকার ফরেন মিনিস্ট্রি থেকে ফোন এসেছিল, শেখ হাসিনা সেই ফোন ধরেননি। জাতিসংঘের মহাসচিব অনুরোধ করেছে, শেখ হাসিনা সেই অনুরোধ রাখেনি, অ্যামিনস্টিনা ইন্টারন্যাশনাল খেয়ে না খেয়ে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছিল, শেখ হাসিনা সেগুলি পড়েও দেখেনি! তো এখন কি এর চেয়েও বেশি চাপ দেওয়া হচ্ছে তাকে!
শেখ হাসিনাকে তারেক জিয়া, নুরু মুরু, মান্না পান্না এরা চাপে ফেলতে পারবেনা। তবে শেখ হাসিনা অবশ্যই চাপে আছেন, সে চাপ হচ্ছে নিজের দলের সুবিধাভোগী, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও এমপি নমিনেশনের চাপ। আরো আছে সরকারি প্রশাসনের আমলাদের চাপ!
গাছে ফল বেশি ধরলেও বিপদ আছে, ফলের ওজনে গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে। আওমীলীগ গাছ হলে এর ফল হচ্ছে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, দলীয় ক্যাডার ও দুষ্ট সরকারি আমলারা। এখন গাছ বাঁচাতে হলে গাছের বাড়তি ফল ফেলে দিতে হবে! এই বাড়তি ফল কিভাবে ফেলে দিবেন এটা নিয়ে শেখ হাসিনা চাপে থাকতে পারেন। এছাড়া যে চাপ গুলির কথা বলা হয়, এগুলি প্রাকৃতিক চাপের মত। একটু বেশি জোরে চাপ দিলে সময়মতো গিয়ে সেরে ফেলতে হয়! সময় নষ্ট করলে বড়জোর কাপড় চোপড় নষ্ট হতে পারে, এর বেশি কিছু হবেনা।
শেখ হাসিনাকে চাপে ফেলতে পারবে তৃণমূলে আওয়ামীলীগ যারা করে তারা। এরা এখনো শেখ হাসিনাকে ভালোবাসে, তাই নিজেদের কষ্ট, দুর্দশা হতাশাকে ভুলে গিয়ে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করছে। তবে এই সমর্থনের হার গত ১৫ বছরে সবচেয়ে নিচে নেমেছে। এদের ক্ষোভ যদি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায়, এরাই শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগকে চাপে ফেলে বিতাড়িত করবে। এছাড়া শেখ হাসিনাকে আপাতত চাপে ফেলে চ্যাপ্টা করবে, এমন কোনো শক্তিশালী পক্ষ দৃষ্টিগোচরে নেই। দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার উচিত হবে আওয়ামীলীগের সবচেয়ে এই পুরনো দলের সভানেত্রী হিসেবে সারা দেশ চোষে বেড়ানো। তৃণমূল আওয়ামীলীগ ও জনমানুষের কথা শোনা, তাদের ক্ষোভ, দুঃখ, বেদনা, হতাশা দূর করার জন্য কাজ করা। তাদের কথা শুনে, ধারণা নিয়ে আগামী নির্বাচনে দলীয় নমিনেশন ফরম বিতরণ করা। গাছে যে বাড়তি ফল ধরেছে সেগুলো সাবধানে ছেটে ফেলা।