
গত দুইদিন থেকে রমার ঘরে বাতি জ্বলছে না। তার প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে না পারার কারণে ঘরে লাইট ফ্যান চালাতে পারছে না। পকেটে যে কয়টা টাকা ছিল সেগুলি দিয়ে কিছু বাজার সদাই করে বাসায় চলে আসছে। এদিকে বউ সমানে ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছে মিটারের টাকা ঢুকাচ্ছ না কেনো?
আজকে দুইদিন থেকে অন্ধকারে সব কাজ করে যাচ্ছি!
বেচারা রমা বলল, কালকে বেতন পাবো, কালকেই রিচার্জ করে দেবো। এখন আমাকে একটু শান্তি দাও।
এদিকে তার বউ বলল আমার খালাতো বোন আসতেছে বাসায়, সে যদি এসে দেখে বিদ্যুৎ নেই তাহলে লজ্জায় আমি মুখ দেখাতে পারবো না।
তোমাকে নিয়ে কত বড় বড় কথা, গল্প ওর কাছে করেছি, এখন যদি এসে দেখে এই অবস্থা কি হবে ভাবছো!
রমা উদাস মনে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল আসতে দাও সমস্যা নেই, কি বলতে হবে আমার জানা আছে।
বলতে না বলতেই মেহমান ঘরে এসে ঢুকে গেছে।
আর এসে বলল কি ব্যাপার দুলাভাই ঘর দেখি পুরো অন্ধকার, আশেপাশে তো কারেন্ট আছে, আপনার ঘরে নাই কেনো!
রমা গম্ভীর গলায় বলল দেশের তো কোন খোঁজ খবর রাখো না। কি হচ্ছে, কি চলছে জানো! কিছুই জানো না।
আমাদের নেতা তারেক জিয়া অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, বলেছে কোন বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, টেলিফোন বিল কিছুই না দিতে। তাই তার অসহযোগ আন্দোলনে আমি শরিক হলাম।
মোমবাতি আছে চিন্তার কারণ নেই।
সম্ভু আর মামলার হাজিরা আজকে সহ ৩ দিন দেয়নি। তার নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়ে গিয়েছে, পুলিশ তাকে খুঁজছে। সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে উঠেছে।
বন্ধু বললো কি ব্যাপার কোনদিনও তো আমাদের বাড়িতে আসিস না, আজকে এত রাতে কি জন্য!
সম্ভূ বলল, আর বলিস না, রাজনীতি করে করে জীবনটা শেষ করে দিলাম। পুলিশ আমাকে খুঁজছে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
সম্ভুর বন্ধু বলল কি ব্যাপার তোকে তো কখনো কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে দেখি নাই। হঠাৎ করে আবার কিসের রাজনৈতিক মামলা খাইলি!
সম্ভু বললো তার বউ নারী নির্যাতনের মামলা দিয়েছে, সেই মামলায় পুলিশ আমাকে খুঁজছে।
সম্ভুর বন্ধু জিজ্ঞেস করলো নারী নির্যাতনের মামলা আবার রাজনৈতিক মামলা হয় কিভাবে?
সম্ভু বললো অবশ্যই হয়, আমার শ্বশুর আওয়ামী লীগ করে।
তো যাক ভালো কথা হাজিরা দিস নাই কেনো? হাজিরা দেবো কেনো, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছে কোন মামলায় হাজিরা না দিতে।
আচ্ছা ঠিক আছে ওই যে আমাদের গোয়াল ঘর আছে সেখানে গিয়ে শুয়ে থাক, আমি কয়েল নিয়ে আসছি।
কি ব্যাপার মন্টু মিয়া কালকে যে অনলাইন মিটিংয়ে আসো নাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
আচ্ছা তুমি তো কখনো অনলাইন মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকো না, কাল কি হল? নেতা তোমার কথা কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে।
কি আর হবে মিটিং এ তো আসতে চাচ্ছিলাম কিন্তু নেতা বলল ইন্টারনেট বিল না দিতে। বিল না দেওয়ার কারণে ইন্টারনেট লাইন কেটে দিয়েছে, তাহলে মিটিংয়ে আসবো কিভাবে?
মূলত মন্টু মিয়ার শ্যালিকাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসছে কাল। বউয়ের পীড়াপিড়িতে সেখানে তার যেতে হয়েছে। তাই নেতাকে বুঝ দেওয়ার জন্য সে বলেছে নেতারা অসহযোগ আন্দোলনে সেও শামিল হয়েছে।
মন্টুমিয়া এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



