somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধে মিডিয়া একটি বড় অস্ত্র।

০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করা হয়। যুদ্ধে জেতার জন্য সেনাপতি তার কৌশলগুলো পর্যায়ক্রমে প্রয়োগ করতে থাকে। যারা সাঞ্জুর আর্ট অব ওয়ার পড়েছেন, তারা যুদ্ধের অনেকগুলি কৌশলের সাথে পরিচিত। দুই হাজার বছর আগের লেখা এই বইয়ের প্রতিটি শব্দ যুদ্ধের ময়দানে এখনো শতভাগ কার্যকর। প্রয়োগের ধরন ও রিভার্স কৌশলের মাধ্যমে এখনো সাঞ্জুর যুদ্ধনীতি গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করা হয়।

প্রতিপক্ষের প্রকৃত তথ্য যত বেশি আপনার কাছে থাকবে এবং আপনার প্রকৃত তথ্য প্রতিপক্ষের কাছে যত কম থাকবে ততই যুদ্ধে আপনি সাফল্য লাভ করবেন। একটা সময় গুপ্তচরের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের তথ্য সংগ্রহ করা হতো এখনো গুপ্তচরবৃত্তি আছে, সাথে যোগ হয়েছে মিডিয়া। এই মিডিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রের অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।
• মিডিয়া আপনার প্রতিপক্ষের Metal Strength ভেঙ্গে দিতে পারে।
• প্রতিপক্ষকে Misguided করতে পারে।
• প্রতিপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করতে পারে এবং সাথে সাথে সেই তথ্যকে এনালাইসিস করে আপনাকে পদক্ষেপ নিতে সাহায্যও করতে পারে।

মোটকথা আধুনিক যুগে মিডিয়া যুদ্ধের অন্যতম একটি হাতিয়ার।
এবার দেখুন ইসরাইল গাজা যুদ্ধে কিংবা ভারত পাকিস্তান আসন্ন যুদ্ধের আশঙ্কায় মিডিয়াকে কিভাবে ব্যবহার করছে।

যুদ্ধে বেশিরভাগ সময়ে প্রতিপক্ষের কাছে নিজের সামরিক শক্তিকে বেশি করে প্রকাশ করা হয় যাতে প্রতিপক্ষ ভীত হয় এবং তার মনে হতে থাকে এই ধরনের সামরিক শক্তির সাথে সে পেরে উঠবে না।
তবে যুদ্ধে এটার রিভার্স কৌশলও ব্যবহার করা হয়, মানে প্রতিপক্ষের কাছে নিজেকে দুর্বল করে প্রকাশ করা এবং শত্রুকে যারা সমর্থন করে তাদের কাছে তাকে সাহসী করে দেখানো।

সম্রাট হুমায়ুন যখন শেরশাহ্কে আক্রমন করতে বাংলায় রওনা হয় তখন শেরশাহ্ খুব কৌশলে একটি খবর ছড়িয়ে দেয়, যা হচ্ছে শেরশাহের বাহিনীতে কামান চালানোর মত কোনো দক্ষ কামানচি নেই এবং তার কামান গুলি খুবই নড়বড়ে। এটা খুবই কাজে দিয়েছে। সম্রাট হুমায়ুন কামানের গোলা থেকে বাঁচার জন্য তার সৈন্যদেরকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখার প্রয়োজন মনে করেনি এবং নড়বড়ে কামান গুলি দিয়ে নদীর পাড়ে রেখে শেরশাহ্ তার তাবু পর্যন্ত গোলা নিক্ষেপ করতে পারবে সেটাও তার ভাবনার বাইরে রেখেছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শেরশাহ্'র বাহিনীতে কামান চালানোর মতো খুবই দক্ষ কামানচি ছিলো এবং তার কামান ছিল সম্রাট হুমায়ুনের কামানের চেয়েও আধুনিক ও স্ট্যাবল। ফলাফল সম্রাট হুমায়ুনের পরাজয়।

গাজায় যখন ইজরাইল হামলা করে তখন যেসব দেশগুলি গাজাকে সমর্থন করে অথবা সে দেশের জনগণ হামাসের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের জন্য এই কৌশলটি ব্যবহার করা হয়। সেখানের মিডিয়া গুলো হামাসকে খুবই সাহসী ও সামরিক ভাবে শক্তিশালী করে দেখাতে থাকে। আমাদের মিডিয়াগুলির দিকে খেয়াল করুন প্রতিনিয়ত যখন যুদ্ধ চলছে তারা খবর দিচ্ছে, আজকে হামাস এত জন ইসরাইলি সৈন্যকে খ*তম করে ফেলেছে, হামাসের মিসাইল আক্রমণে দিশেহারা ইসরাইল, ইসরাইলের সৈন্যরা গণহারে আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে, গাজায় ইস্যুতে ইসরাইলের পাশে নেই কোনো দেশ, এমন হরেক রকমের খবর! যেহেতু মেইনস্ট্রিম মিডিয়া গুলিতেই এই ধরনের খবর প্রচার হয় সেহেতু মানুষ এগুলি বিশ্বাস করেই নেয়। প্রকৃতপক্ষে এখন আমরা জানি গাজা এবং হামাসের বর্তমান অবস্থা কি!

এগুলি হল মানুষকে সাইকোলজিক্যালি এক ধরনের স্যাটিসফেকশন দেওয়া যা তাকে উত্তেজিত হতে বাঁধা দেয়। এ ধরনের খবর পড়ে মানুষ আনন্দিত হয় এবং আত্মবিশ্বাসী হয়, যার ফলে সে তার বন্ধুর প্রকৃত বিপদ সম্পর্কে সঠিক ধারনা পায়না। সে ভাবতে থাকে তার বন্ধু কিংবা সমর্থিত দেশ, গোষ্ঠী তার প্রতিপক্ষের সাথে সমান তালে কিংবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি গতিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আদৌত তার এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। শুধুমাত্র তাকে সাইকোলজ্যিকাল উত্তেজিত না হতে এ ধরনের খবর প্রকাশ হতে থাকে। একজন মানুষ কিংবা একটি গুষ্টি অথবা একটি দেশ যেন কোনভাবেই একত্রিত হয়ে তার সমর্থিত দেশ কিংবা গোষ্ঠীকে সামরিকভাবে কিংবা অন্য কোনভাবে সহযোগিতা না করে এই ধরনের খবর প্রকাশ করার উদ্দেশ্যটাই এটা।

ভারত পাকিস্তানের এই যুদ্ধের ক্ষেত্রেও সেইম ঘটনা ঘটছে। পাকিস্তানের সামরিক শক্তি অবশ্যই আছে কিন্তু সেটাকে যেভাবে দেখানো হচ্ছে ঠিক সেভাবে নেই। তাদের আক্রমণ প্রতি আক্রমণ গুলোকে যেভাবে হিরোইজম করে প্রকাশ করা হচ্ছে ততটা নয়। এ ধরনের খবর প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে যেন আপনি মনস্তাত্ত্বিকভাবে ধরে নেন পাকিস্তান যুদ্ধক্ষেত্রে ভালো করছে, তারা তাদের শত্রুকে প্রতিনিয়ত পরাস্ত করে যাচ্ছে যা আপনাকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে একটি স্যাটিস্ফেকশন দেয় যাতে আপনার মনে হয় আপনি জয়ী হচ্ছেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আপনি যুদ্ধের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকছেন।
পাকিস্তান সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশ কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে কি শক্তিশালী? যে কোন সমর বিশারদ অবশ্যই স্বীকার করবে যুদ্ধে সামরিক শক্তির সাথে সাথে অর্থনৈতিক শক্তি কতটা জরুরি! অবশ্য সেই সমর বিশারদ যদি বঙ্গদেশীয় হয় তাহলে ভিন্ন কথা :)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×