
সম্প্রতি লন্ডনে এক সাক্ষাৎকারে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস মন্তব্য করেছেন, “এই দেশের মানুষ গণতন্ত্র বোঝে না, টাকা নিয়ে ভোট বিক্রি করে দেয়।”
এই বক্তব্য আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা, জনগণের অবস্থান এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধকে চরমভাবে অপমান করে। প্রশ্ন উঠে এই ‘গণতন্ত্র বোঝে না’ কথাটার পেছনে কে আসলে গণতন্ত্রকে ছোট করে দেখার মানসিকতা পোষণ করছে?
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতার উৎস জনগণ। তাদের মতামত, তাদের ভোটই নির্ধারণ করে শাসকের ভবিষ্যৎ। জনগণের এই চেতনাকে তাচ্ছিল্য করা, তাদের সিদ্ধান্তকে টাকার পাল্লায় ওজন করা, নিঃসন্দেহে একটি স্বৈরাচারী মানসিকতার প্রকাশ। এমন বক্তব্য শুধু গণতন্ত্র নয়, দেশের সাধারণ নাগরিকদেরও হেয় করে।
ড. ইউনুস কিংবা শেখ হাসিনা ক্ষমতার দুই মেরু, কিন্তু মনোভাব তো দেখছি একই! ড. ইউনুস যখন জনগণকে ভোট বিক্রেতা বলেন, তখন সেটাও এক ধরনের গণতন্ত্রকে পেছন থেকে ছুরি মারা। আর শেখ হাসিনা যখন ভোটারবিহীন নির্বাচন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকেন, সেটাও গণতন্ত্রকে সামনে থেকে আঘাত করা।
একজনের 'পাওয়ার প্র্যাকটিস' ‘সুশীল ভদ্রতা’য় মোড়ানো, অন্যজনের ‘ক্ষমতা চর্চা’ রাষ্ট্রযন্ত্র নির্ভর। কিন্তু উভয়ের মূল দর্শনে গণতন্ত্রের প্রতি অশ্রদ্ধা এক ও অভিন্ন।
টাকা দিয়ে ভোট কেনা—বাস্তবতা কতখানি?
চলুন একটু বাস্তবতা দেখি...
টাকা দিয়ে ভোট কেনার ঘটনা আমরা শুনি, হ্যাঁ, তবে সেটা ছোট পরিসরে, ইউনিয়ন পরিষদ বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় সীমাবদ্ধ। সে ক্ষেত্রেও এটি অনেকটা 'প্রভাব বিস্তারের অংশ' হিসেবে ঘটে—ভোটের সময় গলির মোড়ে চা খাওয়ানো, বিস্কিট, সিঙ্গারা চমুচা বিলি করা, হয়ত কোথাও কোথাও নগদ টাকা দিতেও শোনা যায়। কিন্তু এই জিনিসটি কখনোই জাতীয় নির্বাচনের মত বিশাল কাঠামোয় কার্যকরভাবে ফলদায়ী হয় না।
তাই মাত্র ৫০০, ১০০০ টাকার বিনিময়ে তারা তাদের ভোট বিকিয়ে দেয়, এমন ভাবা একটি বড় মূর্খতা।
ড. ইউনুস সাহেব, আপনি হয়ত বড় বড় প্রজেক্টে টাকার খেলা দেখেছেন, মানুষকে কিস্তির টাকার অংকে মেপেছেন। কিন্তু আপনার বয়স ও অভিজ্ঞতা আপনাকে বাংলাদেশি ভোটারের আত্মমর্যাদার কদর শিখায়নি।
গণতন্ত্রে আস্থা ফিরুক, অবজ্ঞা নয়
গণতন্ত্র চলবে ভুলে ভুলে, শেখার মধ্যে দিয়ে। জনগণকে সচেতন করে, অংশগ্রহণ বাড়িয়ে। কিন্তু এই প্রক্রিয়াকে অর্থ দিয়ে মূল্যায়ন করা, কিংবা ভোটারদের বিবেক নিয়ে তামাশা করা জনগণকে কাঠগড়ায় তোলার নামান্তর। আর এটাই গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
আর এই হুমকি আপনি প্রতিনিয়তই বাড়িয়ে চলছেন!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






