somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

প্রখ্যাত মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের অন্যতম কালজয়ী অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। ১৯৮০ ও ৯০’র দশকে যে কয়েকজন অভিনয় শিল্পী মঞ্চ ও টিভি নাটককে অসম্ভব জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলেন, ফরীদি ছিলেন তাদেরই একজন। মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে হুমায়ুন ফরিদি নিজস্ব একটি অভিনয়-ধারা তৈরী করতে পেরেছিলেন যা তাঁকে সময়ের কোলে অনন্য করে রেখেছে। তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম সংগঠক এবং অভিনেতা। গ্রাম থিয়েটারেরও সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তিনটি মাধ্যমে সাবলীল অভিনয়ের জন্য তিনি অসামান্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমায় আলোড়ন তোলা এই অভিনেতা অসাধারণ সব অভিনয়ের মাধ্যমে খ্যাতির ‍তুঙ্গে ছিলেন। কিংবদন্তি এই অভিনেতার উপস্থিতিতেই দর্শক-শ্রোতা খুঁজে পেতো অনাবিল আনন্দ ও মুগ্ধতা। কিংবদন্তি এই অভিনেতা ২০১২ সালের আজকের দিনে ঢাকায় মৃত্যুবরন করেন। নন্দিত এই অভিনেতার আজ ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


হুমায়ুন ফরীদি বাংলা ভাষা আন্দোলের উত্তাল সময়ে ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণের পর চাঁদপুর সরকারী কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনান্তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি আল-বেরুনী হলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নাট্য উৎসবে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মূলতঃ এ উৎসবের মাধ্যমেই তিনি নাট্যাঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ লাভ করেন। এরপর তিনি গণমাধ্যমে অনেক নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯০-এর দশকে হুমায়ুন ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। সেখানেও তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, স্যুটিংস্থলে অভিনেতার তুলনায় দর্শকেরা হুমায়ুন ফরীদির দিকেই আকর্ষিত হতো বেশি। বাংলাদেশের নাট্য ও সিনেমা জগতে তিনি অসাধারণ ও অবিসংবাদিত চরিত্রে অভিনয়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকে অভিনয় করে তিনি নিজেকে নিযে যান অন্য উচ্চতায়। সংশপ্তক নাটকে 'কানকাটা রমজান' চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও যে সব নাটকে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি লাভ করেন তন্মধ্যেঃ


মঞ্চঃ ১। কিত্তনখোলা, ২। মুন্তাসির ফ্যান্টাসি, ৩। কিরামত মঙ্গল, ৪। ধূর্ত উই।
টিভিঃ ১। নিখোঁজ সংবাদ, ২। হঠাৎ একদিন, ৩। পাথর সময়, ৪। সংশপ্তক, ৫। সমূদ্রে গাংচিল, ৭। কাছের মানুষ, ৮। মোহনা, ৯। নীল নকশাল সন্ধানে, ১০। দূরবীন দিয়ে দেখুন, ১১। ভাঙ্গনের শব্দ শুনি, ১২। কোথাও কেউ নেই ইত্যাদি। চলচ্চিত্রে ফরীদির প্রথম অভিনয় তানভীর মোকাম্মেলের হুলিয়ায়। চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়ে গ্রাম-গঞ্জের মানুষেরও খুব কাছাকাছি পৌঁছে যান ফরীদি। বাংলা চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে তিনি যোগ করেছিলেন এক নতুন মাত্রা।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র সমূহঃ ১। সন্ত্রাস, ২। দহন, ৩। লড়াকু, ৪। দিনমজুর, ৫। বীর পুরুষ, ৬। বিশ্ব প্রেমিক, ৭। আজকের হিটলার, ৮। মায়ের অধিকার, ৯। বিদ্রোহী চারিদিকে, ১০। মনে পড়ে তোমাকে, ১১। ব্যাচেলর, ১২। জয়যাত্রা, ১৩। শ্যামল ছায়া ইত্যাদি।


ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরীদি প্রথমে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন। তখন এই বিয়ে সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এ ঘরে তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, নাম দেবযানি। পরে তিনি ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর পর ধানমণ্ডির বাসায় তিনি একাই থাকতেন।কৌতুক প্রিয় হুমাযূন ফরীদি অভিনয়ে ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক ও পেশাদার। কোন চরিত্র চিত্রনে তাঁর পেশাদারীত্ব দেশের শিল্পী মহলে এখনো কিংবদন্তিসম। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে বহুমাত্রিক অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শক হ্রদয়ে স্থায়ী আসন নিশ্চিত করেছেন। মাটি ও মানুষের সাথে ছিলো তাঁর ঘনিষ্ট সম্পর্ক। দেশের সংকটে-সংগ্রামে এগিয়ে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাতারে, যুক্ত হয়েছেন প্রতিবাদী মিছিলে। 'শিল্পের জন্য শিল্প' নয় ববং মানুষের সাথে তাঁর সকল কর্মকে সম্পৃক্ত করেছেন আজীবন। নাট্যাঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেন এবং ২০০৪ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। সর্বশেষ তিনি হেমন্ত নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে নির্দেশনা দেন এবং পূর্ণ চাঁদের অপূর্ণতায় নামের একটি নাটকে অভিনয় করেন। এর পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।


জনপ্রিয় এই অভিনেতা ফুসফুসের জটিলতাসহ আরো কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি রাজধানীর ধানমণ্ডির মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করা এবং কম ঘুমানোর কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তার দেহের ওজন কমে যায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও হ্রাস পায়। এ কারণে তাকে কয়েক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। তার প্রিয় উক্তি ছিল, বাঁচো এবং বাঁচতে দাও। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে 'বেঁচে থাকার' হাজারো রং ছড়িয়ে কিংবদন্তি এই অভিনেতা ১৯১২ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাঁর জন্য আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×