somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ত্ব আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) ৮৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইসলামী জগতের প্রাতঃস্মরনীয় আধ্যাত্নিক ব্যক্তিত্ব, দরবেশকুল শিরোমনি, মাহবুবে সোবহানী, কুতুবে রাব্বানী বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী(রঃ)। তিনি ইসলামের অন্যতম প্রচারক হিসাবে সুবিদিত। সেকারণে তাকে 'গাউস-উল-আজম' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইসলাম ধর্মমতে তাকে 'বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)' নামে ব্যক্ত করা হয়। আধ্যাত্মিকতায় উচ্চমার্গের জন্য বড়পীর, ইরাকের অন্তর্গত 'জিলান' নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করায় জিলানী, সম্মাণিত হিসাবে আবু মোহাম্মদ মুহিউদ্দীন প্রভৃতি উপাধি ও নামেও তাকে সম্বোধন করা হয়। তিনি কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের পণ্ডিত ছিলেন। গাউসুল আযম আবু মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, শেখ সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কেবল দ্বীনের সংস্কারক ছিলেন না বরং ইসলাম বা দ্বীনে ইসলামের একজন পুনরুজ্জীবনকারীও ছিলেন। তাই তিনি ‘মুহিউদ্দিন’ বা দ্বীনের পুনরুজ্জীবনকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কারণ তিনি এমন এক যুগ সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হন যখন ভিন্নধর্মী দর্শন মুসলিম শিক্ষা ও চিন্তার জগতকে দারুণভাবে বিভ্রান্তির কালো থাবা বিস্তার করে ফেলছিল। শিরক, কুফর ও বিদআত নিত্য নবরূপে সঞ্চারিত হচ্ছিল মুসলিম মননে। অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল। তাওহীদ ও রিসালতের পথ থেকে কেউ কেউ ছিটকে পড়ার উপক্রম হচ্ছিল। আজ বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) এর ৮৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১১৬৬ খ্রিস্টাব্দের আজকের দিনের দিবাগত রাতের শেষ প্রহরে ইন্তিকাল করেন কুতুবে রাব্বানী বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী( রঃ) বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন।দরবেশকুল শিরোমনি বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী( রঃ) এর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


আব্দুল কাদের জিলানী হিজরি ৪৭১ সনের ১ রমজান মোতাবেক ১০৭৮ সালের ১০ মার্চ তারিখে বাগদাদ নগরের জিলান শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবু সালেহ মুছা জঙ্গী এবং মাতার নাম সাইয়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা। আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) এর পিতা সাইয়্যেদ আবু সালেহ মুসা (রঃ) একজন বিশেষ পুন্যবান,কামেল ও বোযর্গ ব্যক্তি ছিলেন এবং তার মাতা ছিলেন ইমাম হাসান-এর বংশধর সৈয়দ আব্দুল্লাহ সাওমেয়ীর কন্যা। হযরত আব্দুল কাদির জিলানী(রঃ) এর বাল্য শিক্ষার হাতে খড়ি হয়েছিল জ্ঞানবান পিতা ও গুনবতী মাতার মাধ্যমে। তিনি স্বীয় পিতা -মাতার মাধ্যমেই প্রথমিক স্তরের শিক্ষনীয় বিষয়গুলি গৃহে বসেই সমাপ্ত করেছিলেন।সর্বপ্রথমেই তিনি পবিত্রকোরান পাঠ করা শিক্ষা করেন ও সম্পুর্ন কোরান হেফজ করেন। গৃহশিক্ষার বাইরেও তিনি জিলান নগরের স্হানীয় মক্তবেও বিদ্যা শিক্ষা করেছিলেন। হযরত আব্দুল কাদির জিলানী(রঃ) এর বয়স যখন মাত্র ৫ বৎসর তখনই তিনি পিতৃহীন হন। তার লালন-পালন ও পড়াশোনার দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের উপর। মা চরকায় সুতা কেটে জিবীকা এবং তাঁর লেখাপড়ার ব্যায় নির্বাহ করেন। তাঁর মাতা ছেলেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য বাগদাদ পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আব্দুল কাদের জিলানী ৪৮৮ হিজরীতে যখন প্রথম বাগদাদ গমন করেন তখন তার বয়স হয়েছিল আঠার বৎসর। বাগদাদ এসে তিনি শায়েখ আবু সাইদ ইবনে মোবারক মাখযুমী হাম্বলী, আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকীল এবং আবু মোহাম্ম ইবনে হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ (রঃ) এর নিকট ইলমে ফিখ, শায়েখ আবু গালিবমুহাম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানী, শায়েখ আবু সাইদ ইবনে আব্দুল করীম ও শায়েখ আবুল গানায়েম মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ (রঃ) প্রমুখের নিকট এলমে হাদীস এবং শায়েখ আবু যাকারিয়া তাবরেয়ী র: নিকট সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ লাভ করেন। শায়খ জীলানীর বাহ্যিক ও আধ্যাত্নিক জ্ঞান চর্চার গূরু শায়খ আবু সাঈদ মাখযুমীর মনে তরুন এ শিষ্যের যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে এতই সু-ধারনা ও আস্হাশীলতার সৃষ্টি করল যে, নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা তত্তাবধান ও পরিচালনার দায়িত্ব শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) এর নিকট অর্পন করে তিনি নিজে অবসর গ্রহন করেন। শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) এ মাদ্রাসার উন্নতি ও উৎকর্ষের কাজে আত্ননিয়োগ করেন। হাদীস ,তাফসির,ফিকহ ও অন্যান্য জ্ঙান বিজ্ঞানের শিক্ষাদান নিজেই শুরু করেন।পাশাপাশি ওয়াজ নসিহত ও তাবলিগের কর্মসুচীও চালু করেন ।অল্পদিনের মধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম চারিদিকে ছরিয়ে পড়লো এবং দেশ বিদেশের বিদ্যার্থীরা এতএ ছুটে আসতে লাগলো। এ পর্যায়ে মাদরাসার নামকরনও শায়খের সাথেই সম্পৃক্ত হয়ে ‘মাদরাসায়ে কাদেরিয়া” হয়ে গেল।


গাউসুল আযম রহমাতুল্লাহি আলায়হি আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য, কামালাতের উচ্চ মাকামে উন্নীত হবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন, এমন কি জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে মুরাকাবা-মুশাহাদারত হন। তিনি এই সময় খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়ে দেন, এমনকি গাছের পাতা খেয়ে ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করেন। জানা যায়, অনেক বছর তিনি বাগদাদ শরীফের বাইরে একটা টিলার উপর একটা জীর্ণ কুটিরে অবস্থান করে ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেন। শিক্ষা-দীক্ষায় পূর্ণতা অর্জনের পর তিনি নিজেকে পবিত্র ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত করেন। তিনি অতি দক্ষ বাগ্মী ছিলেন। বিভিন্ন মাহফিলে তিনি ইসলামের সুমহান আদর্শ যুক্তিপূর্ণ ভাষায় বর্ণনা করতেন। তাঁর ওয়ায শোনার জন্য সর্বস্তরের মানুষ দলে দলে তার মাহফিলে এসে সমবেত হতো। তার মহফিলে শুধু মুসলমান নয়, অনেক অমুসলিমও অংশগ্রহণ করতো। লোকজন তাঁর মধুর বাণী এবং সুমিষ্ট ওয়ায ঘন্টর পর ঘন্টা মোহিত হয়ে শুনত। তাঁর ওয়াযে এমন এক মোহনীয় শক্তি ছিল যা শুনে সবাই লাভবান হতো। তার বক্তব্য শুনে অনেক অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। তিনি ওয়াজ নসিহতের পাশাপাশি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। গাউসুল আযম এবং কাদিরীয়া তরিকার ওপর বাংলা ভাষায় বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় গাউসুল আযমের কয়েকখানি গ্রন্থের তরজমা বের হয়েছে। গাউসুল আযম রহমাতুল্লাহি আলায়হির গ্রন্থরাজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ফতহুল গায়েব, ফতহুর রাব্বানী, সিররুল আসরার, গুনিয়াতুত্ তালেবীন, কাসিদায়ে গাউসিয়া প্রভৃতি।


(বাগদাদ শহরে বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) এর মাজার)
৫৬১ হিজরি মুতাবেক ১১৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতের শেষ প্রহরে ইন্তিকাল করেন কুতুবে রাব্বানী বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী( রঃ) বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। মৃত্যুর পরে তাকে বাগদাদে দাফন করা হয়। বাগদাদ সূফী জগতের বিলায়তের রাজধানী। তাই বাগদাদ গাউসুল আজম (রঃ) এর কারণে আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল। বড়পীর সাহেবের এই ওফাতের দিন সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকেন এবং তার মৃত্যুবার্ষিকী ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম হিসেবে পরিচিত। ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মনেতা, ধর্ম প্রচারক, তাপসকুল শিরোমণি হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর ৮৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দিনটি মুসলিম বিশ্ব অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে থাকে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে দিনটি বেশ তাৎপর্যবহ। দরবেশকুল শিরোমনি বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী( রঃ) এর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×