somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাউস কোপের্নিকাসের ৫৪৭তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নিকোলাউস কোপের্নিকুস বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি একাধারে গনিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিদ, আধুনিক পণ্ডিতবিদ, অনুবাদক, গভর্নর কূটনীতিক এবং অর্থনীতিবিদ ছিলেন। তিনিই প্রথম আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ প্রদান করেন। তার নাম অনুসারে প্রবর্তিত ‘কোপার্নিকাস রেভ্যুলেশন’ খুবই বিখ্যাত একটি টার্ম। যা যুগান্তকারী কোনো আবিষ্কার বুঝাতে অন্যান্য শাস্ত্রেও ব্যবহৃত হয়। ১৫১৭ সালে তিনি অর্থের একটি পরিমাণ তত্ত্ব বের করেন যাকে অর্থনীতির প্রধান ধারণা বলা যায়। তার মৃত্যুর কিছুদিন কোপারনিকাস তার (দি রেভলিউসনিবাস অরবিয়াম কোয়েলেস্তিয়াম) বইটি প্রকাশ করা হয়। এই বইটি বিজ্ঞানের ইতিহাসের বড় একটি ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও কোপারনিকান বিপ্লবের সৃষ্টি এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সাধারণ মানুষদের মাঝে। পড়াশোনা শেষে বাল্টিক সাগরের ধারে এক গীর্জায় যাজকের পদ লাভ করেন। পরে যাজকের কাজ ছেড়ে এক সময় তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং তরুণ শহরের ম্যাজিস্ট্রেট হন। এছাড়াও ১৫১৯ সালে তিনি অর্থনীতির একটি সূত্র প্রদান করেন যা পরবর্তীতে গ্রিসমের সূত্র নামে পরিচিত। আজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাউস কোপের্নিকাসের ৫৪৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৪৭৩ সালের আজকের দি্নে তিনি পোল্যান্ড সম্রাজ্যের রয়েল প্রুসিয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাউস কোপের্নিকাসের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।


নিকোলাস কোপার্নিকাস ১৪৭৩ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারী পোল্যান্ড সম্রাজ্যের রয়েল প্রুসিয়া প্রদেশের থর্ন (আধুনিক তোরন) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কারাকোর একজন বণিক ছিলেন এবং তার মা ছিলেন তোরনের একজন ধনী বণিকের কন্যা। ‘কোপের্নিকুস’ তার নিজের দেওয়া লাতিন নাম। তার প্রকৃত পোলীয় নাম ছিল মিকলাই কপের্নিক। তার বাবা তামা ব্যবসায়ী ছিলেন বলে পরিবারের নাম ছিল কপের্নিক বা ‘তামাওয়ালা’। চার ভাইবোনের মাঝে কোপার্নিকাস ছিলেন সবার ছোট। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র ও আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। গ্রিক ভাষাও জানতেন। তাই গ্রিক ভাষায় লেখা ধ্রুপদী জ্যোতির্বিদ্যার বই মূল ভাষাতেই পড়ার সুযোগ পান। পড়াশোনা শেষে বাল্টিক সাগরের ধারে এক গীর্জায় যাজকের পদ লাভ করেন। গীর্জাটি ছিল একটি পাহাড়ের উপর। এর কাছাকাছি একটি গম্বুজ থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। তিনি লক্ষ্য করেন সূর্যকে কেন্দ্রে রেখে গ্রহগুলোর গতিপথ সহজে ব্যাখ্যা করা যায়। পৃথিবীকে গায়ের জোরে কেন্দ্রে বসালেই অযথা জটিলতা তৈরি হয়। তৎকালীন পাদ্রীরা মানতেন পৃথিবীই সব কিছুর কেন্দ্র। অর্থাৎ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তন করছে সূর্য ও অন্যান্য গ্রহগুলো। দীর্ঘদিনের এই বিশ্বাস ততদিনে গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছিল সাধারণ মানুষদের মাঝে। পরে যাজকের কাজ ছেড়ে এক সময় তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং তরুণ শহরের ম্যাজিস্ট্রেট হন।কোপার্নিকাস তার পর্যবেক্ষণ নিয়ে লিখলেন বিখ্যাত বই ‘ডে রেভ্যুলেশনিবাস অরবিয়ম কোলেসটিয়ম’ বা ‘অন দ্য রেভ্যুলেশনস অব দ্য হেভেনলি স্ফিয়ারস’ বা ‘নভোবস্তুসমূহের পরিভ্রমণ সম্পর্ক’। বইটি লেখা শেষ করেন ১৫৩০ সালে। কিন্তু প্রকাশিত হয় ১৫৪৩ সালে- সে বছর তিনি মারা যান। বইটি প্রকাশের সাহস করতে পারেননি প্রথমে। পরে প্রকাশের পরপরই পাদ্রীদের রোষানলে পড়ে বইটি নিষিদ্ধ হয়ে যায় ২০০ বছরের জন্য। তবে তার ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক ছিল না। গ্রহগুলোর গতিপথ নিয়ে তার চিন্তা ভুল ছিল। কিন্তু তিনিই প্রথম সৌরজগতের গঠন সম্পর্কে ঠিক ধারণার খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন। তার দেখানো পথ ধরে আসেন টাইকো ব্রাহে, জোহান কেপলার, গ্যালিলিও গ্যালিলি, জিওর্দানো ব্রুনোর মতো বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারা কোপার্নিকাসের তত্ত্বের ত্রুটি শুধরে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।


তাঁর অতিবিখ্যাত এবং একমাত্র বই De revolutionibus orbium coelestium এ একটি বিকল্প মডেল প্রস্তাব করেন, অনেকটা আরিস্তার্কোসের মতোই । সূর্য সবার কেন্দ্রে, তাকে কেন্দ্র করে সবাই সুষম বৃত্তীয় বেগে ঘুরছে, অন্য তারাগুলো বহু দূরে । সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে বস্তুগুলোর ক্রম হচ্ছে: বুধ, শুক্র, পৃথিবী-চাঁদ, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, তারাগোলক ।কোপার্নিকাসের প্রধান কাজ হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্ব যা তার বই “দি রিভিউলশনিবাস ওরিবিয়াম কোলেস্টিয়াম” তার মৃত্যুর আগে ১৫৪৩ সালে প্রকাশ করেন। যদিও তিনি ১৫১০ সালে গাণিতিকভাবে তত্ত্বটি তৈরী করেন।
কোপার্নিকাসের “দি রিভ্লিউশনিবাস” বইটি ৬ টি ভাগে বিভক্ত ছিলো-
- প্রথম পর্ব- এতে ছিলো হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্ব ও মহাবিশ্বের সারমর্ম
- দ্বিতীয় পর্ব- জ্যোতির্বিদ্যা নীতি এবং তারার তালিকা প্রকাশ করা হয়
- তৃতীয় পর্ব- এটাতে বিষুবরেখা এবং সূর্যের গতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে
- চতুর্থ পর্ব- এখানে চাঁদ ও উপগ্রহের বর্ণনা দেয়া হয়েছে
- পঞ্চম পর্ব- কীভাবে তারার অবস্থান এবং অন্যান্য ৫ টি গ্রহের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
- ষষ্ঠ পর্ব- এখানে গ্রহের অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।


ব্যক্তিগতজীবনে কোপার্নিকাস কোন বিয়ে করেননি এবং তার কোন সন্তান ছিলো না। তবে ১৫৩১ থেকে ১৫৩৯ সাল পর্যন্ত তার আনা সিলিং নামে এক গৃহকর্মীর সাথে সম্পর্ক ছিলো। তার বড় ভাই এন্দ্রু ফ্রনবার্গের একজন অগাস্টিয়ান কেনন ছিলেন। তার বড় বোনের নাম ছিলো বারবারা, তার মায়ের নামের সাথে মিলিয়ে। তার বোন ছিলো একজন মঠবাসিনী বা সন্নাসী। তিনি ১৫১৭ সালে মারা যান। কোপার্নিকাসের আরেক বোন ক্যাথরিন যিনি কিনা তোরনের ব্যবসায়ী এবং শহরের কাউন্সিলর বার্থেল গার্টনারকে বিয়ে করেন। তাদের পাঁচ জন সন্তান ছিল। কোপার্নিকাস মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার বোনের সন্তানদের দেখাশোনা করেছেন। ১৫৪২ সালের শেষের দিকে কোপার্নিকাস হঠাত প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হন এবং ২৪ শে মে, ১৫৪৩ সালে ৭০ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যু কিছুদিন আগে তিনি তার বইয়ের সর্বশেষ সংস্করন প্রকাশ করেন এবং তার সকল কাজের বিদায়ী শুভেচ্ছা দেয়া হয়। ধারণা করা হয়- তিনি কোমাতে হঠাত হৃদযন্ত্রের ব্যাথা অনুভবে জেগে উঠেন এবং তার বইটি দেখেন এরপর শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন। তার সমাধি অনেক দিন ধরে রহস্যাবৃত ছিল। ২০০৮ সালে তার কবর আবিষ্কৃত হয় ফ্রমবর্কের ক্যাথেড্রালে। ডিএনএ মিলিয়ে সনাক্ত করে দেহাবশেষ পোল্যান্ডের ওলস্টিন শহরের কাছে রাখা হয়। তারপর কফিনটি তার স্মৃতিবিজড়িত শহরগুলোতে ঘোরানো হয়। মৃত্যুর প্রায় ৫০০ বছর পর কোপার্নিকাসকে বীরের মর্যাদায় আবারও সমাধিস্থ করে পোলিশ ক্যাথলিক চার্চ। আজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাউস কোপের্নিকাসের ৫৪৭তম জন্মবার্ষিকী। বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাউস কোপের্নিকাসের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৬
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×