শুরুতেই জানি ধর্ম কী। ধর্ম হল লিপিবদ্ধ সুবিন্যস্ত প্রত্যাদেশসমূহ, যেগুলো সাধারণত ঈশ্বর-প্রত্যাদিষ্টদের মাধ্যমে বাহিত ও প্রচারিত।ধর্ম বলতে ঈশ্বরাজ্ঞা ও ধর্মানুষ্ঠান-নির্ভর আচার, আচরণ ও প্রথাসমূহের প্রতি বিশ্বাস-নির্ভর আনুগত্য; যা সাধারনত "আধ্যাত্মিক" ব্যাপারে "দৃঢ় বিশ্বাস" এঁর সাথে সম্পর্ক যুক্ত; এবং বিশেষ পূর্বপুরুষ হতে প্রাপ্ত ঐতিহ্য, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা, রীতি-নীতি ও প্রথা কে মানা এবং সে অনুসারে মানবজীবন পরিচালনাকে বোঝায়। মানবসভ্যতার সূচনালগ্নে সাম্য-মৈত্রী ও জীবননির্দেশনা নিয়ে পৃথিবীতে ধর্মের আগমন ঘটে। আল্লাহ প্রদত্ত বা আসমানি ধর্ম ছাড়াও পৃথিবীতে মানবরচিত অনেক ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে। তবে কালের বিবর্তনে টিকে আছে খুব অল্পসংখ্যক ধর্মই। ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে বর্তমানে চার হাজার ৩০০ ধর্মের অস্তিত্ব রয়েছে; যদিও সব ধর্মের অনুসারী ও বিস্তৃতি সমান নয়। ইসলাম ধর্মএকটি একেশ্বরবাদী এবং ইব্রাহিমীয় ধর্মবিশ্বাস যার মূল শিক্ষা হল, এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) হলেন আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। প্রধান ধর্মঅনুসারীর সংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর প্রধান ১০টি ধর্ম হলো ১। খ্রীষ্ট ধর্ম, ২। ইসলাম ধর্ম, ৩। হিন্দু ধর্ম, ৪। বৌদ্ধ ধর্ম, ৫। হান ধর্ম, ৬। শিখ ধর্ম, ৭। ইহুদি ধর্ম, ৮। বাহাধর্ম, ৯। জৈন ধর্ম এবং ১০। শিন্তো ধর্ম। আজ প্রধান ৫ চি ধর্ম নিয়ে প্রকাশিত হলো ১ম পর্ব।
১। খ্রীস্ট ধর্মঃ
যিশু খ্রিস্টের জীবন ও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়েছে খ্রিস্ট ধর্ম। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে, যিশুখ্রিস্ট ঈশ্বরের পুত্র এবং তিনি মানবজাতির ত্রাণকর্তা। পৃথিবীর বৃহত্তম এই ধর্মের অনুসারীসংখ্যা পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২৪০ কোটি। বাইবেল তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বাইবেলের দুটি সংস্করণ রয়েছে—ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট। খ্রিস্টানদের উপাসনালয়কে চার্চ বা গির্জা বলা হয়।
২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে একটা সমতা বজায় থাকবে। খ্রিস্টানদের সংখ্যা বাড়লেও মুসলমানদের হারে বাড়বে না। মুসলমানদের সংখ্যা হবে ২৮০ কোটি যা মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ এবং খ্রিস্টানদের সংখ্যা ২৯০ কোটি (মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ) গিয়ে দাঁড়াবে। যদি এই ধারা চলতে থাকে তাহলে ২০৭০ সালের পর বিশ্বে ইসলামই বেশি জনপ্রিয় ধর্ম হবে।
২০৫০ সালে ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ হবে মুসলিম যা ২০০৯ সালে ছিল ৫ দশমিক শতাংশ। অর্থাৎ ২০৫০ সালে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জনের বেশি হয় মুসলমান কিংবা খ্রিস্টান হবে। একই সময়ে ইউরোপে হিন্দুদের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। বতর্মানে সেখানে হিন্দুদের সংখ্যা ১৪০ কোটি। অভিবাসনের ফলেই এটা ঘটবে। ২০১০ সালে বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ১৬০ কোটি যখন খ্রিস্টানদের সংখ্যা ছিল ২১৭ কোটি। গবেষণায় বলা হয়, সামনের দিনগুলোতে একদিকে বাড়বে যেমন ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা, ঠিক তেমিন বিপুল পরিমাণ মানুষ ধর্ম বিশ্বাস, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মান্তরিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রে নাস্তিক সহ ধর্মহীনদের সংখ্যা ১৬ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে উন্নীত হবে। তবে বিশ্বব্যাপী নাস্তিক সহ কোনো ধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, এমন মানুষের সংখ্যার হার হ্রাস পাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিস্টানদের জনসংখ্যা ৭৮% থেকে হ্রাস পেয়ে ৬৬% হবে। ইসলাম হবে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম, ইহুদী ধর্ম নেমে যাবে তৃতীয় স্থানে। সাব-সাহারা অঞ্চলের আফ্রিকান দেশগুলোতে বিশ্বের মোট খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ৪০% বসবাস করবে। ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি খ্রিস্টান বসবাস করবে নাইজেরিয়ায়।
২। ইসলাম ধর্মঃ
আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত রাসুল—এটি ইসলাম ধর্মের মূল বিশ্বাস। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলামের অনুসারীদের মুসলিম বলা হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে ১৮০ কোটি মুসলিম রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে পৃথিবীর দ্রুত প্রসারমাণ ধর্ম ইসলাম। সাম্প্রতিক অনেক গবেষণায় বলা হচ্ছে, খ্রিস্ট অধ্যুষিত ইউরোপ অর্ধশতাব্দীকাল পর মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে পরিণত হতে পারে। পৃথিবীর ৫০টি দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। কোরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি—ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। মুসলমানের উপাসনালয়ের নাম মসজিদ। মক্কা-মদিনা মুসলিমদের পবিত্র তীর্থ। মুসলমানরা বিশ্বাস করে, ইসলাম আল্লাহর মনোনীত চূড়ান্ত ধর্ম, কোরআন সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ এবং মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী।
যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টার (পিআরসি) বলেছে, বিশ্বে ইসলাম সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্ম হয়ে উঠছে। ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ধর্ম। ১৯৯টি দেশের মধ্যে ২০১৫ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’- এর ধর্মীয় রূপরেখা বিষয়ক এক গবেষনায় এ কথা বলা হয়েছে। এর আগে পিআরসি-র গবেষণায় ইসলামকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভকারী ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। খবর সিএনএন ও নিউজউইক।
পিআরসি-র গবেষণায় বলা হয়, আগামী ২০৭০ সালের পর বিশ্বে ইসলাম হবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্ম। এর আগে বিশ্বে ২০৫০ সাল নাগাদ মুসলিম জনসংখ্যা হবে খ্রিস্টানদের প্রায় সমান। ইসলাম হবে এ দুনিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্মবিশ্বাস। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা এক হিসাবে (প্রজেকশান) এমনটিই দেখা গেছে। উল্লেখ্য, পিআরসি-র ধর্মীয় রূপরেখা বিষয়ক এক সমীক্ষায় এ কথা বলা হয়েছে। সারা বিশ্বের জন্মহার, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা এবং ধর্মান্তরের পরিসংখ্যানের তথ্যের ভিত্তিতে এ সমীক্ষা করা হয়। বেইজিংয়ের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত ‘চীনা ধর্ম জরিপ’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, ৩০ বছরের নীচের তরুণদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। এর আগে ২০১০ সালে পিউ রিসার্চ জানায় যে ‘নাস্তিক’ চীনে ২ কোটি ৩৩ লাখ মুসলমান বাস করেন, যা মোট জনসংখ্যার ১.৮ শতাংশ। পিউ রিসার্চের গবেষণায় বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩ কোটিতে উন্নীত হবে। জরিপে বলা হয়, চীনে মুসলমানদের জন্মহার সবচেয়ে বেশি, গড়ে ১.৭। দেশটির গড় উর্বরতার হার ১.৪।
৩। হিন্দু ধর্মঃ
পৃথিবীর তৃতীয় বৃহৎ ধর্ম হিন্দু বা সনাতন ধর্ম। ১২০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসরণ করে। তাদের প্রায় সবাই ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করে। হাজার বছরের প্রাচীন এই ধর্মের সংগঠিত ও সমন্বিত যাত্রা শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ বছর আগে। বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, গীতা হলো এই ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। মন্দির হিন্দু ধর্মের উপাসনালয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান অংশ বহু-ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করে। প্রচলিত আছে, হিন্দু ধর্মে দেব-দেবীর সংখ্যা ৩৩ কোটি। হিন্দুদের প্রধান তিনজন দেবতা হলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব। গবেষণায় জানানো হয়, বিশ্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ৩৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। এর ফলে জনসংখ্যা ১ বিলিয়ন থেকে ২০৫০ সালে ১ দশমিক ৪ বিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বের জনসংখ্যার আধিক্যের দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এছাড়া কোনো ধর্মের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন মানুষের সংখ্যা হবে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে এরা জনসংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আগামী ৪ দশকে বিশ্বে মুসলিমদের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়তে থাকলেও বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় জনসংখ্যা হবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। ২০১০ সালে বিশ্বে খ্রিস্টান জনসংখ্যা ছিল ২.১৭ বিলিয়ন, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১.৬ বিলিয়ন। সেখানে ২০৫০ সালে বিশ্বে খ্রিস্টান জনসংখ্যা হবে ২.৯ বিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ। মুসলিম জনসংখ্যা হবে ২.৮ বিলিয়ন যা মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ। আর বৌদ্ধদের সংখ্যা বাড়বে শুধুমাত্র চীন, জাপান ও থাইল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশে।
মেসিডোনিয়া, নাইজেরিয়া সহ প্রায় ৫১ টি দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ৫০% এরও বেশী হবে। মেসিডোনিয়া আর বসনিয়া খ্রিস্টান প্রধান থেকে মুসলিম প্রধান দেশে পরিণত হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত ইন্দোনেশিয়াকেও ছাড়িয়ে যাবে। মুসলিম জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারত ইন্দোনেশিয়াকে ছাড়িয়ে গেলেও দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে। এতে বলা হয়, প্রায় প্রতিটি ধর্মের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা। এরপরেই রয়েছে খ্রিস্টান ও হিন্দু জনসংখ্যা।
৪। বৌদ্ধ ধর্মঃ
বৌদ্ধ ধর্ম গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন। পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ ধর্ম বৌদ্ধ। আনুমানিক ৫১ কোটি মানুষ এই ধর্মে বিশ্বাস করে। ভারতবর্ষের একজন সাধক পুরুষ গৌতম বুদ্ধ এই ধর্মের প্রবর্তক। তাঁর প্রচারিত বিশ্বাস ও জীবনদর্শনই বৌদ্ধ ধর্মের ভিত্তি। এই ধর্মের উপাসনালয় মঠ নামে পরিচিত আর প্রধান ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস চীনে। তা ছাড়া থাইল্যান্ড, জাপান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। পিউ রিসার্চের গবেষণায় বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩ কোটিতে উন্নীত হবে। জরিপে বলা হয়, চীনে মুসলমানদের জন্মহার সবচেয়ে বেশি, গড়ে ১.৭। দেশটির গড় উর্বরতার হার ১.৪। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। বুদ্বের পরিনির্বাণের পরে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হয়। বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত। প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ (সংস্কৃত: স্থবিরবাদ)। দ্বিতীয়টি মহাযান নামে পরিচিত। বজ্রযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ও কোরিয়াসহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এই ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বাস করেন চীনে। আক্ষরিক অর্থে "বুদ্ধ" বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত, জ্ঞানী, জাগরিত মানুষকে বোঝায়। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে বোধি বলা হয় (যে অশ্বত্থ গাছের নিচে তপস্যা করতে করতে বুদ্ধদেব বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন তার নাম এখন বোধি বৃক্ষ)। সেই অর্থে যে কোনও মানুষই বোধপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত এবং জাগরিত হতে পারে। সিদ্ধার্থ গৌতম এইকালের এমনই একজন "বুদ্ধ"। আর যে ব্যক্তি এই বোধি জ্ঞান লাভ বা ধারন করেন তাকে বলা হয় বোধিসত্ত্ব। বোধিসত্ত্ব জন্মের সর্বশেষ জন্ম হল বুদ্ধত্ব লাভের জন্য জন্ম। জাতকে, বুদ্ধ বোধিসত্ত্ব হিসেবে ৫৪৮ (মতান্তরে ৫৪৯) বার বিভিন্ন কূলে (বংশে) জন্ম নেবার আগে উল্লেখ আছে। তিনি তার আগের জন্মগুলোতে প্রচুর ভালো বা পুণ্যের কাজ করেছিলেন বিধায় সর্বশেষ জন্মে বুদ্ধ হবার জন্য জন্ম গ্রহণ করেন। বুদ্ধত্ব লাভের ফলে তিনি এই দুঃখময় পৃথিবীতে আর জন্ম নেবেন না, এটাই ছিলো তার শেষ জন্ম। পরবর্তী বুদ্ধ জন্ম না নেওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে তার শাসন চলবে।
৫। হান ধর্মঃ
চিন সাম্রাজ্যের (Qin) (খ্ৰী:পূ: ২২১-২০৭) পর চীনের ইতিহাসের দ্বিতীয় সামন্ততান্ত্রিক সাম্রাজ্য। জনসংখ্যায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ চীনের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সম্প্রদায় হলো হানজু বা হান সম্প্রদায়। তারা চীনা লোকধর্ম বা হান ধর্মে বিশ্বাসী। পঞ্চম বৃহৎ এই ধর্মকে অনেকে হান জাতি-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যের পরিবর্তিত সংস্করণ বলে থাকে। বর্তমানে এই ধর্মের অনুসারী ৪০ কোটির কাছাকাছি।চিন সাম্রাজ্যের পরে হানরা প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করে। এই রাজ্য পরে তিন রাজ্যে (২২০–২৮০ খ্রিঃ) ভেঙ্গে যায়। পূর্ব চীনের সমভুমিতে হানরা রাজত্ব করত। চারশ বছরের এই হান শাসনকাল সময়কে চীনের ইতিহাসে চীনের স্বর্ণযুগ বলা হয়।[৩] ঐসময় থেকে বৰ্তমান চীনের অধিকাংশ লোক নিজেদের হান জাতি বলে পরিচয় দেয় এবং চীনা লিপিকে হান অক্ষর বলে থাকে।[৪] এই সাম্রাজ্যের প্ৰতিষ্ঠাতা ছিলেন বিদ্ৰোহী নেতা লিউ বাং। মৃত্যুর পর তিনি হান সম্ৰাট গাউজু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মাঝখানে কিছু বছর জিন (Xin) সাম্রাজ্যের (৯-২৩ সন) আধিপত্য চলছিল যদিও হান সাম্রাজ্য পুনরায় ক্ষমতা দখল করে নেয়। জিন সাম্রাজ্যের কারণে হান সাম্ৰাজ্যকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে- পূর্বাঞ্চলীয় হান বা আদি হান (২০৬ খ্ৰী:পূ:-৯ সন) এবং পশ্চিমাঞ্চলিয় হান ।
দ্বিতীয় পর্ব পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।
দ্বিতীয় পর্বঃ প্রকাশকাল ১২ মার্চ ২০২০ইং
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৫