somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে যাকাতের বিধান

১৮ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যাকাত হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। যাকাত আরবি শব্দ। আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দটি কয়েকটি অর্থ দেখা যায়। যেমন পূত-পবিত্রতা, পরিশুদ্ধি-পরিচ্ছন্নতা, সূচিন্তা এবং প্রবৃদ্ধি ও ক্রমবৃদ্ধি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার এটি উল্লেখ করা হয়েছে।
যাকাত এর সংজ্ঞা:
যাকাত শব্দের অর্থ শুচিতা ও পবিত্রতা, শুদ্ধি ও বৃদ্ধি।
পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়ত নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ কুরআনে বর্ণিত আট প্রকারের কোন এক প্রকার লোক অথবা প্রত্যেককে দান করে মালিক বানিয়ে দেয়াকে জাকাত বলে।
যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
যাকাত ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে একটি। যাকাত ছাড়া দ্বীন পরিপূর্ণতা লাভ করে না। যারা যাকাত অস্বীকার করে তাদের হত্যা করা হবে। এবং যারা যাকাতের ফরয অস্বীকার করে তাদের কাফের বলে গণ্য করা হবে। এই যাকাত ফরয করা হয় ২য় হিজরীতে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারিমে যাকাতের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য বহু জায়গায় ইরশাদ করেছেনÑ যেমন ‘আর তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় করো এবং রুকু কর রুকুকারীদের সঙ্গে।’ (সূরা বাকারা : ৪৩)
সূরা মায়ারিজের ২৪-২৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন; ‘আর যাদের ধন সম্পদে রয়েছে ভিক্ষুক এবং বঞ্চিতদের জন্য নির্দিষ্ট অধিকার।’
এই পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামায এবং রোজার সম্পর্ক মানুষের দৈহিক পরিশ্রম ও মনের সাথে সম্পৃক্ত, পক্ষান্তরে যাকাত ও হজ্বের সম্পর্ক অর্থের সাথেও রয়েছে। বিশেষভাবে যাকাত ধনী বা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ওপরই ফরয হয়ে থাকে। হাদীস শরীফে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে গ্রহণ করা হবে। আর তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র বা অভাবী তাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।’ (বুখারী ১৪০১)
ইসলাম সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। একজনের হাতে বিপুল অর্থ-সম্পদ জমা হওয়াকে ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলাম চায় ধনী-গরিব সবাই স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করুক। তাই দরিদ্রের প্রতি লক্ষ্য করে জাকাতের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। হাদীসের ভাণ্ডারে সংরক্ষিত হয়েছে যাকাতের বিশেষ গুরুত্ব সংবলিত অনেক হাদীস।
আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল আর নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে।’ (বুখারী, মুসলিম)
জারির ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনার ওপর। (বুখারী, মুসলিম)
আবু সায়ীদ রা. বর্ণনা করেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নসিহত করছিলেন। তিন বার শপথ করে তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, রমযানের রোযা রাখবে, যাকাত প্রদান করবে এবং সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকবে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য অবশ্যই বেহেশতের দরজা খুলে দিয়ে বলবেন, ‘তোমরা নিরাপদে তাতে প্রবেশ কর’।’ (নাসায়ী: ২৩৯৫)


যারা যাকাত আদায় করে না তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির সংবাদ এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তারপরও তারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এই কৃপণতাকে নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে। না, এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ। কৃপণতা করে তারা যাকিছু জমাচ্ছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে। পৃথিবী ও আকাশের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। আর তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তা সবই জানেন। (সূরা আলে ইমরান: ১৮০)
অন্যত্র ইরশাদ করেন- যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুখবর দাও। একদিন আসবে যখন এ সোনা ও রূপাকে জাহান্নামের আগুণে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তারই সাহায্যে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে- এ সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করেছিলে। নাও, এখন তোমাদের জমা করা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা আত তাওবা: ৩৪-৩৫)
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে কোন স্বর্ণ বা রুপার মালিক যদি আপন সম্পদের মালের যাকাত আদায় না করে, তার এ সম্পদকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে কিয়ামতের দিন তা দ্বারা পিঠ, পার্শ্ব এবং কপালে ছ্যাকা দিবেন। আর যখনই তা ঠাণ্ডা হবে সাথে সাথে আগুনে পুণরায় উত্তপ্ত করা হবে। এমন দিনে তাকে শাস্তি দেয়া হবে যে দিনটি হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। আর বান্দার বিচারকার্য শেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে। অত:পর সে দেখতে পাবে তার গন্তব্য হয় জান্নাতের দিকে নয়তো জাহান্নামের দিকে।’ (মুসলিম)
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্পদ দিয়েছেন অথচ সে তার যাকাত আদায় করে না, কিয়ামত দিবসে তার সম্পদকে দুই চোখ বিশিষ্ট বিষাক্ত সাপে পরিণত করা হবে। তারপর সাপটিকে কিয়ামতের দিবসে তার গলায় জড়িয়ে দেয়া হবে। সাপ তার দুই মুখে দংশন করতে করতে বলতে থাকবে, আমি তোমার বিত্ত, আমি তোমার গচ্ছিত সম্পদ।’ (বুখারী)
যাকাত গরিবের প্রতি কোন করুণা নয় বরং তার হক- যা ধনী ব্যক্তিকে অবশ্যই আদায় করতে হবে। এ কারণে আবু বকর রা. বলেছেন, ‘যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর যুগে একটি উটের রশিও জাকাত হিসেবে আদায় করত আর এখন তারা যদি জাকাত দিতে অস্বীকার করে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।’ (বুখারী: ১৩১২) তার এ ভাষণের মর্মার্থই ছিল, মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা যাতে কেউ কাউকে তার অধিকার হতে বঞ্চিত করতে না পারে।
যাকাত ফরজ হওয়ার হিকমত:
যাকাত ফরজ হওয়ার পেছনে অসংখ্য হিকমত রয়েছে। যেমন, সম্পদ উপার্জনের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে অনেক তারতম্য রয়েছে। আর এ তারতম্য কমিয়ে ধনী-গরিবের মাঝে ভারসাম্য আনার জন্য মহান আল্লাহ যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ দেখা যায় কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ছে, অর্থ-কড়ি ও ভোগ-বিলাসে মত্ত আছে এবং প্রাচুর্যের চূড়ান্ত শিখরে অবস্থান করছে আর কিছু লোক দারিদ্র সীমার একেবারে নিচে অবস্থান করছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে। আল্লাহ এ ব্যবধান দূর করার জন্যই তাদের সম্পত্তিতে যাকাত ফরজ করেছেন। যাতে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান কমে যায় এবং ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূর হয়। অন্যথায় দেশে বা সমাজে হিংসা- বিদ্বেষ, ফিতনা-ফাসাদ ও হত্যা-লুণ্ঠন ছড়িয়ে পড়বে। বিঘ্নিত হবে সামাজিক শৃঙ্খলা ও স্থিতি ।
এছাড়া যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো, জাকাত মানুষকে কৃপণতা থেকে বিরত রাখে। মানুষকে পরোপকারী, অন্যের ব্যথায় সমব্যথী, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহমর্মী হতে সাহায্য করে।
অধিকাংশ দেশেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় যাকাত দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সহায়তা করে দারিদ্র দূর করতে।
যাকাত আদায়ের মাধ্যমে মুমলমানদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। ভাবমর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে এবং আত্মমার্যাদা ও সম্মানবোধ বৃদ্ধি পায়।
যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে দূরত্ব কমে আসে। তাদের মাঝে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যরে সেতুবন্ধন রচিত হয়। দূর হয় পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ। কারণ গরিবরা যখন ধনীদের সম্পদ দ্বারা উপকৃত হয় এবং তাদের সহানুভূতি লাভ করে, তখন তাদের সহযোগিতা করে এবং তাদের স্বার্থ ও সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট হয়। যাকাত আদায় করলে আল্লাহ তা‘আলা ধন-সম্পদ এবং ধন-সম্পদের বরকত বাড়িয়ে দেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল ইরশাদ করেন, ‘সদকা করার কারণে কখনো সম্পদ কমে না।’ দান-খয়রাত করলে সম্পদের পরিমাণ কমলেও সম্পদের বরকত কমে না।
যাকাত একটি সমাজ বা দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও গতিশীলতাকে স্বাভাবিক রাখার নিশ্চয়তা বিধান করে। যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থাই বর্তমান অর্থব্যবস্থার সব প্রকার ত্র“টি-বিচ্যুতি ও নানাবিধ সমস্যার যুৎসই সমাধান।
যাকাত নামক এ ইবাদতে মালি বা অর্থনৈতিক ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁর অনুগ্রহ ও রহমতকে ত্বরান্বিত করে। কুরআনে করিমে ইরশাদ হয়েছে, যাকাত আদায় করা আল্লাহর সাহায্য লাভের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। (সূরা আ‘রাফ: ১৫৬)
যাদের ওপর যাকাত ওয়াজিবঃ
যাদের ওপর যাকাত ওয়াজিব তারা তিন প্রকার:
১।নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক।
২। যাদের সম্পদের ওপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। তবে ফসলের ক্ষেত্রে এক বছর অতিবাহিত হওয়া জরুরি নয় বরং ফসলের যাকাতের সম্পর্ক ফসল পাকার সাথে।
৩। ফলের যাকাত ওয়াজিব হয় যখন তা পরিপক্কতা লাভ করে এবং খাওয়ার উপযোগী হয়।
* যাকাত ওই সব লোকের ওপর ওয়াজিব হয় যাদের নিকট সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ (৮৫ গ্রাম) বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৫৯৫ গ্রাম) রৌপ্য অথবা তৎসমান অর্থ প্রয়োজনের অতিরিক্ত এক বছর যাবৎ রিজার্ভ বা জমা আছে।
স্বর্ণ রুপার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়:
বর্তমান বাজার অনুসারে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্যের ব্যবধান অনেক বেশি। তবে দরিদ্র, অসহায় ও মিসকিনদের সুবিধা বিবেচনায় রুপার মূল্যই জাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিৎ। তাই বলা যায় সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য (বর্তমান বাজার অনুসারে ৪০-৪২ হাজার টাকা) প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যমান থাকার অর্থই হল তার ওপর যাকাত ওয়াজিব। তবে এ অবস্থায় যাকাত ওয়াজিব হওয়ার দু’টি শর্ত আছে, একঃ ঋণগ্রস্ত না হতে হবে। দুইঃ অতিরিক্ত সম্পদের মেয়াদ এক বছর পার হতে হবে।
যেসব সম্পত্তিতে যাকাত ওয়াজিব হয়ঃ
প্রথমতঃ জমিনে উৎপাদিত ফসল, ফল ও বীজের ওপর যাকাত ওয়াজিব। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জমিনের ফসল খাও যখন ফসল ফলে, আর ফসল কাটার সময় ফসলের হক্ব আদায় কর। তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আনাম : ১৪১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘বৃষ্টির পানি অথবা সমুদ্রের পানি দ্বারা উৎপাদিত ফসলে দশ ভাগের এক ভাগ আর সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত জমিনের ফসলে বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে।’ তবে হাদিসের ভাষায় ফসলের পরিমাণ পাঁচ ওছাক হতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ গবাদি পশু যেমন- উট, গরু, ছাগল ইত্যাদির ওপর জাকাত ওয়াজিব।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘এবং গৃহপালিত পশু যা তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এর মধ্যে রয়েছে শীত বস্ত্রের উপকরণ এবং মানুষের জন্য উপকার।’ (সূরা নাহাল : ৫-৬)
এসব জীব-জন্তুর যাকাত ওয়াজিব হবে যখন মুক্ত বিচরণকারী এবং নিসাব পরিমাণ হয়। এসবের মধ্যে উটের নিসাব হল কমপক্ষে পাঁচটা আর গরু ত্রিশটি এবং ছাগল চল্লিশটি। কিন্তু মুক্ত বিচরণকারী না হলে যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে যদি ব্যবসার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে।
তৃতীয়তঃ স্বর্ণ, রৌপ্যেও যাকাত ওয়াজিব। স্বর্ণ ও রৌপ্য যে কোন ধরনের হোক না কেন এর যাকাত ওয়াজিব। তবে স্বর্ণের পরিমাণ কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা এবং রৌপ্যের পরিমাণ সাড়ে বায়ান্ন তোলা হতে হবে।
চতুর্থতঃ ব্যবসার মালামালের মধ্যে যাকাত ওয়াজিব। জমি, গবাদি পশু, খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি সবকিছুতেই যাকাত ওয়াজিব যদি ব্যবসার উদ্দেশ্য থাকে। সুতরাং মালিককে বছর শেষে হিসাব করে এসবের যাকাত পরিশোধ করতে হবে।
যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাতসমূহঃ
আল্লাহ তা’আলা কুরআন পাকে যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাতসমূহ উল্লেখ করে দিয়েছেন। কুরআনে জাকাতের অর্থ ব্যয়ের জন্য ৮টি খাত উল্লিখিত হয়েছে।


আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
১। ফকিরঃ ফকির যারা নিজেদের সাধারণ জীবন যাপন করতে পারে না। অনেক দুঃখে-কষ্টে কালাতিপাত করে- তাদেরকে যাকাত দেয়া হবে। হাদীস শরিফে বলা হয়েছেঃ‘তোমাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে যাকাত নেয়া হবে, আর গরিবের মাঝে বিতরণ করা হবে।’
২। মিসকিনঃ সহায়-সম্বলহীন হৃতসর্বস্ব ব্যক্তি যার নিকট নগদ অর্থ বলতে কিছুই নেই- এমন লোকদের যাকাত দেয়া হবে।
৩। কর্মকর্তা-কর্মচারীঃ যাকাতের পয়সা বা সম্পদ উসুল করার কাজে নিয়োজিত কর্মচারী কর্মকর্তাদের বেতন ভাতার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা হবে। চাই এরা ধনী হোক অথবা গরিব। সর্বাবস্থায় এ যাকাতের থেকে তারা তাদের বেতন ভাতা গ্রহণ করতে পারবে।
৪। কৃতদাসকে মুক্তকরার জন্যঃ কৃতদাস বা কৃতদাসীকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।
৫। মুআল্লাফাতে কুলুব: অমুসলিম বা কাফের সম্প্রদায়ের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। যাতে তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের অন্তরে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। একমাত্র এ ধরনের কোন উদ্দেশ্য ছাড়া অমুসলিমদের মধ্যে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
৬। ঋণগ্রস্তঃ ঋণগ্রস্ত কোন ব্যক্তির ওপর তার ঋণের বোঝা কমানো বা ঋণ মুক্ত করার উদ্দেশ্যে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।
৭। ফি সাবিলিল্লাহ খাতঃ ফি সাবিলিল্লাহ বলতে যারা আল্লাহর পথে বিভিন্নভাবে জিহাদরত তাদের সার্বিক সাহায্যার্থে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে।
৮। মুসাফিরদের জন্যঃ কোন মুসাফির ব্যক্তি পথিমধ্যে অর্থাভাবে বিপদগ্রস্থ বা অসহায় হয়ে পড়েছে। বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছার মত কোন সম্বল তার সঙ্গে নেই। এমতাবস্থায় যাকাতের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা বা লোকটির জন্য যাকাতের অর্থ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ বৈধ।
যাকাত আদায় করার দায়িত্বঃ
যাকাত আদায় করার দায়িত্ব সরকার বা রাষ্ট্রের। কিন্তু সমকালীন দুনিয়ায় ইসলামী অনুশাসন না থাকায় কোথাও যাকাত ভিত্তিক অর্থনীতি চালু নেই। যার কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে তো বটেই ব্যক্তি পর্যায়েও যাকাত আদায়ের ব্যাপারে উদাসীনতা দেয়া যায়। কিয়ামতের কঠিন বিপদের দিনে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে হলে যাকাত আদায় করতে হবে অবশ্যই। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত আল্লাহ তা‘আলার কাছে গৃহীত হবে না। প্রতাপশালী বিচারকের সামনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। যেভাবে হোক না কেন যাকাত দিতেই হবে- রাষ্ট্র বা সরকার জাকাত আদায় করতে আসুক বা না আসুক। মসজিদ আছে ইমাম নেই বলে যেমন নামাজ থেকে মাফ পাওয়া যায় না যাকাত উসুলকারী রাষ্ট্র বা লোক নেই বলে যাকাত আদায়ের কঠিন ফরজ থেকেও পলায়নের সুযোগ নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও যাকাত দিতে হবে। অন্যথায় যাকাত অনাদায়ের যে শাস্তি নির্ধারিত আছে তার অবধারিত কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই।


আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে বুঝবার এবং তদনুযায়ী আমল করবার তাওফিক দান করুন। আমীন।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:৪৬
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×