ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনঃ ‘‘রেপ করে দিলে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে!’’গত শনিবার ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তার ‘ভ্যাজাইনিসমাস’ সমস্যা নিয়ে গাইনি বিভাগের নারী চিকিৎসকের কাছে গিয়ে হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ মা-কে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন ওই তরুণী৷ তার অভিযোগ অনুযায়ী, নানা শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার এক পর্যায়ে ওই চিকিৎসক তাকে বলেন, ‘‘এসব মেয়েদের হাজবেন্ড একটু জংলি টাইপের হওয়া উচিত, যাতে তারা একেবারে রেপ করে ফেলে৷ .... একেবারে রেপ করে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷’’ কি অসাধারণ প্রেসক্রিপশন !! ধরনী তুমি দ্বিধা হও !! কথায় আছে, ‘মেয়েরাই মেয়েদের প্রধান শত্রু!’ নারীরা নারীদের কতটা সম্মান দেন ? মা-নারী, বউ নারীকে মেয়ে নারী ভাবে না, বউ নারী শাশুড়ি নারীকে মা ভাবতে পারে না, ননদ-নারী ভাবি-নারীকে বোন ভাবতে পারে না বা তার বিপরীত! যেকোনো সংসার জীবন, বিয়েত, অফিস বা বন্ধুমহলে দেখবেন একজন নারীকে নিয়ে এক নারীই খাটাচ্ছেন, রটাচ্ছেন বা কাঁদাচ্ছেন! মা–বোন–মেয়ে—সবাইকে বলি, র্যালি করে, নারী দিবসে চিৎকার করে কিচ্ছু হবে না। আগে নারীরা নারীকে সম্মান দাও। তার পরে পুরুষদের কাছ থেকে সম্মান আদায়ের আন্দোলনে নামো। সে আন্দোলনে পুরুষরাও সামিল হবে।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী তার এক ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানিয়ে ওই চিকিৎসককে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন৷তবে ওই ছাত্রীর বাবা বলেন,‘‘আমি মনে করি, শব্দ বা ভাষা ব্যবহারে চিকিৎসক ভুল করেছেন৷আমার মেয়ে ওই ধরনের ভাষায় অপ্রস্তুত হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে৷’’তবে চিকিৎসকদের ভাষার ব্যবহার এবং আচরণে আরো সংযমী এবং সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন৷বাংলাদেশের মেয়ের বাবারা কতশঙ্কা ও উদ্বেগ নিয়ে মেয়েদের লালন পালন করেন তার একটা চিত্র ফুটে উঠেছে তার বক্তব্যে। তিনি চাননা এ নিয়ে আর পানি ঘোলা করতে। তার নতজানু মনোভাব তার অসহায়ত্বের কথা জানান দিয়েছে। কারন নারী যদি যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন, তাহলে নারীর চরিত্রই নষ্ট হয়, পুরুষের হয় না৷ কারন কাঠামোটাই পুরুষতান্ত্রিক। তাই অনেক নারীই সামাজিক কারণে তার যৌন হয়রানির কথাপ্রকাশ করতে চান না বা গোপন রাখেন৷ এর ফলে তাদের প্রতিকার পাওয়া হয়না। সম্ভবত স্কয়ার হাসপাতালের ওই নারী চিকিৎসক ছাত্রীটিকে যৌন হয়রানি করেছেন তিনি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে হর-হামেশা ঘটলেও তার কোনো প্রতিকার দেখা যায় না৷’’ ‘‘এই সমাজ এখনো নারীদের সম্মান করতে শেখেনি৷ নারীদের তারা ভোগের বস্তুই মনে করে৷ ফলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না৷ সবাই নারীকে নিয়ে ব্যবসা করতে চায়৷’’ উপরন্ত নারী যদি নারীর হয়রানির শিকার হন তখন প্রতিবাদের ভাষা স্থবির হয়ে পড়ে। তাই স্কয়ার হাসপাতালের ওই নারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা একটি গুরুতর অপরাধ। কিন্তু আমাদের দেশে নারী উত্ত্যক্তকারীদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় না, পুরুষদের করা হয়। সুতরাং নারীরা এটা বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরা অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তা, আচরণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা তাঁরা করছেন কারণ তাঁরা নারী। তবে স্কয়ার হাসপাতালের ওই নারী চিকিৎসক ছাত্রীটিকে যৌন হয়রানি করেছেন তা চিকিৎসা ব্যবস্থার সাধারণ প্রক্রিয়া বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:১৬