somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর ইতিহাসের পনেরজন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার

২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বঃ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নারী!!
সিরিয়াল কিলিং বা সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। ঠান্ডা মাথায়, পরিকল্পনা করে কোন ব্যক্তিকে খুন করা আমরা গল্প-উপন্যাসে হরহামেশাই পড়ি। খুন কোনো কোনো মানুষের নেশা হতে পারে তা কি ভাবতে পারা যায় ! সিরিয়াল খুনিদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে মনোবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে অপরাধবিজ্ঞানীদেরও গবেষণার শেষ নেই। সিরিয়াল কিলার বা ধারাবাহিক খুনিদের নিয়ে যুগে যুগে বহু সিনেমা, গল্প, কাহিনীর জন্ম হয়েছে। রহস্যময় সেই সিরিয়াল কিলাররা হয়ত আমাদের আশেপাশেই লুকিয়ে আছেন আপনার মত সাধারন চেহারা নিয়েই! আজ এমন কয়েকজন সিরিয়াল কিলারদের তথ্য জানবো যারা ছিল ঠান্ডা মাথার খুুনি যাদের নৃশংসতার কথা শুনলে ভয় আতঙ্ক ও শিহরণ জাগবে মনে। চলুন জানা যাক দেশ বিদেশের পনের জন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারের কথাঃ


১। মিখাইল পপকভঃ
স্কুলপড়ুয়া মেয়ের দুই বান্ধবীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নারীকে ধর্ষণ ও হত্যাকারী ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার রাশিয়ার মিখাইল পপকভ। পেশায় একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন তিনি। বর্তমানে সিরিয়াল কিলিং-এর অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি ভোগ করছেন। ভয়ানক এই মানুষরুপি পাষণ্ড ব্যক্তি এতটাই নির্মম ছিলেন যে, নিজের মেয়ের স্কুলের শিক্ষিকাকে খুন করে তারই শেষকৃত্যের জন্য টাকা দিয়েছিলেন। তার মাত্র কদিন পরেই পালাক্রমে পুলিশের গাড়িতে তুলে ধর্ষণ করে খুন করেন নিজের মেয়ের স্কুলে পড়ুয়া দুই স্কুলছাত্রীকেও। পুলিশের পোশাক পরে নাইটক্লাবের সামনে বেশ নিয়ম করেই অপেক্ষা করত ওয়ারওফ। কোন মেয়ে একা বেরোলেই তাকে সাহায্য করার নামে গাড়িতে তুলে নৃশংস কায়দায় ধর্ষণ শেষে হত্যা করত। মোট কথা যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করেই এই সিরিয়াল কিলার একধরনের পাশবিক আনন্দ পেতেন । তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, অনেককে খুন করার পর তাদের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলেছিল এই ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার। অনেকের দেহ ছিঁড়ে বের করে এনেছিল হৃৎপিণ্ড। প্রত্যেককে খুন করার আগে ও পরে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে মৃতদেহগুলো চরম বিকৃত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যার পর কোন নারীকে ধর্ষণের ভয়াবহ অপরাধও ছিলো । যদিও তার এই অপরাধের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে অনুসন্ধান বলছে সম্ভবত স্ত্রী’র অবৈধ সম্পর্কের জেরেই মাথা বিগড়ে যায় পপকভের। হঠাৎ একদিন মনে হয় যেভাবেই হোক একজন মেয়েকে খুন করতে হবে। সেই শুরু। এরপর থেকে রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশের পোশাকে, পুলিশের গাড়ি নিয়ে নাইটক্লাবের সামনে অপেক্ষা করত পপকভ। কোন মেয়ে একা বেরোলেই তাকে সাহায্য করার নামে গাড়িতে তুলে ধর্ষণ শেষে হত্যা করত। বিচারের আদালতে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ঠিক কতজনকে ধর্ষণ আর খুন করেছেন? কিন্তু তার সুস্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি মিখাইল ওয়ারওফ নামের ভয়ংকর এই ঠান্ডা মাথার খুনি । তবে আদালতের চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ আর তথ্য বলছে ৮২ জন নারীকে ধর্ষণের পর খুন করেছেন পপকভ। তবে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।২০১৫ সালে এই সিরিয়াল কিলারকে যখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয় তখন তার বিরুদ্ধে ২২ জন মহিলাকে খুন করার অভিযোগ ছিল। সাইবেরিয়ান রাশিয়ার এক শান্ত শহর আঙ্গার্রস্কের বিভিন্ন অংশের বাসিন্দা ছিলেন ওইসব নারী।


২। জ্যাক দ্য রিপারঃ
১৮৮৮ সাল। পূর্ব লন্ডনের এক ঘিঞ্জি বস্তির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন যৌনকর্মী ক্যাথরিন এডোওয়ে। হঠাৎ তার তীব্র চিৎকারে ছুটে আসে পাড়া পড়শীরা । তারা ক্যাথরিনের দেহটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন । সেবছরই পূর্ব লন্ডনে আরো চার যৌনকর্মী একইভাবে খুন হতে দেখা যায় । স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড অনেক চেষ্টায়ও খুনির কোন হদিস পায় নি । তবে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, একজন ব্যক্তিই এ খুন গুলোর সাথে জড়িত । পুলিশের পক্ষ হতে তার নাম দেয়া হয় জ্যাক দ্য রিপার । শিকারদের প্রত্যেককেই গলার নলি কেটে ফেলত খুনী। কিন্তু কি কারণে সে এ কাজ করত তা আজও রহস্য। সে সময় এই সিরিয়াল কিলারের ভয়ে পূর্ব লন্ডনের আশেপাশের অঞ্চলের বাসিন্দারা সবসময় আতঙ্কিত ছিল । আজ পর্যন্ত লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এই খুনির কোন নাগাল পায়নি । তবে ১১৯ বছর পর ২০০৭ সালে খুনির ফেলে যাওয়া একটি চাদরে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করে পুলিশ এই কুখ্যাত খুনি কে তা জানতে পেরেছে বলে দাবি করেছে । তাদের অনুমান এই খুনি হল অ্যারন কসমিনস্কি। এই ইহুদি ছিলেন পোলেন্ডের অধিবাসী । পেশায় হেয়ার ড্রেসার । ‘প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়ায়’ আক্রান্ত ছিল বলেই একধরনের বিকৃত মানসিকতায় ভুগত এবং তার কারণেই এই খুনগুলো সে করেছিল বলে পুলিশের পক্ষ হতে বর্তমানে দাবি করা হচ্ছে । রিপারের গল্পের ব্যাপারে আগ্রহী ব্যবসায়ী এডওয়ার্ডস ২০০৭ সালে নিলামের মাধ্যমে রক্তমাখা একটি শাল কেনেন। ওই শালটি রিপারের মাধ্যমে সংঘটিত চতুর্থ খুনের স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। শাল থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তি ও অন্যতম এক সন্দেহভাজন খুনির স্বজনদের সঙ্গে মিলে গেছে বলে দাবি করেছেন এডওয়ার্ডস।


৩। এইচ এইচ হোমসঃ
এইচ এইচ হোমসের আসল নাম হারমান ওয়েবস্টার মাজেট। যেমন তুখোড় তেমন অমায়িক। শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের ডাক্তার এইচ এইচ হোমস। পাড়ার ফার্মেসির ওপর তিনতলা বিশাল এক ভবনে থাকতেন তিনি। নিজ হাতে গড়া ভবনের বাহ্যিক দৃশ্য নয়নজুড়ানো, কিন্তু ভিতরে তার মৃত্যুপুরী। এটি ‘বিস্ট অফ শিকাগো’ নামে পরিচিত এই সিরিয়াল কিলারের অস্ত্র। আটক হওয়ার পর হোমস ২৮ জনকে হত্যা করার কথা শিকার করলেও ধারণা করা হয় তার শিকারের সংখ্যা ২০০ জনেরও বেশি। হোমস মূলত দুইভাবে তার শিকারদের ফাঁদে ফেলতেন। প্রথমত, কলাম্বিয়ান এক্সপোজিশন উপলক্ষে আগত পর্যটকদের কামরা ভাড়া দিয়ে। দ্বিতীয়ত, খবরের কাগজে চাকরি অথবা বিয়ের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নারীদের আকৃষ্ট করতেন। নিখোঁজ নারীদের আত্মীয়-স্বজন কেউ এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সুবক্তা হোমস তাদের খুব সহজেই নানাবিধ অজুহাত দেখিয়ে ধোঁকা দিতে পেরেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল যে, সেই নিখোঁজ হওয়া মানুষদের তখন নৃশংসভাবে দালানের সেলারে হত্যা করা হচ্ছে। তারপর তাদের মৃতদেহ অ্যাসিডে গলিয়ে, তাদের কঙ্কাল বিভিন্ন মেডিকেল স্কুলে বিক্রি করেছেন হোমস। হোমসের হাত থেকে রেহাই পায়নি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বেঞ্জামিন পিটেজেল, রেহাই পায়নি পিটেজেলের নাবালক পাঁচ সন্তানও। ১৮৯৪ সালে ভুয়া বীমা ব্যবসার জন্য হোমস দুইবার আটক হন। এ সময়ে ফিলাডেলফিয়ার গোয়েন্দা ফ্র্যাংক পি গেয়ারের তদন্তে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে হোমসের রোমহর্ষক অপরাধের কথা।


৪।আরনফিন নেসেটঃ
২২টি হত্যাকা-ের পাশাপাশি একাধিক হত্যাচেষ্টা, নথি জালিয়াতি এবং আত্মসাতের অভিযোগে আটক করা হয় নরওয়ের প্রাক্তন নার্স, নার্সিং হোম ম্যানেজার আরনফিন নেসেটকে। অভিযোগ ছিল নেসেট ১৩৮ জনকে হত্যা করেছেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ২২ রোগীকে বিষপ্রয়োগে দোষী সাব্যস্ত হন। ১৯৮১ সালে সিরি-ট্রেন্ডেলাগের অর্কডালের নার্সিং হোমে নেসেট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় তিনি বন্দী হন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আরনফিন নেসেট প্রাথমিকভাবে ২৭ জন রোগী হত্যার কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি পেশি শিথিল করার ওষুধ স্যাক্সামেথোনিয়াম ক্লোরাইড ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছিলেন তাদের। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে স্যাক্সামেথোনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত ২২টি লাশের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় নেসেটকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একে একে তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আসে। তিনি হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন আরও অনেকের ওপর। পরবর্তী সময়ে বিচারের রায়ে কিছু মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন এবং কিছু মামলায় খালাস পান। তবে তাকে ২১ বছরের কারাদ-ে দ-িত করা হয়েছিল কৃত অপরাধের জন্য। নরওয়ের আইনের অধীনে এটি ছিল সর্বাধিক মেয়াদে সাজা। আর তাই এই সময়ে তাকে ১০ বছর প্রতিরোধমূলক আটকে রাখা হয়। পরে তবে ভালো আচরণের জন্য ৬ বছর তদারকির পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি একটি অজ্ঞাত স্থানে বাস করেন বলে জানা যায়। তার বিচারের প্রধান প্রসিকিউটর ওলাফ জ্যাকেলন নেসেটকে একজন উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যিনি জীবন ও মৃত্যুর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন।


৫। হ্যারল্ড ফ্রেডরিক শিপম্যানঃ
পেশায় তিনি চিকিৎসক । দেখতে দাড়ি চশমা মিলিয়ে দার্শনিকের মতো ৷ কিন্তু কে বলবে এ্ লোকাটি ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার । যুদ্ধবিধ্বস্ত এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার মা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যান । জীবনের শেষ দিকে তিনি ব্যথা কমানোর জন্য মরফিন ইঞ্জেকশন নিতেন যা হ্যারল্ড শিপম্যানের জীবনে পুরোপুরি দাগ কেটে যায়। বিষ ইনজেক্ট বা শিকারের দেহে প্রবেশ করিয়ে খুন করা তার নেশা ছিল । ১৯৭০ সালে ডাক্তারি পাস করে হাইড শহরে চেম্বার দিয়ে জাঁকিয়ে বসেন । পেশার আড়ালে একের পর এক রোগীকে খুন করেন । অন্তত ২৫০ জন তার নৃশংসতার শিকার । রোগীদের অধিকাংশই ছিল বয়স্ক । জানা যায়, শিপম্যান এসব রোগীদের শরীরে বেশী মাত্রার ডায়ামর্ফিন প্রবেশ করিয়ে খুন করতেন এবং দলিল জাল করে তাদের অর্থ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেন । পরে মেডিক্যাল রিপোর্ট জাল করে নানা ধরনের অসুখের কারণ দেখিয়ে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট দিতেন । ৫ অক্টোবর, ১৯৯৯ হ্যারল্ড শিপম্যানের বিচার শুরু হয় ৷ পনেরো জনকে হত্যাi দায়ে ২০০০ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ২০০৪ সালের ১৩ জানুয়ারি জেলখানায় তিনি আত্মহত্যা করেন ৷


৬। লিন্ডা হ্যাজার্ডঃ
আমেরিকান সিরিয়াল কিলার ডাক্তার লিন্ডা বারফিল্ড হ্যাজার্ড। উপবাসের প্রচারের জন্য খ্যাতি পেয়েছিলেন। এক সময় মানুষ হত্যার মতো নিকৃষ্ট কাজেও জড়ান। খুনের দায়ে লিন্ডা হ্যাজার্ড ওয়াশিংটনে কারাবরণ করেছিলেন। ১৮৬৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর মিনেসোটার কার্ভার কাউন্টিতে জন্ম নেওয়া লিন্ডা ১৯৩৮ সালের ২৪ জুন অনশন চালানোর সময় মারা যান। ওয়াশিংটনের যে শহরে লিন্ডা বসবার করতেন তার নাম ওলাল্লা। উপবাসের স্পেশালিস্ট লিন্ডার প্রয়োগকৃত মেথড শুধু অভাবনীয় ছিল না, তা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে সবার কাছে। তিনি প্রচার করেন সব রোগের মূল লুকিয়ে থাকে খাবারের মধ্যে। তাই সুস্বাস্থ্যের আশায় অনেকে তার কাছে আসতেন। আর এই সুযোগে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে নিতেন লিন্ডা। নরওয়েজিয়ান অভিবাসী ডেইজি মউড হাগলুন্ড হিজার্ডের তত্ত্বাবধানে ৫০ দিন উপোস করার পরে ১৯০৮ সালে মারা যান। হ্যাজার্ডের কাছে করুণভাবে মৃত্যুবরণ করে আরও দুই বোন ক্লেয়ার এবং ডরোথিয়া উইলিয়ামসন। ১৯১১ সালের ১৫ আগস্ট ক্লেয়ার উইলিয়ামসনের হত্যার অভিযোগে লিন্ডা হ্যাজার্ডকে গ্রেফতার করে কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক হত্যার অভিযোগ জমা পড়ে যায়। বিচারের সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দেন, উপবাসের মধ্য দিয়ে চিকিৎসার সময় ক্লেয়ার ব্যথায় কান্নাকাটি করছিলেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে যন্ত্রণা সহ্য করার পর তিনি মারা যান। উপবাস করতে গিয়ে রোগীরা যখন দুর্বল হয়ে পড়ত তখন তাদের চেক জাল করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন লিন্ডা। তারপর মৃতদেহগুলোকে গোপন স্থানে সরিয়ে নিত। এতে করে অন্যরা সেগুলো দেখতে পেতেন না।


৭। চার্লস এডমন্ড কুলেনঃ
একজন আমেরিকান সিরিয়াল কিলার চার্লস এডমন্ড কুলেন। নিউজার্সির নার্স হিসেবে ১৬ বছরের কর্মজীবনে মোট চল্লিশজন রোগীকে হত্যা করেছেন। পরবর্তীতে পুলিশ, মনোবিজ্ঞানী এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট হয়, কুলেন প্রায় ৪০০ মৃত্যুর জন্য দায়ী যা তাকে ইতিহাসে অধিক সংখ্যক খুনের দায়ী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কুলেনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী প্রথম হত্যা তিনি সেন্ট বার্নাবাসে করেন একজন রোগীকে অতিরিক্ত ডোজ ওষুধ দিয়ে। এ ছাড়াও তিনি সেখানে আরও বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর কারণ ছিলেন। কুলেন নিজেকে মৃত্যুর দেবদূত হিসেবে দাবি করেন। তার মতে, রোগীর কষ্ট কমানো এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই তিনি এ রকম করেছেন। এ ছাড়াও কুলেনের অধিকাংশ ভিকটিমই ছিল বৃদ্ধ বয়সী। তার ভাষ্য মতে, অতিরিক্ত কিছুদিনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই তিনি এ কাজ করেছেন। যাদের খুন করেছেন সবার নাম মনে রাখতে না পারলেও চার্লস তাদের হত্যার বিবরণ মনে রাখতে পারতেন। এমনকি খুনগুলো কোনো অন্যায় হতে পারে- এমন বোধই তার মধ্যে নেই। ১৯৯২ সালের জানুয়ারিতে কুলিন সেন্ট বার্নাবাস ছেড়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেন। একাধিক রোগীর মৃত্যুর অধিকাংশ তথ্যই কুলেনকে ইশারা করে। এক মাস পর ফিলিপ্সবার্গ হসপিটালে যোগ দেয় কুলেন। ২০০২ সাল পর্যন্ত বিতর্ক সত্ত্বেও নার্স সংকটের কারণে তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ পান। কুলেনের বর্ণনা অনুযায়ী তার শৈশব ছিল দুঃখজনক। তার বোনদের বন্ধুরা এবং সহপাঠীদের মাধ্যমে তিনি ক্রমাগত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৯ বছর বয়স থেকে বহুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ১৯৬০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার নিউজার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ২০০৬ সালে আদালত তাকে ১৮টি যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি দেয়।


৮। আন্দ্রেই চিকাতিলোঃ
আন্দ্রেই চিকাতিলো শুধু যে খুনি ছিল তা নয়, সে আসলে নরখাদক ছিল । ইউক্রেনে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি পারবর্তীতে রাশিয়ার নাগরিক হন । ১৯৯৪ সালে ফায়ারিং স্কোয়াডে তাকে গুলি করে মারা হয়। তাকে দ্যা রেড রিপার নামেও ডাকা হতো । ১৯৭৮ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ৫২ জন শিশু ও মহিলাকে খুন করার অপরাধে তাকে অভিযুক্ত করা হয় । সে অত্যন্ত নৃংশস কায়দায় এই হত্যাকান্ডগুলো ঘটাতো । চিকাতিলো তার প্রথম হত্যাকান্ড ঘটায় ১৯৭৮ সালের ২২ ডিসেম্বর । সে ৯ বছর বয়সী একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতে চাইলে মেয়েটি চিৎকার করে উঠে । ঐ অবস্থায় মেয়েটিকে সে ছুরি দিয়ে হত্যা করে । এভাবে সে তার নৃশংস খুনগুলো ঘটাতে থাকে ।


৯। জেফরি ডাহমেরঃ
ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস খুনীদের আরেকজন হলো এই জেফবি ডাহমের । নরখাদক ও বিকৃত যৌনমানসিকতার ভয়াবহ এক সিরিয়াল কিলার‘Milwaukee Cannibal’ নামেও তাকে ডাকা হয় । কমপক্ষে ১৭ জন নৃশংসতার শিকার । সে শিকারকে জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করত এবং তাদের হত্যা করে সেই মাংস খেত । মাত্র ১৮ বছর বয়সে ডাহমের প্রথম হত্যাকান্ড ঘটায় । ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ বছর বয়সী এক বালককে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় । বিচারে তার ৫ বছর সাজা হয় । সন্তোষজনক ব্যবহারের কারণে তার আগেই তাকে মুক্তি দেয়া হয় । মুক্তির পরপরই সে আবার হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে । ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে ডাহমের পুনরায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লে তার সব কুর্কীতি সকলের নিকট উন্মোচিত হতে থাকে । তার রান্নাঘরে পাওয়া গিয়েছিলো ৪টি ছিন্ন মস্তক, ৭টি খুলি পাওয়া যায় তার বেডরুম ও ক্লোজেটে। এছাড়া তদন্তকারী দল তার রেফ্রিজারেটরে একটি ট্রেতে মানুষের রক্ত, দুটো হৃৎপিণ্ড এবং হাতের পেশীর কিছু অংশ পায়। এছাড়া সেখানে হাত-পা-মাথাবিহীন একজনের দেহ, এক ব্যাগ মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও বরফের সাথে আটকে থাকা মানুষের মাংসও খুঁজে পায় তারা। সেই সাথে দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের কঙ্কাল, এক জোড়া কাঁটা হাত, সংরক্ষিত এক জোড়া পুং জননাঙ্গ, মমি বানানো একটি মাথার চামড়া এবং পূর্বে উল্লেখ করা ৫৭ গ্যালনের ড্রামে এসিড দ্রবণে ডুবানো আরো ৩টি হাত-পা-মাথাবিহীন দেহ খুঁজে পাওয়া যায়। ডাহ্‌মারের অ্যাপার্টমেন্টে মোট ৭৪টি ছবি পাওয়া গিয়েছিলো যেখানে ফুটে উঠেছিলো তার শিকারদের দুরবস্থা।১৭টি হত্যাকান্ড সন্দেহাতীত প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ৯৩৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর কারাগারে কর্মরত অবস্থায় আরেক কয়েদীর আঘাতে মৃত্যু ঘটে কুখ্যাত এই হত্যাকারীর ।


১০। নিলস হোগেলঃ
প্রায় ১৫ বছর ধরে খুব গোপনে মানুষ খুনের মতো নিষ্ঠুর কাজটি করে আসছিল নিলস হোগেল। জার্মানির ওল্ডেনবার্গ শহরের একটি হাসপাতালে তিনি স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তার মরণঘাতী এমন খেলার শিকার হয়েছেন ৩০০ এর বেশি জন। শুধু ২০০০-০৫ সালেই হোগেলের শিকার হয়েছেন অন্তত ৩০০ রোগী। হিরো হওয়ার জন্য প্রথমে রোগীদের ভুল ওষুধ খাইয়ে আরও অসুস্থ করতেন। তারপর তাদের সুস্থ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার এই অভিনব চিকিৎসায় মারা পড়তেন রোগীরা। হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই একের পর এক রোগীর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটতে থাকে। কর্তৃপক্ষ এসব মৃত্যুর কোনো কারণ খুঁজে পেত না। তবে প্রতিটি মৃত্যুর ক্ষেত্রেই রোগীর আশপাশে দেখা গেছে হোগেলকে। এদিকে রহস্যজনক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় না পেরে হোগেলকে হাসপাতাল থেকে প্রত্যাহার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনো প্রমাণ না থাকায় হোগেলের রিলিজ লেটারে প্রশংসা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে অন্য একটি হাসপাতালে সহজেই চাকরি জুটিয়ে নেয় হোগেল। নতুন কর্মস্থলে হোগেলের যোগদানের কিছুদিন পর ওই হাসপাতালেও শুরু হয় রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা। প্রায় ১০ বছর চেষ্টা করেও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি জার্মানির গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা। অবশেষে জেরার মুখে হোগেল নিজেই তার অপরাধ স্বীকার করেন। ৪৩টি খুনের কথা নিজেই স্বীকার করেন তিনি। এ ছাড়াও ৫২টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে দায় থাকতেও পারে বলে মনে করেন তিনি। তবে ৫টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার কোনো হাত নেই বলে জানিয়েছে এই কুখ্যাত খুনি। দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অন্তত ৯০টি মৃত্যুর সঙ্গে হোগেলের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। যার প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে হোগেলকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদ- দিয়েছে দেশটির আদালত।


১১। পেড্রো অ্যালানসো লোপেজঃ
“Monster of the Andes” নামে পরিচিত এই কলম্বিয়ান সিরিয়াল কিলার ষাটের দশকে গোটা দক্ষিণ আমেরিকার মানুষদের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। ১৯৪৮ সালে সান্টা ইসাবেলে জন্ম এই ব্যক্তি অন্তত ৩০০ জন কিশোরীকে ধর্ষণ করার পর নৃশংসভাবে খুন করে । তার মধ্যে ১০০ জন ছিল উপজাতীয় নারী। ১৯৮৩ সালে সে ইকয়েডর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং তাকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করে ১৬ বছরের কারা দন্ড দেয়া হয় । ১৯৯৮ সালে সে উন্মাদ হয়ে যায় । বোগতা হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় । কিন্তু তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা এখনও অজানা ।


১২। সন্তোষ পালঃ
ভারতে মহারাষ্ট্রের সিরিয়াল কিলার ডাক্তার সন্তোষ পাল। তিনি মিস্টার ডেথ নামেও পরিচিত। ডাক্তারের মতো মহৎ পেশায় থেকেও ব্যক্তিগত শত্রুতার জন্য একে একে খুন করেছেন পেশাদার খুনির মতো। ২০০৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ছয়জনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছেন তিনি। কিন্তু সবগুলো খুন হয়েছে খুব গোপনভাবে। আর তাই খুনের ঘটনাগুলো সব সময় অধরাই থেকে গেছে। কিন্তু শেষ খুনের বেলায় ডাক্তার ধরা পড়েন পুলিশের জালে। ২০১৬ সালের আগস্টে এক স্বাস্থ্যসেবাকর্মী অপহরণ ও খুনের অভিযোগে ডাক্তার সন্তোষ পালকে গ্রেফতার করা হয়। তখন পর্যন্ত কেউ জানত না এই ডাক্তারের হাতে আগে আরও অনেকেই খুন হয়েছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ৪২ বছর বয়সী ওই ডাক্তার স্বীকার করেন, তিনি কেবল ওই এক নারীকেই খুন করেননি, আরও চার নারী এবং এক পুরুষকে হত্যা করেছেন। ডাক্তার হওয়ার কারণে এই খুনগুলো তার জন্য সহজ হয়। উচ্চমাত্রার বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করে ওই ছয়জনকে হত্যা করেন ‘সিরিয়াল কিলার’ সন্তোষ পাল। আর হত্যার পর ওই ছয়জনের মরদেহ তিনি নিজের খামারবাড়িতে পুঁতে ফেলেন। এই হত্যাকা-গুলো ২০০৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়। এসব হত্যাকা- ঘটানোর কারণ হিসেবে আবিষ্কার হয়েছে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ও দেনা-পাওনাসংক্রান্ত বিবাদ। আর এসবের জেরে নিজের ডাক্তারি বিদ্যা কাজে লাগিয়ে খুনগুলো সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করে তদন্তকারীরা। ডা. সন্তোষ পালের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তার খামারবাড়ি থেকে চারটি দেহাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই ডাক্তারের সঙ্গে এসব হত্যাকা-ে এক নার্সও যুক্ত থাকতেন। পুলিশের অভিযোগ ছিল তার বাড়ির অদূরের পুকুর ও ঝোপঝাড় থেকে আরও কয়েকটি লাশ উদ্ধার হয়েছে সমসাময়িক সময়ে। এই খুনগুলো ডাক্তার সন্তোষ পাল করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন তারা।


১৩। জাভেদ ইকবালঃ
১৯৫৬ সালে জন্ম নেয়া এই সিরিয়াল কিলারের জন্মস্থান পাকিস্তানের লাহোরে । মাত্র ১৮ মাসে সে প্রায় একশ বালককে হত্যা করে । রাস্তায় ঘুরতে থাকা ছেলেশিশুদের ভুলিয়ে ভালিয়ে তাদের তুলে নিয়ে এসে ধর্ষণ করতো এবং তারপর তাদের হত্যা করতো । মৃতদেহের শরীর টুকরো টুকরো করে হাইড্রোলিক এসিড ভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে রাখতো । এতে অল্প সময়ইে দেহের খণ্ডাংশগুলো গলে যেতো । সেই গলিত দেহাবশেষ তরল স্যুয়ারেজ লাইন কিংবা নদীতে ফেলে দেয়া হতো । ভিক্টিমদের কাপড় কিংবা জুতা সুভেনিউর হিসেবে সে জমিয়ে রাখতো । শিকার সংখ্যা পনের ছাড়ানোর পর সে ভিক্টিমদের ছবি তুলে রাখতে শুরু করে । পুরিশের হাতে ধরা পড়ার পর সে দম্ভভরে এই স্বীকারোক্তি দেয় , ” I am Javed Iqbal, killer of 100 children … I hate this world, I am not ashamed of my action and I am ready to die. I have no regrets. I killed 100 children. ” ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর ফাঁসি কার্যকরের পূর্বেই প্রিজন সেলে তাকে ছুরিকাহত হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় । কর্তৃপক্ষ জানায়, জাভেদ প্রিজন সেলে আত্মহত্যা
করেছে।


১৪। রসু খাঃ
রসু খাঁ বাংলাদেশের ইতিহাসে কুখ্যাত এক সিরিয়াল কিলারের নাম। খায়েস ছিল তার সন্ন্যাসী হওয়ার। এর আগে ১০১ জন নারীকে ধর্ষণের পর খুন করার প্রতিজ্ঞা। এমন বর্বর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কুৎসিত ইচ্ছা নিয়ে নেমে পড়েন নৃশংস কিলিং মিশনে। মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে একে একে খুন করেন ১১ জন নারীকে। একজন ছাড়া সবাইকে তিনি খুনের আগে ধর্ষণ করেন। প্রত্যেককেই রাতের বেলায় খালের কিনারে নিয়ে খুন করেন এবং লাশ ফেলে আসেন সেই খালের ধারেই। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের জুলাই। এই সময়ের মধ্যে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ছয়টি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশগুলোর সবই থেকে যাচ্ছিল অজ্ঞাতনামা। লক্ষ্য করার বিষয়, সব লাশই নারীর। ধর্ষণের পর কে বা কারা তাদের খুন করে ফেলে রাখছে। খালে, বিলে, নদীতে মিলছে লাশ। কিন্তু ঘটনার কোনো হদিস পাচ্ছিল না পুলিশ। খুনের আলামত খুঁজে পেতে যখন দিশাহারা পুলিশ, তখন নিরাপদে খুন করে বেড়াচ্ছিলেন কেউ। এই যখন অবস্থা তখন একটি ফ্যান চুরির মামলা খুলে দেয় হত্যারহস্য উম্মোচনের পথ। ধরা পড়েন সেই খুনি চাঁদপুরের নরপিশাচ রসু খাঁ। শুধু ফরিদগঞ্জের এ ছয়টিই নয়, রোমাঞ্চকর গল্পের চরিত্রের মতো ১১ নারীকে খুন করে নিরাপদে পালিয়ে ছিলেন রসু খাঁ। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন ১০১ নারীকে খুন করার শপথ নেওয়ার কথা। রসু পুলিশি জেরায় বলেছেন, বিয়ের আগে তিনি একটি মেয়েকে ভালোবাসতেন। এ ঘটনার জেরে তার ভাইয়েরা মেরে রসুর হাত ভেঙে দেন। এরপরই তিনি খুনের পরিকল্পনা করেন। একে একে খুন করতে থাকেন। তিনি পুলিশকে জানান, ‘আমি আমার অপমানের প্রতিশোধ নিতে খুন করি। ১০১ খুনের পর আর খুন করতাম না। আমি সন্ন্যাসী হতাম। মাজারে মাজারে ঘুরতাম।’ পুলিশ তার কাছ থেকে জানতে পেরেছে, নানা কৌশলে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তাদের নিয়ে অভিসারে যাওয়ার কথা বলে একের পর এক হত্যা করতেন রসু খাঁ। শুধু খুনেই এই নরপিশাচের প্রতিহিংসার সমাপ্তি ঘটেনি, খুনের আগে ওই নারীদের ধর্ষণও করেন। রসু খাঁর পিশাচ জীবনের শুরু ২০০৭ সালের প্রথম দিকে শ্যালক মান্নানের স্ত্রী রিনাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। সেই রিনার বাড়ি ছিল হাতিয়ায়। মিথ্যা বলে ফরিদগঞ্জের ভাটিয়ালপুরে এনে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ফেলে দেওয়া হয় তাকে। এরপর রসু খাঁ একে একে চালান আরও ১০টি হত্যাযজ্ঞ। যাদের খুন করা হয় তারা ১৭ থেকে ৩৫ বছরের রমণী। একটি মামলায় তাকে ফাঁসি ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের রায় দেয়া হয়। বাকি মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে


১৫। এরশাদ শিকদারঃ
কুখ্যাত ও আলোচিত এই ক্রমিক খুনির জন্ম ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। তার পিতার নাম বন্দে আলী। নৃশংস এই সিরিয়াল কিলারের কুলি থেকে ধনাঢ্য হবার কাহিনীর অধিকাংশ অক্ষরই রক্তে লেখা। খুন ছাড়াও অন্যান্য অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি ও নানান অপরাধের জন্য কুখ্যাত এই খুনি ১৯৬৬-৬৭ সালের দিকে জন্মস্থান ছেড়ে খুলনায় আসে এবং রেলস্টেশনে কুলির সহকারী হিসেবে কাজ নেয়। রাজনৈতিক ব্যাপারে সে ছিল যথেষ্ট সুবিধাবাদী, যখন যে দল সরকার হিসেবে নির্বাচিত হতো, সেখানে যোগ দিতো এই খুনি। ভয় দেখিয়ে সংগ্রহ করা অর্থ দিয়ে সে রাজনৈতিক সুবিধা ও সমর্থন আদায় করতো। খুলনার বরফকল মালিক রফিককে ভয়পূর্বক বিতাড়িত করে মানুষকে সেখান থেকে বরফ কিনতে বাধ্য করে এবং বরফকলকে তার নির্যাতনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করে সে। ঐ বরফকলে টর্চার সেল গড়ে তোলে এরশাদ শিকদার। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে যে-ই তার প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হতো তাকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে দ্বিধা করতো না সে। যাকে ভালো লাগতো তাকেই তুলে এনে নির্যাতন করতো সে। এমনকি ভাড়াটে খুনি হিসেবেও তার খুন করার নজির আছে। তার এক হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষ সাক্ষীর মতে, ১৯৯৯ সালের ১৫ই মে খালিদ হোসেন নামক যুবলীগ নেতাকে নির্মমভাবে পেটানোর পর তার বুকের ওপর নিজে লাফিয়ে পড়ে এই খুনি এবং ফলশ্রুতিতে পাঁজরের সব হাড় ভেঙ্গে মৃত্যু হয় তার। এ হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগী ছিল জামাই ফারুক ও লিয়াকত লস্কর। ১৯৯৯ সালের ১১ই আগস্ট গ্রেফতার হয় এই খুনি। গ্রেফতার কালে তার নামে ৪৩টি মামলা হয়েছিল। ৬০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগযুক্ত এই খুনি ১৮টি কেসে বেকসুর খালাস পেলেও ৭টি মামলায় তার ফাঁসির সাজা হয় এবং চারটিতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় হয়। তার বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়ে ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেয় তার সহযোগী নূরে আলম। শিকদারের কাছে ৭০টি আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা নূরে আলম বললেও এরশাদের বাড়ি স্বর্ণকমল থেকে মাত্র একটির সন্ধান পাওয়া যায়। ঘৃণ্য অপরাধী ও নৃশংস এই খুনির করা প্রাণভিক্ষার আবেদন মহামান্য রাষ্ট্রপতি নাকচ করে দেন। অতঃপর ২০০৪ সালের ১০ই মে খুলনা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মাধ্যমে অবসান ঘটে এই সিরিয়াল কিলারের।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×