somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপমহাদেশের স্বনামধন্য সাহিত্যিক প্রেমচাঁদ মুন্সির ১৪০তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা

৩১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় হিন্দি ও উর্দু ভাষার অন্যতম সফল সাহিত্যিক প্রেমচাঁদ মুন্সি। উর্দু ও হিন্দি সাহিত্যের স্বনামধন্য কথাশিল্পী মুন্সী প্রেমচাঁদ। তার আসল নাম ধনপত রায়। তবে মুন্সী প্রেমচাঁদ নামেই তিনি অধিক পরিচিত। তাঁকে জীবনবাদী সাহিত্যিক বলা হয়। হিন্দি সাহিত্যে ‘উপন্যাস-সম্রাট’ হিসেবে খ্যাত প্রেমচাঁদকে আধুনিক হিন্দি সাহিত্যের জনক বলেও অভিহিত করা হয়। তাই অনেকেই তাঁকে হিন্দির বঙ্কিম বলেও অভিহিত করে থাকেন। ১৯১০ সালে বড়ে ঘরকী বেটি প্রকাশিত হলে উর্দু সাহিত্যে তিনি স্থায়ী আসন লাভ করেন। ১৯১৬ সালে প্রকাশিত তার সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস 'গোদান'। তাঁর প্রায় যাবতীয় সাহিত্যকর্ম বাংলা ও অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কানপুরে "জমানা"পত্রিকার সম্পাদক দয়া নারায়ণ নিগমের সহায়তায় মুন্সি প্রেমচন্দ নামে লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। প্রেমচন্দের প্রথম উপন্যাস উর্দু ভাষায় লেখা "আসরারে ময়াবিদ উর্ফ দেবস্থান রহস্য"। উপন্যাসটি 'আওয়াজ-ই-খল্ক' নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় ১৯০৩ খ্রিস্টাবের ৮ অক্টোবর থেকে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস 'হমখুর্মা ও হমসবাব'। এই উপন্যাসটিই 'প্রেমা' নামে ১৯০ সালে হিন্দিতে প্রকাশিত হয়। ১৯১৮ খ্রিঃ 'সেবাসদন' প্রকাশিত হলে হিন্দি সাহিত্যে তিনি স্থায়ী আসন লাভ করেন। এর পর একে একে তাঁর বিখ্যাত সব উপন্যাস রচিত হতে থাকে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলি হল- সেবা সদন, বরদান, প্রেমাশ্রম, রঙ্গভূমি, কায়া-কল্প, নির্মলা, গবন, কর্ম-ভূমি, গো -দান এবং একটি অসমাপ্ত উপন্যাস "মঙ্গল-সূত্র" । হিন্দি সাহিত্যে ‘উপন্যাস-সম্রাট’ হিসেবে খ্যাত প্রেমচাঁদকে আধুনিক হিন্দি সাহিত্যের জনক বলেও অভিহিত করা হয়। আজ স্বনামধন্য সাহিত্যিক প্রেমচাঁদ মুন্সির ১৪০তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৮০ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। আধুনিক হিন্দি এবং উর্দু ভাষার অন্যতম সফল লেখক প্রেমচাঁদ মুন্সির জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।


প্রেমচাঁদ মুন্সি ১৮৮০ সালের ৩১ জুলাই উত্তর প্রদেশের বারানসীর নিকটবর্তী লমহী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আজায়ব রায় এবং মাতা আনন্দী দেবী। তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল ধনপত রায় শ্রীবাস্তব। তাঁর কাকা নাম রাখেন নবাব রায়। তবে তিনি প্রেমচন্দ নাম নিয়ে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন এবং এই নামেই সমধিক পরিচিতি লাভ করেন। বহামীরপুর জেলার শিক্ষা বিভাগের সাব-ডেপুটি ইন্সপেক্টর হিসাবে সরকারী চাকুরি করার সময় উর্দু ভাষায় নবাব রায় ছদ্মনামে তাঁর প্রথম গল্প গ্রন্থ " সোজ-এ-ওঅতন"- ("দেশ মাতার বিষাদ সংগীত") প্রকাশিত হয়। এই গল্প গুলির মধ্যদিয়ে প্রেমচন্দ রাজনৈতিক স্বাধীনতার সংগ্রামে ভারতীয়দের অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের হুকুমে বইটি বাজেয়াপ্ত হয়। যার কারণে তিনি নবাব রায় নাম টি বর্জন করেন চিরদিনের জন্য। ছোটগল্পকার হিসাবেও প্রেমচন্দ যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছে। উর্দু ভাষায় নবাব রায় ছদ্মনামে তাঁর প্রথম গল্প গ্রন্থ " সোজ-এ-বতন" ১৯০৭ সালে প্রকাশিত হয়। এই গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্প 'দুনিয়া কা সবসে আনমোল রতন' তাঁর প্রথম হিন্দি গল্প 'সৌত' প্রকাশিত হয় ১৯১৫ সালে। প্রেমচন্দের বেশির ভাগ গল্পে নিম্ন-মধ্যবৃত্ত সাধারণ মানুষের কাহিনি চিত্রিত হয়েছে। ডঃ কমলকিশোর গোয়েঙ্কা প্রেমচাঁদের সমগ্র গল্প "প্রেমচাঁদ গল্প রচনাবলী নামে প্রকাশ করেন প্রেমচন্দ প্রায় তিনশো টি গল্প লিখেছেন। সেগুলি গ্রন্থিত হয় প্রথম গল্প সংকলন "সোজ-এ-ওঅতন" থেকে আরম্ভ করে হিন্দি "সপ্ত-সরোজ", "নও-নিধি, "বড়ে ঘর কী বেটী", " প্রেম-পচীশী", "প্রেম-প্রসূন", "প্রেমতীর্থ', "প্রেম-চতুর্থী ", "পঞ্চ ফুল", "অগ্নি-সমাধি", "সুপ্ত-সুমন", 'প্রেম -পঞ্চমী' প্রভৃতি গ্রন্থ এ। প্রেমচাঁদ বেশ কয়েকটি নাটকও লিখেছিলেন। সে গুলি হল 'সংগ্রাম'(১৯২৩), কর্বলা(১৯২৪), প্রেম কি দেবী(১৯৩৩), 'তজুর্বা, 'রুহানী সাদি' প্রভৃতি। তবে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসাবে তিনি যতটা সফল্য অর্জন করতে পেরেছিলেন নাট্যকার হিসাবে তিনি ততটা সাফল্য পান নি।


প্রেমচাঁদ কেবল একজন অনুভুতিশীল সফল গল্পকারই ছিলেন না, তিনি কয়েকটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন। তিনি 'হংস', 'মাধুরী', 'জাগরণ' প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন। তারপর অন্যান্য ককিছু সহযোগী সাহিত্য পত্রিকা 'চাঁদ ',' মর্যাদা ','স্বদেশ' প্রভৃতি তে তার সাহিত্যিক ও সামাজিক ভবনা প্রবন্ধের মাধ্যমে প্রকাশ ঘটান। প্রেমচন্দের লেখা কয়েকটি প্রবন্ধ গ্রন্থ হল 'কুচ বিচার', 'কলম ত্যাগ অর তলবার'। তাঁর জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি সাহিত্যের উদ্দেশ্য, পুরাতন সময় নতুন যুগ, স্বরাজের সুবিধা, কাহিনি কলা, হিন্দি-উর্দু ঐক্য, মহাজনী সভ্যতা , উপন্যাস, জীবনে সাহিত্যের স্থান প্রভৃতি। প্রেমচাঁদ সফল অনুবাদকও ছিলেন। তিনি লিও টলস্টয়, অস্কার ওয়াইড, চার্লস ডিকেন্স, প্রভৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনুবাদ কর্মে প্রবৃত্ত হন। প্রেমচাঁদের অনূদিত গ্রন্থ গুলি হলঃ
১) 'অহংকার' (আনাতোল ফ্রঁস এর 'Thaïs ' অনুবাদ), ২) 'আজাদ কথা' (রতন নাথ ধর সারশার এর 'ফাসানা-ই আজাদ' এর অনুবাদ ) ২) 'প্রভাত যাত্রা' (রতন নাথ ধর সারশার এর 'সার-ই-কশর' এর অনুবাদ), ৩) রুপোর বাক্স (The Silver Box -John Galsworthy) ৪) 'ধর্মঘট' (Strife-John Galsworthy). ৬) 'ন্যায়' (Justice - John Galsworthy), ৭) সুখদাস (Silas Marner - George Eliot), ৮) "টলস্টয়ের কাহিনী" (লিও টলস্টয়) উল্লেখযোগ্য। ১৯৩৬ সালের ৮ অক্টোবর ভারতের বারানসিতে তার মৃত্যু হয়। আজ স্বনামধন্য সাহিত্যিক প্রেমচাঁদ মুন্সির ১৪০তম জন্মবার্ষিকী। আধুনিক হিন্দি এবং উর্দু ভাষার অন্যতম সফল লেখক প্রেমচাঁদ মুন্সির জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:২৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×