"তুমি আমার পাশে বন্ধু হে বসিয়া থাকো, একটু বসিয়া থাকো, আমি মেঘের দলে আছি, ঘাসের দলে আছি তুমিও থাকো বন্ধু হে একটু বসিয়া থাকো .... " এরকম অসংখ্য গান যাকে নিয়ে লেখা হয়েছে সে হলো বন্ধু। পৃথিবীতে কিছু কিছু শব্দ খুব বেশী মানবজীবনে জায়গা করে নেয়, বন্ধু তেমনই একটি শব্দ। মানুষ যখন তার চারপাশটায় আস্থা ও বিশ্বাস করার মতো কোন ব্যক্তি খুঁজে পায়না ঠিক তখন বন্ধুর মাঝেই তা খুঁজে বেড়ায়। বলা হয়ে থাকে তাদের জীবন বৃথা যাদের জীবনে একজন সৎ বন্ধু নেই। পৃথিবীর সব কিছু তার নিজস্ব রুপ, রস হারায় কেবল বন্ধুত্বই থাকে একি রকম। এসব ভাবতেই একটা স্বপ্নীল পরিবেশ চোখের সামনে ভেসে উঠে। ঠিক যেভাবে স্বপ্নের মতো করে এক ঝাঁক নতুন মুখ হঠাৎ করে একটা সুন্দর ও পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এ সম্পর্ক গড়তে কারো প্রয়োজন এক দিনের কারো প্রয়োজন হয় এক যুগের। বন্ধুত্ব এই একটি মাত্র শব্দ দিয়ে জয় করা যায় অনেক কিছু। শিল্পি অঞ্জন দত্ত হয়তো তাই বলেছেন ‘ বন্ধুত্বের হয়না পদবী, বন্ধুত্বের বয়স বাড়ে না’। মানুষ একা বাস করতে পারে না। সমাজে বাস করতে হলে, প্রতিদিন কারো না কারো মুখাপেক্ষী হতে হয়। কাউকে না কাউকে আপন করে ন্রিতে হয়। একে অন্যকে আপন করে নেবার নামই বন্ধুত্ব। তবে বন্ধুত্ব এমন একটি বন্ধন যাতে থাকে স্বার্থহীন ভালোবাসা। পৃথিবীর অনেক সম্পর্কের মধ্যে এটি অন্যতম। বন্ধুত্বের আসলে কোনো বয়স নেই। তা যখন তখন, যেখানে সেখানেই হতে পারে। মা-বাবা যেমন হতে পারে ভাল বন্ধু, তেমনি পারে স্বামী-স্ত্রীও। আবার স্কুল-কলেজ, চাকরির ক্ষেত্রে সবখানেই বন্ধুত্ব হতে পারে। তবে বন্ধুকে হতে হয় অনেক বিশ্বাসী, দায়িত্ববান। যার উপর ভরসা করা যায় নিশ্চিন্তে। সৃষ্টির শুরুতে বন্ধুত্ব ছিল, এখনও আছে, থাকবে অনন্তকাল।
আজ আগস্টের প্রথম রবিবার বিশ্ব বন্ধু দিবস। প্রতি বছর আগস্টের প্রথম রোববার দুনিয়াজুড়ে পালিত হয় দিবসটি। ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটি পালনের প্রথা চালু হয়। শুধু পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশেই নয়, বরং বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশেও প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে উদযাপন করা হয় বন্ধু দিবস হিসেবে। বন্ধু কিংবা বন্ধুত্বের মতো সম্পর্কের সঙ্গে মানুষের পরিচয় যুগ যুগান্তরের হলেও বন্ধুত্ব দিবসের মতো কেতাবি উদযাপন কিন্তু এখনো শতবর্ষও পেরোয়নি। বরং কাগজে কলমে প্রায় ৭৭ বছর আর আনুষ্ঠানিকতার দিক থেকে মাত্র দুই আড়াই দশক হলো জাঁকালোভাবে উদযাপন হচ্ছে বন্ধু দিবস। বন্ধু দিবসের ইতিহাস নিয়ে বির্তক থাকলেও ইতিহাস মতে জানা যায়, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম শনিবার। হত্যার প্রতিবাদে পরের দিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সে সময় বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর থেকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুত্বের অবদান আর তাদের প্রতি সম্মান জানানোর লক্ষ্যে আমেরিকান কংগ্রেস আইন করে ১৯৩৫ সালে আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস ঘোষণা করে। সেই থেকে আগস্ট মাসের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে বন্ধুত্ব দিবসের শুরুটা ছিলো ১৯১৯ সালে। হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা Joyce Hall (জয়েস হল)এটি প্রচলন করেন। আগস্টের প্রথম রবিবার বন্ধুরা সবাই একে অন্যেকে কার্ড পাঠাত। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র উইনি দ্যা পুহকে বন্ধুত্বের বিশ্বদূত হিসেবে নির্বাচিত করে। বর্তমানে এ দিনটিতে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে নানা রকম উপহার প্রদান করতে দেখা যায়। বিশেষ করে ফুল উপহার দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি। বন্ধু দিবসের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে হলুদ গোলাপ আর ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের মতো বিষয়গুলোও। এই ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের ধারণাটিও এসেছে আমেরিকা থেকেই। আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই বন্ধুত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্যান্ড দেয়ার এই রীতি চালু আছে। তারা তাদের বন্ধুদের জন্য ব্যান্ড তৈরি করে। আর যাকে ব্যান্ড দেয়া হয়, সে কখনোই ব্যান্ডটি খোলে না। আবার বন্ধুত্বের প্রতীক যে হলুদ গোলাপ, সেই হলুদ রং হলো আনন্দের প্রতীক। আর হলুদ গোলাপ মানে শুধু আনন্দই নয়, প্রতিশ্রুতিও। কাজেই বন্ধুত্বের মাঝে যেন আনন্দের পাশাপাশি থাকে প্রতিশ্রুতিও সেই কথাটিই যেন মনে করিয়ে দেয় এই বন্ধু দিবস। অনেকে আবার মোবাইলে সুন্দর এসএমএস এর মাধ্যমেও শুভেচ্ছা জানায়।
এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ভারতে এই দিবসের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকের দিকে বাংলাদেশে বন্ধু দিবস পালন করা শুরু হয়। এর পর ইন্টারনেট ও টিভি চ্যানেল গুলোর মাধ্যমে বন্ধু দিবস পালনের প্রসার ঘটে। বর্তমানে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্বের বহু দেশেই এবং বেশ ঘটা করেই বন্ধু দিবস পালন করা হয়। যাদের প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী বন্ধু আর বন্ধুতা, তারা একমুহূর্তেও জন্যও মন থেকে আড়াল করতে পারেন না বন্ধুদের। জীবনের সংকটে এরা ছুটে যান বন্ধুদের কাছে। আবার আনন্দ, উল্লাস কিংবা দিন শেষের অবসরেও এরা ভালোবাসেন বন্ধুত্বের কলতান শুনতে। বন্ধুত্বের পরিপূরক সম্পর্কের মাঝে এরা খুঁজে পান জীবন যাপনের ভিন্ন রস। মানুষের কিছু অদ্ভুত বন্ধু আছে। যারা কখনো বিনিময় চায়না। শুধু ত্যাগ করে। পূজা আর প্রার্থনায় ব্রত হয় প্রতিনিয়ত বন্ধুর মঙ্গল কামনায়। বিশ্ব বন্ধু দিবসের এই দিনে সামু ব্লগের পক্ষ থেকে বিশ্বের সকল বন্ধুদের জানাই শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:২৫