somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র কোরআনের আলোকে ইসলাম ধর্ম মতে নারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য (২য় পর্ব)

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সূচনা পর্বঃ ইসলাম ধর্মে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব কর্তব্য
হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন; আর যিনি তাদের দুইজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন; আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট নিজ নিজ হক দাবি করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে সতর্ক থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। – ( সূরা আন-নিসা: ১ ) নারীকে সমাজের অর্ধেক বলা হয়ে থাকে; আর নারী তিনি তো মাতা, স্ত্রী, কন্যা, বোন, নিকটাত্মীয়া …; আর তিনি তো লালনপালনকারিনী, শিক্ষিকা, শিশুদের পরিচর্যাকারিনী…। আর তিনি হলেন পুরুষদের জন্মদাত্রী, বীরপুরুষদের লালন-পালনকারিনী, মহিলাদের শিক্ষিকা …। আবার তিনি হলেন নেতা, আলেম ও দা‘ঈ তথা আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের গড়ে তোলার অন্যতমা কারিগর। আর সেখান থেকেই ইসলামী চিন্তবিদগণ নারীদের ব্যাপারটি নিশ্চিতভাবে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন, যেভাবে আল-কুরআনুল কারীম সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে; একজন মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা হিসেবে তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানসমূহ; সাথে সাথে বর্ণিত হয়েছে তার অধিকার এবং আবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ। পবিত্র কোরআনের আলোকে আজ দ্বিতীয় পর্বে মা হিসেবে মুসলিম নারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ আলোচনা করা হলোঃ


ইসলাম ধর্ম মতে মা হিসেবে নারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
মায়ের জন্য রয়েছে বড় রকমের অধিকার; বরং আল্লাহ তা‘আলার অধিকারের পরে সবচেয়ে বড় অধিকার হল মায়ের। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:• “তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করতে এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল। মমতাবেশে তাদের প্রতি নম্রতার পাখা অবনমিত করবে এবং বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন’।” – ( সূরা আল-ইসরা: ২৩ -২৪ )

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: তারপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: তারপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: তারপর কে? তিনি বললেন: তোমার পিতা।” – ( ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন)।
আর এই অধিকারটি বাস্তবায়িত হয় কথা, কাজ ও সম্পদের মাধ্যমে ইহসানকে অন্তর্ভুক্ত করে। আর এই অধিকারের বিনিময়ে তার উপর আবশ্যক হয়ে পড়ে গুরু দায়িত্ব পালন ও বড় রকমের আমানতের সংরক্ষণ করা। বরং তা এই জীবনে তার মহান দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহের অন্যতম। আর এই দায়িত্ব ও কর্তব্যের সূচনা হল— আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।” – ( সূরা আত-তাহরীম: ৬ ) এখন একজন নারীর মা হিসেবে যে দায়িত্বগুলো আছে তা হলঃ

প্রথমত: তার সন্তানের পিতা নির্বাচন করাঃ
নারীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্যের সূচনা হল তার শিশু সন্তানদের পিতা গ্রহণের ক্ষেত্রে বর বাছাইয়ের জটিল ধাপ বা স্তরটি। যে কেউ তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছা পোষণ করে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করলেই সে তা গ্রহণ করবে না; বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রহণযোগ্য স্বামী নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
“যখন তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও দীনদারীতে তোমরা সন্তুষ্ট, তবে তোমরা তার বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। যদি তোমরা তা না কর, তবে তা পৃথিবীর মধ্যে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণ হবে।” – (ইমাম তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন)।
স্বামী নির্বাচনের জন্য মানদণ্ড হল তিনটি বিষয়: দীন, চরিত্র ও আকল। যখন এই তিনটি বিষয় ব্যক্তির মধ্যে পূর্ণতা লাভ করে, তখন সে তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে। বর্তমান দিনের অধিকাংশ মানুষ এর বিপরীতে তার ধন-সম্পদের আধিক্য, অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অথবা তার সরকারি চাকরি, অথবা সামাজিক মর্যাদা, অথবা তার চেহারা-ছবি, অথবা তার যশ-খ্যাতিসহ ইত্যাদি বিচার করে। অথচ এ ধরনের সকল মানদণ্ড রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ডের মোকবিলায় কিছুই নয়।

দ্বিতীয়তঃ সন্তানের ভ্রুণ অবস্থায় তার রক্ষণাবেক্ষণ করাঃ
তার জরায়ুর মধ্যে বীর্য প্রবেশের দিন থেকেই ভ্রণের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা; সুতরাং সে তার সুস্থতা এবং তার জন্য উপকারী বিষয়সমূহের প্রতি যত্নবান হবে; আর তা সম্ভব হবে তার খাওয়া-দাওয়া, পান করা ও নড়াচড়ার মধ্য দিয়ে। সুতরাং জেনে রাখা দরকার যে, গর্ভবতী তার দীর্ঘ গর্ভাকালীন সময়ের মধ্যে অনেকগুলো পরিস্থিতির শিকার হয়; ফলে সে এই দিকে মনোযোগ দেবে, যাতে তার গর্ভস্থিত সন্তান নিরাপদে বের হয়ে আসে; আর এটা তাকে সুস্থ, স্বাস্থ্যসম্মত ও বুদ্ধিমত্তার সাথে তাকে লালন-পালনে সহযোগিতা করবে।

তৃতীয়তঃ প্রসূত সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ করাঃ
সন্তানকে প্রসব করার সময় তার অধিকারসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার পিতার সাথে এই পর্যায়ে নিম্নলিখিতরূপে সহযোগিতা করা।
*ক) তার ডান কানে আযান দেয়া, যাতে সে প্রথমেই তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের কথা শুনতে পায়।
(খ)সুন্দর নাম দ্বারা তার নাম রাখা। আর খারাপ নাম দ্বারা নাম রাখা থেকে, অথবা খারাপ অর্থ বহন করে এমন নাম দ্বারা নামকরণ করা, অথবা কাফিরদের নামে নাম রাখা, অথবা শরী‘আত কর্তৃক নিষিদ্ধ নামে নামকরণ করা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা।
(গ) তার জন্মের সপ্তম দিনে তার নাম রাখার সাথে সাথে তার মাথার চুল মুণ্ডন করা। তার মাথার চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য দ্বারা সাদকা করা।
(ঘ) সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা করা। আর তা এইভাবে যে, ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ছাগল দ্বারা, আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দ্বারা তাওহীদ তথা একত্ববাদের ভিত্তিতে কথা বলার উপর তাকে অভ্যস্ত করানো এবং তার প্রাণে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বিষয়াদির বীজ বপন করা
(ঙ) শিশুর মনে আল্লাহর ভালবাসার বীজ রোপন করা। শিশুকে নিম্নোল্লেখিত যিকিরসমূহ উচ্চারণে অভ্যস্ত করা: (আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল , (আল্লাহ পবিত্র), (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য) (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ), ( আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই এবং কোন শক্তি নেই ), ইত্যাদি। তার মনে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও তার ভয়ের অপরিহার্যতার বীজ বপন করা।
(চ) তার মনে মানুষের উপর আল্লাহর নজরদারী ও খবরদারীর বীজ রোপন করা।
তাকে ভাল কথা বলার অভ্যাসে অভ্যস্ত করা, যেমন: (তুমি সুন্দর করেছ), (ধন্যবাদ),(আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন)।
তাকে গুরুত্বপূর্ণ দো‘আসমূহ, ঘুম, খাওয়ার (পূর্বাপর) এবং বিভিন্ন স্থানে প্রবেশের যিকির তথা দো‘আসমূহ পাঠ অভ্যস্ত করা।
শিশুদেরকে (আল্লাহর) আশ্রয়ে দেয়া, যেমনটি করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হোসাইনের সাথে; যেমন অভিভাবক বলবেঃ “আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের অসীলায় প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টিসম্পন্ন চোখ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে দিচ্ছি।” যাতে শয়তান তাদেরকে শিকার করতে পারে না।
– আরও বিশেষভাবে তিনি যা উল্লেখ্য, -যদিও তা পূর্বে উল্লেখিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে-: তা হল, তাকে শুরুতে ঘরের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব (আল-কুরআনুল কারীম) মুখস্থ করাবে এবং তাকে তা শুনাবে। আর অনুরূপভাবে সুন্নাতে নববী তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে কিছু মুখস্থ করাবে, বিশেষ করে ছোট ছোট হাদিসসমূহ।

(ক-১) শিশুদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিচ্ছা-কাহিনীসমূহ থেকে কিছু আলোচনা করা; বিশেষ করে সীরাতে নববী তথা নবীর জীবনী থেকে ঐ পর্যায়ের বিষয়গুলো থেকে আলোচনা করা, যা সে বয়সের যে স্তরে জীবনযাপন করছে, তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কারণ, ঐ কাহিনীসমূহ তার মধ্যে বড় রকমের শিক্ষামূলক প্রভাব ফেলবে এবং তার মনে উন্নত ও শক্তিশালী চরিত্রের বীজ বপন করবে; আর সে প্রত্যাশা করবে, সে যেন ঐসব ব্যক্তিবর্গের মত হতে পারে, যাদের কাহিনী সে শ্রবণ করেছে।

(ক-২) শিশুর মধ্যে তার ছোটকাল থেকেই উন্নত মানের ইচ্ছা বা অভিপ্রায়ের ব্যাপারে আশা-আকাঙ্খা জাগিয়ে তোলা এইভাবে যে, সে মনে মনে পরিকল্পনা স্থির করবে যে, সে অমুকের মত আলেম (বিদ্বান) হবে, অথবা অমুকের মত ডাক্তার হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

(ক-৩) শিশুর আগ্রহ ও ইচ্ছাসমূহ প্রকাশ করতে এবং তার আল্লাহ প্রদত্ত মেধাসমূহের বিকাশে উদ্যোগ গ্রহণ করা; সুতরাং উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: যখন দেখা যায় যে, সে পড়ার প্রতি আগ্রহী, তখন সে তাতেই তাকে নিয়োগ করে দেবে এবং তার জন্য সংশ্লিষ্ট বইপত্রের ব্যবস্থা করে দেবে; আর যখন সে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী হবে, তখন তাকে ঐ খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দেবে, যা তার শক্তি ও মেধা বিকাশে ভূমিকা রাখবে … অনুরূপভাবে আরও অন্যান্য বিষয়ও হতে পারে।

(ক-৪) আর সাত বছর বয়সের সময় শিশুর সাথে আচার-আচরণের ক্ষেত্রে নতুন আরেক ধাপের সূচনা হয়; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কতগুলো মৌলিক সাইনপোস্ট (Signpost) ঠিক করে দিয়েছেন তাঁর বাণীর মাধ্যমে, তিনি বলেছেনঃ
তোমাদের সন্তানদেরকে তোমরা সালাতের নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত বছর বয়সে উপনীত হয় এবং তার কারণে তাদেরকে প্রহার কর, যখন তারা দশ বছর বয়সে উপনীত হয়। আর তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও।” ( ইমাম আহমদ ও আবূ দাউদ র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন)।
১। শিশুকে সালাতের নির্দেশের দ্বারা শুরু করা, যা ইবাদতসমূহের মধ্যে প্রধান এবং তাকে এই দিকে মনোযোগী করা ও তার প্রতি উৎসাহিত করা। আর এই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত হবে সাওমের (রোযার) মত অপরাপর সকল ইবাদতও। আর তাকে এই কাজে অভ্যস্ত করে তোলা। আর সে উপলব্ধি করবে যে, তার সকল কার্যক্রমই ইবাদত, যার মাধ্যমে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করবে।

২। দশম বছরে উপনীত হওয়ার পর বার বার নির্দেশ লঙ্ঘন করলে মৃদু প্রহার করা।
৩। ঘুমের সময় ছেলেও ও মেয়ে সন্তানদের পরস্পর থেকে দূরে রাখা।
৪। তাকে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তত্ত্ববধান করা।
আর এই বয়সে এসে পিতা-মাতার দায়-দায়িত্ব বেড়ে যায়। এখানে কয়েকটি বিষয়ে মায়ের দায়-দায়িত্ব কেন্দ্রীভূত হয়।
দায়িত্ব পালন ও যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে তার পিতার সাথে সহযোগিতা করা। গৃহে তত্ত্বাবধান। এই তত্ত্বাভধানের অন্তর্ভুক্ত: ভাল ও কল্যাণকর কাজে উৎসাহ প্রদান করা এবং এর ব্যতিক্রম করলে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সাবধান করা।
৫। ছেলে অথবা মেয়েকে তার মূল্য ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুভূত করা। সে যদি ছেলে হয়, তবে অনুধাবন করাবে যে, সে পুরুষদের কাতারে পৌঁছেছে; তাকে পুরুষত্ব ও তার বৈশিষ্ট্যসমূহের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেবে। আর এই দায়িত্বটি যদি সম্ভব হয় তবে পিতার জন্যই বহন করা জরুরি। আর যদি সে কন্যা হয়, তবে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করাবে। যেমন: তার ভবিষ্যত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অনুশীলন করা, তাকে বিশেষ তত্ত্বাবধান করা, তার যত্ন নেয়া, তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া, তার পড়াশুনা ও অধ্যাবসায়ের দিকে মনোযোগ দেয়া এবং তারা পাঠসমূহ ও পোষক-পরিচ্ছদের বিষয়টি তদারকি করা। মেয়ের কাজে তার সাথে অংশ নেওয়া। এটি শুরু করতে হবে তার সাথে বন্ধুসুলভ ব্যবহারের মাধ্যমে। আর তাকে বোঝাতে হবে যে, সে তার মা হওয়ার সাথে সাথে একজন বান্ধবীও বটে। এতে করে পরবর্তীতে মেয়ে তার কাছ থেকে এমন কোন কিছু গোপন করবে না, যা অনেক সময় তার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মেয়েকে ঘর-গৃহস্থালির কাজকর্মের কিছু দায়িত্ব প্রদান করা এবং তাকে সম্পূর্ণরূপে এমনভাবে উপেক্ষা না করা, যাতে কোন দায়-দায়িত্ব বহন না করেই সে সকল জিনিস হাতের কাছে প্রস্তুত অবস্থায় পেয়ে যায়।
৬। সকল সম্পাদিত কাজের ব্যাপারে পিতাকে অবহিত করা এবং বিশেষ করে এই স্তরের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে তাকে অংশগ্রহণ করানো, আর ছেলে হউক অথবা মেয়ে হউক সন্তানদের কোন বিষয়ই তার নিকট গোপন না করা।

এসব দায়িত্ব ও কর্তব্যের গভীরতাই জোর দিয়ে থাকে যে, মা হলেন শিশুর পরিচর্যাকারিনী, লালনপালনকারিনী, তত্ত্বাবধায়ক, শিক্ষিকা, পরিচালিকা ও সম্পাদিকা। তিনি হলেন একাধারে জ্ঞানীদের জননী, কীর্তিমানদের লালনপালনকারিনী ও শিক্ষিকা, শ্রমিক ও কৃষকের প্রশিক্ষক, বীর পুরুষ তৈরির কারিগর এবং মহৎ গুণাবলি রোপণকারিনী। এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনা মোটেই সহজ কাজ নয়—যেমনটি অনেক মায়েরা ভাবেন— বরং তিনি হলেন পৃথিবীর বুকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর কারণ হল, মহৎ ব্যক্তি, আলেম-জ্ঞানী, মুজাহিদ (আল্লাহর পথে জিহাদকারী), দা‘ঈ (আল্লাহর পথে আহ্বানকারী) এবং সৎকর্মশীলদের কারও আবির্ভাব হত না, যদি না তার পিছনে প্রশিক্ষক জ্ঞানী মায়েরা না থাকতেন।

বিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলাম ধর্ম মতে নারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য (১ম পর্ব)

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×