অর্থ আইন ২০২০ অনুযায়ী কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল টিনধারীর জন্যই কর বর্ষ ২০২০-২১ এ রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থাৎ করযোগ্য আয় না থাকলেও আপনার যদি টিন থাকে তাহলে এ বছর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর দেয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে এক পাতার আয়কর রিটার্ন ফর্ম চালু করেছে। এতে আয়করের বিবরণী দাখিলে জনগণ আরও উৎসাহিত হবেন বলে মনে করছে রাজস্ব বোর্ড।এ ব্যাপারে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের করযোগ্য আয় ৪ লাখ টাকা ও মোট সম্পদ চল্লিশ লাখ টাকার বেশি নয়, সদ্য চালু হওয়া ট্যাক্স রিটার্ন ফর্মটি তারা ব্যবহার করতে পারবেন। নতুন এই ফর্মটি এ মাসের ১ তারিখ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে রাজস্ব বোর্ডের আয়কর বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপণ ইস্যু করা হয়েছে । করদাতাকে ঘোষণা দিতে হবে তিনি এ ফর্মের যোগ্য। তার কোনো মোটর গাড়ি নেই বা তিনি সিটি করপোরেশন এলাকায় কোন বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করেননি। তবে যারা মোটর গাড়ির মালিক বা তার বাড়ির সম্পত্তিতে বিনিয়োগ রয়েছে, অথবা সিটি করপোরেশন এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তারা এই ফর্মটি ব্যবহারের যোগ্য হবেন না। আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আয়কর রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া সরলকরণের অংশ হিসাবে এনবিআর এই ফর্মটি প্রবর্তন করেছে। এতে প্রান্তিক করদাতারা সহজেই ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।তাদের কর আইনজীবী বা অন্য কারো সাহায্য নেয়ারও প্রয়োজন হবে না। উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় প্রান্তিক করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে সহজে রিটার্ন জমা দেয়া যায় এমন ফর্ম চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হলো। এর মধ্যে বেশির ভাগই হল সাধারণ তথ্য। আয়কর নিয়ে জটিলতার কারণে এমনিতেই করদাতাদের মধ্যে ভীতি রয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে আয়কর রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজ এবং ভীতি কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চাকরিজীবী করদাতাদের জন্য কয়েক বছর আগে মাত্র তিন পৃষ্ঠার একটি নতুন রিটার্ন ফরম চালু করে। এতে করে চাকরিজীবী করদাতারা খুব সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে নিজেই নিজের রিটার্ন তৈরি করতে পারছেন। এ বছর আবার সবার জন্য যখন রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হল তখন মাত্র এক পৃষ্ঠার একটি রিটার্ন চালু করেছে। যা মাত্র কয়েক মিনিটেই পূরণ হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু শর্তাবলী পূরণ হলেই এই রিটার্নটি একজন ব্যক্তি করদাতা ব্যবহার করতে পারবেন।
নতুন এই রিটার্ন ‘‘IT-GHA 2020’ফরম টি দাখিল করতে পারবেন যাদের আয় ৪ লাখ টাকার বেশি না এবং মোট পরিসম্পদ ৪০ লাখ টাকার বেশি না। তবে উক্ত শর্তাবলী পূরণ হলেও যদি তার আয় বছরের শেষ তারিখে মোটর গাড়ি (জীপ বা মাইক্রোবাসসহ) এর মালিকানা থাকে অথবা আয় বছরে কোনো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোন গৃহ-সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা থাকে অথবা গৃহ-সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ থাকলে করদাতা এই রিটার্ন ফরমটি ব্যবহার করতে পারবেন না। ফরমটিতে করযোগ্য আয়, মোট পরিসম্পদ, করের পরিমাণ এবং আয়ের উৎস- এই চারটি তথ্য দেওয়ার ঘর রাখা হয়েছে। যাদের করযোগ্য আয় করমুক্ত সীমা তিন লাখ টাকা অতিক্রম করেনি তাদের জন্য এই চারটি ঘর প্রযোজ্য না। অর্থাৎ খালি রাখবেন। কিন্তু যাদের করমুক্ত সীমা অতিক্রম করেছে তারা আলাদা কাগজে করযোগ্য আয় এবং কর গণনা করে শুধু অংকটা লিখে দিলেই হবে। মূল রিটার্ন ফরমের সঙ্গে আপনি যে করযোগ্য আয় এবং কর গণনা করেছেন তা সংযুক্তি হিসেবে দিতে পারেন। তাহলে কর কর্মকর্তার বুঝতে সুবিধা হবে। আর বাকি থাকে মোট পরিসম্পদের ঘর।
এই রিটার্নটি পূরণকালে করদাতা চাইলে মোট পরিসম্পদ এর ঘরটি পূরণ করতে পারেন। অপর পৃষ্ঠায় সংক্ষিপ্ত আকারে সম্পদ ও দায়ের বিবরণ দিতে পারেন। এই রিটার্নে সম্পদ ও দায়ের বিবরণ প্রদান করদাতার জন্য বাধ্যতামূলক না। তাই আপনি খালি রাখতে পারেন। ১ জুলাই থেকেই ব্যক্তি করদাতাদের রিটার্ন দাখিল শুরু হয়েছে। জরিমানা ছাড়া ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করা যাবে। ইতিমধ্যেই হয়তো জেনেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর নভেম্বর মাসে আয়কর মেলা হচ্ছে না।
তাই নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিন, জরিমানা পরিহার করুন।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০২